![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অগ্রযাত্রায় গণমানুষের সিদ্ধান্ত
ফকির ইলিয়াস
====================================
একটি রাষ্ট্রে গণমানুষের রায়ই প্রধান শক্তি। তারা চাইলে দৃশ্যপট পাল্টে দিতে পারেন। এমন ধারাবাহিকতা আমরা বারবার দেখেছি। এই মানুষেরাই এদেশে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। তারা বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলেন। তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। আবার এই স্বাধীন বাংলাদেশেই একদল হায়েনা শেখ মুজিবকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। বাঙালি জাতি আবারো একটি জাতীয় শোক দিবস পালন করছে। পনেরই আগস্টের সেই ভয়াবহ স্মৃতি এখনো উঁকি দেয় প্রজন্মের প্রাণে প্রাণে। পিতার রক্তাক্ত দেহস্মৃতি এখনো আক্রান্ত করছে আমাদের মনন। যে যন্ত্রণাটি আরো তীব্র পীড়ার কারণ হয়- তা হচ্ছে সেসব খুনিদের কেউ কেউ এখনো বিদেশে পালিয়ে আছে।
নবম জাতীয় সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচনের আগে দেশে ঘটে গিয়েছিল একটি স্নায়ুযুদ্ধ। সে যুদ্ধটি কী ছিল এবং কেন ছিলÑ তা অনুমান করা আজ আর কারো পক্ষেই কঠিন কিছু নয়। ওয়ান-ইলেভেনের মাধ্যমে যারা রাষ্ট্রক্ষমতার দায়িত্ব নিয়েছিলেন তাদের কিছু কিছু কর্ম নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের পর সেই সময়ের সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের বক্তব্যগুলোতে আবারো নজর বুলালে দেখা যাবে, তিনি জাতির জনক মুজিবের স্বপ্ন বাস্তবায়নের তাগিদটিই দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, জাতির জনকের অসমাপ্ত কাজটি সম্পন্ন হতে হবে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার মাধ্যমেই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই শাণিত আঙুলটি একটি বাণী জানাতে চেয়েছিল গোটা বিশ্ববাসীকে। আর তা হচ্ছেÑ বাঙালি জাতি বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায়। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের সত্তা নিয়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির নাগরিক হতে চায় বাঙালিরা। এটাই ছিল তার অপরাধ। শেখ মুজিবের বিশিষ্টতা ছিল এই, তার অগ্রজপ্রতিম অথবা তার সমসাময়িক আরো বেশ কজন রাজনৈতিক নেতা বর্তমান থাকার পরও তারা কেউ ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ এই চেতনা বাণীটুকু জাতিকে শোনাতে পারেননি। ‘স্বাধীন বাংলাদেশ চাই’Ñ এই দৃঢ়তা পোষণ করতে পারেননি। কোনো কোনো অপপ্রচারক বলে থাকেন, শেখ মুজিব নাকি নিজের প্রাণ বাঁচাতেই পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে ধরা দিয়ে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন গ্রেপ্তার হয়ে। আমি তাদের অবগতির জন্য বলি, সেদিন, সে সময়ে বিদেশের বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদগুলো আপনারা আর্কাইভে গিয়ে একটু খুঁজে দেখুন। শেখ মুজিব মহানায়কের মতোই নিজ মাতৃভূমির মাটি পায়ে চেপে রেখেছিলেন। তিনি গ্রেপ্তার হবেন তা জেনেও আত্মগোপন করেননি। এটাও জানতেন হানাদার বাহিনীর বুলেট তার বুক ঝাঁঝরা করে দিতে পারে যে কোনো সময়। তারপরও তিনি তার পদযুগল সামান্য বিচ্ছিন্ন করেননি বাংলার মাটি থেকে। সত্য উচ্চারণে কুণ্ঠিত হননি।
এটা খুবই আশার কথা শেখ মুজিব প্রতিদিন পঠিত হচ্ছেন বাঙালি প্রজন্ম দ্বারা। অতিসম্প্রতি ইউটিউবে শেখ মুজিবের সাতই মার্চের ভাষণটি শুনছিলাম। দেখলাম, সেখানে নামে- বেনামে বেশ কিছু হানাদার-দোসর নানা রকম কটাক্ষ বাক্য লিখেছে মন্তব্য কলামে। বাঙালি প্রজন্মের শাণিত চেতনাধারী কেউ কেউ এসব হায়েনা পাকিস্তানি রাজাকারদের সঙ্গে তর্কেও লিপ্ত হয়েছেন। তা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট বোঝা গেলো, জীবিত মুজিবের চেয়ে শহীদ মুজিবের বাণী তাদের আরো বেশি গাত্রদাহের কারণ। কেন? এই প্রশ্নটির জবাব খোঁজা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মনে করি।
কিছুদিন আগে পত্র-পত্রিকায় একটি ছোট্ট সংবাদ অনেকেরই হাসির খোরাক হয়েছিল। একাত্তরের ঘাতক চক্রের অন্যতম সহযোগী গোলাম আযম নাকি স্মৃতিশক্তি হারাতে বসেছেন। তিনি নাকি একাত্তরের কোনো স্মৃতিই আর মনে করতে পারছেন না। আচ্ছা, মানুষ তার জীবনের কোন স্মৃতিগুলো বেশি রোমন্থন করতে ভালোবাসে? মধুর স্মৃতিÑ না বেদনার স্মৃতি?
অন্তিম বয়সে এসে গোলাম আযম হয়তো বুঝতে পারছেন, সেই হত্যাযজ্ঞের স্মৃতিটি ছিল তার জীবনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। কিন্তু প্রজন্ম, ইতিহাস, স্বদেশ, স্বকাল কি কোনো খুনি চক্রকে ক্ষমা করে? ক্ষমা করতে পারে? না- পারে না। আর পারে না বলেই এখনো নাৎসিদের সমাধিস্থলের দিকে তাকিয়ে থু থু ছুড়ে হাজার হাজার প্রজন্মের সন্তান। শেখ মুজিব সেই শক্তি আর সাহস দিয়ে এই প্রত্যয়ী প্রজন্মকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বাংলার মজুর, বাংলার কৃষক, বাংলার অধ্যাপক, বাংলার বুদ্ধিজীবী তাদের মেধা এই বাংলার মাটির কল্যাণেই ব্যয় করবে। আমরা দেখি জাতির জনকের অনেক নীতির সস্তা সমালোচক এখনো গলা ঝেড়ে রাজপথ গরম করেন। তাদের সঠিক ইতিহাস চর্চার বিনীত অনুরোধ জানাই। কিছু চিহ্নিত রাজাকার বাদে, যারা শেখ মুজিবের সমালোচনার নামে মিথ্যার বেসাতি ছড়াতে চান তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী তা দেখা উচিত। মুজিব নিয়ে সব তর্কের শেষ সমাধান যদি হয়Ñ ‘আমরা পাকিস্তান আমলেই ভালো ছিলাম’ তা হলে তো বুঝতে অসুবিধা হয় না তারা এখনো মননে পাকিবীজ বহন করছেন। তাদের সঙ্গে তর্ক করার তো কোনো মানেই হতে পারে না।
১৯৪৭ সালে জন্ম নেয়া পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির ভৌগোলিক মর্যাদা এবং জাতিসত্তার উন্মেষ এখন পর্যন্ত কতোটা বিস্তৃত- তা কারো অজানা নয়। চরম মৌলবাদী আর হীনম্মন্যতার পসরা সাজিয়ে যে একটি চক্র পাকিস্তান দখল করে নিয়েছে তারা হয়তো এই ভূখ-কে আরো বিভক্ত করেই ক্ষান্ত হবে। বাংলাদেশ নামক ভূসীমাটি যদি সেই ১৯৪৭ সালেই ব্রিটিশের কাছ থেকে নিজস্বতায় মুক্তি পেতো তবে আজ বাংলাদেশের অবস্থান অন্যরকম হতো। তা সম্ভব হয়নি কারণ বাঙালির যোগ্য নেতৃত্ব ছিল না। সেই নেতৃত্ব সামনে এগিয়ে আসতে কিংবা গড়ে উঠতে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। বাঙালি জাতি সামনে এগুতে চায়। এগিয়ে যেতে চায় জাতির জনক মুজিবের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে। আর তাই জাতির জনককে যারা সপরিবারে হত্যা করেছিল, তাদের বিচারের দাবিটি ছিল এই আপামর মানুষের।
আমাদের মনে আছে এই সরকার বলেছিল, বিদেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পাকড়াও করে আনা হবে। তারা তা পারেনি। সবকিছু ‘কূটনৈতিক’ ছায়াবন্দীই থেকে গেছে। এমন অনেক ব্যর্থতাই রয়েছে এই সরকারের। শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যার বিচারটি পর্যন্ত করতে পারেনি। কেন পারলো নাÑ এর কোনো জবাব নেই। সামনে নির্বাচন। এই নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশের মৌলাবাদী এজেন্টরা নানাভাবেই
মাঠে নেমেছে। তারা ‘ব্যক্তিস্বাধীনতা’ চর্চার নামে একটি চিহ্নিত মহলের পারপাস সার্ভ করছে। যদি তা না হতো, তবে ‘অধিকার’ নামের সংগঠনটি ঐ রাতে ‘তথাকথিত নিহত’দের নামের তালিকা প্রকাশ করতে পারলো না কেন?
রমজান ও ঈদ শেষ হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে। এই কঠিন সময়ে মানুষকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দেশে এবং বিদেশে প্রধান বিরোধী দলের সমর্থকরা ইতোমধ্যে বলতে শুরু করেছেÑ আওয়ামী লীগ অনেক পেয়েছে। এবার আমাদের পাওয়ার পালা। এদেশের রাজনীতি কি তবে ময়লা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ?
গণতন্ত্র বিষয়টি শুধু জানার বিষয় নয় বরং চর্চার বিষয়। চর্চার বিষয়টি যতো তৃণমূল থেকে হতে থাকবে, গণতন্ত্রের ভিত্তি ততো মজবুত হতে থাকবে। গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের জন্যও প্রয়োজন এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা। এর জন্য প্রয়োজন সব দলের নির্বিঘœ অংশগ্রহণে একটি বিশ্বাসযোগ্য, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের যে মডেল সৃষ্টি হয়েছে তা জনগণের শাসনের পরিবর্তে ক্ষমতাসীনদের শাসনে পরিণত করেছে। মূলত ক্ষমতাসীনদের বেপরোয়া এবং অসহিষ্ণু শাসনের কারণেই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা বারবার হোঁচট খাচ্ছে। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতি ক্ষমতাসীনদের অনাগ্রহই এর জন্য দায়ী। তুলনামূলক নবীন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির এই দেশে, জনমানুষের ঐকমত্যের পরও কেবল ক্ষমতাসীনদের বেপরোয়া মনোভাব এবং ক্ষমতার দুর্বিনীত মোহই গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার কার্যকারিতাকে ব্যাহত করছে। ঘুষ, দুর্নীতি, হামলা-মামলাসহ বিরোধী পক্ষের প্রতি অতি অসহিষ্ণুতা পরবর্তী নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে পাহাড়সম প্রতিবন্ধকতা বিবেচনায় ক্ষমতাসীনরা জনসমর্থনের চেয়ে ভিন্ন উপায়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেষ্টা করে। ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশ্য পূরণের বেপরোয়া মনোভাব বিরোধী পক্ষকেও অসহিষ্ণু ও বেপরোয়া করে তুলেছে, যা রাজনৈতিক সংঘাতের এক ভয়াবহ পরিণতির সৃষ্টি করেছে। অথচ এমনটি এই বাংলাদেশে কোনোভাবেই কাম্য ছিল না।
ঈদের পরের হরতাল ও জ্বালাও-পোড়াও প্রমাণ করেছে এদেশে কারা জঙ্গিবাদীদের হর্তাকর্তা। যারা এখনো অস্ত্রের মহড়া দেখিয়ে এই দেশে সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী, জঙ্গিদের বিস্তার ঘটাতে চায়। তাদের রুখে দেয়া দরকার। জাতির জনক ধর্ম, বর্ণ, জাতি, নির্বিশেষে মানুষের বাংলাদেশ, মানবতার বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন। সেই মাটিই হোক প্রজন্মের সোনার বাংলা।
-------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ : শনিবার, ১৭ আগস্ট ২০১৩
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:৩৪
কষ্টবিলাসী বলেছেন: ছা-গ-ল।
লেখা আর চামচামোর মধ্যে পার্থক্য আছে। এই চামচামো কেউ পড়বে না। লেখা হলে পড়তো।