![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
আপনি ভুল করছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা
ফকির ইলিয়াস
======================================
কথা ছিল আপনি যুদ্ধ বাধাবেন না। আপনি আপনার কথা রাখছেন না মিঃ প্রেসিডেন্ট,
হ্যাঁ, এমন কথাই বলছেন বিক্ষোভকারীরা। নিউইয়র্কের পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে হাজারো মানুষ। হাতে ব্যানার-ফেস্টুন। তারা যুদ্ধ চান না। সিরিয়ায় আক্রমণ চাই না আমরা। এমন কথা বলছেন তারা জোর গলায়।
যুদ্ধ হয়তো হবেই। কিন্তু এই যুদ্ধ কি দরকারি ছিল ? যে রাসায়নিক ক্যামিকেল এর কথা বলা হচ্ছে, তা তো ইরাকেও পাওয়া যায়নি। জর্জ বুশ তার বইয়েই তা লিখেছেন।
প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের বই 'ডিসিশন পয়েন্টস' এ যা লিখেছেন তার কিছু বাংলা অনুবাদের চুম্বক অংশ এখানে তুলে ধরা দরকার। তিনি লিখেছেন- ‘সাদ্দামের পতনের পর যখন নিরাপত্তা ব্যবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছিল তখন আমাদের উচিত ছিল খুব দ্রুত এবং আক্রমণাত্মকভাবে বিষয়টিকে মোকাবিলা করার।’ তার মতে, ‘দ্রুত সৈন্যসংখ্যা কমিয়ে নেওয়াটাই ছিল যুদ্ধের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা।’
তবে ইরাকে যে গণবিধ্বংসী অস্ত্র পাওয়া যায়নি সে বিষয়ে তার মনের ভিতর সবসময় একটা ‘বিরক্তিকর অনুভূতি’ কাজ করছে। তিনি এখনো বিশ্বাস করেন যে সাদ্দামকে ক্ষমতাচ্যুত করাটা যুক্তিযুক্ত ছিল। ‘আমেরিকা এখন নিরাপদ। সাদ্দাম ছিল একজন বিপজ্জনক স্বৈরাচার, যে গণবিধ্বংসী অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করছিল এবং মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসবাদে মদদ জোগাচ্ছিল।’
সমালোচকদের চোখে যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ বুশ যেন সেই বিষয়গুলোকেই এড়িয়ে গেছেন তার ‘আত্মজীবনী’তে। তার শাসনকালীন সময়ে ইরাক বিষয়ে গোয়েন্দাদের ব্যর্থতা এবং তথাকথিত সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধ বিষয়ে তার অসীম ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার মতো বিষয়গুলো বলা থেকে তিনি দূরে সরে থেকেছেন।
ইরাকের আবু গারিব কারাগারে বর্বরোচিত নির্যাতনের বিষয়টিকে তিনি মনে করেন ‘অপ্রত্যাশিত’। তিনি লিখেছেন, ‘প্রতিরক্ষা সচিব ডোনাল্ড রামসফেল্ড আমাকে বলেছেন, জেলখানার বিষয়টির সত্যতা নিয়ে মিলিটারি একটি তদন্ত করছে। তবে ছবিগুলো যে এত জঘন্য হতে পারে বিষয়টি আমার জানাই ছিল না।’ জগতের সবাই যখন বিষয়টি জানলেন তখন তিনিও তা জানতে পারেন।
এভাবেই অনেক বিষয় চেপে গেছেন প্রাক্তন এই প্রেসিডেন্ট। আমাদের মনে আছে,
ইরাকে আফগানিস্তানে বন্দিদের ওপর 'ওয়াটারবোর্ডিং' নির্যাতন চালানোর ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাবি্লউ বুশের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছিল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
সংস্থাটি বলেছিল, 'আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত সবাইকেই বিচারের আওতায় আনতে হবে। বুশ এ আইনের বাইরে নন।'
প্রকাশিত স্মৃতিকথা 'ডিসিশন পয়েন্টস'-এ বুশ অন্তত তিনজন বন্দির ওপর 'ওয়াটারবোর্ডিং' নির্যাতন চালানোর সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করেন। তবে এ নির্যাতনের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করার বিষয়টিকে 'সঠিক' হিসেবে অভিহিত করে আত্মপক্ষ সমর্থন করেন তিনি। তাঁর ভাষায়, 'এ নির্যাতনের সিদ্ধান্তের কারণেই অনেকগুলো জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।' তবে মানবাধিকারকর্মীরা বুশের এ যুক্তিকে নাকচ করে দিয়েছিলেন। কাপড়ে মুখ ঢেকে মাথা পানিতে চুবিয়ে বন্দিদের কাছ থেকে তথ্য আদায়ের 'ওয়াটারবোর্ডিং' পদ্ধতিকে অনেক দেশেই নির্যাতন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বুশের উত্তরসূরি হিসেবে ক্ষমতা নেওয়ার পরই বারাক ওবামা 'ওয়াটারবোর্ডিং' নিষিদ্ধ করেন।
সেইসময়ে ব্রিটেনের শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার আইনজীবী জিওফ্রে রবার্টসন বলেছিলেন, স্মৃতিকথায় এই খোলামেলা স্বীকারোক্তির জন্য বিদেশ সফরে গেলে গ্রেপ্তার হতে পারেন বুশ। কারণ অনেক দেশেই ওয়াটারবোর্ডিং বিষয়টিকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু আমরা দেখেছি, বুশ ভাল তবিয়তেই আছেন। তাকে আইনের মুখোমুখি
হতে হয়নি।
এই ধারাবাহিকতায়ই কি বারাক ওবামা সিরিয়া আক্রমণের জন্য এগোচ্ছেন ? এই প্রশ্নটি বার বার আসছে।
সিরিয়ায় স্বল্প পরিসরে হামলা চালানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করে ভাষণ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তবে তার আগে কংগ্রেসের অনুমতি নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। ওবামার ওই বক্তব্যের সমালোচনা করে একটি নিবন্ধ লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিশ্লেষক রস ডুহাট। আন্তর্জাতিক হেরাল্ড ট্রিবিউনে নিবন্ধটি প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে রস ডুহাট বলেন, সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর জন্য আমার আমেরিকান বন্ধু ওবামাকে যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তার প্রেক্ষিতে আমি তাকে বলতে চাই- এই মুহূর্তে যুদ্ধ কীভাবে ভাল?
তিনি বলেন, আপনি (ওবামা) ভাষণে সিরিয়ায় বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জনগণসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন চেয়েছেন। এসময় আপনি দেশটিতে সরকারি বাহিনীর বিভিন্ন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা তুলে ধরেছেন।
রস ডুহাট বলেন, আপনার এই বক্তব্য আমরা হতবাক। আপনি কী বুঝাতে চেয়েছেন? সিরিয়ায় হামলা চালানো হলে সেখানে আর কোনো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটবে না? অবশ্যই ঘটবে। বরং এই যুদ্ধ সেখানে আরো বহুসংখ্যক প্রাণহানি ঘটাবে।
ওবামাকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে রস ডুহাট বলেন, আপনি বলেছেন- সিরিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় এই মুহূর্তে সেখানে হামলা চালানো অত্যন্ত জরুরি। আপনার এই হামলার ফলে সেখানে কী রাতারাতি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে ?
যুক্তরাষ্ট্রের এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, এই মুহূর্তে সিরিয়ায় হামলা করা হলে তা আমাদের জন্য খুব দ্রুত বিজয় এনে দেবে না। বরং এর ফলে সেখানে গৃহযুদ্ধ আরো দীর্ঘস্থায়ী হবে। সুতরাং যুদ্ধ না করে যত দ্রুত সম্ভব আমাদের উচিত এই সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসা।
রস ডুহাট বলেন, যেহেতু এই যুদ্ধ চালানোর পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স ছাড়া আন্তর্জাতিক মহল তথা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, আরব লিগ এমনকি যুক্তরাজ্যের সমর্থন নেই। সুতরাং এই মুহূর্তে সিরিয়ায় হামলা চালানো কোনোভাবেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
আমরা দেখেছি ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পোষ্য সৌদীআরব সিরিয়া আক্রমণকে সমর্থন করেছে। কারণ সৌদীআরব মনে করে ইরান-সিরিয়া মিলে আরববিশ্বে একটি নতুন শক্তি
দাঁড়িয়ে যেতে পারে।
সর্বশেষ সংবাদ থেকে আমরা জানছি, সিরিয়ায় সামরিক অভিযানে কংগ্রেস নেতাদের সমর্থন পাবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তার দল ডেমোক্র্যাট তো বটেই, বিরোধী রিপাবলিকান পার্টি এবং ছোটদলগুলোর শীর্ষ কয়েকজন নেতা এরই মধ্যে ওবামার পাশে দাঁড়িয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এ সমর্থনের প্রতিফলন মিলবে ৯ সেপ্টেম্বর শুরু হতে যাওয়া কংগ্রেসের অধিবেশনেও। তবে কংগ্রেসের সমর্থন না পেলেও সিরিয়ায় হামলার চালানোর বিষয়ে অনড় ওবামা। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ইতোমধ্যে ইসরাইল ভূমধ্যসাগরে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে। রাশিয়ার রাডারে তা ধরা পড়ার পর বিষয়টি স্বীকারও করেছে ইসরাইল। এএফপি, বিবিসি, সিএনএন, এপি, রয়টার্স, ফক্স নিউজসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে।
সিরিয়ায় অভিযান চালানোর জন্য কংগ্রেসের সমর্থনের আশা করছেন বারাক ওবামা। আর এ সমর্থন পেতে মরিয়া হয়ে ছুটছেন কংগ্রেস নেতাদের কাছে। করছেন বৈঠক। তাদের জানাচ্ছেন, এ হামলা ইরাক বা আফগানিস্তানের মতো দীর্ঘস্থায়ী হবে না। বোঝাচ্ছেন সিরিয়ায় হামলার ‘গুরুত্ব’ও। এর মধ্যে ফল পেতে শুরু করেছেন তিনি। হোয়াইট হাউসে বৈঠকের পর হাউস স্পিকার জন বোহেনর ও রিপাবলিকান নেতা এরিক ক্যান্টর সিরিয়ায় হামলায় সমর্থন জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, সিরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া হবে মস্ত ভুল। তারা আশা প্রকাশ করেন, তার দলের কংগ্রেস সদস্যরাও বাশার সরকারের বিরুদ্ধে হামলার সমর্থন করবে। তারও আগে ওবামাকে সমর্থন জানান রিপাবলিকান নেতা জন ম্যাককেইন ও লিন্ডসে গ্রাহাম। ডেমোক্র্যাটিক নেতা ন্যান্সি পোলসি মঙ্গলবার বলেন, কংগ্রেস কখনই ওবামার প্রস্তাবকে ফিরিয়ে দেবে না।
এর আগে ফক্স নিউজকে পররাষ্ট্র দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, ওবামা সিরিয়ায় হামলা চালানোর বিষয়ে মনস্থির করেছেন এবং প্রয়োজনে কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই এ হামলা হবে। তিনি বলেন, যে কোনোভাবেই হোক হামলা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ওবামা তার রোজগার্ডেনের বক্তৃতায় এটি স্পষ্ট করেছেন যে, কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই তিনি হামলা চালানোর অধিকার রাখেন। ওই বক্তৃতায় ওবামা বলেছিলেন, যদিও কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই হামলা চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কর্তৃত্ব আমার রয়েছে তবুও দেশের গণতন্ত্রের প্রতি সম্মান রেখে আমি কংগ্রেসের অনুমতি নিয়ে সামরিক অভিযান শুরু করতে চাই।
ওবামার বিরোধী মতের যে কেউ নেই তা নয়। এমনকি ডেমোক্র্যাটেরও অনেক সদস্য মনে করেন, এর মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতায় যুক্তরাষ্ট্র নতুনভাবে জড়িয়ে পড়বে। যুদ্ধের ব্যয় ও তৎপরবর্তী প্রভাবের ভয়ও তাদের মধ্যে কাজ করছে। হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক শীর্ষ উপদেষ্টাদের বৈঠকে তারা এ মনোভাব ব্যক্ত করেন। অবশ্য জন ম্যাককেইন ও লিন্ডসে গ্রাহামের মতো ঐতিহ্যগত রিপাবলিকানরা সিরিয়ায় হামলার পক্ষে। এ ধরনের রিপাবলিকানরা যখনই দরকার মনে হবে তখনই বাইরের কোনো দেশে আক্রমণের পক্ষপাতী। তারা শুধু আসাদকে শাস্তি দিয়েই ক্ষান্ত হতে চান না, তারা আসাদবিরোধী বিদ্রোহীদেরও শক্তিশালী করতে চান।
সবমিলিয়ে একটা রক্তপাতের নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। কিন্তু এটি তার কাছ থেকে প্রত্যাশিত ছিল না। তিনি পরিবর্তনের বাণী শুনিয়ে তরুণ
প্রজন্মকে কাছে টেনেছিলেন। এটাই কি তার ওয়াদার নমুনা ? বলছেন লাখো আমেরিকান। প্রতিদিনের জনমত জরিপে যুদ্ধের বিরুদ্ধে রায় যাচ্ছে। তারপরও ওবামা অনড়।যা গোটা বিশ্ববাসীর জন্যই চরম দুঃসংবাদ।
একটা যুদ্ধ চরম ক্ষতির কারণ হয় রাষ্ট্র,সমাজ,জাতি ও প্রজন্মের জন্য। অস্ত্রব্যবসায়ী
যে লুটেরা শ্রেণি যুদ্ধের পক্ষে তালি বাজাচ্ছে, তারা রক্তের বিনিময়ে তেল চায় - তাকারও অজানা নয়। কিন্তু কথা হচ্ছে, সত্য আর কত ভূলুন্ঠিত হবে। আর কত পরাজিত হবে মানবতা ? সৃজনশীল সভ্যতার খোঁজে আর কত দৌঁড়াবে এই বিশ্বপ্রজন্ম ?
-----------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ/ ঢাকা / ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩ শনিবার
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৩
তারিন রহমান বলেছেন: ইসরাইল ওবামা প্রি-পেইড নোবেল প্রাইজ পাইয়ে দিয়েছে। তাদের কথা শুনতে ওবামা এখন বাধ্য।