![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
ঐক্যের পথে যে সব অন্তরায়
ফকির ইলিয়াস
==========================================
মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পথে ঐক্যের অন্তরায় কারা তৈরি করছে, কেন করছেÑ তা ভাবা খুব জরুরি। সিলেটে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমকে আহত করা হয়েছে। কারা করেছে? কেন করেছে? এই ঘটনায় সিলেটে ছাত্রলীগের কমিটি বাতিল করা হয়েছে। এর অর্থ কী দাঁড়ায়? নিশ্চয়ই কেউ এই কাজটি করেছে- যারা ছাত্রলীগের সঙ্গে আছে। নির্বাচনের আর মাত্র কয়েকমাস বাকি। এই সময়ে এমন কাজগুলো কী বার্তা বহন করছে?
দেশ আবার উত্তাল হয়েছে উঠেছে প্রজন্মের উচ্ছ্বাসে। একাত্তরের নরঘাতক কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ হয়েছে আপিল আদালতে। দেশে গণজাগরণের এই যে ফসল, তা সমৃদ্ধ করেছে গণমানুষের মানসকে। এই সময়ে ঐক্য ধরে রাখা যেখানে জরুরি সেখানে কিছু লোক সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে খুব ন্যক্কারজনকভাবে। অতীত ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, এই সরকারি পেশিতন্ত্রের সর্বোচ্চ ব্যবহার কি করেছে বিএনপি। এই সেই বেগম জিয়া যিনি বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি কোনোদিনই বাংলাদেশে করতে দেয়া হবে না। ‘শিশু’ ও ‘পাগল’ ছাড়া আর কেউ নিরপেক্ষ নয়। ইত্যাদি ইত্যাদি। তার প্ররোচনায় ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
২০০১-এ যখন অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন রাষ্ট্রপতি ছিলেন। বিচারপতি লতিফুর রহমানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করা হয়। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকেও কোনো ছলাকলার আশ্রয় নেয়নি। অষ্টম জাতীয় সংসদে চারদলীয় জোট জিতে। কিন্তু অষ্টম জাতীয় সংসদের শেষ দিনগুলোতে কী দেখলো বাংলার মানুষ? হাওয়া ভবনের নেপথ্য নায়করা ক্রীড়নকের দায়িত্ব নিলেন। তারা অনেকগুলো প্রাচীর তৈরি করে শেষ পর্যন্ত ‘সাংবিধানিক দোহাই’ দিয়ে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকেই তত্ত্বাবধায়কের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিলেন। তারপর ঘটে গেলো আরো অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনা। এর নেপথ্য ইচ্ছেটি ছিল, ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে স্থায়ী রূপলাভ দেয়া। বাংলাদেশে ‘মিস্টার টেন পার্সেন্ট’ খ্যাতি পেয়েছিল এই হাওয়া ভবনধারীরা।
বাংলাদেশে শুদ্ধ ও ঐক্যের রাজনীতির চর্চার খুবই অভাব। তারপর আবার যদি রাজনীতিকরাই প্রকাশ্যে দুর্নীতিবাজদের সাফাই গাইতে থাকেন, তাহলে জনগণ দাঁড়াবে কোথায়? প্রতিহিংসার রাজনীতি সমাজকে শুধু ধ্বংসই করে না, সমাজের ভিত্তিও ক্রমশ নিঃশেষ করে দেয়। আমরা অনেক আগেই জেনেছি, খালেদা জিয়া ড. ফখরুদ্দীন আহমদ, জে. (অব.) মইন উ আহমেদের বিচার করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। একসময় তিনি শেখ হাসিনা-ইনু-মেননদের বিচারের দাবিও করবেন।
কেন তার এই ক্ষোভ? ওয়ান ইলেভেন তাদের ‘স্বপ্নের চূড়া’ ধ্বংস করে দিয়েছিল বলে? বাংলাদেশের মজলুম মানুষের কোনো স্বপ্নচূড়া নেই। তাদের রয়েছে বেঁচে থেকে হেঁটে যাওয়ার ছোট্ট সড়ক। তারা সেই সড়কের দুধারেই স্বপ্নের বাগান নির্মাণ করে যান। ক্ষমতাবান রাজনীতিকরা যদি সেই বাগানটির সামান্য পরিচর্যা করতেন, তবে বাংলাদেশের বাস্তবতা ভিন্নরকম হতো।
সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশের মানুষ। বর্তমান সরকার সব দাবি পূরণ করতে পারছে না। এটা তাদের অপারগতা, ব্যর্থতা। আর বিরোধী দল আগুনে ঘি ঢালছে। তাদের মূল লক্ষ্য ক্ষমতা। জনসেবা নয়। তৎকালীন স্পিকার আবদুল হামিদ নিউইয়র্কে এক সমাবেশে বলেছিলেন, বাংলাদেশ দুর্বৃত্তদের টাকা বানানোর জন্য বিশ্বের প্রধানতম দেশ! স্বয়ং স্পিকারের মুখে এ কথা কি প্রমাণ করে না, দেশের প্রকৃত অবস্থা কী! এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে হবে। গণমানুষের হাঁটার সড়ক নির্মাণে মানুষকেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রাজনীতিকদের ভ-ত্বের লেবাস খুলতে হবে প্রজন্মকেই।
এ প্রসঙ্গে মনে রাখা উচিত, খন্দকার মুশতাক, তাহেরউদ্দিন ঠাকুরের মতো মীরজাফররা সে সময় আওয়ামী লীগেই ছিল। অথচ জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার নেপথ্যে এদের প্রত্যক্ষ ম“ ছিল। ইতিহাস সে সব ঘটনার আজো সাক্ষী হয়ে আছে। এভাবেই বিশ্বাসঘাতকদের একটি মহল এখনো বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে একটি বলয়ের মাঝে রেখেছে। যারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রকৃত অবস্থা জানাতে চায় না কিংবা চাইছে না। রাষ্ট্রের চারপাশে যখন সম্মিলিত পাপ দানা বাঁধে তখন তা প্রতিহত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের এই ক্ষণে এসব হায়েনাচক্র নীরব থাকবে তা মনে করার কোনো কারণ নেই। তারা মরণ কামড় মারতেই পারে। তাই সবদিকে খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি। রাষ্ট্রে যাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কেউ সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে পরিশুদ্ধ হাতে। বাংলাদেশে ভোগবাদী মানুষের সংখ্যা খুব বেশি নয়। ত্যাগী মানুষের সংখ্যাই বেশি। এই যে ত্যাগী মানুষেরা, তারা কি তাদের ন্যায্য পাওনাটি পান? না, পান না। যদি পেতেন তবে এ রাষ্ট্রের সমাজ ব্যবস্থা হতো বৈষম্যহীন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থার জন্যই আজীবন সংগ্রাম করেছিলেন।
বাংলাদেশে ভোগবাদী মানুষ ও মানসিকতার হিংস্রতা যে দিনে দিনে বাড়ছে তার সাম্প্রতিক অনেক উদাহরণ আছে। এর অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে, অবৈধভাবে দখলের পেশিশক্তি। এই পেশিশক্তিকে ম“ দিচ্ছে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিম-ল। খবরের কাগজ খুললেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের গ্রুপ-উপগ্রুপের যে রক্তাক্ত মহড়া হচ্ছে তার খবর আমরা পড়ি। কিন্তু এসব মহড়ার নেপথ্য নায়করা সংযুক্ত আরো শীর্ষপর্যায়ে। তারা এতোটাই নির্ভয় যে, এসব রাষ্ট্রীয় নীতিমালার সামান্য ধারও ধারে না তারা। কারণ তারা মনে করে, রাজনীতির লেবাস তাদের রক্ষা করবে। এবং সেটাই হয়। সভ্য বিশ্বে চরম দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকরা মাথা তুলে দাঁড়াবার সাহস না পেলেও বাংলাদেশে জঘন্য দুর্নীতিবাজরা আয়েশের সঙ্গেই সময় কাটিয়ে দেয়।
সজীব ওয়াজেদ জয় দেশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তার পাশে আমরা নতুন কিছু মুখ দেখছি। এরা কারা? তাদের পুরো পরিচয় জয়ের জানা দরকার।
কারণ জয় ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা কীভাবে সম্ভবÑ তা জয়কেই ভাবতে হবে। উপগ্রুপ করে শুধু দলেরই ক্ষতি হবে নাÑ রাষ্ট্রের ক্ষতিই ডেকে আনা হবে। এই দেশে যদি মৌলাবাদী-জঙ্গি শক্তি ক্ষমতা পায়, তাহলে তারা কী করবে সেই ছক করে রেখেছে। দেশের সিংহভাগ মানুষ যদি সেই নৃশংসতা দেখতে না চান, তবে একাত্তরের পরাজিত শক্তির বিষদাঁত ভেঙে দিতেই হবে। রাষ্ট্র ও মানুষের শান্তিরক্ষার জন্য সচেতনতা খুবই জরুরি।
----------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ // ঢাকা // : শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৩
©somewhere in net ltd.