![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
রাষ্ট্রস্বার্থে রাজনীতির পথরেখা
ফকির ইলিয়াস
====================================
একজন বন্ধু বাংলাদেশ থেকে ই-মেইল করেছেন। লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রে যে ‘শাটডাউন’ চলছে তা নিরসনের জন্য আপনারা কী করছেন? তিনি আরও লিখেছেন, আপনারা রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট সিনেটর-কংগ্রেসম্যানদের কাছে দাবি জানান- যেন তারা ঐকমত্যে পৌঁছান! তিনি আরও বলেছেন- ওই মার্কিন সিনেটর-কংগ্রেসম্যানরা বাংলাদেশকে নানা নসিহত শোনাতে পারেন। তাহলে এবার আপনারা শোনাতে পারবেন না কেন? তার যুক্তি মন্দ নয়। কিন্তু কথাটা অন্যখানে। এসব সিনেটর-কংগ্রেসম্যানরা জানেন, তারা কী করছেন, কেন করছেন। এরা যা করছেন, তা রাষ্ট্রের মঙ্গলের জন্য। এখানে তাদের ব্যক্তিগত কোনো ফায়দা হাসিলের মওকা নেই। যুক্তরাষ্ট্রে গভর্নমেন্ট শাটডাউন ছিল নিয়মিত একটি রুটিন ওয়ার্ক। সর্বশেষ এটি হয়েছিল ১৯৯৫-৯৬ সালে। তাও দুই দফায় মাত্র ২৮ দিনের জন্য। এবারের আগে সর্বমোট ১৭ বার যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার এ ধরনের শাটডাউনের খাড়ায় পড়েছিল। সবই অল্প ক’দিন করে স্থায়ী হয়েছিল। এবারও খুব বেশি তা স্থায়ী হবে না এটি নিশ্চিত। প্রায় আট লাখ সরকারি কর্মীকে ঘরে বসিয়ে রেখে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের পক্ষে খুব বেশি দিন গোঁ ধরে থাকা সম্ভব হবে না। একটি সমঝোতায় তাদের আসতেই হবে।প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই কিছু অতি জরুরি এবং কিছু কম গুরুত্বপূর্ণ সেবা খাত (সার্ভিস) থাকে। প্রতি বছরের বাজেটে প্রতিটি খাতের জন্যই আলাদা আলাদা করে অর্থ বরাদ্দ করে সরকার। কিন্তু যখনই কোনো কারণে কোনো খাতে বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হয় না, তখনই দেখা দেয় জটিলতা। যে ক্ষেত্রে হয় সে খাত পুরো বন্ধ হয়ে যায় নতুবা অর্থ বরাদ্দ না হওয়া পর্যন্ত কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত রাখতে হয়। যুক্তরাষ্ট্র বাজেট বরাদ্দে জটিলতা দেখা দিলে সরকারের কম গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো সাময়িক সময়ের জন্য কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। কর্মীরা বেতন ছাড়াই ছুটি কাটাতে বাধ্য হন। অর্থ বরাদ্দ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কাজে যোগ দেয়ার সুযোগ থাকে না। কাজে যোগদান করলেও ছুটি কাটানোর সময়ের বেতন পাবেন কি-না তারও নিশ্চয়তা নেই। এ পরিস্থিতিকেই যুক্তরাষ্ট্রে গভর্নমেন্ট শাটডাউন বলা হয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের অনন্য সরকার ব্যবস্থারই একটি ফল।একজন নিউইয়র্কবাসী হিসেবে বলতে পারি, শাটডাউন নিয়ে এখানের মানুষ খুব কমই চিন্তিত। কারণ তারা জানেন এ অচলাবস্থা কেটে যাবে খুব দ্রুতই। যে প্রভাব কিছুটা পড়েছে, সেটাকেও রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে দেখছেন মার্কিনিরা। সেক্রেটারি অব স্টেট (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) জন কেরি বলেছেন, সেবা খাতে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি তাড়াতাড়ি মীমাংসা না হলে যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে হতাশ হওয়ার কারণ নেই। এ শাটডাউন ক্ষণস্থায়ী। তা ছাড়া এশিয়ার মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব প্রতিপালনযোগ্য অঙ্গীকার রয়েছে তা পালন করা হবে। পাশাপাশি এটাও স্বীকার্য যে, যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কত শক্তিশালী ও সামর্থ্যবান তার জানান দিচ্ছে এ শাটডাউন। এটা সরকারের ওপর বিরোধীদের গণতান্ত্রিক শক্তির বহিঃপ্রকাশ।রাজনীতিতে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা খুবই জরুরি বিষয়। কেউ যদি দোষীকে শাস্তি দেয়, আর কেউ যদি সেই দোষীকেই বাঁচাতে তৎপর থাকে- তাহলে সেই রাষ্ট্রে কখনওই শান্তি স্থায়ী হতে পারে না।আমরা সাম্প্রতিক বাংলাদেশের দিকে তাকাতে পারি। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় হয়েছে উচ্চ আদালতে। এ রায়ের বিরোধিতা করছে দেশের প্রধান বিরোধী দল। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সিলেটের জনসভায় বলেছেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জনগণের দল।’ খালেদা জিয়া প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আপনাদের ভাবতে হবে কাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখবেন। এ দেশের জনগণের সঙ্গে নাকি একটি দলের সঙ্গে। বিএনপি-জামায়াত জনগণের দল।’এই যে জামায়াত প্রীতি- তা মেনে নিচ্ছেন না বিএনপিরও অনেক নেতা। এরা চান না বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধুক। কিন্তু খালেদা জিয়া চান যে কোনোভাবে মৌলবাদীদের সঙ্গে আঁতাত করে রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে। বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী যে একটা মৌলবাদী, জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক দল তা আবারও মনে করিয়ে দিয়েছেন পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল আলা মওদুদীর পুত্র সাইয়্যেদ হায়দার ফারুক মওদুদী। তিনি ’৭১-এর খুন, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী নৃশংস কর্মকাণ্ডের জন্য বাংলাদেশের উগ্র ধর্মবাদী দল জামায়াতে ইসলামীকে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পরামর্শ দিয়েছেন।তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিচার করা হোক। আর এ বিচার কাজে তিনি তার সাধ্যমতো সহযোগিতা করবেন বলেও জানিয়েছেন।বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী দল ধর্মের নামে যে সন্ত্রাসী রাজনীতি চালাচ্ছে তার কঠোর সমালোচনা করেন হায়দার ফারুক মওদুদী। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কার্যক্রমেও পাকিস্তান থেকে তিনি সব ধরনের সহযোগিতার প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন।তিনি বলেছেন, তার ব্যক্তিগত পাঠাগারে তার পিতা আবুল আলা মওদুদীর রচনাবলী এবং জামায়াতের বিভিন্ন প্রকাশনীর বিপুল সংগ্রহ রয়েছে। দল হিসেবে গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর ব্যাপারে তিনি সেগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সরবরাহ করবেন।ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে মাদক ব্যবসার সঙ্গে তুলনা করে ফারুক মওদুদী বলেন, আমার বাবা আমাদের সব ভাই-বোনকে সব সময় ধর্মভিত্তিক রাজনীতি কিংবা জামায়াতের রাজনীতি থেকে দূরে রেখেছেন। বিষয়টিকে তিনি মাদক ব্যবসার সঙ্গে তুলনা করেছেন। একজন মাদক ব্যবসায়ী যেমন চায় না তার সন্তানরা কেউ মাদক সেবন করুক, বাবাও তেমনি আমাদের জামায়াতের কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখতেন। এমনকি দূরে দাঁড়িয়ে কখনও জামায়াতের সমাবেশও দেখতে দিতেন না। আমাদের নয় ভাই-বোনের কেউই জামায়াত রাজনীতির সঙ্গে জড়াননি। প্রত্যেকে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন পেশায় ভালো অবস্থানে আছে। তিনি বলেন, জামায়াত একটা ফ্যাসিস্টদের দল। এ দলে আমীরের অবস্থা সেনাপ্রধানের মতো। তাকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। এসব দলকে নিষিদ্ধ করতে হবে।কথাগুলো নতুন নয়। এসব কথা বাংলাদেশের মুক্তমনা মানুষরা জানেন। বাংলাদেশেও যারা মৌলবাদী রাজনীতির পৃষ্ঠপোষক তাদের সন্তানরা অনেকেই বিদেশে বিলাসবহুল জীবনযাপন করে। আর এসব নেতা বাংলাদেশের ধর্মীয় মৌলবাদের ফাঁদ পেতে বলির শিকার করেন সাধারণ মানুষকেই। বাংলাদেশে এ প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে।ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার আমরা আফগানিস্তান-পাকিস্তানে দেখছি। সময় এসেছে দেশের উন্নয়ন ও দেশের ভবিষ্যৎকে মূল্যায়ন করার। এ মহাজোট সরকার যে শতভাগ সফল তা বলা যাবে না। বলার সুযোগও নেই। কিন্তু মহাজোট সরকারের অর্জন তো কম নয়। বিশেষ করে অর্থনীতিতে অবদান, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, শিক্ষার উন্নয়ন, পোশাক শিল্প রফতানি ইত্যাদি বিষয় বিদেশে আলোচিত হচ্ছে।বাংলাদেশের গণতন্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের মতো টেকসই নয়। যদি হতো তাহলে জাতীয় সংসদেই সব বিষয়ের সমাধান করত সরকারি ও বিরোধী দল। তা হয়নি। হবেও না। আর হবে না বলেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিকদের সবক শুনতে হয়। কারণ ‘গরিবের বউ সবার ভাবী’ এমন একটা কথা তো আমরা প্রায়ই শুনি। এ অবস্থা থেকে বাংলাদেশ কবে বেরিয়ে আসবে- আমাদের প্রতীক্ষা সেই দিনের জন্য।
==========================================
দৈনিক যুগান্তর // ঢাকা // ৯ অক্টোবর ২০১৩ বুধবার
©somewhere in net ltd.