![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
নির্বাচন, রাষ্ট্রশাসন ও ভবিষ্যতের বাংলাদেশ
ফকির ইলিয়াস
===========================================
নির্বাচন কি হচ্ছে? বিএনপি কি নির্বাচন করবে? কেমন হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার? এমন অনেক প্রশ্ন। আবার ষাট ঘণ্টার হরতাল। মওলানা শফীর দাম্ভোক্তি, কওমি মাদ্রাসায় হাত দিলে হাত আগুনে পুড়ে যাবে! সব মিলিয়ে আরেকটি চরম সংকটময় সময়ের মুখোমুখি বাংলাদেশ। যে কাজটি আজ আওয়ামী লীগ করছে, বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে তেমনটিই করতো। যদি বিএনপি ক্ষমতায় যায়, তারা যখন নির্বাচন করবেÑ তখন আওয়ামী লীগ কি মানবে? আসছে এমন কথাও। এই যে চরম শঙ্কা, এই যে ভীষণ হতাশা তা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কী? সেই প্রশ্নটি বারবার উঠছে প্রজন্মের মনে। প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের বাণী ধার করে বলি, ‘একটি জাতির আত্মপরিচয়ই সেই জাতিকে বলীয়ান করে তোলে।’ বাঙালি কি সে কথাটি ভুলতে বসেছে? বাঙালি প্রজন্ম কি সেই চেতনা হারাতে চলেছে?
বাংলাদেশজুড়ে মৌলবাদ ও সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিতে আরব মুল্লুকের ১৮টি ইসলামি ব্যাংক বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করছে বলে অভিযোগ করেছে ভারত। এ নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন বলেও বাংলাদেশকে জানিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে নির্বাচন যতো এগিয়ে আসছে, আরব দেশগুলোর সক্রিয়তাও ততো বাড়ছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট রিপোর্ট হাতে এসেছে নয়াদিল্লির। গোটা ঘটনাটির পেছনে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের ভূমিকাও খতিয়ে দেখছে ভারত। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে নিজেদের আশঙ্কার কথা হাসিনা সরকারকেও ঘরোয়াভাবে জানিয়েছে ভারত।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারতের পাওয়া রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের জামাতপন্থী মৌলবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোকে বিভিন্ন খাতে ঢালাও ঋণ দিচ্ছে ইসলামি ব্যাংকগুলো। গোয়েন্দারা অনুমান করছেন, বাংলাদেশে সন্ত্রাসের পরিকাঠামো তৈরি এবং অস্ত্র কেনার কাজেই এই অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে। সীমান্ত অঞ্চলে ভারতবিরোধী কার্যকলাপে এই পুঁজি লাগানো হচ্ছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখছে দেশটির সরকার। রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে মৌলবাদীদের আর্থিক ম“ দেয়া ব্যাংকগুলোর অধিকাংশই সৌদি আরবের। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত এবং কাতারের কিছু ব্যাংকের কার্যকলাপও খুবই সন্দেহজনক। রিপোর্টে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ (আইবিবিএল) ও সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংককে (এসআইবিএল)।
ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয় দেখে অবাক হয়েছে, সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগের প্রচুর প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমের কিছু দেশ অকাতরে ডলার ঢালছে ওই দুটি ব্যাংকে। সৌদি আরবের আল রাজি ব্যাংকও বাংলাদেশে টাকা ঢালতে সক্রিয়। আইবিবিএলের ৩৭ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে আল রাজির হাতে। বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সাবেক নেতা শায়খ আব্দুর রহমান এবং তার সহযোগী সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইও এক সময় পুঁজির জন্য এই ব্যাংকটির ওপর নির্ভরশীল ছিল। খবর বেরিয়েছে, বাংলাদেশে বিএনপি-জামাত জোটের মৌলবাদী রাজনীতি, হেফাজতে ইসলামের উত্থান ও প্রকাশ্য- গোপনে ভারতবিরোধী প্রচার যথেষ্টই অস্বস্তিতে রেখেছে দিল্লিকে। নির্বাচন পর্যন্ত এই অরাজক পরিস্থিতি চলবে বলে মনে করছে দিল্লি। সরকারিভাবে দিল্লির অবস্থান, বাংলাদেশে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কারণ সরকার বদলায় কিন্তু পররাষ্ট্রনীতির অভিমুখ একই থাকে।
বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন ও রাজনীতি এখন বিদেশমুখী। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আলোচনার জন্য ঢাকা থেকে নয়াদিল্লি গেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা। রাষ্ট্রদূত মজিনা সেখানে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশে বিরোধী দলগুলোর ডাকা হরতালসহ সহিংস আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করেন বলে দ্য ইকোনমিস্ট টাইমস পত্রিকায় জানানো হয়েছে। ঐ পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, মজিনা নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তারা বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন এবং বিরোধী দলগুলোর তিন দিনের একটানা হরতালসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় তারা সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার পক্ষে মতামত প্রকাশ করেন। বৈঠকে অংশ নেয়া এক কর্মকর্তা পত্রিকার প্রতিবেদককে বলেন, ‘ভারত আর বাংলাদেশে এখন একই ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করছে।’
বাংলাদেশের এই ঘোর সংকটে পাকিস্তানের গোয়েন্দারা একটা ভূমিকা রাখছে, তা না বুঝার কোনো কারণ নাই। কারণ পাকিস্তান অনেক কিছুই পারেনি। তারা চায় না বাংলাদেশও পারুক। দুঃখের কথা হচ্ছে, পাকিস্তানি হায়েনাদের প্রেতাত্মাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই বিএনপিই দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আটকাতে চেয়েছে শুরু থেকেই। এখন বেগম খালেদা জিয়া বলছেন, বিচার সুষ্ঠু হলে তারাও সমর্থন দিতেন। পেছন ফিরে তাকালে আমরা কী দেখতে পাই? আমাদের মনে আছে ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ ঢাকায় ঘাতক রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে ‘গণআদালত’ আয়োজনের তথাকথিত অপরাধে শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে ‘দেশদ্রোহী’ ঘোষণা করেছিল তৎকালীন বেগম খালেদা জিয়ার সরকার। সরকারি এ ঘোষণার পর আমার ফোনে কথা হয়েছিল শহীদ জননীর সঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটির যুক্তরাষ্ট্র শাখার প্রতিষ্ঠাতা সহকারী সদস্য সচিব হিসেবে শহীদ জননীর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য পাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। তার প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে আমি ফোন করার পর, মা জাহানারা ইমাম হেসে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘বাপু, একটা কথা তোমরা বুঝছো না কেন। আমি যদি দেশদ্রোহী হই তবে সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানও দেশদ্রোহী। কারণ তিনি সেই সময়ের রাষ্ট্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাওয়া সেই মুক্তিযুদ্ধেরই অসমাপ্ত কাজ। আমরা সেটাই চাইছি। তাতে যদি খালেদা জিয়ার সরকার আমাদের দেশদ্রোহী বলে তবে তা তো হাস্যকর ছাড়া কিছু নয়।’
দেশে এখন চিহ্নিত আল-বদরদের সর্বোচ্চ সাজা হচ্ছে। যে মঈনুদ্দিন বিলাতে ও যে আশরাফুজ্জামান খান আমেরিকায় পালিয়ে এসেছিল- তাদেরও ফাঁসির রায় হয়েছে। এরা বাংলাদেশে হয়তো কোনোদিনই আর যাবে না। কিন্তু বিচার হয়েছেÑ এটা একটি রাষ্ট্রের জন্য পরম গৌরবের বিষয়।
যে সংশয়টি সবার মনে, তা হলো আওয়ামী লীগ যদি একাই নির্বাচন করে, যদি আবার ক্ষমতা গ্রহণ করে তবে কতোদিন থাকতে পারবে? তারা কি রাষ্ট্রশাসন করতে পারবে? দেশের জনজরিপগুলো আওয়ামী লীগের বিপক্ষে যাচ্ছে। তারপরও বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার একশতভাগ গ্যারান্টি না পাওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে যাবে না। অন্যদিকে ক্ষমতা থেকে নেমে গেলেই দেশে একটা চরম নৈরাজ্য যে শুরু হবেÑ তা ভালোই বুঝতে পারছে আওয়ামী লীগ।
এদিকে ঢাকায় সমাবেশে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচনের কথা আবার বলেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেনÑ ‘সময়মতো নির্বাচন হবে। ইনশাল্লাহ, জনগণ নৌকায় ভোট দিয়ে তাদের সেবা করার সুযোগ করে দেবে।’ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের ফলে সরকারের মেয়াদ শেষের আগের ৯০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ২৪ জানুয়ারির আগেই নির্বাচন হবে। এটাই আপাতত সকলের প্রত্যাশা।
অন্যদিকে বিএনপি-জামাত-হেফাজত দেশে একটা গণঅভ্যুত্থান করে সরকার বদলের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেই জানাচ্ছেন বিএনপির সিনিয়র কিছু নেতা। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলে, নির্বাচনের দিন মানুষ ভোটকেন্দ্রে যেতে না পারলে, ঐ সময়ে হতাহতের সংখ্যা বেড়ে গেলে তা কি বহির্বিশ্ব মানবে? কথা এখন একটাই- আওয়ামী লীগ কি রক্তপাতহীন ক্ষমতা পরিবর্তন করতে পারবে? আগ্রহী হবে?
গদিতে টিকে থাকা আর রাষ্ট্রশাসন করা নিজের ইচ্ছায় হয় না। এর জন্য গণমানুষের সমর্থন লাগে। আর সে জন্যই পরিচ্ছন্ন নির্বাচনের মুখোমুখি হতে হয় রাজনৈতিক দলগুলোকে। আমরা যারা একটি সোনার বাংলাদেশ চাই, তারা অবশ্যই চাই- রাজনৈতিক বুঝাপড়া করেই এগিয়ে যাক এদেশের আপামর মানুষ।
--------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ // ঢাকা // : শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০১৩
©somewhere in net ltd.