![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
স্বাক্ষরিত টিকফা চুক্তি ও নির্বাচনী তফসিল
ফকির ইলিয়াস
======================================
অবশেষে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়েছে। প্রায় একই সময়ে ওয়াশিংটনে স্বাক্ষরিত হয়েছে টিকফা চুক্তি। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মতপার্থক্য দূর করার লক্ষ্যে ট্রেড এন্ড ইনভেস্টমেন্ট কোঅপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্টের (টিকফা) খসড়া অনুমোদন দেয় বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা। নির্বাচনকালীন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েই, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের টিকফা চুক্তি যথাসময় সই হবে বলে জানিয়েছিলেন নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন মাহমুদ আলী। টিকফা চুক্তি নিয়ে গেলো প্রায় এক দশক থেকেই নানা কথা হচ্ছে। পক্ষে-বিপক্ষে অনেকেই বলছেন। মূল বিষয়টি হলো মার্কিনি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে বাণিজ্যে নিজেদের নেপথ্য কর্তৃত্ব। বাংলাদেশ সেই চুক্তি থেকে কতোটা ফল গ্রহণ করতে পারবে সেটাই হলো বাংলাদেশের কাছে প্রধান দেখার বিষয়। টিকফা নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। টিকফা কী- সে বিষয়ে যৎসামান্য বলা দরকার। ‘টিকফা’ চুক্তিতে কী কী ধারা রয়েছে তা বাংলাদেশের মানুষ ক্রমশ জানতে পারবে, বুঝতে পারবে। এই চুক্তি নিয়ে চরম গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছিল। এর আগে এর নাম ছিল টিফা। পরে ‘কোঅপারেশন’ শব্দটি যুক্ত হবার পর তা হয়ে উঠে টিকফা।
২০০৫ সালে টিফার চুক্তি সংক্রান্ত কিছু তথ্য ফাঁস হয়ে যায়, যেটাতে দেখা যায় অন্যান্য দেশে যে সমস্ত টিফা চুক্তি হয়েছে তার সঙ্গে বাংলাদেশের ধারা-উপধারাগুলো মিলে যায়। এই আলোচনা সেই ফাঁস হওয়া ড্রাফটের ওপর করা হয়েছে। এই চুক্তির খসড়ায় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সহযোগিতার মাধ্যমে উভয় দেশের বন্ধন সুদৃঢ় করার উল্লেখ থাকলেও চুক্তির বিভিন্ন প্রস্তাবনায় এবং অনুচ্ছেদে বাজার উন্মুক্তকরণ এবং সেবা খাতের ঢালাও বেসরকারিকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাতসমূহে বিশেষ করে সেবা খাতগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কোম্পানির আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সুস্পষ্ট রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। চুক্তির প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, উভয় রাষ্ট্রই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য উদারনৈতিক নীতি গ্রহণ করবে। বেসরকারি খাতের বিকাশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং উভয় দেশের উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কমিশন’ প্রাইভেট সেক্টরের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় কৌশল ও পরামর্শ সরবরাহ করবে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শুধু সার্ভিস সেক্টরের কথা উল্লেখ রয়েছে, ‘পণ্য’ উৎপাদনের বিষয়টি সংযুক্ত রাখা হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে বাংলাদেশে যে বিনিয়োগ করবে, তা শুধু সেবা খাতেই। তারা কোনো পণ্য এ দেশে উৎপাদন করবে না। চুক্তির এসব ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কোম্পানির বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য দেশের বাজার উন্মুক্ত করে দিবে এবং বিদ্যমান শুল্ক এবং অশুল্ক বাধাসমূহ দূর করতে বাধ্য থাকবে। বাংলাদেশকে দেশীয় শিল্পের, কোম্পানির প্রতি সুবিধা প্রদানকারী বাণিজ্য সংক্রান্ত অভ্যন্তরীণ সংরক্ষণ নীতি প্রত্যাহার করতে হবে।
টিকফা চুক্তিতে বলা হয়েছে বাংলাদেশ ১৯৮৬ সালে স্বাক্ষরিত ‘দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি’ অনুযায়ী মার্কিন বিনিয়োগকারীদের অর্জিত মুনাফা বা পুঁজির ওপর কোনো কর আরোপ করতে পারবে না এবং বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেয়া হলে তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এই চুক্তির মাধ্যমে বিনিয়োগের বিশেষ সুরক্ষাসহ মার্কিন কোম্পানিগুলোকে সেবাখাতে বাণিজ্যের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে দেশের জ্বালানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, বন্দর, টেলিযোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন ইত্যাদি সেক্টরকে মার্কিন পুঁজিপতিদের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। চুক্তির প্রস্তাবনা অনুযায়ী বাংলাদেশকে দোহা ডেভেলপমেন্ট এজেন্ডা অনুসারে কৃষিতে ভর্তুকি হ্রাসকরণ এবং মুক্তবাজার অর্থনীতি গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া টিকফা চুক্তির অন্যতম দিক হচ্ছে মেধাস্বত্ব আইনের কঠোর বাস্তবায়ন।
সদ্য যে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছে তাতে মোট ১৬টি অনুচ্ছেদ ও সাতটি আর্টিকেল আছে। অনুচ্ছেদগুলোতে বলা হয়েছেÑ দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার হবে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রসারে উন্মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হবে, জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশন অনুযায়ী স্বচ্ছতা বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে, শুল্কবহির্ভূত প্রতিবন্ধকতা হ্রাস করা, নিজ নিজ শ্রম আইন কার্যকর করা, এক পক্ষ অন্য পক্ষের ভূখ-ের শিল্পোদ্যোগ এবং অন্যান্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগকে উৎসাহিত ও ত্বরান্বিত করবে। আর্টিকেলগুলো হলোÑ ১. উভয় দেশে আকর্ষণীয় বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টি এবং পণ্য ও সেবা বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বহুমুখীকরণে এ চুক্তি। ২. চুক্তির ফোরামে বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ (ইউএসটিআর) অফিস সভাপতিত্ব করবে। পরিস্থিতির প্রয়োজনে অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিতে পারবে। ৩. বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনার জন্য উভয় দেশ কমপক্ষে বছরে একবার বৈঠক করবে। ফোরাম বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক পরিবীক্ষণ করবে এবং বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগ শনাক্ত করবে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলো বিবেচনায় আনতে হবে। এ ছাড়া প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে দূর করার জন্য কাজ করবে। ফোরামের কাজ সম্পর্কে বেসরকারি খাত ও সুশীল সমাজের পরামর্শ নেবে। ৪. যে কোনো পক্ষ অন্য পক্ষকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লিখিত অনুরোধপত্রের মাধ্যমে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত যে কোনো বিষয়ে উপস্থাপন করতে পারবে। এরপর ফোরাম দ্রুত বিবেচনায় আনবে। কোনো বিষয়ে অন্য পক্ষের বাণিজ্য বা বিনিয়োগ স্বার্থকে বিরূপভাবে প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হলে বিষয়টির ওপর ব্যবস্থা গ্রহণের আগে বিবেচনার জন্য ফোরামকে সুযোগ প্রদানে সচেষ্ট হবে। ৫. কোনো পক্ষের রাষ্ট্রীয় আইন কিংবা অন্য কোনো পক্ষের অধিকার, দায়বদ্ধতা ও সুবিধা ক্ষুণœ করবে না। ৬. তবে কোনো পক্ষ লিখিত নোটিশ দিয়ে এ চুক্তির অবসান করতে পারবে। উভয়পক্ষ বাতিলের ব্যাপারে সম্মত হতে না পারলে নোটিশ দেয়ার ১৮০ দিন পর চুক্তিটির অবসান হবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশে এখন নির্বাচনী অনলে পুড়ছে। একপক্ষ ক্ষমতায় পুনর্বার যাওয়ার জন্য ব্যস্ত। অন্যপক্ষ এদের ঠেকাতে ব্যস্ত। মানুষ মরছে। রেললাইন উপড়ে ফেলা হচ্ছে। এর মাঝেই ঘোষিত হয়েছে নির্বাচনী তফসিল। ৫ জানুয়ারি ২০১৪ রোববার নির্বাচন। বিএনপি নির্বাচনে যাবে না কিংবা বিএনপিকে নির্বাচন করতে দেয়া হবে নাÑ কথাটি দুভাবেই বলা যায়। আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধন করেই মাঠে নেমেছে। এটা বিএনপির অজানা নয়। কিন্তু ‘আপোসহীন’ নেত্রী আইনের সঙ্গে কতোটা যুদ্ধ করবেন, সেটা যেন তার অলিখিত ভাগ্যই হয়ে গিয়েছে। তফসিল ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় ১৮ দলের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসে বিএনপির মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘একটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটের অধিকার হরণের জন্য মেরুদন্ডহীন ও পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন যে তফসিল ঘোষণা করেছে, তা আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।’ দেশবাসীর প্রত্যাশা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর্যুপরি আহ্বান উপেক্ষা করে ‘প্রহসনের’ নির্বাচনের দিকে নির্বাচন কমিশন এগোচ্ছে বলে দাবি করেছেন তিনি। আরো বলেছেন- ‘নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে রাজনৈতিক সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত আমরা এই তফসিল স্থগিত রাখার দাবি জানাচ্ছি।’
অন্যদিকে একাত্তরের পারাজিত আলবদর-রাজাকারদের দোসররা বলেছে তারা ৫৫ হাজার বর্গমাইল পুড়িয়ে দেবে। আমরা এতোদিন জানতাম ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশ। ঐ আলবদর জঙ্গিরা ৫৫ হাজার বর্গমাইল পুড়াবে। এক হাজার বর্গমাইল কি রেখে দেবে নিজেদের জন্য? ওখানে তারা নব্য পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করবে? তারা সাম্প্রতিককালে যা বলছে এর কিছু নমুনা এখানে তুলে ধরা দরকার। ওরা বলছেÑ ‘কাদের মোল্লার রায় নিয়ে নাড়াচাড়া করলে ৫৫ হাজার বর্গমাইল জ্বালিয়ে দেয়া হবে’। ‘মতিউর রহমান নিজামীকে এক মিনিটের সাজা দেয়া হলে সারা দেশ অচল করে দেয়া হবে’। ‘অবৈধ মন্ত্রীদের গণধোলাইয়ের’ মাধ্যমে প্রতিহত করা হবে ।
শুধু তাই নয় ওরা বলছে- সরকারকে প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ‘সীতাকুন্ড’ একটি নমুনা মাত্র। দাবি না মানলে সারা বাংলাদেশ সীতাকু- হয়ে যাবে। বলা দরকার, বেশ কিছুদিন ধরে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে জামাত-শিবিরসহ বিরোধী জোটের কর্মীদের তা-বে প্রায়ই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ থাকছে। গাড়ি ভাঙচুর, আগুন দেয়া, যাত্রীদের মালামাল লুটের ঘটনা ঘটছে। দেশে ওরা যে চরম অরাজকতা চালাবে তা নিশ্চিত। এর থেকে মুক্তির উপায় কী? দেশে একজন গরিব রিকশাওয়ালা রিকশা চালাতে পারবেন না, মজুর কাজ করতে পারবেন না, শিক্ষক ক্লাস নিতে পারবেন না, ছাত্র ক্লাসে যেতে পারবেন না, রোগী বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেনÑ এসব তো হতে পারে না, হতে দেয়া যায় না। প্রতিটি সাধারণ মানুষের অধিকার সমুন্নত থাকা দরকার।
আমি মনে করি, অনতিবিলম্বেই দেশে যৌথ বাহিনীর টহল সর্বোচ্চভাবে বাড়ানো দরকার। নির্বাচনের অনেক আগেই দেশের অতন্দ্র প্রহরী সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানো প্রয়োজন। কারণ কড়া সেনা প্রহরা ছাড়া এই সময়ে দেশের সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব নয়। টিকফা চুক্তির মাধ্যমে মার্কিনি বন্ধুদের সবুজ সংকেত আওয়ামী লীগ পেয়েছে কিনা- তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। তবে বাংলাদেশে সহিংস রাজনীতি চিরতরে পরিত্যাজ্য হোক এটা মার্কিনি নীতিনির্ধারকরা বার বার বলে আসছেন। দেশের মানুষ এ মুহূর্তে শান্তি চান। তাই যে কোনো ধরনের আক্রমণকারীর হাত থেকে দেশের সাধারণ মানুষকে বাঁচানো সরকারেরই বড় দায়িত্ব।
----------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ // ঢাকা // : শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০১৩
©somewhere in net ltd.