![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
নির্বাচন, নৈরাজ্য, নির্যাতন
ফকির ইলিয়াস
======================================
বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হয়েছে। এই নির্বাচনে কেউ ভোট দিয়েছে। কেউ দেয়নি। ভোট না দেয়াটা যেমন কারো ইচ্ছা- ভোট দিলেও কাউকে বাধা দেয়াটা অন্যের অধিকারের ওপর আক্রমণের শামিল। বাংলাদেশে সেটাই হয়েছে। প্রতিবার ইলেকশন এলেই এমন একটা ‘কালো অজগর’ দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর চড়াও হয়। কেন হয়, তা এদেশের মানুষের অজানা নয়।
আমরা মিডিয়ায় একটি সংবাদ পড়েছি। সিলেটের বিশ্বনাথে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর গ্রামের বাড়ি রামাধানা কেন্দ্রে কেউ নাকি ভোট দিতে যায়নি। দেখার বিষয় হচ্ছে, ঐ এলাকার মানুষকে কেউ ভোট দিতে ফোর্সও করেনি। চাইলে করতে পারতো। সেটাই যদি হয়, তাহলে যশোরের হিন্দু সম্প্রদায় ভোট দিতে গিয়ে কি কোনো অপরাধ করেছে? তাদের ওপর এমন নির্লজ্জ আক্রমণ হলো কেন? কেন নিরপরাধ শিশু, মহিলা, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে এমনভাবে নাজেহাল করা হলো ? কেন বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হলো ? দিনাজপুরেও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে এসব এলাকায় পুড়েছে শতাধিক কাঁচাঘর এবং কয়েকশ পরিবার সর্বস্ব হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়েছে। হামলা হয়েছে মাগুরায়ও। আক্রান্তরা অভিযোগ করেছেন, ভোট দেয়ায় তাদের ওপর হামলা হয়েছে। বিএনপি-জামাত জোটের বর্জনের মধ্যে গেলো রোববার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়, যাতে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। এমনটি যে হচ্ছে, তা দেশবাসী আগেই জেনে গিয়েছিল। কারণ ১৫৩টি আসনে একক প্রার্থী ছিলেন। এই ভোট ঠেকানোর হুমকি ছিল বিএনপি-জামাত জোটের। আর ভোটের পরই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর এই হামলা হয়। ভোটের পর দিনাজপুর সদর উপজেলার একটি গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালিয়েছে নির্বাচনবিরোধীরা। গত রোববার চেহেলগাজী ইউনিয়নের কর্ণাই গ্রামে এ হামলা থেকে রক্ষা পেতে প্রায় অর্ধশত পরিবারের লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে স্থানীয় সমাজসেবী রেজাউল করিম রাকির বাড়িতে আশ্রয় নেন। সবচেয়ে লজ্জা ও শোকের কথা হচ্ছে, এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আবেদন করেও কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ ওই পরিবারগুলোর। মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছে, রোববার কর্ণাই সরকারি প্রাথমিক বিদালয় কেন্দ্রে ভোট গণনার পরপরই ভোটে অংশ নেয়ায় জামাত-শিবিরের কয়েকশ ক্যাডার সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। হামলাকারীরা লাঠিসোঁটা ও দেশী অস্ত্র নিয়ে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কর্ণাই গ্রামের সাহাপাড়া, প্রিতমপাড়া, প্রফুল্লপাড়া, তেলীপাড়া, বৈদ্যপাড়া, হাজীপাড়া ও অজয়পাড়ায় প্রায় তিন ঘণ্টা তা-বলীলা চালায়। গভীর রাত পর্যন্ত হামলাকালে তারা ৪/৫টি বাড়ি, ৬/৭টি দোকান জ্বালিয়ে দেয়। এছাড়া শতাধিক বাড়ি, অর্ধশতাধিক দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে এবং মূল্যবান মালামাল লুট করে। হামলার শিকার দীপক কুমার, শিবু চন্দ্র, রতন চন্দ্র, চঞ্চল চন্দ্র, ভরত চন্দ্র মুকুল চন্দ্রসহ গ্রামের লোকজনের অভিযোগ, ভোট দেয়ার অপরাধে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে নির্বাচন বিরোধীরা। ভোটের আগে এরাই তাদের ভোটকেন্দ্রে না যেতে বলেছিল। হামলা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি আলতাফ হোসেন মিডিয়াকে জানিয়েছেন, নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকায় ওদিকে নজর দিতে পারেনি পুলিশ। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। এটা কোনো কথা হলো ? কী হতে পারে তা এদেশের গোয়েন্দারা জানেন না? তাহলে ব্যবস্থা আগেভাগেই নেয়া হলো না কেন? দুর্বৃত্তের আগুনে ভস্মীভূত দিনাজপুরের কর্ণাই গ্রামে হিন্দুদের ঘর স্থানীয় সাংসদ ইকবালুর রহিমসহ প্রশাসনের লোকজন গেলো সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। যশোরেও, ভোট শেষের পর রোববার সন্ধ্যায় অভয়নগরের চাপাতলা গ্রামের মালোপাড়ায় হামলা করে হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপর স্থানীয়দের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নেভান। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রাতেই ঘটনাস্থলে যান এবং সেখানে অবস্থান নেন।
বাংলাদেশে এমন ঘটনা বারবার ঘটছে কেন? মনে রাখা দরকার এই দেশে একটি মহল ‘দ্বিজাতিতত্ত্ব’ নামক সম্পূর্ণ মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক এবং সুবিধাবাদী ফরমান জারি করে হিন্দু-মুসলিম দ্বেষ তৈরি করেছে সেই ১৯৪৭ সাল থেকেই। দ্বিজাতিতত্ত্বের ওপর ভিত্তি করেই পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম দেয়া হয়। আমরা জানি এর দুই অংশের মধ্যে দূরত্ব ছিল হাজার মাইল। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ভাষা, সংস্কৃতি-কৃষ্টি ও মূল্যবোধ পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষের ভাষা, সংস্কৃতি-কৃষ্টি ও মূল্যবোধ থেকে ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। একটি আধুনিক রাষ্ট্র গঠনে এসব উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ এ উপাদানগুলো জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটায়। কিন্তু এ উপাদানগুলো ভিন্নতর হওয়া সত্ত্বেও শুধু ধর্মের দোহাই দিয়ে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানকে এক রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বিশ্বসভ্যতা বারবার প্রমাণ করছে, চলমান কালে একটি আধুনিক রাষ্ট্রের ভিত্তি কেবল ধর্ম হতে পারে না। ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের ধারণা বর্তমান শতাব্দীতে সম্পূর্ণ অচল। আজকের বাংলাদেশের মানুষ তা বুঝতে পারেন ২৪ বছর পাকিস্তানিদের হাতে শোষিত হবার পর। ঐ সময়ও ধর্ম কোনো মুখ্য বিষয় ছিল না। এই ভূখ-ের সকল ধর্মের মানুষই একটি স্বাধীন স্বদেশ চেয়েছিলেন। তাই পাকিস্তান রাষ্ট্র ভেঙে গিয়ে এখানে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের উত্থানের সম্ভাবনা দেখা দেয়। এ সম্ভাবনা পরিপক্বতা লাভ করে অনেক আন্দোলন ও সংগ্রামের পথ বেয়ে যায়। প্রথম সংগ্রাম শুরু হয় ভাষাকে কেন্দ্র করে। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় দেশ-বিভাগের পরবর্তী বছর থেকে। প্রথম পর্যায়ে আন্দোলন খানিকটা স্তিমিত হয়ে পড়লেও দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৯৫২ সালে আন্দোলন আরো শক্তিশালী হয়। বাংলা ভাষার দাবিতে এ দেশের ছাত্রজনতা প্রাণ দিতে কুণ্ঠাবোধ করেনি। বাহান্ন সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের ইতিহাসে রক্তে লেখা একটি স্মরণীয় দিন। এইদিন ভাষার দাবিতে শহীদ হয়েছিল বেশ কিছু ছাত্রজনতা। কিন্তু শহীদের রক্ত বৃথা যায়নি, বৃথা যেতে পারে না। পরবর্তী বছরগুলোয় ভাষার দাবি তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
এর পরই মহান মুক্তিযুদ্ধ এই বাংলাদেশের জন্ম দেয়। কথা হচ্ছে, এদেশের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-আদিবাসীরাও তো মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। তারাও এদেশের নাগরিক। তাহলে বারবার তারা নির্যাতিত হবেন কেন? বলার অপেক্ষা রাখে না, আজকের বাংলাদেশ তথা পূর্ব বাংলার শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন এই অঞ্চলের হিন্দু জমিদার, বিত্তবানরা। তাদের নামে এদেশের অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম এখনো সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। তারা ধনবান ছিলেন। কিছু হায়েনা রক্তচক্ষুর লালসা ছিল ঐ সম্পদের প্রতি। আর এরাই কৌশলে যুগে যুগে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। যা এখনো চলছে। ঐ তস্করেরা মনে করে হিন্দুরা ইন্ডিয়া চলে গেলেই জায়গা সম্পত্তি ভোগ করতে পারবে। তাই মাঝে মাঝেই ওরা সন্ত্রাস ছড়ায়। বাংলাদেশে নির্বাচন হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, ৫৩১টি স্কুল পোড়ানো হয়েছে। কারা পুড়িয়েছে? কেন পুড়িয়েছে? তা খোঁজা দরকার। নির্বাচন কমিশন সরকারের তাঁবেদার। হুকুম তামিল করে রাষ্ট্রের। ঐ প্রিসাইডিং, পোলিং অফিসারদের হত্যা করা হবে কেন? নির্বাচন পরবর্তী রাষ্ট্রের সামনে খুব কঠিন সময়। বারবার বলা হচ্ছে, সরকার জিরো টলারেন্স দেখাবে? আর কবে দেশের মানুষ দেখবে ঐ ‘জিরো টলারেন্স’? সমস্যার সমাধান রাজনীতিকদেরই করতে হবে। তার আগে সকল সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে। দেশে-বিদেশে দাবি উঠেছে বিএনপিকে জামাতের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। আমার মনে হয় না, বিএনপি তা করবে। তাই একসময় আমেরিকা-ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতিনির্ধারকরাও জঙ্গিবাদী-মৌলবাদীদের ভয়ানক চেহারা বুঝতে পারবেন, সেদিন খুব দূরে নয়।
দেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষার জন্য সকল মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে। গোটা দেশব্যাপী সমন্বয় করতে হবে। মনে রাখা দরকার দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা দেড় কোটিরও বেশি। তাই তাদের ভয় পাবার কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। এই দেশ সকল মানুষের। অতীতেও ঐ পাষণ্ডরা টিকে থাকতে পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে না। সবশেষে বলি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে প্রমাণ করতে হবে তিনি প্রকৃত অর্থেই একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চান। মানবতার জয় হোক। প্রজন্ম ধরে রাখুক বাংলাদেশের অহিংস ঐক্য।
------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ // ঢাকা // : শনিবার, ১১ জানুয়ারি ২০১৪
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৫৩
বুড়া শাহরীয়ার বলেছেন: khub i clear .... todonto korar age porjonto jamat shibir koreche ar todonto korlei ber hoye ashe aoyami kal shap.