নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারতের জাতীয় নির্বাচন ও বাংলাদেশ প্রসঙ্গ

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ ভোর ৬:৫৯

ভারতের জাতীয় নির্বাচন ও বাংলাদেশ প্রসঙ্গ

ফকির ইলিয়াস

________________________________________



হ্যাঁ, বিজেপিই ভারতে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসছে। এটা প্রায় নিশ্চিত। বিজেপি এর আগেও ঐ দেশের ক্ষমতায় ছিল। ভারতে গণতন্ত্র তখনো ভেঙে পড়েনি। এখনো পড়বে না। দেশটির নির্বাচন কমিশনের মতে, ভারতীয় পার্লামেন্ট বা লোকসভায় মোট ৫৪৩ আসনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনে ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়া গেলো ৭ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে। ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর আগামী ১৬ মে ফলাফল ঘোষণার কথা রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আকৃতির দিক থেকে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের লোকসভার নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলো ছাড়াও জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই বিশ্বজুড়ে। সব রাজ্যে লোকসভার পাশাপাশি, অন্ধ্রপ্রদেশ, উড়িষ্যা ও সিকিম রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনেরও ভোটগ্রহণ হবে। তবে লোকসভার নির্বাচনে এবারে ভারতে মোট ভোটার সংখ্যা ৮১ কোটি ৪৫ লাখ। আর ভারতজুড়ে কেন্দ্র সংখ্যা ৯ লাখ ৩০ হাজার।

ভারতের লোকসভা নির্বাচন নিয়ে সমীক্ষা বা বিশ্লেষণ চলছেই। নির্বাচনে হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ২৩৪ থেকে ২৪৬টি আসন পেতে পারে বলে সিএনএন-আইবিএন এবং সিএসডিএস পরিচালিত এক জরিপে বলা হয়েছে। জরিপের ফলাফল অনুযায়ী কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ পেতে পারে ১১১ থেকে ১২৩টি আসন। জরিপের এই তথ্য অনুযায়ী এনডিএর অর্ধেক আসন পাবে ইউপিএ।

২০০৯ সালের নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছিল ১১৬ আসন। এবার তাদের অবস্থার উন্নতি ঘটতে পারে। তারা এককভাবে পেতে পারে ২০৬ থেকে ২১৮ আসন। অন্যদিকে কংগ্রেস ওই নির্বাচনে পেয়েছিল ২০৬ আসন। তা এবার কমে ৯৪ থেকে ১০৬ আসনে এসে দাঁড়াতে পারে। এ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পদে নরেন্দ্র মোদি পেতে পারেন শতকরা ৪৪ ভাগ ভোট। লোকসভার নির্বাচনকে ঘিরে এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে আলোচনা চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতের নির্বাচনের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ভারতের নির্বাচনকে ‘ঐতিহাসিক নির্বাচন’ আর দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বলছেন ‘গ্লোবাল গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড নির্বাচন’। অন্যদিকে ভারতের মানুষ বলছে- এটি ঐতিহ্য এবং বিশ্বের গণতান্ত্রিক উদাহরণের নির্বাচন।

বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রত্যাশিতভাবেই ভারতের তরুণ ভোটাররা নির্বাচনের পালাবদলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ভারতের মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশের বয়স ৩৫ বছরের নিচে। আর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বয়স ২৫ বছরের কম। ভারতের নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ৫৪৩টি আসনের প্রতিটিতে গড়ে এবার ৪২ হাজার নতুন ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছে যাদের বয়স ১৮ এবং ১৯। মোট ভোটারদের মধ্যে সবচেয়ে উদ্যমী এবং অস্থির বলে পরিচিত এই নতুন ভোটাররা হচ্ছে ১৪ শতাংশ। এ নতুন ভোটারদের বিরাট অংশ হচ্ছে গ্রাম থেকে কর্মসংস্থানের খোঁজে শহরে আসা তরুণ প্রজন্ম। ফলে ভারতের গ্রামে বসবাসকারীর জনসংখ্যা ১৯৬০ সালে যেখানে ছিল শতকরা ৮২.১ তা ২০১০ এ কমে হয়েছে ৬৯.৯%। আর শহরে লোকসংখ্যা ১৭.৯ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০.১ শতাংশ। তরুণ প্রজন্ম পরিবর্তন চাইছে। ভারতের শহুরে যুব সম্প্রদায় আশাবাদী ও পরিবর্তনের পক্ষে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে দিল্লিতে গণধর্ষণের ঘটনায় এ যুব সম্প্রদায় প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। কর্মসংস্থান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং দুর্নীতির পাশাপাশি দিল্লির গণধর্ষণের ঘটনাটি যুব সমাজের ভোটের ক্ষেত্রে যুব সমাজকে প্রভাবিত করতে পারে। ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় নবীন ভোটারদের ক্ষোভে ফেলে দিয়েছে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সরকারকে। চলমান লোকসভা নির্বাচনে তরুণ ভোটাররা তাই বিজেপির দিকে মোড় নিতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদী ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী চেতনাকে উসকে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার উচ্চাকাক্সক্ষায় নির্বাচনী প্রচার ও দল পরিচালনা করছেন। মোদি লোকসভা নির্বাচনের প্রচারকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন বানিয়ে ফেলছেন বলেই অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন। মোদি অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েই নির্বাচনী প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তার ভূমিকা নিয়ে যথেষ্ট সমালোচনার মুখেই তাকে পড়তে হচ্ছে এখনো।

চলমান লোকসভা নির্বাচনে শুধু ভারতের পরবর্তী সরকার গঠনেই এর ফলাফল ও প্রভাব সীমাবদ্ধ থাকবে না। ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম হিন্দু জাতীয়তাবাদের লড়াইয়ে এরই মধ্যে পুরো ভারত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এ লড়াইয়ের মধ্যেও কংগ্রেস আর বিজেপিকে এ নবীন ভোটারদের কথা মাথায় রাখতেই হবে। নবীন ভোটারদের আশাবাদ ও পরিবর্তনের প্রত্যাশা কতোটুকু বাস্তবায়ন হবে তা ১৬ মে ভোট গণনার পরই হয়তো বলা যাবে। ভোট এলে অনেক নেতার অনেক কথাই আমরা শুনি। আজগুবি ফতোয়া নিয়ে তারা হাজির হন। চমক লাগাতে চান। তেমনি কিছু অর্বাচীন বক্তব্য দিয়েছেন বিজেপির এক নেতা। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)র অন্যতম শীর্ষ নেতা সুব্রাক্ষণিয়ম স্বামী বাংলাদেশের কাছে এক-তৃতীয়াংশ ভূখ- দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, খুলনা থেকে সিলেট পর্যন্ত সমান্তরাল রেখা টেনে এই জমি ভারতের হাতে ছেড়ে দিক বাংলাদেশ। চরম হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির এই শীর্ষ নেতার যুক্তি হলো, দেশ ভাগের পর অধুনা বাংলাদেশ থেকে এক-তৃতীয়াংশ মুসলমান ভারতে অনুপ্রবেশ করেছে। তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে বাংলাদেশকে। অন্যথায় এসব মুসলমানের সংস্থাপনের জন্য বাংলাদেশকে এক-তৃতীয়াংশ ভূখন্ড জমি ছাড়তে হবে ঢাকাকে। আসামের শিলচর থেকে প্রকাশিত বাংলা দৈনিক সাময়িক প্রসঙ্গ এ খবর দিয়েছে। সুব্রাক্ষণিয়ম স্বামীর বক্তব্য হলো, ধর্মের ভিত্তিতে দ্বিধাবিভক্ত হয়েছিল ভারত ভূখ-। তাই পাকিস্তান বা অধুনা বাংলাদেশ থেকে এদেশে যেসব মুসলমান অনুপ্রবেশ করেছে তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে বাংলাদেশকে। অন্যথায় এদের সংস্থাপনের জন্য জমি ছাড়তে হবে ঢাকাকে। স্বামী জানিয়েছেন, এ নিয়ে তিনি এখনো মোদি বা বিজেপির সঙ্গে কথা বলেননি ঠিকই, কিন্তু নতুন এই তত্ত্বের কথা যথাসময়ে দেশের সংসদে উত্থাপন করবেন। সংসদে এ নিয়ে বিতর্ক হওয়া প্রয়োজন সে কথা তিনি দলীয় নেতৃত্বকে বুঝিয়ে বলবেন। আমার মনে হয় না, লোকসভা এমন অযৌক্তিক কথা বা প্রস্তাবের গুরুত্ব দেবে।

বলা দরকার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান দুটি বড় রাজনৈতিক দল যেভাবে গড়ে উঠেছে, ভারতেও বিজেপি ও কংগ্রেস একই আদলের দুটি বড় দল। তাদের কাছে ‘ভারতের স্বার্থ’ই সবচেয়ে বড়। তাই প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতির খুব একটা পরিবর্তন হতে পারেÑ এমন প্রত্যাশা করা যায় না। ভারতে নির্বাচন হচ্ছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মেনেই চলছে সে দেশের মানুষ। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, আমরা আমাদের এই নিকট প্রতিবেশীর কাছ থেকে গণতন্ত্রের এই শিক্ষাটুকু নিতে পারিনি। অন্যদিকে এটিও সত্য যে, এই গণতান্ত্রিক প্রতিবেশীও আমাদের সঙ্গে সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। অবস্থা দেখে মনে হয়, তারা নিজেদের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক হলেও প্রতিবেশীর ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার চেয়ে আনুগত্যশীল ব্যবস্থাই বেশি পছন্দ করে। ভারতের এই আচরণ গণতান্ত্রিক নয় বরং আধিপত্যবাদী। যদি সেটা না হতো, তাহলে বারবারই ভারতের অনেক রাজনীতিক অসংলগ্ন কথা বলতে পারতেন না বাংলাদেশ নিয়ে।

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। তিরিশ লাখ শহীদের রক্তে ভেজা এই মাটি। এ মাটি নিয়ে মনগড়া বক্তব্য কাম্য নয় কোনো মতেই। ভারতের রাজনীতিকরা যতো বেশি তা অনুধাবন করবেন, ততোই উভয় পক্ষের জন্য মঙ্গল।

-------------------------------------------------------------

দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ : ২৬/এপ্রিল/২০১৪ শনিবার

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৮:৫৫

ডার্ক ম্যান বলেছেন: ভাই বিজেপি হোক আর কংগ্রেস হোক, ওদের পররাষ্ট্র নীতি একটাই আর তা হল শুধু ভারতের স্বার্থ।

২| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১:২৭

শামীম সুজায়েত বলেছেন: যদিও বিজেপি নেতা একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানে স্থানীয় সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের সাথে আলোচনায় যা বলেছিলেন, সেটির সারমর্ম হলো বাংলাদেশ থেকে চলে আসা মানুষগুলোর চাপ ঠেকাতে তিনি খুলনা ও সিলেট দাবি করেন। ক্ষমতায় গেলে তারা বিষয়টি তাদের সংসদে উত্থাপন করে ঢাকার ওপর চাপ সৃষ্টি করবে বলে ওই আলোচনায় উল্লেখ করেন।

তাঁর এই বক্তব্য দু:খজনক। এটি স্বীকারও করেছেন সেদেশের রাজনীতিকরা। কিন্তু আমাদের সরকার, বিরোধী দল এবং আমাদের সাবেক বিরোধী দল এটি নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য করলেন না।

মোদির বিজেপির জমি দাবি সংক্রান্ত সামুতে প্রকাশ হওয়া অপর একটি লেখার লিঙ্ক: Click This Link

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.