নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

গুম-অপহরণ আতঙ্কে বাংলাদেশ

১০ ই মে, ২০১৪ সকাল ৭:১৯

গুম-অপহরণ আতঙ্কে বাংলাদেশ

ফকির ইলিয়াস

______________________________________



সম্প্রতি দুজন মন্ত্রী নিউইয়র্ক সফর করে গেছেন। এরা হলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম এবং খাদ্যমন্ত্রী এড. কামরুল ইসলাম। নিউইয়র্কে তারা বেশ কটি মিটিং করেছেন। বেশ কিছু বক্তব্যও দিয়েছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী বলেছেন, ইউনিয়ন কাউন্সিল, পৌরসভা ও উপজেলা নির্বাচনে মোট তিনবার খালেদা জিয়া ও বিএনপির মাজা ভেঙেছে। তাই, বিএনপি আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না। মন্ত্রী প্রবাসীদের দেশে ফেরার প্রস্তুতি নেয়ার ডাক দিয়ে বলেন, এখন একটাই সেøাগানÑ আর নয় বিদেশ, এখন যাবো স্বদেশ। শেখ হাসিনা যেন আরো ১০টি বছর শুধু সুস্থ থাকেন, সে দোয়া চেয়ে মায়া বলেন, আগামী ২০১৯ সাল পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করলেই দেখবেন কষ্টের এই প্রবাস ছেড়ে সবাই দেশে ফিরতে লাফিয়ে লাফিয়ে বিমানে উঠছেন।



এই হলো একটি খবর। আরেকটি খবর আছে প্রিয় পাঠক। তা হলো- নারায়ণগঞ্জে প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণের পর খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত লে. কর্নেল তারেক সাঈদকে সেনাবাহিনী থেকে আগাম অবসরে পাঠানো হয়েছে (প্রি-ম্যাচিউরড রিটায়ারমেন্ট)। একইভাবে অভিযুক্ত মেজর আরিফকে আগাম অবসরে পাঠানো হয়। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্বাহী আদেশে সেনাবাহিনী এই ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এই দুই সেনা কর্মকর্তা আপাতত তাদের বর্তমান বাসায়ই থাকতে পারবেন। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে এ দুজনসহ সব অভিযুক্তকেই ফৌজদারি আইনে আদালতের মুখোমুখি হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জে সাত হত্যাকা-ে জড়িত যে কেউ, এমনকি কোনো মন্ত্রীর জামাতা হলেও রেহাই নেই বলে ঘোষণা দেয়ার পরদিনই লে. কর্নেল তারেকসহ দুই সেনা কর্মকর্তার ব্যাপারে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো। লে. কর্নেল তারেক সাঈদ, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর জামাতা। এদিকে র‌্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটিতে বলেছেন, তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে র‌্যাবের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। হাইকোর্টও এক স্বপ্রণোদিত নির্দেশে সাত হত্যাকা-ে র‌্যাবের সংশ্লিষ্টতা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।



নারায়ণগঞ্জে আসলে কী হচ্ছে? কী হচ্ছে গোটা বাংলাদেশে? যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আছেন তারা কি বিষয়গুলো অনুধাবন করতে পারছেন? নাকি বলবেনÑ এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা! আমরা এমন সরকারি ধারাভাষ্য অনেক শুনেছি। আর শুনতে চাই না। এগুলো ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা নয়। দেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ। গুম, খুন ও অপহরণের প্রতিবাদে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে উদ্বিগ্ন বিশিষ্ট নাগরিকদের মানববন্ধনে পুলিশ বাধা দিয়েছে। কেড়ে নেয়া হয় ব্যানার, ফেস্টুন ও লিফলেট। পরে সংসদ ভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত আকারে মানববন্ধন করেছেন তারা। সমাবেশের জন্য আনা মাইকের নিয়ন্ত্রক ও রিকশার চালককে আটক করেছে পুলিশ। এর আগে নারায়ণগঞ্জে শিশু ত্বকীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলেও, আজ পর্যন্ত সে হত্যাকা-ের বিচার হয়নি।



এসব কী হচ্ছে? মিডিয়ায় যেসব খবর আসছে তা লোমহর্ষক। এসব ঘটনার মূল নায়ক কারা? নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম এবং আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন হত্যা মামলার প্রধান আসামি আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেনের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সেখান থেকে কালো রঙের রক্তমাখা একটি মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ১২ জনকে। তবে নূর হোসেন কিংবা পরিবারের কারো হদিস মেলেনি।



খবরের পেছনের খবর বেরিয়ে আসছে। রিপোর্টাররা সরজমিন ঘুরে এসে লিখছেন- নারায়ণগঞ্জে রাজনীতি নেই, আছে গডফাদার, সন্ত্রাস আর প্রভাবশালী একাধিক পরিবারের আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। আওয়ামী লীগ-বিএনপি কোনো দলেরই পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি নেই বছরের পর বছর। সাংগঠনিক কার্যক্রম না থাকলেও দুদলের প্রভাবশালী নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ক্যাডার, গু-া বাহিনী। তবে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি বিপদে আছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। ভয়, আতঙ্ক- কখন কী হয়! কে, কখন অপহরণ, গুম, হত্যা কিংবা মামলায় ফেঁসে যাবেন সে চিন্তায় দিন কাটছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের। কী মারাত্মক সংবাদ। অথচ আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়। তারপরও নিজ দলের মানুষেরা যদি নিরাপত্তা না পায়, তাহলে অন্য মতের মানুষেরা ঐ এলাকায় থাকবে কী করে?



বাংলাদেশে গুম-হত্যা বেড়েই চলেছে। এজন্য শঙ্কিত গোটা দেশের মানুষ। প্রবীণ আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক উল হক বলেছেন, এটা খুবই ভয়ঙ্কর ব্যাপার। যা চলছে তাতে কেউ নিরাপদ নয়। এর সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া উচিত। আর পুলিশ ইচ্ছে করলে সবই বের করতে পারবে যদি এর সঙ্গে সরকার জড়িত না থাকে। তিনি বলেন, আমি মনে করি, সরকারকে কঠোর হস্তে এসব দমন করা উচিত। নইলে দেশে আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু থাকবে না।



বিদেশেও উঠে আসছে বাংলাদেশের এই বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-ের ঘটনাবলী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন বাংলাদেশে গ্রেপ্তার, সামাজিক গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, শ্রমিক অধিকার ও কাজের নিম্ন পরিবশেকে উল্লেখ করেছে বেশ আগেই। প্রতিবেদনে ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে উঠে এসেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার। বলা হয়েছে গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- বেড়েই চলেছে।



২০১৩ সালের ঘটনাবলি তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সংবিধানে ব্যক্তি স্বাধীনতা ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও বাংলাদেশে সরকারি বাহিনী বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-ে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো পরিসংখ্যান প্রকাশ না করার কথাও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-ের বিষয়ে কোনো ছাড় না দেয়া এবং সুষ্ঠু তদন্তের কথা বলা হলেও কোনো ধরনের পদক্ষেপ না দেখার কথাও বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটা ছিল কয়েক মাস আগের তালিকা। ২০১৪ সালের এই কয়েক মাসে যা ঘটেছে, তা আরো বেশি শঙ্কিত করে তুলেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে। কোনো রাষ্ট্রে যখন আইনকানুন ভেঙে পড়ে তখন মধ্যস্বত্বভোগীরা তাদের স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। বাংলাদেশে সেটাই হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনীতির হায়েনারা এখন মাঠে। তারা পুরোনো শত্রুতা মেটাতে যা যা করা দরকার তা করছে। কথা হচ্ছে, সরকারের নাকের ডগার ওপর দিয়ে এসব যে হচ্ছে- তা কি সরকার দেখছে না? নারায়ণগঞ্জের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারভুক্ত এক আসামিকেও এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি।



এই লেখাটি যখন লিখছি, তখনই খবর বেরিয়েছে- দেশব্যাপী গুম-হত্যার প্রতিবাদে সুনামগঞ্জে দলীয় কর্মসূচি শেষে সিলেটে ফেরার পথে নিজের গাড়িচালকসহ নিখোঁজ হয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিএনপি নেতা মুজিবুর রহমান মুজিব। যুক্তরাজ্য যুবদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুজিবুর রহমান মুজিব বর্তমানে সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তিনি যুক্তরাজ্য বিএনপিরও সহসভাপতি। সিলেট নগরীর শামিমাবাদের বাসায় আসার কথা বলে নিজের প্রাইভেটকারে তিনি সুনামগঞ্জের বাসা থেকে চালক রেজাউল হক সোহেলকে নিয়ে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু তিনদিন ধরে তারা দুজন গাড়িসহ নিখোঁজ রয়েছেন এবং তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনগুলো বন্ধ রয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।



বাংলাদেশ কি তাহলে গুম-অপহরণের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হতে যাচ্ছে? এই অবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে। চলমান সরকার বেকায়দায় পড়তে পারে। মনে রাখা দরকার এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হচ্ছে। কারা তা করছে- তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব অবশ্যই সরকারের। সরকার ব্যর্থ হলে এর দায় থেকে তাদের রেহাই পাবার কোনো উপায় নেই।

-------------------------------------------

দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ : ১০/মে/২০১৪ শনিবার

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মে, ২০১৪ সকাল ৭:২৫

পংবাড়ী বলেছেন: তারেক দেশে 'মাফিয়া' প্রথা চালু করেছিলো; এখন খোকা ও মায়ারা তা চালু রাখছে। মায়া মরবে জেলের ভেতর।

২| ১০ ই মে, ২০১৪ সকাল ১০:১০

মদন বলেছেন: ৫% জনগনের নির্বাচিত সরকারের কাছে এর থেকে ভালো দেশ পরিচালনা আমরা কিভাবে আশা করতে পারে পারি? ভোটের অধিকার গুম করেই যাদের ক্ষমতায় মসনদে বসেছেন।

যারা গুমের কথা শুনেই বলে দিচ্ছেন এগুলো মেজর ঘটনা নয়। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যেখানে বিএনপি-জামায়াতের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে ফেলেছেন সেখানে বিচার কি হবে কতটুকু হবে সেটি বুঝতে কারো বাকি নেই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.