![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
অরাজকতার অতীত-বর্তমান, অগ্রগতির ভবিষ্যৎ
ফকির ইলিয়াস
============================================
সরকার বলছে প্রক্রিয়া চলছে। তা শেষ হলেই তিন প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। এই জিজ্ঞাসা এখন দেশবাসীর, কবে হবে সেভেন মার্ডারের বিচার শুরু? দোষীরা আইনের ফাঁকফোকর গলে আবার বেরিয়ে যাবে না তো? বাংলাদেশে যখনই কোনো সংবেদনশীল ঘটনা ঘটে, তখনই রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান ভিকটিমের স্বজনরা। একই ঘটনা এবারো ঘটেছে। নারায়ণগঞ্জে নিহত পাঁচ পরিবারের সদস্যদের কাছে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুকে জড়িয়ে নিলেন নারী সদস্যদের। প্রধানমন্ত্রীকে এভাবে আবেগে আপ্লুত হতে দেখে উপস্থিত অনেকের চোখেই অশ্রুর বান ডাকলো। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এমন আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এমন আবেগঘন অশ্রুজল বাংলাদেশের মানুষ এর আগেও দেখেছে। কী ফল এসেছে? সাগর-রুনির হত্যাকারীরা ধরা পড়েছে কি? রানা প্লাজার বুর্জোয়া খুনিরা নাকি জেল থেকে বেরিয়ে আসা, কিংবা দন্ড মওকুফের পাঁয়তারা করছে!
নারায়ণগঞ্জে সেভেন মার্ডার যেভাবে ঘটেছে তা বিশ্বের অনেক নারকীয় হত্যাযজ্ঞকে হার মানিয়েছে। পাঠক, আবারো শুনুন সেই মর্মান্তিক হত্যাকা-ের খ-কাহিনী। র্যাবের সদস্যরা প্রাইভেটকার দুটি থেকে তাদের নামিয়ে কালো রঙের মাইক্রোবাসে উঠিয়ে স্প্রে ছিটিয়ে দিলে এক মিনিটের মধ্যেই তারা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। গণশুনানিতে সাক্ষ্য দেয়া প্রত্যক্ষদর্শী ফতুল্লার মাসদাইরের মুজিবুল হকের ছেলে জালালউদ্দিন সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। জালালউদ্দিন জানান, ঘটনার সময়ে তিনি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের লামাপাড়া এলাকায় ময়লার স্তূপের পাশে বসে প্রশ্রাব করছিলেন। ওই সময় তিনি দেখেন র্যাবের একটি গাড়ি ও একটি কালো রঙের ১২/১৩ সিটের মাইক্রোবাস অবস্থান করছে। ওই সময় তারা দুটি প্রাইভেটকার আটক করে। সাদা রঙের একটি প্রাইভেটকারে ছিলেন প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৫ জন এবং ব্লু রঙের প্রাইভেটকারে ছিলেন আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়ি চালকসহ ২ জন। র্যাবের সদস্যরা প্রাইভেটকার দুটি থেকে তাদের নামিয়ে কালো রঙের মাইক্রোবাসে উঠিয়ে স্প্রে ছিটিয়ে দিলে এক মিনিটের মধ্যেই তারা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে কালো রঙের মাইক্রোবাসটি ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী জাতীয় স্টেডিয়াম সংলগ্ন তক্কার মাঠের বিপরীতে লামাপাড়া মার্কাজ মসজিদের সামনের সড়ক দিয়ে চলে যায়। ঘটনার সময় লিংক রোডের অপর প্রান্তে একটি প্রাইভেটকারে ছিলেন নূর হোসেন। গণশুনানি চলাকালে নিহত নজরুল ইসলামের ভাই আবদুস সালাম তদন্ত কমিটিকে বলেছেন, এভাবে ডিসি অফিসের সার্কিট অফিসে এসে লোকজন সাক্ষ্য দিতে ভয় পান। কারণ, এখানে মিডিয়াসহ বিভিন্ন লোকজনের নজর থাকায় অনেকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হলেও কেউ আসেননি। তাই তদন্ত কমিটির উচিত ঘটনাস্থল ও সিদ্ধিরগঞ্জে গিয়ে সাক্ষ্য নেয়া।
এদিকে খবর বেরিয়েছে, সেভেন মার্ডারের মূল হোতা নূর হোসেন কলকাতা চলে গেছে। সে কিভাবে সেখানে পাড়ি দিলো- তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এই পলায়ন প্রক্রিয়ায় আইন প্রয়োগকারী কোনো সংস্থার হাত আছে কিনা- তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিহত নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম। আমরা জেনেছি, র্যাবের তিন প্রাক্তন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চলছে। হাইকোর্টের এই নির্দেশ দ্রুত বাস্তবায়ন চাইছেন দেশের মানুষ। কথা হচ্ছে, দোষীরা আইনের ফাঁকফোকর গলে কোনোমতে বেরিয়ে যায়- কিংবা যেতে পারে কিনা, সেটাই এখন মূল বিবেচ্য বিষয়। আরেকটি সংবাদ আলোচনায় আসছে। তা হলো, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব বিলুপ্তির দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, দেশে র্যাবের কোনো প্রয়োজন নেই। বিএনপি শাসন ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দেশে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রশিক্ষিত বাহিনী র্যাব গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের গড়া সেই র্যাবকে বর্তমান সরকারবিরোধী দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে দমনের জন্য অপহরণ-খুনসহ নৃশংস কাজে ব্যবহার করছে। মানুষ খুনের জন্য র্যাবের আর প্রয়োজন নেই। অবিলম্বে র্যাবকে বিলুপ্ত করতে হবে। তিনি বলেন, দেশে পুলিশ বাহিনী রয়েছে। পুলিশকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সুশিক্ষিত করতে হবে। আমার মনে হয় না বিএনপি নেত্রীর এই দাবির কোনো যুক্তি আছে। কারণ বাংলাদেশের মানুষ এখন ষোলো কোটি। এই জনবহুল দেশে নানা ধরনের অপরাধ বেড়েছে। সেই তুলনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী নিরাপত্তা বাহিনী শক্তিশালী নয়। এই দেশে ‘এন্টি সাইবার ক্রাইম ইউনিট’, ‘স্পেশাল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ইউনিট’, ‘স্পেশাল ফায়ার ব্রিগেড ইউনিট’, ‘স্পেশাল হসপিটাল পুলিশ’- এরকম অনেক নিরাপত্তা বাহিনী গড়ে ওঠেনি। তাই র্যাবের জন্ম এদেশের মানুষের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তি এনেছিল। কিন্তু আজ এই র্যাবের প্রতি মানুষ এতো ফুঁসে উঠলো কেন? এর কারণ খুঁজতে হবে। এ বিষয়ে কয়েকটি ঘটনা পেছন ফিরে দেখা দরকার। সেগুলো হলো- ১. র্যাবের বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-কে প্রায় প্রতিটি বিগত সরকারই পরোক্ষ সমর্থন দিয়েছে। ২. ক্রসফায়ারের মতো নির্মম ঘটনাকে এদেশের রাজনীতিকরা র্যাবের ‘প্রতিরোধপর্ব’ বলে চালিয়েছেন জনসমক্ষে। ৩. র্যাবের শক্তিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ৪. র্যাবের দোষী ব্যক্তিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়নি। ৫. র্যাবের কোনো কোনো উইংকে অর্থ-বিত্ত দিয়ে নিজের পক্ষে কাজে লাগিয়েছে কোনো কোনো ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, উচ্চ ক্ষমতাবানরা।
এই যে বিষয়গুলো বাংলাদেশে ঘটেছে বিগত বছরগুলোতে- তা দেশের ক্ষমতাসীন উচ্চমহল কি জানতেন না? এ বিষয় মিডিয়ায় অনেক লেখালেখি হয়েছে। তারপরও কেন সরকারি পর্যায় থেকে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি? বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় এখন গড়ে উঠেছে সরকারি ছত্রছায়ায় অনেকগুলো লুটপাট সিন্ডিকেট। এরা চর দখল করছে। বন দখল করছে। নদী দখল করছে। বালু-পাথর উত্তোলন করছে অবৈধভাবে। হাজার হাজার একর খাসজমি কিংবা ঐ জমিতে ঠিকাদারি পাবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। এমন ঘটনা প্রতিদিন
মিডিয়ায় আসছে। আমরা জানি বর্তমান ডিজিটাল প্রধানমন্ত্রীর একটি শক্তিশালী প্রেস উইং রয়েছে। প্রশ্ন করতে চাই- মাননীয় প্রেস সচিবরা কি এসব রিপোর্টের কাটিংগুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে যথাসময়ে পৌঁছান না? যদি পৌঁছে থাকে, তাহলে কথায় ও কাজে এমন গাফিলতি দেখা যাচ্ছে কেন? বাংলাদেশে সেভেন মার্ডার গোটা বিশ্বের মানবতাকে কাঁপিয়ে তুলেছে। হংকংভিত্তিক এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন বলেছে- বাংলাদেশের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো আইনের শাসনের প্রতি অনুগত নয়। তারা দুর্নীতির শৃঙ্খলের প্রতি অনুগত। আর এই দুর্নীতির শৃঙ্খলই জাতিটির টুঁটি চেপে ধরেছে, জনগণের আকাক্সক্ষার বিপরীতে আইনের শাসনের সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দিয়েছে।
প্রতিবেদনে প্রশ্ন করা হয়, র্যাবের এই তিন কর্মকর্তাই কি সাতজনকে অপহরণ ও খুন করেছিল? এই অপরাধে র্যাবের এক ডজনেরও বেশি লোকের সম্পৃক্ত থাকার আশঙ্কা থাকলেও সরকার তা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশসহ সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা তাদের কৃত অপরাধ থেকে দায়মুক্তি পেয়ে থাকেন বলে প্রচারিত রয়েছে। বাংলাদেশে সশস্ত্র বাহিনী এবং ক্ষমতাসীন দলের কর্মকর্তা, তাদের সহযোগী ও পরিবারবর্গ দেশের সংবিধান ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ আইনের ঊর্ধ্বে বলে মনে করা হয়ে থাকে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিদিনই র্যাব ও পুলিশের ডিবির কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সাদা পোশাকের লোকজন নাগরিকদের অপহরণ করছে। এ ধরনের কোনো ঘটনারই বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত হয়নি।
বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। এজন্য এই সেভেন মার্ডারের সঙ্গে জড়িত কোনো ব্যক্তির স্বজন-মন্ত্রীকে অবিলম্বে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া উচিত। আমরা দেখেছিলাম, ‘কালোবিড়াল’ ঘটনার পর তৎকালীন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। আজকের ত্রাণমন্ত্রী তাহলে সরে যাচ্ছেন না কেন? বরং তিনি ঘোষণা দিচ্ছেন- শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ঢাকায় বড় সমাবেশ করার। মানুষের চোখ ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করা হচ্ছে। দরকারি তদন্ত, বিচার বিভাগকে চাপমুক্ত রাখতেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-এমপির পদত্যাগ করা উচিত। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সকল নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগের দাবি এখন গোটা বাঙালি জাতির।
আমরা দেখেছিলাম, বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রীও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, বিচার হবে। সেই বিচার আজো শুরু হয়নি। পাওয়া যায়নি ইলিয়াস আলীকে। তাহলে এমন অশ্রু বিসর্জনই কি দেখবো আমরা? বাংলাদেশে বিএনপির সময়েই আহসানউল্লাহ মাস্টার, শাহ এ এম এস কিবরিয়ার মতো বরেণ্য ব্যক্তিত্বকে হত্যা করা হয়েছে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা হয়েছে। গোটা দেশব্যাপী একযোগে বোমা হামলা হয়েছে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতেই দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছিল। এই কি তার প্রতিদান? আমরা অরাজকতার অতীত জানি। জানতে চাই- অগ্রগতির ভবিষ্যৎ কি? এই প্রজন্ম কি এভাবে খুন-গুম হতে হতে এগোতে পারবে? দেশ এগোতে পারবে? মনে রাখা দরকার একটি পাক-লুটেরা শ্রেণীকে তাড়াতেই ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ মানুষ জীবন ও দুলাখ নারী তাদের সম্ভ্রম দিয়েছিলেন। আজ তাহলে কোন নব্য লুটেরা শ্রেণী, কোন খুনির হাত এই বাংলাদেশে? আবারো বলি, আমরা আবেগঘন অশ্রু দেখতে চাই না। আমরা আমাদের মানুষের নিরাপত্তা চাই। ন্যায়বিচার চাই। আইনের শাসন চাই। তা না হলে এই ভূখণ্ডের সকল অর্জনই ধূলিসাৎ হয়ে যেতে পারে।
--------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ :॥ ঢাকা ॥ ১৭/মে/২০১৪ শনিবার
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই মে, ২০১৪ সকাল ৭:৩০
পংবাড়ী বলেছেন: মাফিয়ায় মাফিয়া মেরেছে, এত মাথা ব্যথা কেন? অফ যান।