নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

২৩ বছরের রোদ ও বৃষ্টি

০৬ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১০:১৩

২৩ বছরের রোদ ও বৃষ্টি

ফকির ইলিয়াস

=====================================

অভিবাস জীবনের পরিভ্রমণ দিয়ে শুরু করি। লন্ডনের রাস্তা ধরে হাঁটছি। সাইন দেখে হঠাত্ থমকে দাঁড়াই। 'রূপসী বাংলা'। একটি বইয়ের দোকান। বিক্রি হয় বাংলাদেশের নানা কারুকাজ, স্যুভেনিরও। দরোজায় বাংলায় লেখা সাইন 'বই পড়ুন, বই উপহার দিন'। ক্রেতারা আসছেন দূরদুরান্ত থেকে। আসছে শিশু-কিশোররা। তারাও নেড়েচেড়ে দেখছে বাংলা বই। বাংলাদেশ বিষয়ে বই। এভাবেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত আলো ছড়াচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, সুকান্ত, শামসুর রাহমান, শহীদ কাদরী।



এই স্বপ্ন নিয়েই পথ চলেছিলাম একদিন। ভাবি, নিউ ইয়র্কে যদি এমন একটি গ্রন্থবিতান থাকত।



হ্যাঁ, সেই স্বপ্নই পূরণ করেছিলেন বিশ্বজিত্ সাহা 'মুক্তধারা' প্রতিষ্ঠা করে। চেয়েছিলেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিশ্বায়ন।



ভাষার বিশ্বায়ন নিয়ে ভাবলেই প্রথম আমার যেদিকে নজর পড়ে, তা হচ্ছে একটি ভাষাভাষী মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থান। যে রাষ্ট্রটি যত বেশি অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ—তার ভাষাই বিশ্বে তত বেশি সমাদৃত। চীন তার প্রথম উদাহরণ।



একটি ভাষার বিশ্বায়নের প্রয়োজনীয়তার কথা ভাবলে, আরো কিছু প্রাসঙ্গিকতা আসে। এর অন্যতম একটি হচ্ছে সেই রাষ্ট্র-সমাজের পরিশুদ্ধ সংস্কৃতি। এখানে মনে রাখতে হবে—'আমাদের হাজার বছরের উজ্জ্বল সংস্কৃতি রয়েছে'—এই বাণীটি প্রচার করলেই কিন্তু বিশ্ববাসীকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করা যাবে না। সংস্কৃতির পরিমণ্ডলটিকে দর্শনীয় করে তুলতে হবে। এগুলোকে আকর্ষণীয় করে গড়তে হবে, যাতে তা দর্শক-পরিব্রাজকদেরকে টানতে সমর্থ হয়।



দুই. বাংলা ভাষা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে অভিবাসী বাঙালির মাধ্যমে। এখানে আরেকটি কথা জরুরি, তা হচ্ছে—বিদেশে জন্ম নেয়া বাঙালি প্রজন্ম কিন্তু বাংলা ভাষার ব্যাপারে অধিক হারে আগ্রহী হচ্ছে না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা, বাঙালি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, কৃষ্টির সঙ্গে তাদের যোগাযোগ কিংবা সমন্বয়ের অভাব।



বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলা ভাষাকে ছড়িয়ে দেওয়ার আরেকটি দরকারি পথ আছে। সেটা হচ্ছে বাংলা সাহিত্যের মূল প্রবাহের শক্তিটিকে বিশ্বধারায় পৌঁছে দেওয়া।



আমরা দেখেছি বাংলা সাহিত্য অনূদিত হলেই তা বিশ্ব দরবারে পৌঁছে যাবে—এমন একটা প্রবণতা অতীতে ছিল। এর সূত্র ধরে কিছু অনুবাদকর্ম হয়েছেও। কিন্তু তা অনেকেরই নজর কাড়তে পারেনি। এরচেয়ে বরং উপমহাদেশের বাঙালি লেখক যারা সরাসরি ইংরেজিতে লিখেছেন কিংবা লিখছেন—তারা বেশি প্রকাশিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে একজন অরুন্ধতী রায়, ঝুম্পা লাহিড়ী কিংবা তাহমিনা আনামের নাম আনন্দের সঙ্গে প্রণিধানযোগ্য।



আরেকটি বিষয় আমাদের বিবেচনায় আনতে হবে। তা হচ্ছে, বাংলা ভাষাটিকে বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য করার প্রচেষ্টার পাশাপাশি বাংলা সংস্কৃতির সৌন্দর্যকে সিংহভাগ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাবার প্রচেষ্টা রাখতে হবে নিরন্তর। ভাষার প্রত্যয় এবং প্রত্যাশা নিয়ে যে কবি একটি কবিতা লিখেন কিংবা যে নাট্যকার একটি নাটক লিখেন, তার একটা সর্বজনীন আবেদন থাকে। আর এই আবেদনটিই হচ্ছে বিশ্ব মানুষের কল্যাণ কামনা কিংবা শান্তি প্রতিষ্ঠার অব্যাহত প্রার্থনা। আমি মনে করি, বিশ্বের প্রতিটি ভাষাতেই যেহেতু স্রষ্টা, প্রকৃতি এবং প্রেমের গুণকীর্তন করা হয়, সেহেতু প্রতিটি ভাষাই মানব আত্মার অনুরণন।



আমেরিকায় বাংলাচর্চার আগ্রহ বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ, বাংলা সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে আঞ্চলিক সংগঠনগুলো ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। সুবিশাল পরিসরে বাংলাদেশ মেলার আয়োজন হয় নিউ ইয়র্কে।



বোস্টনে কিশলয় বাংলা স্কুল, ওয়াশিংটন বাংলা স্কুল, কিংবা নিউ ইয়র্কে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, তরঙ্গ শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ কালচারাল সেন্টার, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র যেসব প্রোগ্রাম করছে তা প্রবাসে সংস্কৃতি চর্চার পরিপূরক সর্বাংশে।



অভিবাসন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় বাঙালিরা ছড়িয়ে পড়বেই বিশ্বের দেশ-দেশান্তরে। বিশ্বায়ন তাদের ডেকে নেবে আরও কাছাকাছি। তারা বিদেশে যাওয়ার সময় নিজ সংস্কৃতি বহন করে নিয়ে যাবেন এবং তা তুলে ধরবেন যুগে যুগে কালে কালে।







তিন. আজ থেকে আড়াই দশক আগে এই নিউ ইয়র্কেও বাংলা বইয়ের ভালো কোনো সংগ্রহ ছিল না। আজ তা শুধু সম্ভবই হয়নি বরং বই বিপণিগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে সুবিশাল পাঠক সমাজ।



গেল কয়েক বছর যাবত্ বইমেলা পরিণত হয়েছে 'বাংলা উত্সব এবং বইমেলা'য়। 'মুক্তধারা ফাউন্ডেশন' এর পুরো দায়িত্ব নিয়েছে। আমি দেখেছি কিভাবে একজন বিশ্বজিত্ সাহা নিজ কাঁধে বইয়ের বাক্সগুলো বহন করে ছুটে গেছেন বইমেলার আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের এক অঙ্গরাজ্য থেকে অন্য অঙ্গরাজ্যে। তার নিজ হাতে পোঁতা 'মুক্তধারা'র বীজ আজ ২৩ বছরের বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। আজ 'মুক্তধারা'র বইগুলোর উষ্ণতা বুকে নিয়ে সে ভবনেই বসে কবি, লেখক, বুদ্ধিজীবীদের আড্ডা। সেতুবন্ধনের এই যে আয়োজন, আত্মীয়তা এবং আন্তরিকতা—বাংলা ভাষার বিশ্বায়নে সেটাও একটা সিঁড়ি।



আমি বিশ্বাস করি, প্রজন্মের জন্য বিশ্বায়নের যে দরোজা এখন উন্মুক্ত হয়েছে, এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে প্রত্যয়ের সঙ্গে। ভাষার শক্তি মানুষকে প্রকাশিত হওয়ার সুযোগ এনে দেয়। ভাষার মাঝেই মানুষ খুঁজে পায় নিজস্ব পরিমণ্ডল।



আমার মনে আছে, বিদেশে যে লাখ লাখ বাঙালি প্রজন্ম বেড়ে উঠছে, তাদের 'সুন্দরতম ভূমি বাংলাদেশ'কে বিশদভাবে জানাতে এগিয়ে এসেছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক কৃতী পুরুষ বিশিষ্ট সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক কবি ড. হুমায়ুন আজাদ। তিনি লিখেছিলেন একটি চমত্কার গ্রন্থ 'আওয়ার বিউটিফুল বাংলাদেশ'। শিশু-কিশোর-কিশোরীদের পঠন উপযোগী এ গ্রন্থটি প্রকাশ করেছিল নিউ ইয়র্কভিত্তিক প্রকাশনা-বিপণন সংস্থা 'মুক্তধারা'। গ্রন্থটি ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার অনেক বাংলা স্কুলে পঠিত হচ্ছে। অনেক মাতা-পিতা তাদের সন্তানদের হাতে তুলে দিয়েছেন এই গ্রন্থটি। যুক্তরাষ্ট্রে 'আন্তর্জাতিক বাংলা উত্সব ও বইমেলা' আমাদেরকে সেই জাগরণী আবহ তৈরি করে দিয়েছে—তা অবশ্যই একটি উজ্জ্বল অর্জন।

----------------------------------------------------------------

দৈনিক ইত্তেফাক॥ ঢাকা ॥ সাহিত্য সাময়িকী॥ ০৬ জুন ২০১৪ শুক্রবার

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:০৭

স্বপ্নচারী গ্রানমা বলেছেন: আমি বিশ্বাস করি, প্রজন্মের জন্য বিশ্বায়নের যে দরোজা এখন উন্মুক্ত হয়েছে, এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে প্রত্যয়ের সঙ্গে। ভাষার শক্তি মানুষকে প্রকাশিত হওয়ার সুযোগ এনে দেয়। ভাষার মাঝেই মানুষ খুঁজে পায় নিজস্ব পরিমণ্ডল।[/su

সহমত আর অনেক ভালোলাগা !

২| ০৬ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৪৭

ডি মুন বলেছেন: অনেক দূর এগিয়ে যাক এমন শুভ প্রচেষ্টা

শুভকামনা রইলো

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.