![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
সম্প্রচার নীতিমালা ও মিডিয়ার স্বাধীনতা
ফকির ইলিয়াস
_____________________________________________
বাংলাদেশে সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে এখন আলোচনা তুঙ্গে। বিশ্বের অন্যান্য কিছু দেশেও এমন নীতিমালা রয়েছে। বলা দরকার, ‘লিমিটেশন অব নিউজ মিডিয়া’ মানুষের সৃজনশীল চিন্তার স্বাধীনতাকে খর্ব করে। তবে তার অর্থ এই নয় যে, মানুষ সংবাদ মাধ্যমের দ্বারা সমাজ, রাষ্ট্র ও জাতিকে বিভ্রান্ত করবে। অথবা কলহ ছড়াবে। বাংলাদেশে এই নীতিমালা নিয়ে কথা ওঠার পর অনেকেই তাদের মত দেয়া শুরু করেছেন। সে বিষয়ে কিছু আলোকপাত করা যাক।
বাংলাদেশের প্রাক্তন একজন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিশ্বের সব উন্নত রাষ্ট্রে সম্প্রচারের জন্য নীতিমালা রয়েছে। বাংলাদেশের জন্যও এ নীতিমালা দরকার। তবে নীতিমালার মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারকে সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।’
‘সম্প্রচার নীতিমালা সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধের জন্য করা হচ্ছে’ বিএনপির এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, ‘সম্প্রচার নীতিমালা সংবাদপত্রের জন্য নয়, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার জন্য। মনে হয় সম্প্রচার নীতিমালা না পড়েই এ ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে। আমি তাদেরকে সম্প্রচার নীতিমালা পড়ার জন্য অনুরোধ জানাবো।’
জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জাতীয় সম্প্রচার নীতি-২০১৪’ সম্পর্কে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এখানে একটি প্রশ্ন হলোÑ ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াকে আলাদা করে দেখা হচ্ছে কেন? দেশের বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মনজুরুল আহসান বলেছেন, ‘দেশে কোনো নীতিমালাই ছিল না। নীতিমালা আসার পর সংবাদপত্রে শৃঙ্খলা আসবে। তবে খসড়ার প্রথম দুটি অধ্যায় বাদে তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম অধ্যায়ের বিশেষ কিছু জায়গা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’
তিনি বলেন, খসড়া নীতিমালার তৃতীয় অধ্যায় : সংবাদ ও অনুষ্ঠান সম্প্রচার, চতুর্থ অধ্যায় : বিজ্ঞাপন সম্প্রচার এবং পঞ্চম অধ্যায় : সম্প্রচারের ক্ষেত্রে অন্যান্য বিবেচ্য বিষয়কে বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণীয় করার বিষয়টিকে আমরা অগ্রহণযোগ্য মনে করি। শুধু আমরা নই, খসড়া প্রণয়নকারীরাও মনে করে। এছাড়া এই অধ্যায়গুলোতে কিছু কিছু বাহুল্য কথন রয়েছে। সংবিধান ও অন্য আইনের আওতায় গ্রহণযোগ্য মীমাংসিত বিষয়ও রয়েছে। তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে কোনো প্রকার অসত্য এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কিন্তু আমি বলি ‘সাংবাদিকতার যে কোনো পর্যায়েই বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য বা উপাত্ত দেয়া হয়, তা সংশোধন করার সুযোগ রয়েছে। কেউ যদি উদ্দেশ্যমূলকভাবে সে ধরনের প্রচারণা চালাতে থাকে তাহলে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান প্রচলিত আইনেই আছে।’
মনজুরুল আহসান বুলবুল ষষ্ঠ অধ্যায়ের সম্প্রচার কমিশন নিয়ে বলেন, নীতিমালায় সম্প্রচার কমিশনের কর্মপরিধি বিস্তৃত করা হয়েছে কিন্তু কাঠামো বিন্যাস বিস্তৃত করা হয়নি। সম্পাদক নীতিমালাকে ভয়ঙ্কর এবং অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন তিনি। যা দেশে-বিদেশে ভুল বার্তা দেবে এবং সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের সুযোগ করে দেবে এই বলে যে, সরকার সম্প্রচার মাধ্যমের সম্পাদকীয় স্বাধীনতা ক্ষুণœ করতে চায়। কারণ সরকারি নির্দেশনায় কখনই কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকীয় নীতিমালা তৈরি হয় না।
মনজুরুল আহসান বুলবুল আরো বলেছেন, সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় সম্প্রচার এবং সম্প্রচার কমিশন সম্পর্কিত আইন, বিধিমালা এবং নীতিমালা প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রচার সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। যেহেতু ষষ্ঠ অধ্যায়ে বর্ণিত সম্প্রচার কমিশন কতো দিনের মধ্যে গঠিত হবে সে বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই, সেহেতু এই বলার সুযোগ থাকে, মন্ত্রণালয় বাড়তি ক্ষমতা প্রয়োগের জন্যই এই নীতিমালাটি প্রণয়ন করছে।
মনজুরুল আহসান সরকারের কাছে কিছু আহ্বান তুলে ধরেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে : স্বল্পতম সময়ের মধ্যে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন গঠন করা হোক। সেই সম্প্রচার কমিশনকে সময় বেঁধে দেয়া হোক, যে সময়ের মধ্যে অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে কমিশন সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে। স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন গঠনের আগে এই নীতিমালার কোনো ধারা প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া এই সম্প্রচার নীতিমালাকে তিনি আরো যুগোপযোগী করার আহ্বান জানান।
এবার আমরা শুনবো সরকার পক্ষের কথা। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের জন্য জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪ করা হয়নি বলে দাবি করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, এ নীতিমালা গণমাধ্যমের ওপর তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য নয়। সম্প্রচার নীতিমালা দিকনির্দেশক, আইন নয়। সম্প্রচারের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতেই এই নীতিমালা। তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, বিভিন্ন প্রকাশিত ও সম্প্রচারিত আলোচনায় উল্লিখিত যে কয়েকটি বিষয় আমাদের নজরে এসেছে সেগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়Ñ
প্রথমত, এই নীতিমালা গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করবে কি না? সম্প্রচার নীতিমালা দিকনির্দেশনামূলক। এটি কোনো আইন নয়। এতে শাস্তির বিধান নেই। তাই কণ্ঠরোধের বিষয়টি সম্পূর্ণ অমূলক ও কল্পনাপ্রসূত। সম্প্রচার মাধ্যমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার সমুন্নতকরণে সহায়তা দেয়ার লক্ষ্যে এটি প্রণয়ন, এর প্রতিটি ধারাই গণমাধ্যমের জন্য কল্যাণকর।
দ্বিতীয়ত, সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত কোনো সংস্থার কর্মকর্তাদের প্রতি কটাক্ষ বা বিদ্রƒপ কিংবা পেশাগত ভাবমূর্তি বিনষ্টকারী দৃশ্য বা বক্তব্য প্রচার করা যাবে না। এক্ষেত্রে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই। কারণ এ ধারা আমাদের সত্য প্রকাশ থেকে বিরত থাকতে বলেনি। সম্প্রচার নীতিমালা বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে নৈতিক অবক্ষয় রোধে সম্প্রচার মাধ্যমের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রণীত। অর্থাৎ কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী যদি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন সেটির বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে কোনো বাধা নেই। কিন্তু কোনো কটাক্ষ বা বিদ্রƒপ বা সেই সংস্থার বিরুদ্ধে ঢালাও মন্তব্য করা অনৈতিক। যেমন, কয়েকজন সাংবাদিক নামধারীর হলুদ সাংবাদিকতার জন্য আপনি পুরো গণমাধ্যমকেই কটাক্ষ, বিদ্রƒপ বা ব্যঙ্গ করতে পারবেন না। সেটি অনৈতিক এবং অপরাধ।
এ নীতিমালা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা? এর ব্যাখ্যা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, সম্প্রচার নীতিমালা কোনোভাবেই সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। সংবিধানের ৩৯ ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, (১) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল। (২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে (ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার এবং (খ) সংবাদক্ষেত্রে স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল। সংবিধানের ৩৯ ধারাকে সমুন্নত রেখেই এবং দেশের প্রচলিত আইনের সঙ্গে সম্পূর্ণ সঙ্গতি বজায় রেখে এ নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। তিনি আরো জানান, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা তাড়াহুড়ো এবং কোনো লুকোচুরি করে প্রণীত হয়নি। ২০১২ সালের পহেলা নভেম্বর গণমাধ্যমকর্মী ও অংশীজনদের নিয়ে গঠিত কমিটি কাজ শুরু করে দীর্ঘ আলোচনার পর ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এর খসড়া সকলের মতামতের জন্য প্রকাশ করে। এসোসিয়েশন অব টেলিভিশন কোম্পানি ওনার্স (অ্যাটকো), আর্টিকল-১৯, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ (টিআইবি), বাংলাদেশ এনজিও নেটওয়ার্ক ফর রেডিও এন্ড কমিউনিকেশন্স (বিএনএনআরসি), বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতিসহ ব্যক্তিপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকসহ অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত খসড়া মন্ত্রিপরিষদে প্রেরণ করা হয় এবং অনুমোদনের পর ৬ আগস্ট ২০১৪ তারিখে গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, এছাড়াও একটি দেশ সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন-নীতি-বিধি-প্রবিধি প্রতিবেশীসহ অন্যান্য দেশের সম্প্রচার আইন পর্যালোচনা করে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারত, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, আয়ারল্যান্ডের সম্প্রচার আইন পর্যালোচনা করা হয়েছে। পর্যালোচনায় পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার সম্প্রচার নীতি অনেক রক্ষণশীল বলে প্রতীয়মান হয়। ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ডের নীতিমালা তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে উদার ও গণতান্ত্রিক বলে প্রতীয়মান হওয়ায় সেই আইন ও নীতিগুলোকেই বিবেচনায় নেয়া হয়।
অন্যদিকে দেশের বুদ্ধিজীবী, সমাজ সংস্কারক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন- সমন্বয় না করেই সম্পন্ন করা হয়েছে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪। এতে খসড়া প্রণয়ন কমিটির সদস্যদের মতামত ও পরামর্শ গ্রহণ করা হয়নি। কমিটির সভায় প্রস্তাবিত সংশোধনও সঠিকভাবে করা যায়নি। ভাষার জটিলতা রয়েই গেছে। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক আলোচনায় নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন কমিটির কয়েকজন সদস্য এমন অভিযোগ করেছেন। ‘জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪ : উদ্বেগ ও করণীয়’ শীর্ষক এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে ‘আর্টিকেল ১৯’। গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ নীতিমালাকে খসড়া ধরে সার্চ কমিটির মাধ্যমে একটি অভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যম কমিশন করার প্রস্তাব করেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার জন্য একটি সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ণের দাবি জানান। আর্টিকেল ১৯ বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক তাহমিনা রহমানের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন সম্প্রচার নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন কমিটির সদস্যদের মধ্যে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি মোস্তফা জব্বার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শফিউল আলম ভুঁইয়া। আরো আলোচনা করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম রহমান, ব্লাস্টের অনারারি নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ম্যাস-লাইন মিডিয়া সেন্টারের (এমএমসি) পরিচালক কামরুল আহসান মঞ্জু, মাছরাঙা টিভির চিফ অব নিউজ প্রোডাকশন এন্ড ট্রেনিং সামসুদ্দিন হায়দার ডালিম প্রমুখ। সভার শুরুতে মূল বক্তব্যে আর্টিকেল ১৯ বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক তাহমিনা রহমান বলেন, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা প্রয়োজনের তাগিদে প্রণীত হয়েছে। তবে জনগণের বাক্-স্বাধীনতা ও তথ্য অধিকার সমুন্নত রেখে সম্প্রচারের দায়িত্বশীলতার জন্য স্বাধীন কমিশন গঠনের অগ্রাধিকার দিতে হবে। অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সম্প্রচার ও বিজ্ঞাপন বিধি তৈরি করবে কমিশন। কমিশনের স্বাধীনভাবে কাজ করা ও অভিযোগ নিষ্পত্তির ক্ষমতা থাকতে হবে। লাইসেন্স প্রদানে কমিশন দিকনির্দেশনা দেবে বলেও অভিমত প্রকাশ করেন তিনি। সম্প্রচার নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন কমিটির সদস্য মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল অভিযোগ করে বলেন, আমরা যে মতামত দিয়েছে, এ নীতিমালায় সেগুলো সংযুক্ত করা হয়নি। সর্বশেষ যে কপি দেয়া হয়েছে, সেটা সরকারের কাছে (ক্যাবিনেট) দেয়া হয়নি। তিনি প্রস্তাব করেন, এ নীতিমালায় চাকরি ও বিনিয়োগের সুরক্ষা থাকতে হবে। একটি স্বাধীন সম্পাদকীয় নীতি থাকতে হবে। লাইসেন্স প্রদানে রাজনৈতিক বিবেচনা করা যাবে না। সম্প্রচার নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন কমিটির মোস্তফা জব্বার অভিযোগ করে বলেন, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল ছয় পৃষ্ঠার মতামত দিয়েছেন। অথচ আমরা কমিটিতে ছয় লাইনের বেশি পাইনি। নীতিমালায় অনেকগুলো শব্দের সঠিক ব্যাখ্যা নেই। আমরা কমিটিকে সুপারিশ করেছি, এ শব্দগুলো সংশোধন করতে। কমিটিতে যারা মূল কাজ করেছেন, তারা আমলা। এ আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এগুলোর সংশোধন হয়নি। তারা (আমলা) নিজের মতো শব্দ ব্যবহার করেছেন। যার জন্য আজকে বিতর্কের তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, সম্প্রচার কমিশন কতোটা নিরপেক্ষ ও স্বাধীন হবে এটাই প্রশ্ন। এর সদুত্তর পেলে অনেক কথাই থাকবে না। তবে তিনি সম্প্রচার কমিশনের পরিবর্তে একটি অভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যম কমিশন ও নীতিমালা করার প্রস্তাব করেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জমান বলেন, এ নীতিমালা তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে বলা যাবে না। তাহলে তারা যথেচ্ছাচার করে যাবে? বন্ধুভাবাপন্ন দেশের বিরুদ্ধে বলা যাবে না। ফেলানীদের হত্যা হলে কি আমরা চুপ করে থাকবো? আর লাইসেন্স প্রদানের বিষয়টি সরকারের হাতে রাখা হয়েছে, তাতে রাজনৈতিক বিবেচনা গ্রহণীয় হবে। তিনি এ নীতিমালাকে প্রাথমিক খসড়া ধরে কমিশন গঠনের আহ্বান জানান। আলোচনায় বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন অভিযোগ করেন, এ নীতিমালায় এক ধরনের দাদাগিরি করা হয়েছে। এখানে ঔপনিবেশিক আমলের ধ্যান-ধারণা পোষণ করা হয়েছে। অনেকগুলো বিষয়ের সুনির্দিষ্ট বর্ণনা নেই। এমএমসির পরিচালক কামরুল আহসান মঞ্জু বলেন, এ নীতিমালাকে আরো মিডিয়াবান্ধব করতে সরকারকে চাপ দিতে হবে এবং প্রয়োজনে স্মারকলিপি দেয়া যেতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শফিউল আলম ভুঁইয়া বলেন, এ নীতিমালার ভাষার পরিমার্জন করা গেলে অনেকটা ফলপ্রসূ হবে।
একটা কথা মনে রাখা দরকার, মিডিয়া এখন মানুষের হাতে হাতে। ফেসবুক, টুইটার, ব্লগ, ওয়েবজিন এখন পরিচালিত হয় ব্যক্তি উদ্যোগে। এর নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন কাজ অথবা সৃজনশীল চিন্তার স্বাধীনতা বিকাশের পরিপন্থী। তা সরকার রোধ করবে কেন? কিংবা করবে কিভাবে? আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ চাইছি। অন্যদিকে আমরা রোধ করতে চাইছি ডিজিটাল আলোর জ্যোতি। এটা খুবই পারস্পরিক সাংঘর্ষিক হয়ে যাচ্ছে। তা বিবেচনায় আনতে হবে। এই প্রজন্ম আলোর সন্ধানে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই প্রকৃত আলো দেয়া ও মানুষকে বিভ্রান্ত করা থেকে বিরত রাখাও মিডিয়ার দায়িত্ব। আমরা দেখছি অনলাইন সংবাদ পোর্টালগুলো যৌন উত্তেজনাকর ছবি, গসিপ দিয়ে লাখ লাখ হিট পাচ্ছে। এটা কতোটা যৌক্তিক কিংবা সমাজের জন্য কতোটা ক্ষতিকর তা ভাবতে হবে। সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে মানুষের বিবেক ও সত্য প্রকাশের শক্তি। মানুষ দায়িত্ববান না হলে কোনো সমাকই এগোতে পারে না। শুধু নীতিমালা করলেই চলবে না- মানুষের মনন ও চিন্তার স্বাধীনতাকে শাণিত করতে সামাজিক আন্দোলনের যে বিকল্প নেই- তা আমরা এখনো অনেক দেশের কাছ থেকে শিখতে পারি ।
----------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ : ॥ ঢাকা ॥ ৩০/আগস্ট/২০১৪ শনিবার প্রকাশিত
©somewhere in net ltd.