![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
প্রজন্মের স্বাধীনতা, জাতির জনকের সেই ভাষণ
ফকির ইলিয়াস
__________________________________________________
কিছু খণ্ড স্মৃতি দিয়েই লেখাটি শুরু করি। ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথমার্ধ। সদ্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা বীরের বেশে দেশে ফিরে আসতে শুরু করেছেন। আমার অগ্রজ বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এম এ মতলিব তার গ্রুপ নিয়ে দেশে ফিরেছেন। সিলেট কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ সাবসেক্টরে কমান্ডার মতলিবের বেশ সুনাম ছিল। পরবর্তী সময়ে তিনি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট সদরের কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডারও নির্বাচিত হয়েছিলেন। আমার সেই অগ্রজ বীর দেশে ফিরেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন ঘুরে ঘুরে এলাকার ক্ষয়ক্ষতি দেখার জন্য। মনে পড়ছে, তার সঙ্গেই সিলেট শহরের অবস্থা দেখার জন্য আমি অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে বের হই। সিলেটের বহুল পরিচিত ‘কীন ব্রিজ’ পাক-খানসেনারা শেষ মুহূর্তে এসে ভেঙে দিয়েছিল। ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী খুব দ্রুতই সেই ভাঙা সেতুটি পুনঃসংযোগ দিতে সমর্থ হয়। যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে তোলা হয়। আমি তখন ১০ বছরের এক অনুসন্ধিৎসু বালক। অগ্রজের সঙ্গে কীন ব্রিজ পেরিয়ে একটি রিকশায় আমরা যাচ্ছি। নিথর সিলেট নগরী। যারা শহর ছেড়ে পালিয়েছিলেন, তারা ক্রমশ নিজ নিজ বাসস্থানে ফিরে আসতে শুরু করেছেন। মানুষের চোখে-মুখে শঙ্কা। বিভিন্ন স্থানে পোঁতা মাইন নিয়েও মানুষের মাঝে খুবই ভয়।
সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে তখন বীর মুক্তিযোদ্ধারা ফিরে এসে তাদের ‘ওপেন ক্যাম্প’ চালু করেছেন। শীতের সকাল। হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা রোদ পোহাচ্ছেন মাদ্রাসা মাঠের খোলা আকাশের নিচে, সবুজ ঘাসে। সিলেট শহরের পাড়ায় পাড়ায় মাইক লাগিয়ে বাজানো হচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধের গান। ‘জয় বাংলা- বাংলার জয়’, ‘শোনো একটি মুজিবুরের থেকে লক্ষ মুজিবের কণ্ঠ ধ্বনি, প্রতিধ্বনি আকাশে-বাতাসে উঠে রণিÑ বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ।’ সে এক অপূর্ব অনুভূতি। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুক্তিযোদ্ধারা আকাশে ওপেন ফায়ার করতে করতে মাদ্রাসা মাঠের দিকে আসছেন। দৃশ্যগুলো দেখতে দেখতে আমি অনেকটা যেন তন্ময় হয়ে যাচ্ছিলাম। কারণ রেডিওতে জাতির জনকের ৭ মার্চের সেই অগ্নিঝরা ভাষণ শুনে যেদিনটির জন্য ভীষণ প্রতীক্ষিত ছিলামÑ আমার কাছে মনে হচ্ছিল সেটিই বুঝি একটি স্বাধীন দিন। জাতির জনক তাঁর সেই ভাষণে কী বলেছিলেন তা আমি সবিনয়ে আবারো জনাতে চাই আজকের প্রজন্মকে। ১৭ মিনিটের সেই ভাষণটি ছিল অলিখিত। তারপরও সেই দৃপ্ত প্রত্যয় ছিল জাতিকে একটি স্পষ্ট আলোকবর্তিকা দেয়ার। পাঠ করা যাক আবার সেই অমর বাণীগুলো ৃ
ভায়েরা আমার, আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সবাই জানেন এবং বুঝেন। আমরা আমাদের জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়। কি অন্যায় করেছিলাম, নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ সম্পূর্ণভাবে আমাকে আওয়ামী লীগকে ভোট দেন। আমাদের ন্যাশনাল এসেম্বলি বসবে, আমরা সেখানে শাসনতন্ত্র তৈয়ার করবো এবং এই দেশকে আমরা গড়ে তুলবো, এ দেশের মানুষ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, তেইশ বৎসরের করুণ ইতিহাস বাংলার অত্যাচারের, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস। তেইশ বৎসরের ইতিহাস মুমূর্ষু নরনারীর আর্তনাদের ইতিহাস; বাংলার ইতিহাস এ দেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস। ১৯৫২ সালে রক্ত দিয়েছি। ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করেও আমরা গদিতে বসতে পারি নাই। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান মার্শাল ল’ জারি করে দশ বৎসর পর্যন্ত আমাদের গোলাম করে রেখেছে। ১৯৬৬ সালে ছয়দফা আন্দোলনে ৭ জুনে আমার ছেলেদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ১৯৬৯-এর আন্দোলনে আইয়ুব খানের পতন হওয়ার পর যখন ইয়াহিয়া খান সাহেব সরকার নিলেন, তিনি বললেন, দেশে শাসনতন্ত্র দেবেন, গণতন্ত্র দেবেন। আমরা মেনে নিলাম। তারপরে অনেক ইতিহাস হয়ে গেলো, নির্বাচন হলো। আমি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছি। আমি, শুধু বাংলায় নয়, পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা হিসেবে তাকে অনুরোধ করলাম, ১৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে আপনি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন দেন। তিনি আমার কথা রাখলেন না, তিনি রাখলেন ভুট্টো সাহেবের কথা। তিনি বললেন, প্রথম সপ্তাহে মার্চ মাসে হবে। আমরা বললাম, ঠিক আছে, আমরা এসেম্বলিতে বসবো। আমি বললাম, এসেম্বলির মধ্যে আলোচনা করবো; এমনকি আমি এ পর্যন্ত বললাম, যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও, একজনও যদি সে হয়, তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেবো।
জনাব ভুট্টো সাহেব এখানে এসেছিলেন, আলোচনা করলেন। বলে গেলেন যে, আলোচনার দরজা বন্ধ না, আরো আলোচনা হবে। তারপর অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ করলাম, আপনারা আসুন বসুন, আমরা আলাপ করে শাসনতন্ত্র তৈয়ার করি। তিনি বললেন, পশ্চিম পাকিস্তানের মেম্বাররা যদি এখানে আসেন, তাহলে কসাইখানা হবে এসেম্বলি। তিনি বললেন, যে যাবে তাকে মেরে ফেলে দেয়া হবে। যদি কেউ এসেম্বলিতে আসে তাহলে পেশোয়ার থেকে করাচি পর্যন্ত দোকান জোর করে বন্ধ করা হবে। আমি বললাম, এসেম্বলি চলবে। তারপর হঠাৎ ১ তারিখে এসেম্বলি বন্ধ করে দেয়া হলো। ইয়াহিয়া খান সাহেব প্রেসিডেন্ট হিসেবে এসেম্বলি ডেকেছিলেন। আমি বললাম যে, আমি যাবো। ভুট্টো সাহেব বললেন, তিনি যাবেন না। ৩৫ জন সদস্য পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এখানে আসলেন। তারপরে হঠাৎ বন্ধ করে দেয়া হলো। দোষ দেয়া হলো বাংলার মানুষকে, দোষ দেয়া হলো আমাকে। বন্দুকের মুখে মানুষ প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠলো। আমি বললাম, শান্তিপূর্ণভাবে আপনারা হরতাল পালন করেন। আমি বললাম, আপনারা কলকারখানা সবকিছু বন্ধ করে দেন। জনগণ সাড়া দিলো। আপন ইচ্ছায় জনগণ রাস্তায় বেরিয়ে পড়লো। তারা শান্তিপূর্ণভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো।
কি পেলাম আমরা? যে আমরা পয়সা দিয়ে অস্ত্র কিনেছি বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য, আজ সেই অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে আমার দেশের গরিব-দুঃখী আর্ত মানুষের বিরুদ্ধে, তার বুকের ওপর হচ্ছে গুলি। আমরা পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু। আমরা বাঙালিরা যখনই ক্ষমতায় যাবার চেষ্টা করেছি তখনই তারা আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। টেলিফোনে আমার সঙ্গে তার কথা হয়। তাকে আমি বলেছিলাম, জনাব ইয়াহিয়া খান সাহেব, আপনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, দেখে যান কিভাবে আমার গরিবের ওপরে, আমার বাংলার মানুষের ওপরে গুলি করা হয়েছে, কী করে আমার মায়ের কোল খালি করা হয়েছে। আপনি আসুন, দেখুন, বিচার করুন। তিনি বললেন, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ১০ তারিখে রাউন্ড টেবিল কনফারেন্স ডাকবো। আমি বলেছি, কিসের বৈঠক বসবে, কার সঙ্গে বসবো? যারা মানুষের বুকের রক্ত নিয়েছে তাদের সঙ্গে বসবো? হঠাৎ আমার সঙ্গে পরামর্শ না করে পাঁচ ঘণ্টা গোপনে বৈঠক করে যে বক্তৃতা তিনি করেছেন, সমস্ত দোষ তিনি আমার ওপরে দিয়েছেন, বাংলার মানুষের ওপর দিয়েছেন।
ভাইয়েরা আমার,
২৫ তারিখে এসেম্বলি কল করেছে। রক্তের দাগ শুকায় নাই। আমি ১০ তারিখে বলে দিয়েছি যে, ঐ শহীদের রক্তের ওপর পা দিয়ে কিছুতেই মুজিবুর রহমান যোগদান করতে পারে না। এসেম্বলি কল করেছে। আমার দাবি মানতে হবে: প্রথম, সামরিক আইন মার্শাল ল’ উইড্র করতে হবে, সমস্ত সামরিক বাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ফেরত নিতে হবে, যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত করতে হবে, আর জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তারপর বিবেচনা করে দেখবো, আমরা এসেম্বলিতে পারবো কি পারবো না। এর পূর্বে এসেম্বলিতে বসতে আমরা পারি না। আমি, আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। আমরা এ দেশের মানুষের অধিকার চাই। আমি পরিষ্কার অক্ষরে বলে দিবার চাই যে, আজ থেকে এই বাংলাদেশে কোর্ট-কাচারি, আদালত-ফৌজদারি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। গরিবের যাতে কষ্ট না হয়, যাতে আমার মানুষ কষ্ট না করে, সে জন্য সমস্ত অন্যান্য জিনিসগুলো আছে সেগুলোর হরতাল কাল থেকে চলবে না। রিকশা, গরুর গাড়ি চলবে, রেল চলবে, লঞ্চ চলবে; শুধু সেক্রেটারিয়েট, সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট, জজকোর্ট, সেমি-গভর্নমেন্ট দপ্তরগুলো, ওয়াপদা কোনো কিছু চলবে না।
২৮ তারিখে কর্মচারীরা বেতন নিয়ে আসবেন। এর পরে যদি বেতন দেয়া না হয়, আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোকদের হত্যা করা হয়, তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইলোÑ প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সব কিছু, আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে। আমরা ভাতে মারবো, আমরা পানিতে মারবো। তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব্যারাকে থাকো, কেউ তোমাদের কিছু বলবে না। কিন্তু আর আমার বুকের ওপর গুলি চালাবার চেষ্টা করো না। সাত কোটি মানুষের দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দমাতে পারবে না।
আর যে সমস্ত লোক শহীদ হয়েছে, আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, আমরা আওয়ামী লীগের থেকে যদ্দুর পারি তাদের সাহায্য করতে চেষ্টা করবো। যারা পারেন আমার রিলিফ কমিটিতে সামান্য টাকা পয়সা পৌঁছিয়ে দেবেন। আর এই সাতদিন হরতালে যে সমস্ত শ্রমিক ভাইরা যোগদান করেছেন, প্রত্যেকটা শিল্পের মালিক তাদের বেতন পৌঁছায়ে দেবেন। সরকারি কর্মচারীদের বলি, আমি যা বলি তা মানতে হবে। যে পর্যন্ত আমার এই দেশের মুক্তি না হবে খাজনা-ট্যাক্স বন্ধ করে দেয়া হলো, কেউ দেবো না। মনে রাখবেন, শত্রুবাহিনী ঢুকেছে, নিজেদের মধ্যে আত্মকলহ সৃষ্টি করবে, লুটপাট করবে। এই বাংলায় হিন্দু মুসলমান বাঙালি অবাঙালি যারা আছে তারা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের ওপরে। আমাদের যেন বদনাম না হয়। মনে রাখবেন রেডিও টেলিভিশনের কর্মচারীরা, যদি রেডিওতে আমাদের কথা না শোনেন, তাহলে কোনো বাঙালি রেডিও স্টেশনে যাবেন না। যদি টেলিভিশন আমাদের নিউজ না দেয়, কোনো বাঙালি টেলিভিশনে যাবেন না। দুই ঘণ্টা ব্যাংক খোলা থাকবে যাতে মানুষ তাদের ময়নাপত্র নিবার পারে। কিন্তু পূর্ববাংলা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে এক পয়সাও চালান হতে পারবে না। টেলিফোন টেলিগ্রাম আমাদের এই পূর্ববাংলায় চলবে এবং বিদেশের সঙ্গে নিউজ পাঠাতে চালাবেন। কিন্তু যদি এ দেশের মানুষকে খতম করার চেষ্টা করা হয়, বাঙালিরা বুঝেশুনে কাজ করবেন। প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলো এবং তোমাদের যা কিছু তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দিবো। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ্। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা। জয় বাংলা।
দুই. শেখ মুজিবের রাজনীতি কোনো তাঁবেদারিত্বের ধার ধারতো না। তিনি তাই খুব সাহস নিয়েই বলেছিলেন ‘আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি’ কিংবা ‘যার যা কিছু আছে’। তাঁর সেই কথাগুলো আজো খুবই প্রাসঙ্গিক। বঙ্গবন্ধু জানতেন, তাঁকে হুকুম দেয়ার সময় নাও দেয়া হতে পারে। কিন্তু তাই বলে স্বাধীনতার সংগ্রাম থেমে থাকবে না। থাকার নয়। দেশ গঠনে যার যা কিছু আছে তারই দরকার হয়। যে যে সেক্টরে থাকেন, তিনি যদি সেই সেক্টর থেকে এগিয়ে আসেন তবেই মানুষ, রাষ্ট্র, সমাজ এগিয়ে যাবে তার অভিষ্ট লক্ষ্যবিন্দুতে। শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন আগামী প্রজন্মের জন্য স্বপ্নের ধ্রুবতারা নির্মাণের স্থপতি। তার উদারতার মহাকাশকে অনেকে ব্যবহার করেছে অন্যায্যভাবে। এসব ইতিহাস আজকের সমাজ নির্মাণকারী প্রজন্মকে জানতে হবে। যারা সেই সময়ের একজন তরুণ মেজরকে আজ ‘মহানায়ক’ বানাবার মিছে কসরৎ করছেন, সেই মেজরও তার জীবদ্দশায় এমন কোনো বক্তব্য রেখে বলেননি, তিনি ’৭১-এর রাজনীতির কোনো সদস্য ছিলেন। মহাকাল সকল সত্যকে ধারণ করে। মুজিবের সেই ভাষণটিও প্রজন্মকে প্রেরণা দিয়ে যাবে হাজার হাজার বছর, সন্দেহ নেই। যে ভাষণটির কথা আমি লিখছি, সেই ভাষণটি আবারো আলোচিত হচ্ছে গোটা বিশ্বে। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর রিয়ান জ্যাকেলের সঙ্গে আমার প্রায়ই কথা হয়। তিনি ইন্টারন্যাশনাল পলিটিকসের শিক্ষক। তিনিই আমাকে জানালেন প্রথম, বইটির কথা। যে বইটির কথা বিশ্বের অনেক পাঠকই ইতোমধ্যে জেনেছেন।
১৯৭১ সালে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বলার মধ্য দিয়েই কার্যত বাঙালি জাতির, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রেরণাদায়ী ওই ভাষণ এখনো আলোচিত, এ নিয়ে লেখা হয়েছে কবিতাও। বঙ্গবন্ধুর ওই ভাষণকে বিশ্বসেরা অন্যতম ভাষণ বলে অনেকে মনে করেন। এবার বিশ্বসেরা ভাষণ নিয়ে যুক্তরাজ্যের একটি প্রকাশনায় তা স্থান পেয়েছে। ইংরেজিতে অনূদিত ভাষণের বইটির নাম ‘উই শ্যাল ফাইট অন দ্য বিচেস’- দ্য স্পিচেস দ্যাট ইন্সপায়ার্ড হিস্টরি [we shall fight on the beaches: the speeches that inspired history]’।
বইটির সংকলক- জ্যাকব এফ ফিল্ড। খ্রিস্টপূর্ব ৪৩১ সাল থেকে ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সেরা ভাষণ নিয়ে ২২৩ পৃষ্ঠার বই এটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার উইনস্টন চার্চিলের ভাষণ থেকে নেয়া শিরোনামের এই সংকলন গ্রন্থের শেষ ভাষণটি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগ্যানের ‘টিয়ারস ডাউন ওয়াল’। বইটির ২০১ পৃষ্ঠায় ‘দ্য স্ট্রাগল দিস টাইম ইজ ট্য স্ট্রাগল ফর ইন্ডিপেন্ডেন্স’ শিরোনামে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। বিশ্ব সভ্যতা, বিশ্ব সমাজ ও রাজনীতির দ্বার আজ অবারিত। প্রজন্ম সেই দরজায় নাড়া দেবেই। কোনো সত্যই চেপে রাখা যাবে না। যে ভাষণটি গোটা বাঙালি জাতিকে মুক্তিপাগল করে তুলেছিল- তার ঐতিহাসিক স্বীকৃতি সেই ধারাটি আবারো প্রমাণ করছে।
-------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ : ০৬/ সেপ্টেম্বর /২০১৪ শনিবার প্রকাশিত
২| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১০
ওয়্যারউলফ বলেছেন: বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষন আজও রক্তে শিহরন জাগায়। পোষ্টটির জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৯
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই ফকির ইলিয়াস।