![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী, অভিবাসী বাঙালিদের চাওয়া ও বাস্তবতা
ফকির ইলিয়াস
_________________________________________________
নিউইয়র্ক মহানগরী এখন সরগরম। জাতিসংঘ অধিবেশন শুরু হয়েছে। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এভিন্যুর অনেকগুলো সড়কও বন্ধ। বিশ্বের অনেক নেতানেত্রী এখন নিউইয়র্কে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন প্রতি বছর হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এই অধিবেশনে যোগ দিতে প্রতি বছরই নিউইয়র্কে আসেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাংলাদেশীরা প্রতিবারই বিভিন্ন দাবি জানান। কেউ কি এসব দাবি শোনেন? এই দাবিগুলোর কিছুটাও কি পূরণ হয়?
এমন নজির খুব কম। উদাহরণ দেয়া যায় অনেক। বিমান এখনো নিউইয়র্ক রুটে চালু হয়নি। অথচ গেলো বছরই আমাদের প্রধানমন্ত্রী কথা দিয়ে গিয়েছিলেন। প্রবাসীরা দেশে বিনিয়োগ করে অনেক হেনস্তার শিকার হয়েছেন। প্লট আর ফ্ল্যাট ব্যবসায়ীরা কাউকে পথেও নামিয়েছে। দেখার কেউ নেই। দেশে গিয়ে প্রবাসীরা অনেক বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। বিচার পাচ্ছেন না। সব রাঘব-বোয়ালের নদী একটাই। তারা এই নদীতেই সাঁতার কাটেন। তাদের কোনো দল-মত নেই, তারা ভোগে মেতে ওঠেন। ব্যবসা-বাণিজ্যও করেন দল-মত ভুলে। শুধুমাত্র টকশোতে তারা একে অন্যের প্রতিপক্ষ। কী আজব এই দেশ!
সরকার যায় সরকার আসে। এটা একটা নিয়মিত প্রসেস। যেসব মন্ত্রী কাজে ব্যর্থ হনÑ তাদের বাদ দেয়া হয়। অন্তত শেখ হাসিনার সরকার তেমন কিছু নজির স্থাপন করেছেন। কিন্তু মন্ত্রীরা কি প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়মিত তাদের রিপোর্ট দিচ্ছেন? তারা জানাচ্ছেন তাদের ব্যর্থতা?
মন্ত্রীরা সবসময়ই বড় বড় ভালো কথা বলেন। বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু একজন জাঁদরেল রাজনীতিক। তিনি মিডিয়া বিষয়ে অনেক কথাই বলছেন। হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ‘সঠিক তথ্য জনগণের কাছে তুলে ধরা এবং খ-িত তথ্য, মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন, তথ্য আড়াল করা, অসৎ তথ্য প্রচার ও অসৎ সাংবাদিকতাকে নিরুৎসাহিত করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করবো।’ আমরা দেখছি মিডিয়া এখন বিশ্বের একটি বড় আলোচিত বিষয়। মিডিয়া অনেক সত্যকে চাপা দিয়ে মিথ্যাকে উৎসাহিত করছেÑ বিষয়টা নিয়ে ভাবার অবকাশ তো থাকছেই।
মন্ত্রীরা সব সময়ই বড় বড় কথাবার্তা বলেন। কিন্তু কথা হচ্ছে, বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশে সৃজনশীলতা যতোটা না এগোচ্ছে, চুরি-চামারি এগোচ্ছে তার বহুগুণ। এর প্রতিকারে সরকার কী করছে? কতোটা করছে? অপরাধের ধরন, অপরাধীর মানসিকতা বদলাচ্ছে। তাই আগে ছিল না, এমন অপরাধ দমনে নিরাপত্তা আইনও করতে পারে যে কোনো রাষ্ট্রপক্ষ। সমাজ বাঁচাবার জন্য সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আইন প্রণীত হতেই থাকে জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা কালে কালে। একটি বিষয় না বললেই নয়। এই সময়ে এক আলোচিত খলনায়ক এ কে খন্দকার। তার বিষয়ে একটি দরকারি কথা বলেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেছেন, খন্দকার মোশতাক ও জিয়াউর রহমানের মতো এ কে খন্দকারও ভারতে বসে পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র করেছিলেন। আসলে কি তাই? যদি তাই হয়, তা কি আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড জানতেন না?
মন্ত্রী বলেছেন, “খন্দকার মোশতাক ও জিয়াউর রহমান ভারতে বসে পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র করেছিলেন। তাদেরই একজন এ কে খন্দকার। এটা দীর্ঘদিন পর প্রকাশ পেয়েছে। এ কে খন্দকার আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করে ঘাপটি মেরেছিলেন। তার লেখা বইয়ে বঙ্গবন্ধুকে ছোট করে হেয়প্রতিপন্ন করেছেন। এদের বিচার হবে। তাদের যেসব দোসর বেঁচে নেই তাদেরও মরণোত্তর বিচার করা হবে।”
আরেকটি বিষয় আমাদের ভাবাচ্ছে। হঠাৎ করেই ভারতপ্রীতি দেখাতে চাইছে বিএনপি। বাংলাদেশে ‘গণতন্ত্র রক্ষায়’ প্রতিবেশী দেশ ভারতের নৈতিক সমর্থন প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন। তিনি বলছেন, “ভারত আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ, পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ। ভারতের হস্তক্ষেপ নয়, গণতন্ত্র রক্ষায় তাদের নৈতিক সমর্থন প্রয়োজন। আশা করি ভারত সরকার ও ভারতের জনগণ আমাদের পাশে থাকবে।” বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে বুঝেন নাÑ তা নয়। তারপরও তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতার জন্য কী না পারে! এর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের এ বিষয়টিও লক্ষ রাখতে হবে, প্রণীত আইন কখনই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য চাপিয়ে দেন না কিংবা বাকস্বাধীনতা, মুক্তচিন্তা প্রকাশের স্বাধীনতার নামে জাতি-গোষ্ঠী বর্ণ-ধর্ম বৈষম্যমূলক ঘটনাবলীকেও প্রশ্রয় দেন না বিশ্বের বরেণ্য রাজনীতিকরা। অথচ আমরা দেখি বাংলাদেশে আইনের খড়গ নেমে আসে বিরোধী পক্ষের ওপর। একটা বিষয় আমরা খুব গভীরভাবে দেখছি, যখনই সরকারি বড় কোনো নেতা কোনো কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত, তখনই ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে খুব সূক্ষ্মভাবে। ধরা যাক হলমার্কের কথা। হলমার্ক কেলেঙ্কারির হোতাদের ছাড় দেয়া হবে না বলা হয়েছিল। কিন্তু এর মূল হোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।
দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছিল সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে হলমার্কসহ ৫টি প্রতিষ্ঠান ৩ হাজার ৬০৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে হলমার্ক সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল (সাবেক শেরাটন) শাখা থেকে ২,৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা দেশী-বিদেশী ২৬টি ব্যাংকের ৫৮টি হিসাবে পাচার করে নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছিল। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে আসে, ওই পরিমাণ অর্থ পাচারের জন্য রূপসী বাংলা শাখায় ১৭টি কোম্পানির নামে খোলা হয় ১৭টি হিসাব। দুদকের অনুসন্ধান টিম ইতোমধ্যে হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। এই কেলেঙ্কারির গডফাদার কে বা কারা? তাদের কি কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাবে?
বাংলাদেশে আসলে চলছে এটা সাপলুডু খেলা। সরকারেরই অংশীদার কয়েক নেতাই সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন প্রকাশ্যে। এরশাদ কখন কী বলেনÑ তার ঠিক-ঠিকানা নেই। আমাদের মনে আছে, শেয়ারবাজারে কয়েক লাখ বিনিয়োগকারী সর্বস্ব হারিয়েছে। ডেসটিনি ইউনিপেটুসহ এমএলএম কোম্পানি মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা লুট করে নিচ্ছে। হলমার্ক এতো টাকা লুট করলো, অথচ এর সুরাহার ধীরগতি বিনিয়োগকারীদের হতাশ করছে তো বটেই। এই যে দুই চিত্র আমরা দেখছি, তা আসছে সরকারের ভেতর থেকেই। কোনটা জানবে, মানবে দেশের সাধারণ মানুষ!
আমরা দেখছি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দল গুছানোর কথা বলছেন। আওয়ামী লীগের তৃণমূলে এখন ভাগ-বাটোয়ারার রাজনীতি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “অনেক ইউনিয়ন আর উপজেলায় সম্মেলন হচ্ছে। এখান থেকেই নতুন নতুন নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে।” “যেয়ে ঘুরে আসা নয়। বসে থেকে সম্মেলন করতে হবে,” কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে শেখ হাসিনা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “সময় বেশি নেই। আমার বিশ্বাস, আমরা ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারবো। আর ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হবো।”
আমরা যারা অভিবাসী তারাও একটি উন্নত মাতৃভূমি চাই। আমরা চাই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। কথা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ আপন গতিতেই এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশে জাতীয় ঐক্যের রাজনীতির কথা এলেই সামনে চলে আসে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আমরা দেখেছি, দেশের ডানপন্থী একটি পক্ষ তরুণ প্রজন্মকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তারা প্রয়োজনে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে কিছু নেই’Ñ এমন তত্ত্বও শোনাচ্ছে যত্রতত্র। যারা একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার নায়ক ছিল, যারা একাত্তরে এ দেশের মা- বোনদের সম্ভ্রম লুণ্ঠন করেছিল, তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্যই এই সরকারকে মানুষ ভোট দিয়েছিল। সেই বিচার কাজ চলছে। কিন্তু হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। ঘাতক রাজাকার আলবদরদের বিচারের দাবি সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য এই প্রজন্মকে অবশ্যই মাঠে থাকতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সহনশীলতার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশে খুব কঠিন কাজ ছিল না। যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রধান দলগুলোকে সমানভাবে সম্মান করতো। এটা হয়নি। বরং কেউ কেউ এই চেতনাকে নিজ স্বার্থ হাসিলের কাজে লাগিয়েছে। অথচ জাতীয় উন্নয়নে সেটাই প্রধান রক্ষাকবচ। যারা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের এখনো মনে আছে কী চেতনা বুকে নিয়ে তারা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। সেই শাণিত শক্তির আজ খুব বেশি প্রয়োজন। এ প্রজন্ম বাঙালি জাতিসত্তাকে বলীয়ান করেই বিশ্বে দাঁড়াতে চায়। কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে, সরকার এর সঠিক মূল্যায়ন করতে পারলো না। যে কথাটি না বললেই নয়, তা হলো বিএনপি-জামাত জোট যদি রাষ্ট্রক্ষমতা পায় তখন আজ যারা জেলে বসে হাসছে, তারা বেরিয়ে আসবে খুব সহজে। এরপর দেশের পরিণতি কী হবেÑ তা অনুমান করা কঠিন নয়।
মনে রাখা দরকার দেশের মানুষ জঙ্গিবাদের হোতাদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না। কিন্তু চরম লুটপাটকারীদের হাত থেকেও রেহাই পেতে চায় সাধারণ মানুষ। একটা সময় আসবে, অভিবাসী সমাজ আর দাবি জানাবেন না। তারা ইতোমধ্যে কুয়েত এয়ারওয়েজ, ইত্তেহাদ, কাতার এয়ারওয়েজ, গালফ, তার্কিশ এয়ারকে বেছে নিয়েছেন বাহন হিসেবে। তারা এখন মাতৃভূমিতে নিরাপত্তাহীন হয়ে বিদেশেই বিনিয়োগ করছেন। এর জন্য দায় বাংলাদেশের রাজনীতিকদেরই নিতে হবে। এভাবে এই প্রজন্ম ক্রমশই স্বদেশবিমুখ হবে। দেশের কথা মনেও করবে না। এর দায় রাজনীতিকরা এড়াতে পারবেন না কোনোমতেই।
আমরা দেখছি, এই প্রবাসেও অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর দলাদলিতে ব্যস্ত আওয়ামী রাজনীতিকরা। এর অবসান দরকার। কারণ হানাহানি প্রতিপক্ষকেই সুযোগ করে দেয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ২০১৪-তেও জাতিসংঘে ভাষণ দিচ্ছেন। স্মরণ করবেন জাতির জনককে। এটা বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয়। আমি যে বিষয়টি গর্বের সঙ্গে বলতে চাই তাহলো, ফিলিস্তিনি মজলুম মানুষের পক্ষে অনেক বৃহৎ শক্তি যখন কথা বলেনি, তখন বাংলাদেশ কথা বলেছে। কথা বলেছেন এই সময়ের সাহসী বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ এভাবেই সত্যের পক্ষে থাকতে চায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীÑ-আপনি লাখ লাখ অভিবাসী বাঙালির অভিবাদন গ্রহণ করুন। ন্যায়ের পক্ষে আপনার জয় অব্যাহত থাকুক।
---------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ : ২৭/সেপ্টেম্বর/২০১৪ শনিবার প্রকাশিত
©somewhere in net ltd.