নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজনীতিকদের মানবতাবোধ ও দায়বদ্ধতা

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৮:২১

রাজনীতিকদের মানবতাবোধ ও দায়বদ্ধতা
ফকির ইলিয়াস
=============================================
একটি তথ্য দিয়ে শুরু করি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিনিয়র মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ১৯৯৭ সালে পবিত্র হজব্রত পালন করেছিলেন। এমন সংবাদ এখন ভেসে বেড়াচ্ছে। তিনি যেদিন নিউইয়র্কে বক্তব্য দেন- তা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আমি অনলাইনে দেখেছিলাম। কিছুই বলতে পারিনি। পারিনি কারণ নিজে একজন আলহাজ হয়ে এমন কথা বলতে পারেনÑ তা আমার জানা ছিল না।
তিনি যা বলেছেন- তা গোপন নয়। তিনি আস্তিক কি নাস্তিক, তা নিয়েও কোনো মাথাব্যথা নেই আমার। কিন্তু কথা হচ্ছে, কোটি মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অধিকার তাকে কে দিলো? তিনি বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে একটি কথা বলেছেন অনেকটা মূর্খের মতো।
বিবিসি জানতে চেয়েছিল- ‘কিন্তু আপনার কী মনে হয় না, ব্যক্তি হিসেবে আপনি যে মন্তব্য করতে পারেন- সরকারের মন্ত্রী হিসেবে সে বক্তব্য বলার ক্ষেত্রে আপনার কিছু বিধিনিষেধের অধীনে থাকতে হতে পারে?’
এর উত্তরে লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন- ‘হ্যাঁ, বিধিনিষেধ আছেই। সেটা তো আমি আমার দেশে করিনি। আমি ভাবছিলাম মুক্ত পৃথিবীতে আসছি, যেখানেই সবাই মুক্ত বিহঙ্গ, এখানে কোনো কিছুতেই বাধা নাই। এখানে যে কালো বিড়াল এতো রয়ে গেছে, তাতো আমি জানি না।’ কি অদ্ভুত কথা! আমেরিকায় কি যাচ্ছে তাই বলা যায়? আমেরিকা প্রত্যেক ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। তার অর্থ এই নয়- কেউ ধর্মের নামে কটূক্তি করে সাম্প্রদায়িক মারদাঙ্গা বাধাবেন!
বিবিসি তার কাছে জানতে চেয়েছিল- ‘কিন্তু এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে মন্ত্রিসভা থেকে আপনাকে বিদায় নিতে হতে পারে- এটা জানবার পরে আপনি কী দুঃখিত বা অনুতপ্ত?’
লতিফ সিদ্দিকী জবাবে বলেছেন- ‘না, আমার অনুতাপ বা দুঃখের কোনো কারণ নেই। আমার প্রধানমন্ত্রী তার রাষ্ট্র পরিচালনে তিনি যেটা ভালো মনে করবেন, সেটা করবেন। আমি যদি তার জন্য বোঝা হয়ে যাই, তিনি তার বোঝা রাখবেন কেন?’
বিবিসির প্রশ্ন ছিল- আপনার বক্তব্যে যেটা সমালোচনা হয়েছে, সমালোচনা হয়েছে যে, আপনার বক্তব্যে ইসলাম ধর্মে যারা বিশ্বাসী তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে। আপনি কী এটার সঙ্গে একমত?
লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন- ‘তারা হাজার হাজার কোটি কোটি মানুষ মেরে ফেলতেছে, ওটা করতেছে সেটা করতেছে। তাতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে না। আমি একটাৃ এই হজ তো মোহাম্মদের (হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) জন্মের আগেও প্রচলিত ছিল। এটা কী মোহাম্মদ প্রচলন করেছেন? আর তাবলিগের তো কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তাবলিগের মাধ্যমে আমি মনে করি, ভারতবর্ষে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টির করার জন্য একেবারেৃ ওদিকে হলো সংঘ পরিবার এদিকে তাবলিগ পরিবার। এ নিয়ে এতো কথার দরকারটা কী আছে? আমরা জানি এ দেশের প্রধানমন্ত্রী তার দলনেত্রী শেখ হাসিনা বারবার হজ করেছেন। তিনি তাবলিগ জামাতের আখেরি মোনাজাতেও শরিক হন। এই অবমাননা লতিফ সিদ্দিকী কাকে করছেন?
গোত্রগত, সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী দাঙ্গা অথবা কলহ বিশ্বে একটি মারাত্মক ব্যাধি। এই কর্কট রোগকে যারা ছড়িয়ে দিতে চায় তারা মানবতার শত্রু।
পত্রপত্রিকাগুলো এখন অনেক কিছুই লিখছে এই মন্ত্রীকে নিয়ে। মন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই লাগামহীন বক্তব্য ও আপত্তিকর কর্মকা-ের জন্য লতিফ সিদ্দিকী আলোচনায় আসেন। ২০১০ সালে ঢাকায় রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক অনুষ্ঠানে তিনি সাংবাদিকদের গালাগালি করেন। এরপর লতিফ সিদ্দিকী ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, যারা হরতাল দেবে তাদের হত্যা করা হবে। ২৬ জুন জাতীয় সংসদের অধিবেশনে তিনি নারী-পুরুষের পরকীয়া নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সমালোচনা ও কটাক্ষ করে বক্তৃতা করেন ২০ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এবং উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ বৈঠকে। এর আগে ২৮ মার্চ লতিফ সিদ্দিকী টাঙ্গাইলে নিজ বাড়িতে পিডিবির এক উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে লাথি মেরে পানিতে ফেলে দেন। এতে পুনয় চন্দ্র নামের ওই প্রকৌশলীর মাথা ফেটে যায়। ওই প্রকৌশলীর ‘অপরাধ’ ছিল তিনি মন্ত্রীর সামনে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের প্রথম মেয়াদে মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী নিজের স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকীর নামে সরকারি জমি বরাদ্দ দিয়ে ব্যাপক সমালোচিত হন।
সর্বশেষ গেলো রোববার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে টাঙ্গাইল সমিতির দেয়া সংবর্ধনা সভায় পবিত্র হজ, তাবলিগ জামাত, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে কটূক্তি করেন। তিনি বলেছেন- ‘জয় ভাই কে?’। তিনি সরকারের কেউ নন। অথচ আমরা হরহামেশা মিডিয়ায় দেখছি, শুনছি সজীব ওয়াজেদ জয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা। তাহলে কে সত্য? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী- না এই সিনিয়র মন্ত্রী?
এই মন্ত্রী মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সাঃ) বিষয়ে যা বলেছেন, তা খুবই ন্যক্কারজনক ও গর্হিত কাজ। মহানবী (সাঃ) শান্তির অগ্রদূত ছিলেন- তা অন্য ধর্মাবলম্বীরাও স্বীকার করেন। এই মন্ত্রী এভাবে মন্তব্য করবেন কেন? এই অধিকার কি বাক-স্বাধীনতার আওতায় পড়ে?
একটি বিষয় আমাকে বেশ ভাবিয়েছে। শনিবারের কথা রোববারেই ভুলে গেলেন ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। গত ১৭ সেপ্টেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের ম্যানহাটনস্থ ম্যারিয়ট মার্কি হোটেলে প্রবাসীদের দেয়া প্রধানমন্ত্রীর সার্বজনীন নাগরিক সংবর্ধনা সভায় মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী ও প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় একই মঞ্চে পাশাপাশি বসে খোশ গল্পে মেতেছিলেন। এ ছবি ছাপাও হয়েছে বিভিন্ন মিডিয়ায়। কিন্তু ২৪ ঘণ্টায় সব ভুলে পরদিন রোববারের একটি অনুষ্ঠানে নিজের দম্ভোক্তি দেখিয়ে অবলীলায় বললেন- জয় কে?
নিউইয়র্কের ওই সভায় তিনি নিজেকে একজন চাঁদাবাজ হিসেবেও স্বীকার করেছেন লতিফ সিদ্দিকী। তিনি বলেছেন ড. নুরুন নবীর কাছে ইলেকশন করার জন্য চাঁদা চেয়েছিলাম। তিনি দিয়েছিলেন মাত্র ৫০ হাজার টাকা। লতিফ সিদ্দিকী এক লাখ টাকার কম চাঁদা নেয় না কারো কাছ থেকে। কী জঘন্য স্বীকারোক্তি!
একটা প্লট তৈরি করে দিয়েছেন এই সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতা বিরোধীদের জন্য। কিন্তু সেটাই শেষ কথা নয়। তিনি কোটি মুসলমানের ধর্মীয় চেতনায় আঘাত করেছেন। তার এজন্য বিচারের কাটগড়ায় দাঁড় হওয়া উচিত। আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি এই মন্ত্রীকে বাদ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিচক্ষণতার সঙ্গেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করবেন, সেটাই কাম্য। কারণ এই ইস্যু নিয়ে বিএনপি-জামাত জোট মাঠে নামতে শুরু করেছে। ‘মুরতাদবাদ’, ‘নাস্তিকতাবাদ’ এর কথা বলে এর আগেও এ দেশে সহিংসতা হয়েছে। আমাদের মনে আছে এমন পরিস্থিতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকেও মোকাবেলা করতে হয়েছিল।
সেই মুজিবকেই কটাক্ষ করে এখন লন্ডনে বসে বাণী (!) শোনাচ্ছেন খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান। সম্প্রতি তিনি যা বলছেন- তা রাজনীতিক হিসেবে একটি পাগলের প্রলাপ মাত্র। সে বিষয়ে ভিন্ন নিবন্ধে লেখার আশা রাখছি। লতিফ সিদ্দিকী তার সীমানা লঙ্ঘন করেছেন। সীমা লঙ্ঘনকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। তিনি বক্তব্য প্রত্যাহার কিংবা ক্ষমা চাইলেই এই দায় শেষ হবার নয়। তাকে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়ার মাধ্যমেই এর প্রথম পর্বের যবনিকা হতে পারে।
-----------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ : ০৪/অক্টোবর /২০১৪ শনিবার প্রকাশিত

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৯:২৩

এহসান সাবির বলেছেন: হুম!

২| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ২:১১

জনতার রায় বলেছেন: আওয়ামী লীগে এরকম কুলাঙ্গারের অভাব নেই। দুই একটা নাঝে মাঝে মুখ খুলে আওয়ামী দর্শনের আসল স্বরূপ প্রকাশ করে দেয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.