নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

পতিত রাজনীতি, রাজনীতির পতিতজনরা

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৮:৩৮

পতিত রাজনীতি, রাজনীতির পতিতজনরা
ফকির ইলিয়াস
-------------------------------------------
একটি রাষ্ট্রে রাজনীতির পতন হলে সে দেশের মানুষের দাঁড়াবার জায়গা ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসে। মানুষ হতাশ হয়। রাজনীতিকরা সমাজের আইকন। কিন্তু এদের স্খলন দেখলে সাধারণ অপরাধীরাও ভাবে- দেশ এখন মগের মুল্লুক। তাই তারাও বড় বড় অপরাধের ধৃষ্টতা দেখাবার প্রয়াস পায়। বাংলাদেশে রাজনীতির পরিশুদ্ধ ধারার পতন ঘটেছে বিভিন্নভাবে। প্রথমত হত্যার রাজনীতি ভেঙে দিয়েছে দেশের গণতন্ত্রের মেরুদণ্ড। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সামরিক জান্তারা ছিনিমিনি খেলা শুরু করে সাধারণ মানুষের ভাগ্য নিয়ে। সামরিক ব্যক্তি জিয়াউর রহমান ‘হাঁ’-‘না’ ভোট দিয়ে মসনদ পাকাপোক্ত করার ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত করেন। বাংলাদেশে পতনের রাজনীতির শুরু সেদিন থেকেই। মুসলিম লীগের কিছু পতিত দালাল- শাহ আজিজুর রহমান, মশিউর রহমান যাদু মিয়া, আলীম আল রাজী প্রমুখকে মন্ত্রী করে ‘ডিফিকাল্ট’ রাজনীতির ঝাণ্ডা উড়ান এই জিয়াউর রহমান। একই ধারা অব্যাহত রাখেন আরেক সামরিক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনিও বিভিন্ন দল থেকে পতিত রাজনীতিকদের সমন্বয় ঘটান তার দলে। এরাই পরবর্তী সময়ে লুটপাটের রাজনীতির গোড়াপত্তন করে। ছাত্ররাজনীতিতে অস্ত্রের মহড়া দেখায় এরাই।

রাজনীতির পতন ত্বরান্বিত করে ভোগবিলাসের অব্যাহত ধারা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য পতিত রাজনীতিকদের মধ্যে রয়েছেন- প্রাজ্ঞ আওয়ামী লীগার মিজানুর রহমান চৌধুরী, জাসদের শাহজাহান সিরাজ, জাসদের মেজর (অব.) আব্দুল জলিল, এমন আরো অনেক নাম। এরা রাজনীতিতে কী চেয়েছিলেন, আর কী পেয়ে তাদের যাত্রা সমাপ্ত করেছেন, তা আমাদের অজানা নয়। বাংলাদেশে একটি বিষয় খুবই স্পষ্ট। ক্ষমতায় থাকলে এরা কথা বলেন এক সুরে। ক্ষমতায় না থাকলে অন্য সুরে। উদাহরণ হিসেবে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বি চৌধুরীর কথা বলা যায়। তিনি যখন বিএনপির রাজনীতি করতেন তখন যা বলেছিলেন- বিএনপি থেকে বেরিয়ে কিংবা বাদ পড়ে বলেছেন এর ঠিক উল্টো। বি চৌধুরী এখন মাঝে মাঝে যে নীতিবাক্য শোনান- তা তার মুখে আগে ছিল না কেন? একই কথা বলা যায় আরেক পতিত রাজনীতিক কর্নেল অলি আহমেদের বিষয়েও।

আওয়ামী লীগ থেকে ছিটকে পড়েন ড. কামাল হোসেন। না, তিনি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। তার ‘গণফোরাম’ গণমানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। একইভাবে ছিটকে পড়া আরেক রাজনীতিক কাদের সিদ্দিকী। তিনিও আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে বেরিয়ে নতুন দল করেছেন ঠিকই। কিন্তু মানুষের কোনো কাজে লাগছে না ঐ দল। আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে আরো যেসব তারকা খসে পড়েছেন এর মাঝে আছেন- মোস্তফা মহসিন মন্টু, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, মাহমুদুর রহমান মান্না। সুলতান মনসুর ও মাহমুদুর রহমান মান্না হালে সুশীল সমাজের প্রবক্তা। অতি সম্প্রতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন- ‘বিএনপি সরকার পতনের দাবিতে আন্দোলন করছে। আমাদের উদ্দেশ্য দেশের গণতন্ত্র রক্ষা করা। সংবিধানের যে সমস্ত ধারা প্রধানমন্ত্রীকে সীমাহীন ক্ষমতা দিয়েছে, রাষ্ট্রপতিকে কার্যত ক্ষমতাহীন করেছে, পার্লামেন্ট অকার্যকর করে রেখেছে সেই ধারাগুলো বাতিলই আমাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য।’

মান্নার মিশন বিষয়ে নানা কথা বাতাসে ভেসে বেড়ায়। সমালোচকরা বলছেন, নিজ স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে মান্নার প্রথম টার্গেট হলো সরকারের তীব্র সমালোচনায় থেকে তাকে আমলে নেয়া হোক এবং সেই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ তাকে ফিরিয়ে নিক। দ্বিতীয় মিশন হলো, আন্তর্জাতিক অপশক্তির মদদে দেশকে অস্থিতিশীল করে দেশের প্রধান দুই দলের সাংঘর্ষিক প্রেক্ষিত পুঁজি করে তৃতীয় শক্তির মাঝে নিজের নাম লেখানো। তৃতীয় চিন্তাটি হলো, এভাবেই নীতিকথার মাঝে থেকে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে রাজনীতির জল যে দিকে গড়ায় সে দিকেই নিজেকে সঁপে দেয়া। তিনি কখনই দেশে মূলধারার রাজনৈতিক নতুন শক্তি চাননি। শেখ হাসিনা কর্তৃক উপেক্ষিত হওয়ার পর মহাজোট সরকারের শেষ মেয়াদে তিনি নাগরিক ঐক্য নিয়ে হাজির হন। নবম সংসদ নির্বাচনের পর এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ হারালে তিনি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর চিফের কাছে নয়াদিল্লি পর্যন্ত যান, সেখানে লক্ষ্য ছিল, ‘র’ চিফকে দিয়ে শেখ হাসিনাকে সুপারিশ করা- যাতে তাকে সসম্মানে দলে ফিরিয়ে নেয়া হয়। এরকম কথাও রাজনীতির হাটে চাউর আছে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আরেক বিশিষ্ট পতিতজন আবদুল মান্নান ভুঁইয়া। বিএনপির সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান ভুঁইয়া, ২০০৭ সালের ২৫ জুন উত্থাপিত সংস্কার প্রস্তাবে বেশ কিছু দরকারি কথা বলেন। এগুলোর মাঝে ছিল- দলের ভেতর গণতন্ত্রচর্চা, পরিবারতন্ত্র বিলোপ, সৎ, মেধাবী ও যোগ্য রাজনীতিক নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন, দলে ও সরকারে কর্তৃত্ববাদিতার অবসানকল্পে দুই মেয়াদের বেশি দলীয় ও সরকারপ্রধান না থাকা, এক ব্যক্তির দলীয় ও সরকারের প্রধান পদে অধিষ্ঠিত না থাকা, মনোনয়ন বাণিজ্য রোধ, সম্মেলন ও নেতাকর্মীদের মতামত ছাড়া নেতানেত্রীর ইচ্ছায় কমিটি গঠন বন্ধ এবং সর্বোপরি দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন বন্ধের প্রস্তাব। এরপর তার পরিণতি কী হয়েছিল- তা আমরা জানি।

আওয়ামী লীগেও আবদুর রাজ্জাক, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ তাদের বহু সহকর্মী সংস্কারের দাবি তুলেছিলেন। রাজ্জাক-আমু-তোফায়েল-সুরঞ্জিতকে বলা হতো রেটস ( RATS ) পরবর্তী সময়ে পদের লোভে বশ মানলেও অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, মাহমুদুর রহমান মান্না, সুলতান মনসুর এদের ভাগ্য বদল হয়নি। স¤প্রতি পতন ঘটেছে আরেক বহু ঘাটের জল খাওয়া রাজনীতিক এ কে খন্দকারের। তিনি মনগড়া যে তথ্য দিয়ে বই লিখেছেন তা কেউই মেনে নেননি, কিছু ইতিহাস বিকৃতকারী ছাড়া। স্বার্থের জন্য বাংলাদেশের রাজনীতিকরা অনেক কিছুই করতে পারেন।

আমরা তাজ্জব হয়ে শুনলাম বর্তমান আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্য। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে থাকা গণজাগরণ মঞ্চের একটি স্মারকলিপি নেয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তার বাবা সিরাজুল হকের সঙ্গে পিয়াসের বাবা এম এ করিমের বন্ধুত্ব ছিল বলে এই পরিবারটি তার বহুদিনের চেনা। ‘এম এ করিম কুমিল্লার স্বনামধন্য আইনজীবী ছিলেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের ফাউন্ডার ছিলেন। ১৯৬৫ সালের নির্বাচনে বিরোধী জোটের হয়ে নির্বাচনেও প্রার্থী ছিলেন তিনি।’

আনিসুল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে লিফলেট বিতরণের জন্য ১৯৭১ সালের মাঝামাঝি বাড়ির ফটকের সামনে থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পিয়াস করিমকে ধরে নিয়ে সার্কিট হাউসে আটকে রাখে, তখন তার বয়স ছিল ১৩ বছর। ‘এম এ করিমকে পাকিস্তানি বাহিনী সার্কিট হাউসে ডেকে নিয়ে যায়। তিনি বন্ড দিয়ে পিয়াস করিমকে ছাড়িয়ে নেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার মাস দুয়েক আগে তাকে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়।’ ওই সময় ‘চাপ’ দিয়ে পিয়াস করিমের কাছ থেকেও বন্ড নেয়া হয়েছিল বলে আইনমন্ত্রী জানান। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয়পত্র দিতে এম এ করিমকে দেখেছিলেন জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাকে আটক করা হলেও এর ৮/১০ দিন পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু এটা সাধারণ ক্ষমা নয়।’

ঘটনা অন্যখানে- এ কথা বলছেন বিশ্লেষকরা। পিয়াস করিমের প্রতি আইনমন্ত্রীর এই আদর্শিক অবস্থানের পেছনে ব্যক্তি অনুরাগ, না অন্য কিছু আছে তা বাছবিচারে না গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সংগঠনগুলো কট্টর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তারা সামাজিক মাধ্যমে দাবি করছে, পিয়াস করিমের বোন দীর্ঘদিন ধরে আইনমন্ত্রীর জুনিয়র হিসেবে কাজ করায় এমন বক্তব্য রাখতে পেরেছেন। এই বক্তব্যের পর আইনমন্ত্রীর রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়েও কথা উঠছে আওয়ামী লীগেই।

যে কথাটি না বললেই নয় তাহলো বাংলাদেশে রাজনীতি হওয়ার কথা ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নির্ভর। ৩০ লাখ শহীদের রক্তঋণ স্বীকার করে। এই কাজটি খুব কম রাজনীতিকই করছেন। ফলে তাদের পতন হচ্ছে। জয়ী হচ্ছে ভোগবাদ। মদদ পাচ্ছে লুটেরা শ্রেণী। পরাজিত হচ্ছে সাধারণ মানুষের স্বপ্ন। যারা রাজনীতি ও সমাজ নিয়ে ভাবেন- তাদেরকে এই বিষয়গুলোর বিশ্লেষণ করেই এগোতে হবে।

এই লেখাটি যখন শেষ করবো, তখনই খবর বেরিয়েছে, আইনমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। সদ্যপ্রয়াত বিতর্কিত টিভি আলোচক পিয়াস করিমের ‘পক্ষ’ নেয়ার অভিযোগ তুলে আইনমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে কয়েকটি সংগঠন। তাহলে কি আরেকজন মন্ত্রীর বিদায় ঘণ্টা বাজছে? তা সময়ই বলে দেবে। তবে পতিত হয়ে রাজনীতিতে টিকে থাকা যায় না- এমন প্রমাণ আমরা বারবারই দেখেছি।
============================================
দৈনিক ভোরের কাগজ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০১৪ প্রকাশিত

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৯:৩৫

খেলাঘর বলেছেন:


শেখ হাসিনা রাজনীতি করছে না; উনি জমিদারী চালচ্ছেন।

২| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১১:০৭

জেরিফ বলেছেন: :|| :||

৩| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১১:৪১

মদন বলেছেন: মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যে কি খোদ মুক্তিযোদ্ধারাও আর জানে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.