![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
ভাষার শক্তি, প্রাত্যহিক জীবনের জোর
ফকির ইলিয়াস
--------------------------------------------------
একটি আনন্দ সংবাদ দিয়ে লেখাটি শুরু করি। জাতিসংঘ ও ইউনেস্কোর স্বীকৃতি লাভের পর বাঙালির অমর একুশে, এবার আমেরিকার রাষ্ট্রীয় মর্যাদার স্বীকৃতি অর্জন করেছে। সম্প্রতি নিউইয়র্কের স্টেট গভর্নর এন্ড্রু এম কুমো আনুষ্ঠানিকভাবে এই স্বীকৃতি প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯২ সাল থেকে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে মুক্তধারা নিউইয়র্ক এবং বাঙালির চেতনা মঞ্চ যৌথ উদ্যোগে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারির সূচনালগ্নে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করে চলেছে। ১৯৯২ সালে অমর একুশের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে জাতিসংঘ ও ইউনেস্কোর স্বীকৃতি অর্জনেও এ উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ২০১৪ সালে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিশ্বজিত সাহা আমেরিকার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি লাভের জন্য নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর হোজে পেরাল্টার কাছে প্রস্তাবনাটি পেশ করেন। নিউইয়র্ক স্টেট সিনেট আলবেনিতে গত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ প্রস্তাবটি পাস করা হয় (রেজ্যুলেশন নং ৪৬৯)। এরপর গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ পাসকৃত প্রস্তাবনাটি গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
২০ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টায় জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অনুষ্ঠানে স্বীকৃতি সনদটি হস্তান্তর করা হয়। মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত থাকার জন্য প্রবাসে অবস্থানরত সব বাঙালিকে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ উপলক্ষে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে দুই সপ্তাহব্যাপী একুশের গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হবে। অমর একুশের গ্রন্থমেলায় বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত নতুন বইগুলো প্রদর্শিত হবে। এই যে অর্জন, তা গোটা বাঙালি জাতির। গোটা ভাষাপ্রেমী মানুষের। একটি ভাষা যে কোনো জাতির কাছেই সমাদৃত। সে ভাষার জনগোষ্ঠী যত বড় কিংবা যত ছোটই হোক। যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিশিষ্ট ভাষাবিজ্ঞানী ড. জেভিন বেকন বলেন, একটি ভাষা হচ্ছে একটি জাতির মুখ্যশক্তি। ভাষা মানুষের প্রথম এবং শেষ আশ্রয়। কারণ জন্ম নিয়েই সে নিজ মায়ের ভাষায়, মায়ের আদর স্নেহ পায়। আবার মৃত্যুর সময় নিজ মাতৃভাষায়ই শেষ আরাধনাটুকু করে যায়।
আমরা অতীতের দিকে তাকালে দেখব, রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার দাবিতে ১৯৫২ সালে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার পুলিশের গুলিতে নিহত হলে আন্দোলন আরো তীব্র হয়। ১৯৫৪ সালে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু যাদের প্রাণের বিনিময়ে এ ভাষা পেয়েছিল বাঙালি জাতি তাদের বিশ্ব দরবারে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তেমন কোনো উদ্যোগ ছিল না। এই দায়িত্ববোধ থেকে কানাডার ভ্যানকুভার শহরে বসবাসরত দুই বাংলাদেশি রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম। ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের জন্য প্রাথমিকভাবে ১৯৯৮ সালে জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানের কাছে একটি আবেদন করেন। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০০০ সাল থেকে দিনটি জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে প্রতি বছর দিনটিকে আন্তর্জাতিক মার্তভাষা দিবস হিসেবে নিজেরা পালনের ঘোষণা দেয়। বাংলাদেশ প্রস্তাবটি উত্থাপন করলে সর্বসম্মতিক্রমে সাধারণ পরিষদে পাস হয়।
আজকের বিশ্বে সে ভাষাই তত বেশি শক্তিশালী, যে ভাষার যে রাষ্ট্রের অর্থনীতি যত বেশি চাঙ্গা- তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তার কারণ কি? কারণ হচ্ছে শক্তিশালী ভাষাভাষী মানুষরাই বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করছে। অগ্রসরমান প্রজন্মের শক্তি সঞ্চিত হলেই স্বীকৃতি মিলছে নিজ ভাষার। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের প্রধান প্রধান হাসপাতালে সাইনবোর্ড ঝুলছে, ‘আমরা বাংলায় কথা বলি’। নিউইয়র্কের বোর্ড অফ এডুকেশন তাদের প্রতিটি নোটিশে এখন সংযোজন করে নিয়েছে বাংলাভাষা। নির্দেশিকায় স্থান পাচ্ছে বাংলায় নিয়মাবলি। তার কারণ প্রায় পঁচিশ হাজারেরও বেশি বাংলা ভাষাভাষী ছাত্রছাত্রী এখন লেখাপড়া করছে নিউইয়র্কের মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে। এখন এখানে ‘বাংলা কারিকুলাম’ চালু করে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষার প্রচেষ্টা চলছে।
নিউইয়র্ক সিটি বোর্ড অব ইলেকশন অবশেষে তাদের নির্বাচনী নথিপত্রে ভোটারদের জন্য বাংলা ভাষা সংযুক্ত করেছে। বোর্ড অব ইলেকশন তাদের নির্বাচনী নির্দেশিকায় ইতোমধ্যে বাংলা ভাষায় নির্বাচনী তথ্যাদি প্রকাশ করেছে।
বোর্ড অব ইলেকশনের ছাপা ৫টি ভাষায় লেখা মোট ২৪ পৃষ্ঠার নির্দেশিকায় প্রচ্ছদ ও পেছনের পাতায় বাংলা উপস্থাপন ছাড়াও ভেতরে পুরো ৪ পাতাজুড়ে বাংলায় নির্বাচনী তথ্যাদি সংযুক্ত করা হয়েছে। বিশ্বে একই রাষ্ট্রে বিভিন্ন ভাষা চালু থাকার উদাহরণও দেখি আমরা। ভারতের কথাই ধরা যাক। কেরালা কিংবা তামিলনাড়ু অঙ্গরাজ্যের মাতৃভাষা আর কলকাতার মাতৃভাষা এক নয়। দুটি রাজ্যের দুজন নাগরিকের রাষ্ট্রভাষা যদিও ‘হিন্দি’ কিন্তু এই দুই অঙ্গরাজ্যে তা কি মানতে দেখা যায়? না, যায় না। বরং এই দুই অঙ্গরাজ্যের নাগরিকরা মিলিত হয়ে যান এক ভাষায়। আর তা হচ্ছে ইংরেজি। ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন মাল্টিকালচারাল কোম্পানি তাদের শোরুম খুলেছে মুম্বাই, দিল্লি, পুনা কিংবা কেরালার ট্রিচুর ডিস্ট্রিক্টে। সেখানে ভারতীয় রিপ্রেজেনটেটিভদের বলা হয়েছে, ফোনের জবাব দিতে হবে ইংরেজিতে। কারণ ক্লায়েন্ট সবাই ইউরোপ-আমেরিকার। ভাষার প্রতিপত্তি এভাবেই দখল করে নিয়েছে বিভিন্ন উপনিবেশ। অর্থনীতিই হয়ে উঠেছে মুখ্যশক্তি। এমনকি বদলে দেয়া হয়েছে সেখানকার প্রতিনিধিদের নামও। ‘রাজেশ’ হয়ে গিয়েছে ‘রেন্ডি’, ‘মনিষা’ হয়ে গিয়েছে ‘মনিকা’। এ বদল শুধু প্রতীকী কারণের। এই সঙ্গে জড়িত ‘মাল্টিকমপ্লেক্স বিজনেস এন্ডি মার্কেটিং।’
বিভিন্ন দেশেই আজ একটি বিষয় লক্ষ করা যায়, তা হচ্ছে শুদ্ধ এবং কথ্যভাষার দ্ব›দ্ব। যুক্তরাষ্ট্রে আঞ্চলিক কিংবা কথ্যভাষায় বিভিন্ন র্যাপ সঙ্গীতে এমনভাবে বাণীবদ্ধ করা হয়, যার মাঝেমধ্যে অশ্লীল, অশোভন কিছু শব্দও ঢুকিয়ে দেয়া হয় খুব কৌশলে। এসব গান পারিবারিক আবহে, মাতা-পিতা-স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে বসে শোনার মতোই নয় বলা যায়। তারপরও এসব র্যাপ সঙ্গীতের সিডি বাজারে আসছে মিলিয়ন মিলিয়ন। এরও কারণ একটাই, বাণিজ্যিক মুনাফা অর্জন এবং তা সম্ভবও হচ্ছে। কবি অক্টাভিওপাজ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমি লিখি আমার মাতৃভাষায়। বাজারজাতকারীরা তা ইংরেজিতে তর্জমা করে মুনাফা লুটে। নোবেল কমিটির কাছেও ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব বেশি। তা না হলে তারা ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষায় প্রতিষ্ঠিত কবি-লেখকদের ব্যাপারে অন্তিমে এসে আগ্রহী হবে কেন?’ পাজের ক্ষোভ বাজারি মুনাফাখোরদের প্রতি। কিন্তু সে ক্ষোভ যতই তীব্র হোক না কেন, ভাষা বাণিজ্যকারীরাই পৃষ্ঠপোষকতা পায় বিভিন্ন সরকারের, রাষ্ট্র শাসকদের। এই মুনাফালাভের লোভ তো লেখকরাও সংবরণ করতে পারেন না!
বাংলাদেশে একুশের বইমেলা নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি বড় বই বাণিজ্য। লেখকদের টাকায়ই বই বের করেন প্রকাশকরা। আবার তারা ওই বই বিক্রি করেও টাকা কামান। বাংলাদেশ আজ দখল করে নিয়েছে, ভারতীয় টিভি চ্যানেল। আমার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশে ভারতীয় প্রকাশকদের আসতে দেয়া হচ্ছে না কেন? ভারতীয় প্রকাশকরা এলে তো বাংলাদেশের লেখকরা তুলনামূলক ভালো রয়ালিটি নিয়ে বচসা করতে পারতেন। এটা কে না জানে- বাংলাদেশের অনেক খ্যাতিমান লেখকও তাদের প্রকাশকদের কাছ থেকে সম্মানী যথাসময়ে, নীতিমাফিক পান না। আমার মতে, রাষ্ট্রীয় আলোচনার মাধ্যমে কলকাতা-ঢাকা যৌথ বইমেলা, সাহিত্য অনুষ্ঠান, ভাষা সংস্কৃতির আদান পর্ব হতে দোষ কোথায়? নাকি সেখানেও কারো কারো স্বার্থের বিষয় জড়িয়ে আছে? সাহিত্য এবং ভাষার বিশ্বায়নের সমকালে তা কি আটকে রাখা যাবে? দোষ যে কলকাতা রাজ্য সরকারের নেই, তা আমি বলছি না। তারাও ঢাকার বাংলা টিভি চ্যানেলগুলোকে কলকাতায় ঢুকতে না দিয়ে একক রামরাজত্ব বহাল রাখতে চাইছেন। কিন্তু হালে তা কি সম্ভব হবে? বিবিসি, সিএনএনের ওয়ার্ল্ড সার্ভিস দখল করে নিয়েছে এবং নিচ্ছে স্যাটেলাইট আকাশ। তাহলে বাংলা ভাষাভাষী দুই দেশবাসীর এত দ্বিধা কেন? গেল এক দশক ধরে বাংলাদেশে একটি সাহিত্যকর্ম আমাকে বেশ আপ্লুত করছে। আর তা হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ভাষা নিয়ে সংস্কৃতি সাহিত্য নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন রাষ্ট্রের আপামর মানুষ। মণিপুরী, গারো, হাজং, মারমাসহ বিভিন্ন ভাষাভাষী তরুণ সাহিত্যিকরা এগিয়ে এসেছেন। তারা সেসব ভাষার কবিতা, কথাসাহিত্য বাংলায় অনুবাদ করে বাংলা সাহিত্যের মূলধারায় প্রতিষ্ঠিত করছেন। তা অনুমান হচ্ছে এভাবে ইংরেজিতেও। কোনো উপজাতির সাহিত্য, একটি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় ভাষার বাহু বলা যায়। কারণ সেসব ভাষাভাষী মানুষও একই রাষ্ট্রের প্রাণশক্তি।
বলছিলাম, একই রাষ্ট্রে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার কথা। কোনো অঞ্চলের কথ্য ভাষায় সাহিত্য রচিত হবে কিনা; কিংবা হওয়া উচিত কিনা তা নিয়েও চলছে নানা বিতর্ক। একটি কথা মনে রাখতে হবে, একই রাষ্ট্রের অভ্যন্তরেই একটি অঞ্চলের কথ্যভাষা অন্য অঞ্চলে সম্পূর্ণ অচল। এমন কিছু শব্দাবলি আছে যা অঞ্চলের ক্ষেত্রবিশেষে ভিন্ন অর্থও প্রকাশ করে। তাহলে সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন আসছে যিনি কোনো আঞ্চলিক কথ্যভাষায় গদ্য পদ্য লিখছেন, তিনি কি এ অঞ্চলের পাঠক-পাঠিকাকে সামনে রেখেই তা লিখছেন। নাকি তার জাতীয় ভাষার পাঠক তার লক্ষ্যবিন্দু। আগেই বলেছি, ইংরেজিতে কথ্য অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে গান রচিত, গীত হচ্ছে পাশ্চাত্য। এর শ্রোতাও একটি গোষ্ঠী। বাজারি চাহিদাও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যেও ইংরেজি ভাষার বাচনভঙ্গি, উচ্চারণের ভিন্নতা প্রায়ই লক্ষ করা যায়। যেমন- নর্থ ক্যারোলিনা, সাউথ ক্যারোলিনা, টেক্সাস কিংবা নিউইয়র্কের মানুষ একই বাচনভঙ্গিতে কথা বলেন না। সমকালের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অগ্রসর হতে যত বেশি সম্ভব ভাষার দখল শিখতে পারাটাই কৃতিত্ব বলে আমি মনে করি। যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে ওঠা কোনো বাঙালি প্রজন্ম যদি বাংলা ভাষা, সাহিত্য-সংস্কৃতির ওপর গবেষণা করে বাঙালি জাতিসত্তাকে বিশ্বে আরো উজ্জ্বল করতে পারে তা তো সবার জন্যই শুভ বার্তাবাহী।
কেউ যদি জাপান কিংবা চীনের কোনো বাণিজ্যিক, বৃত্তিমূলক কাজে আমেরিকা থেকে যান তাকে আগেই ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাকে জানিয়ে দেয়া হয় তিনি সেখানে গিয়ে যোগদানের আগে যদি জাপানি কিংবা চীনা ভাষা কিছুটা রপ্ত করে যান তবে তাকে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রে তার থাকাকালীনই তাকে ভাষা শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করবে জাপানি কিংবা চীনা ওই প্রতিষ্ঠান। বিশ্ব মানবের কাছে নিজেদের ভাষা ছড়িয়ে দেয়ার এই যে চেষ্টা এবং চেতনা তা অনুসরণযোগ্য। আর এর সঙ্গে অর্থ রোজগারের বিষয় তো রয়েছেই।
অনেক উদাহরণ আমরা প্রায়ই দেখি। কয়েক বছর আগে, একটি সংবাদ দেশে-বিদেশে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী, একজন অভিবাসী বাঙালি মহান একুশে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ডাক বিভাগের (ইউএসপিএস) অধীনে একটি ডাকটিকেট প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এর প্রকৃত ঘটনাটি অন্যরকম। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু লাইসেন্সধারী এজেন্ট রয়েছে যারা ডাকটিকেট প্রিন্ট করতে পারে। ডাক বিভাগের নিয়োগকৃত এসব এজেন্টের কাছে যে কেউ উপযুক্ত কারণ, শর্ত এবং আনুষঙ্গিক বিষয়াদি মেনে ডাকটিকেট প্রকাশের আবেদন করতে পারেন। তা তারা মেনে নিলে সাময়িকভাবে কম্পিউটার প্রিন্ট ডাকটিকেট প্রকাশের ব্যবস্থা করে। প্রধান শর্ত হচ্ছে লক্ষাধিক ডাকটিকেট এভাবে অনলাইনে বিক্রি করতে হবে। তা করতে পারলেই তারা ডাকঘরে ওই ডাকটিকেট বিক্রির উদ্যোগ নেবে। আসল কথা হচ্ছে অর্থ উপার্জন।
অর্থ উপার্জনের উৎস করে দিতে পারলেই ভাষা সংস্কৃতি এখন আদৃত হচ্ছে বিশ্ববাজারে। তাই ভাষাকে টিকে থাকতে হচ্ছে এই অর্থনীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়েই। একটি ভাষার শক্তি, মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের জোর বাড়িয়ে দেয়। কারণ সে যখন তার নিত্যপ্রয়োজনে ওই ভাষায় কথা বলে জীবন চালাতে পারে, আয়-রোজগার করতে পারে, তখনই ওই ভাষার প্রতি তার মমত্ব বাড়ে। যে বুঝতে পারে তার কথার মূল্য আছে। তার অক্ষরের মূল্য আছে। লেখার শেষ প্রান্তে এসে আরেকটি অর্জনের খবর পাঠকদের জানাতে চাই। গেল ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ মার্কিন সরকারের অর্থায়নে যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনারের অনানুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। নিউজার্সির প্যাটারসন শহরে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শামীম আহসান শহীদ মিনারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় প্যাটারসনের ডেপুটি মেয়র পেড্রো রড্রিগেজ, কাউন্সিল ভাইস প্রেসিডেন্ট রুবি কটন, স্থানীয় কাউন্সিল সদস্যরা, প্যাসিক কাউন্টি অফিসের কর্মকর্তারা, নির্বাচিত স্থানীয় প্রতিনিধিরা এবং বাংলাদেশ কমিউনিটির বহুসংখ্যক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এর আগে, টেক্সাসের হিউস্টনে বাংলাদেশ কমিউনিটির নিজস্ব উদ্যোগ ও অর্থায়নে একটি শহীদ মিনার ইতোপূর্বে নির্মিত হয়েছে। নিউজার্সির শহীদ মিনারটি মার্কিন সরকারের অর্থায়নে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম শহীদ মিনার, যার জন্য জমির বরাদ্দ ছাড়াও স্থানীয় প্রশাসন প্রকল্প বাস্তবায়নে পূর্ণ অর্থায়ন করেছে। ২০১২ সালে বিভিন্ন ভাষাভাষীর সমন্বয়ে গঠিত প্রবাসী কমিউনিটির মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং প্যাটারসনের বাংলাদেশ কমিউনিটির সম্মানে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য প্যাটারসন সিটি কাউন্সিল ওয়েস্টসাইড পার্কে জমি বরাদ্দ এবং ২০১৩ সালে এই প্রজেক্টের জন্য প্যাসিক কাউন্টি আর্থিক অনুদান দেয়। এই যে স্বীকৃতি, তা লাখ লাখ মার্কিনি অভিবাসী বাঙালিকেই সম্মান। বাংলা ভাষাকে সম্মান।
আমাদের মনে রাখতে হবে, বাংলা ভাষার জাগরণ মানে ইংরেজি, ফ্রান্স, স্প্যানিশ, জার্মান ইত্যাদি ভাষার প্রতি অনীহা নয়। বিশ্বে আজকাল চলতে হলে ‘মালটিপল ল্যাঙ্গুয়েজ স্কিল’ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা, প্রজন্ম ও প্রশাসনকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।
-----------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ প্রকাশিত
২| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:৫৮
সুফিয়া বলেছেন: বাংলাদেশে একুশের বইমেলা নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি বড় বই বাণিজ্য। লেখকদের টাকায়ই বই বের করেন প্রকাশকরা। আবার তারা ওই বই বিক্রি করেও টাকা কামান। বাংলাদেশ আজ দখল করে নিয়েছে, ভারতীয় টিভি চ্যানেল।
একমত আপনার সাথে। ধন্যবাদ আপনাকে এমন চমৎকার একটা লেখা শেয়ার করার জন্য।
৩| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৪১
কলমের কালি শেষ বলেছেন: কিছু সুখবর এর সাথে আর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষনও আপনার লেখায় উঠে এসেছে । ভালো লাগলো ।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:৪৪
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: চমৎকার লেখা ভদ্রে!