![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
প্রথাভাঙার প্রগতি ও লেখালেখির প্রতিপক্ষ
ফকির ইলিয়াস
=========================================
শনি ও রোববার নিউইয়র্ক মহানগরী বেশ সরগরম থাকছে। নিউইয়র্কে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে- ‘আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব ও বইমেলা’র ২৪তম আয়োজন। এ উপলক্ষে অনেক সুধীজন নিউইয়র্ক আসছেন। এই মেলা উদ্বোধন করবেন বিশিষ্ট চিন্তক, বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। এবারের বইমেলায় ২৪ মে রোববার বিকেল পাঁচটায় একটা সেমিনার আছে, যার বিষয় ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’। এই সেমিনারটি সঞ্চালনার দায়িত্ব আমার ওপর ন্যস্ত হয়েছে। সেমিনারে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, ড. অনুপম সেন, রামকুমার মুখোপাধ্যায় ছাড়াও আরো বেশ কয়েকজন মুক্তচিন্তক, সমাজ বিশ্লেষক যোগ দেবেন বলে আশা করছি। বলা দরকার, বুদ্ধির মুক্তি বিষয়টি চলমান সময়ে গোটা বিশ্বেই একটি খুব দরকারি বিষয়। একই সঙ্গে বহুল আলোচিত-সমালোচিত অধ্যায়ও বটে। তার কারণ হলো, ফ্রিডম অব ইন্টেল্যাকচুয়ালিটির নামে বিশ্বে এই সময়ে যা ঘটছে, তা কতটা গ্রহণীয় কিংবা কতটা বর্জনীয়, তা নিয়ে গভীরভাবে ভাবার সময় এসেছে। বিশেষ করে যে ভাবনা কিংবা উসকানি হানাহানির জন্ম দেয়- তা নিয়ে রশি টানাটানি কতটা যুক্তিযুক্ত, কথা উঠছে সেটা নিয়েও।
বুদ্ধির মুক্তি বিষয়ে তথ্য কোষ আমাদের যে তথ্য দিচ্ছে- তার দিকে একটু তাকানো দরকার। মুক্ত জ্ঞান চর্চা, ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে একটি প্রগতিবাদী আন্দোলনের লক্ষ্যে ১৯২৬ সালের ১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল হুসেনের (১৮৯৭-১৯৩৮) নেতৃত্বে ঢাকায় ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার যোগ ছিল নিবিড়। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু। ঠিক সাড়ে চার বছরের মাথায় ১৯২৬ সালের জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ও ছাত্র সম্মিলিতভাবে মুসলিম হল মিলনায়তনে (আজকের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল) সভার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেন ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ নামে একটি সংগঠন। বলা দরকার সংগঠনের নামের সঙ্গে ‘মুসলিম’ ও ‘সাহিত্য’ শব্দ দুটি যুক্ত থাকলেও এটি কেবল মুসলমানদের জন্য ও রসসাহিত্য চর্চার নিমিত্তে প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই চেতনাগত দিক থেকে ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ। সুতরাং অন্য ধর্মাবলম্বীদের জন্যও এটি ছিল উন্মুক্ত দ্বার। আর সাহিত্যচর্চা বলতে এরা মুখ্যত বুঝেছিলেন চিন্তাচর্চা, যদিও তাদের কেউ কেউ রসসাহিত্যের চর্চাও করেছিলেন।
এদের মাধ্যমেই মূলত এই আন্দোলন গড়ে ওঠে। সাহিত্য সমাজের মূল বাণী ছিল ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট মুক্তি সেখানে অসম্ভব’। এই কথাটি সংগঠনটির বার্ষিক মুখপত্র ‘শিখা’র শিরোনামের নিচে লেখা থাকত। তখন শিখা পত্রিকায় যারা লিখতেন তারা ‘শিখাগোষ্ঠী’ নামে পরিচিত ছিলেন। মাত্র পাঁচটি সংখ্যা প্রকাশের পর ‘শিখা’ বন্ধ হয়ে যায়। বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম সারথি আবুল ফজল ‘বুদ্ধির মুক্তি’ নামের প্রবন্ধে ‘শিখা’ সম্পর্কে বলেছেন : ‘শিখার টাইটেল পৃষ্ঠায় একটি ক্ষুদ্র রেখাচিত্র ছিল। একটি খোলা কুরআন শরিফ। মানববুদ্ধির আলোর স্পর্শে কুরআনের বাণী প্রদীপ্ত হয়ে উঠেছে, এ ছিল রেখাচিত্রটির মর্ম। কিন্তু এর একটা কদর্থ বের করতে বিরুদ্ধবাদীদের বেগ পেতে হয়নি। তারা এর অর্থ রটালেন মুসলিম সাহিত্য সমাজের সমর্থকরা কুরআনকে পুড়িয়ে ফেলে শুধু মানববুদ্ধিকেই দাঁড় করাতে চাচ্ছে। বলাই বাহুল্য, গোড়া থেকেই গোঁড়ারা মুসলিম সাহিত্য সমাজের বিরোধী ছিল। চিন্তার ক্ষেত্রে কায়েমি স্বার্থের বুনিয়াদ সবচেয়ে শক্ত। এরপর এরা রীতিমতো বিরুদ্ধতা করতে লাগলেন আমাদের’।
এই বিরুদ্ধতাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েই এগিয়ে গিয়েছিলেন সেদিনের মুক্তি আন্দোলনের সংগঠকরা। তাদের প্রেরণার উৎস ছিলেন (১) মোস্তফা কামাল (১৮৮৫-১৯৩৮), ২) রাজা রামমোহন (১৭৭৪-১৮৩৩), ৩) ডিরোজিও (১৮০৯-১৮৩১), ৪) রবীন্দ্রনাথ (১৮৬১-১৯৪১), ৫) প্রমথ চৌধুরী (১৮৬৮-১৯৪৬), ৬) নজরুল (১৮৯৯-১৯৭৬), ৭) হযরত মুহম্মদ (সা.) (৫৭০-৬৩২), ৮) শেখ সাদী (১১৭৫-১২৯২), ৯) গ্যেটে (১৭৪৯-১৮৩২), ১০) রোমা রোলাঁ (১৮৬৮-১৯৪৪)। কাজী আবদুল ওদুদের একটি লেখায় ওই সব মনীষী মহাপুরুষ কেন তাদের প্রেরণাস্থল, তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা আছে।
বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের মূল প্রবর্তক, অধ্যাপক আবুল হুসেনের জীবনকাল অর্ধশতাব্দীরও কম, মাত্র ৪২ বছর। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৩৮ সালের ১৫ অক্টোবর তার অকাল মৃত্যু ঘটে। বাংলার মুসলমান সমাজে যে ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার ও কুপ্রথা বিরাজমান ছিল, সেসব দূরীকরণই ছিল এ আন্দোলনের মুখ্য উদ্দেশ্য। ধর্মবিশ্বাস, পর্দাপ্রথা, সুদ গ্রহণ নৃত্যগীত ইত্যাদি সম্পর্কে আন্দোলনের নেতারা স্বাধীনভাবে মতামত ব্যক্ত করতেন। সাহিত্য সমাজের বিভিন্ন সভায় পঠিত এবং শিখা পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রবন্ধে তাদের চিন্তা ও আদর্শের প্রতিফলন ঘটত। কলকাতার দ্য বেঙ্গলি পত্রিকা সাহিত্য সমাজের এই আদর্শকে ‘বুদ্ধির মুক্তি’ এবং বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী শিবনারায়ণ রায় এটাকে ‘বৌদ্ধিক আন্দোলন’ (ইন্টেল্যাকচুয়াল মুভমেন্ট) নামে অভিহিত করেন।
বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী কাজী আবদুল ওদুদ ( ১৮৯৪-১৯৭০) এক প্রবন্ধে ‘বুদ্ধির মুক্তি’ শব্দটি উচ্চারণ করেন। এসব থেকেই এক সময় ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’ অভিধাটি প্রচলিত হয়। ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনে’র মূল প্রবক্তা আবুল হুসেন একাধিক প্রবন্ধে ইসলাম ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করেই বলেন যে, কালের প্রেক্ষাপটে বুদ্ধি ও যুক্তি দিয়ে সত্যকে জানতে হবে। বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে জানা এবং বৈজ্ঞানিক যুক্তি দিয়ে জানার মধ্যে পার্থক্য আছে। গোঁড়ামি পরিহার করে যুগের আলোকে প্রয়োজনে শরিয়তের পরিবর্তনের পক্ষেও তিনি মত প্রকাশ করেন।
কাজী মোতাহার হোসেন একটি প্রবন্ধে মুসলিম পরিবারের সঙ্গীতাদি ললিতকলা চর্চার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। তিনি লিখেন, সুকুমার বৃত্তির বিকাশ ছাড়া সমাজ মানসের উৎসর্গ সাধিত হয় না। শিখা গোষ্ঠীর এসব বক্তব্য তৎকালীন ঢাকার রক্ষণশীল সমাজ মেনে নেয়নি। যার ফলে আবুল হুসেনকে জবাবদিহি করতে হয় এবং শেষ পর্যন্ত তাকে চাকরি ও ঢাকা ছাড়তে হয়। ১৯৩১ সালে তার ঢাকা ত্যাগের ফলে আন্দোলনে ভাটা পড়ে এবং ১৯৩৮ সালের পরে তা বন্ধ হয়ে যায়।
এখানে আরো বলা প্রয়োজন, ঢাকার রক্ষণশীল স¤প্রদায় আবুল হুসেনের কিছু বক্তব্যে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। লেখালেখির বাইরে এর প্রতিফলন ঘটে অন্তত দুটি ঘটনায়। ১৯২৮ সালের আগস্টে তাকে ও কাজী আবদুল ওদুদকে আপস রফার জন্য বলিয়াদির জমিদার কাজেম উদ্দিন সিদ্দিকীর ঢাকার বাড়িতে ডাকা হয়েছিল। সেখানে দুজনকেই লিখিতভাবে ‘কৈফিয়ত’ দিতে হয়েছিল। পরের বছর ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর কেবল আবুল হুসেনকে ডাকা হয়েছিল নবাববাড়ি আহসান মঞ্জিলে। চাপের মুখে এখানে তিনি ‘ক্ষমাপত্র’ লিখে দিতে এবং সে পত্র সাধারণ্যে প্রচার করতে ‘স্বেচ্ছায় অনুমতি’ দিতে বাধ্য হন। ইতিহাসে দেখা যায় মুসলিম বিশ্বের সর্বত্রই স্বাধীন বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা রক্ষণশীলদের দ্বারা চিরকালই বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বাংলার মুসলমান সমাজেও আলাদা কিছু ঘটেনি। বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের কর্মযোগী বলে অভিহিত আবুল হুসেন এ ইতিহাস জানতেন না তা নয়, কিন্তু এও তিনি জানতেন যে অন্ধ গোঁড়ামি ও রক্ষণশীলতার দুর্গে আঘাত করা ছাড়া তন্দ্রাচ্ছন্ন কোনো সমাজকে জাগানো যায় না।
এই যে জাগানোর প্রক্রিয়া তা এখনো চলছে। বাংলাদেশে আহমদ শরীফ, হুমায়ুন আজাদ প্রমুখ এর ঝাণ্ডা ধরে এগিয়েছেন। আহমদ শরীফ লিখেছেন, “আমার লেখার একমাত্র লক্ষ্য লৌকিক, অলৌলিক, শাস্ত্রিক, সামাজিক, নৈতিক, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পুরনো বিশ্বাস-সংস্কারের ও নীতিনিয়মের দেয়াল ভাঙা।” সেক্যুলারিজমের সংক্ষিপ্ততম সংজ্ঞায়ন করেছেন তিনি এভাবে- “ধর্মের তথা শাস্ত্রের সামাজিক এবং রাষ্ট্রিক অস্বীকৃতিই সেক্যুলারিজম। সমাজ ও রাষ্ট্র ধর্ম সম্পর্কে থাকবে সর্ব প্রকারে উদাসীন, শাস্ত্রাচার সম্বন্ধে সমাজ থাকবে নীরব নিষ্ক্রিয়, রাষ্ট্র থাকবে অজ্ঞ-উদাসীন।”
ধর্মপ্রাণ ও আস্তিকদের সম্পর্কে আহমদ শরীফ লিখেছেন, “শাস্ত্রমানা মানুষমাত্রই স্বধর্মকে সত্য ও সর্বশ্রেষ্ঠ বলে জানে ও মানে। সে জন্য প্রত্যেক আস্তিক মানুষ ভিন্নধর্ম ভুল বা মিথ্যা বলে জানে, অবজ্ঞেয় ও পরিহাস্য বলে ও ভাবে। বাঙলায় তথা ভারতেও হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানের মধ্যেই নয় শুধু, স্বধর্মীয় বৃহৎ কাঠামোর মধ্যেও বিভিন্ন উপমত, স¤প্রদায় এবং আচারও তেমনি অবজ্ঞা-উপহাস পায় ভিন্ন মতের ও আচারের দলের কাছে।”
প্রথাভাঙার জন্য প্রগতিকেই হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে যুগে যুগে। কিন্তু চলমান সময়ে এসে দেখা যাচ্ছে, এক শ্রেণির লেখক প্রথাভাঙার নামে সংঘাতের দিকে এগোচ্ছেন।
একটা বিষয় বলা দরকার- ১৯৪৫ সালের ২৬ জুন জাতিসংঘ সনদ স্বাক্ষরিত হয়। সেই সনদ মতে এর সদস্য সব দেশ সম্মত হয় এই মর্মে যে, গোত্র, ধর্ম, বর্ণ, স¤প্রদায়, জাতি, তথা মানবতার বিপক্ষে কেউ দাঁড়াবে না। তাহলে কথা হচ্ছে, প্রথাভাঙার নামে কোটি কোটি মানুষের ধর্ম, বিশ্বাস ইত্যাদি বিষয়ে কুঠারাঘাত করার অধিকার কে দিচ্ছে কাকে?
দেখা যাচ্ছে, অনলাইন-অফলাইনের এই চলমান সময়ে, যার যা ইচ্ছে লিখছে যত্রতত্র। এই লেখা থেকে কেউ কেউ ব্যক্তিগত ফায়দাও নিতে চাইছে। আমি মুক্তচিন্তার প্রগতিবাদী তুখোড় লেখক এমন অভিধা কামাবার চেষ্টা করছে কেউ কেউ। এরপরে তারা সেটাকে পুঁজি করে বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় বাগাবার ধান্ধাও করছে। সামাজিক সংঘাতটা আসছে এমন মাঠ থেকেই।
এদের অনেকেই কিন্তু আবুল হুসেন, কাজী আবদুল ওদুদ, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল ফজল, আহমদ শরীফ পড়েওনি। বিশ্বসাহিত্যের প্রথাভাঙার প্রগতিবাদীদের কথা না হয় বাদই দিলাম। সুইডেন কিংবা জার্মান-ফ্রান্স, ইউরোপ-আমেরিকাকে টার্গেট করে যারা অনলাইনের প্রগতিবাদী সেজেছেন- তারা আসলে কি করছেন, তা ভাবার বিষয়। মানুষ শান্তি চায়। সব ধর্মই শান্তির কথা বলেছে। এখন সেই মীমাংসিত ধর্ম বিষয়গুলোকে তীব্রভাবে কটাক্ষ করে কি প্রথাভাঙা সম্ভব? এই প্রশ্নটি আসছে খুব সঙ্গত কারণে। বিশ্বের সর্বত্র এখন চলছে গলাধাক্কা কাল। যারা শাসক, এরাও কারণে-অকারণে ধর্মকে কটাক্ষ করে কথা বলার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছেন। ফ্রান্সের মেয়র রবার্ট চার্ডন স¤প্রতি বলেছেন- ২০২৭ সালের দিকে ফ্রান্সে ইসলাম নিষিদ্ধ হবে। টুইটারে এমন দাবি করায় বরখাস্ত করা হয়েছে তাকে। রবার্ট চার্ডন ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ভেনেলেসের মেয়র। ১৪ মে তিনি নিজের টুইটার একাউন্টে লিখেছেন, ইসলাম ধর্ম ২০২৭ সালের ১৮ অক্টোবরের মধ্যে ফ্রান্সে নিষিদ্ধ হবে। তিনি আরো বলেন, যারা এ ধর্ম পালন করেন, তাদের উচিত এখনই সীমান্তের দিকে চলে যাওয়া। তিনি আরো লিখেছেন, ফ্রান্সের উচিত ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর ভিত্তি করে রচিত আইনসমূহ বাতিল করে দেয়া। এ আপত্তিকর টুইটগুলো নিয়ে মুহূর্তেই তীব্র সমালোচনা তৈরি হয়। এসব কোনো সভ্যতার অংশ হলো? না- এরা গায়ে পড়েই সংঘাত বাধাতে চাইছেন।
বাংলাদেশে ব্লুগারদের হত্যা করা হচ্ছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ধর্মকে আঘাত করা কাজ দুটি এখন আলোচিত বিষয়। এই ফাঁকে ছদ্মনামে একটি গোষ্ঠী কোনো দায় না নিয়েই যাচ্ছেতাই লিখছে। এই ছদ্মনামগুলো তো চরম মৌলবাদীদেরও হতে পারে। যারা রাষ্ট্র, সমাজ, শাসনব্যবস্থাকে কাঁপিয়ে তুলতে চাইছে। সরকার এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? মনে রাখা দরকার এরা পার পেলে তারা ক্রমশ প্রগতিবাদী রাজনীতিকদের ওপর হামলে পড়বে। আজ অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবালকে নিয়ে নানা অপপ্রচার শুরু হয়েছে। এটা কারা করছে? কি তাদের গোপন মতলব- তা সরকারকে খুঁজে দেখতে হবে। মনে রাখা দরকার, এই অধ্যাপক আওয়ামী লীগের গঠনমূলক সমালোচনাই করেন। আর এমন সমালোচকদের সহ্য করার ক্ষমতা শেখ হাসিনার সরকারকে অর্জন করতেই হবে। না হলে মৌলবাদীরা এই দেশকে আবার ২০০১-২০০৫ এ-ই ফিরিয়ে নিতে কসুর করবে না।
বাংলা ভাষায় দেশে বসে কিংবা বিদেশে থেকে যারা প্রথাভাঙার নামে অত্যন্ত অশালীন, অমার্জিত, অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে লিখছেন- তাদের ব্যাপারে প্রজন্মকে সজাগ হতে হবে। অন্যের বিশ্বাসে আঘাত করা অত্যন্ত অমানবিক, গর্হিত কাজ। এর মাধ্যমে সমাজে রক্তপাত, হানাহানি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই থাকে। একজন পরিশুদ্ধ মানুষ কোনো নারকীয় হত্যাকাণ্ডকে মেনে নিতে পারেন না। লেখালেখির নামে একজন লেখক ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর প্রতিপক্ষ হবেন কেন?
আমরা বিনির্মাণ চাই। আমরা সুবিচার-সুনীতি চাই। আমরা ধর্মীয়-সামাজিক-পরিবেশিক স¤প্রীতি চাই। মানবতা প্রতিষ্ঠায় এর কোনো বিকল্প এখনো বিশ্বে গড়ে উঠেছে বলে আমার মনে হয় না। মত-চিন্তার স্বাধীনতা প্রকাশের নামে সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দেয়া তো প্রকৃত কোনো লেখকের কাজ হতে পারে না।
----------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ২৩ মে ২০১৫
©somewhere in net ltd.