নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও জনমানুষের কর্মসংস্থান

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:২৭




বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও জনমানুষের কর্মসংস্থান
ফকির ইলিয়াস
================================================
বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা থেকে করপ্রথা (ভ্যাট) মওকুফ করা হয়েছে। এ নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছিল ছাত্রসমাজ। টিউশন ফির ওপর আরোপিত ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে চলছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। এর আগে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘ভ্যাট প্রত্যাহার করা হবে না। একজন ছাত্র দৈনিক ১ হাজার টাকা খরচ করতে পারলে ভ্যাট কেন দিতে পারবে না? এটা রাজস্ব আদায়ের ভালো একটি উৎস। রাজস্ব আহরণ বাড়াতেই এটা করতে হয়েছে। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ টিউশন ফির মাধ্যমে এ ভ্যাট ছাত্রদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারবে না। চাপিয়ে দেয়া তাদের উচিত হবে না।’ শেষ পর্যন্ত সরকার সিদ্ধান্ত পাল্টেছে। ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমরা জানি, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান বাংলাদেশের প্রজন্ম সুশিক্ষায় গড়ে উঠুক। তারা জানুক তাদের অধিকার। তারা সুনাগরিক হোক। শিক্ষার জন্য সরকার অনেক কিছু করছে। বিনামূল্যে বই বিতরণসহ অনেক কিছু দিচ্ছে। শিক্ষায় বিনিয়োগ দেশের জন্য আনন্দের সংবাদ।

উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে শিক্ষা। সরকার যেখানে শিক্ষাকে সর্বজনীন রূপ দিতে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেখানে শিক্ষার ওপর ভ্যাট আরোপ ছিল দ্বিমুখী নীতির বহিঃপ্রকাশ। এখানে একটি বিষয় বলা দরকার মনে করি। যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা হয়। একজন ছাত্রছাত্রীর পারিবারিক আয়ের নিরিখে তাকে সরকারি গ্র্যান্ট-অনুদান দেয়া হয় লেখাপড়ার জন্য। এটা আমেরিকা সরকারের এক ধরনের বিনিয়োগ। কারণ তারা জানে একজন নাগরিক লেখাপড়া শেষে চাকরি জীবনে গিয়ে সরকারকে যে ট্যাক্স দেবে, তা সরকারি গ্র্যান্টের চাইতে বহুগুণ বেশি। একজন ভালো বেতনধারী যদি তার চাকরি জীবনের চল্লিশ বছর ট্যাক্স দেয়- তা যাবে সরকারের কোষাগারেই। যা দিয়ে আরো কয়েকজনের শিক্ষা জীবনের খরচ বহন করবে সরকার। একই অবস্থা ইউরোপের দেশগুলোতেও। কথা হচ্ছে বাংলাদেশের সামর্থ্যবান রোজগারকারীরা কি যথারীতি ট্যাক্স দেন কিংবা দিচ্ছেন? না- দিচ্ছেন না। চলতি অর্থবছরে নতুন ৩ লাখ ২০ হাজার করযোগ্য আয়ের ব্যক্তিকে নিজেদের আওতায় আনতে কাজ শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। রাজধানীর অভিজাত এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে জরিপ কাজ শুরু করবে সংস্থাটি। কর দিতে সক্ষম নতুন ধনিক শ্রেণিকে করের আওতায় আনতে এনবিআর এ কার্যক্রম শুরু করছে বলে জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান। তিনি বলেছেন, সব করাঞ্চলে করদাতা বাড়ানোর জন্য এনবিআর নিয়মিতভাবে জরিপ পরিচালনা করে থাকে। তবে এবার এর সঙ্গে ভিন্ন মাত্রা যোগ হচ্ছে। ঢাকার অভিজাত এলাকায় যেসব দোকানপাট, ঘরবাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, সেসব প্রতিষ্ঠান বা বাড়ি বাড়ি গিয়ে করদাতা অনুসদ্ধান করা হবে।

১৬ কোটি মানুষের মধ্যে বর্তমানে মাত্র ১৮ লাখ আয়কর বিবরণী জমা দেন। চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আয়কর থেকে আসবে ৬৬ হাজার কোটি টাকা। এ জন্য বাড়তি রাজস্ব আদায়ে বিভিন্ন কৌশল নিয়েছে সংস্থাটি। এটা খুবই দুঃখের কথা, বাংলাদেশের অনেক ডাক্তার, প্রকৌশলী, ব্যবসায়ী, কারখানা মালিকসহ অন্যান্যরা যারা মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করেন- তারা ট্যাক্স দেন না। অথচ ট্যাক্স ছাড়া একটি দেশ এগোতে পারে না। যে বিষয়টি আজ বাংলাদেশকে ভাবিয়ে তুলেছে তা হলো- শিক্ষিত জনমানুষের চাকরির ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশে সর্বশেষ শ্রম জরিপ হয়েছে ২০১০ সালে। এরপরে বেকারত্বের হার বা সংখ্যা নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান নেই। তবে ব্যবসায়ী ও শ্রম বিশ্লেষকরা মনে করে যে, বেকারত্বের হার এখন আগের চেয়ে বেশি। বেসরকারি খাতে চাকরিদাতাদের সংগঠন বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেছেন, ‘২০১৩ সাল বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে সবচেয়ে খারাপ সময় ছিল। তখন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি তো হয়ইনি, বরং অনেকে চাকরিচ্যুত হয়েছে। আমার মনে হয়, বেকারত্ব আরো বেড়েছে।’ ‘এখনকার কর্মসংস্থান পরিস্থিতি সম্পর্কে কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই। তাই পরিসংখ্যান দিয়ে প্রমাণ করা যাবে না যে বেকারত্ব বেড়েছে। তবে লক্ষণ সেরকমই।’ ২০১২-১৩ অর্থবছরে বিনিয়োগ কম হয়েছে। ফলে উৎপাদন খাতে যে পরিমাণ কর্মসংস্থান তৈরির সুযোগ ছিল, তা হয়নি। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও হরতাল-অবরোধের কারণে দেশীয় শিল্প খাতে উৎপাদন কিছুটা সংকুচিত হয়েছে। স্বকর্মসংস্থানে নিয়োজিত ব্যক্তিদের আয় সংকোচন হয়েছে। পাশাপাশি বিদেশে লোক পাঠানোর ক্ষেত্রে যে প্রবৃদ্ধির দরকার ছিল তা হয়নি। ফলে সেই লোকগুলো আবার দেশীয় শ্রমবাজারে চাপ তৈরি করেছে। সব মিলিয়ে ২০১৩ সাল কর্মসংস্থানের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং বছর ছিল।

‘উন্নয়ন অন্বেষণ’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থার পক্ষে করা এক গবেষণায় গবেষক বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, ১৯৯৯-২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় দুই কোটি ৪৪ লাখ। এর মধ্যে কাজ করার বয়সী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে দুই কোটি ১৪ লাখ। কিন্তু কর্মসংস্থান করা সম্ভব হয়েছে এক কোটি ৬০ লাখ মানুষের। প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে আসে। কিন্তু কর্মসংস্থান হয় ১৬ লাখ মানুষের। এটা খুব সহজ হিসাব যে বিনিয়োগ কম হলে, উৎপাদনের গতি কমে গেলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির গতিও কমে যায়। কিছুদিন আগে, প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমবাজার বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের মূল্যায়ন প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে ভোগ্যপণ্য উৎপাদন, বিপণন প্রতিষ্ঠান, আর্থিক সেবা খাতের প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা-প্রশাসনিক খাতে, কৃষি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, পর্যটনশিল্প, আবাসন, স্বাস্থ্য ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে দক্ষ কর্মীর চাহিদা বেড়েছে। কাজের সুযোগ বেড়েছে টেলিযোগাযোগ খাত, পোশাক শিল্প, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক সেবার প্রতিষ্ঠানে। পরিকল্পনা কমিশনের সূত্র মতে, বাংলাদেশে আরেকটি বিকাশমান ক্ষেত্র হচ্ছে ওষুধ শিল্প।

বাংলাদেশ সরকারের ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন পর্যালোচনা প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০১০-১১ থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশের ভেতরে নতুন সাড়ে ৪৭ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ ছাড়া ওই তিন বছরে ১৫ লাখ ৭০ হাজার লোক বিদেশে গেছেন। ২০১১-২০১৫ এই পাঁচ বছরে দেশ ও দেশের বাইরে মোট এক কোটি ৪ লাখ লোকের কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। চলতি অর্থবছরে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। সেই হিসাবে, এই অর্থবছরে প্রায় ১৭ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। একই সময়ে দুই লাখ লোক কাজের জন্য বিদেশে যাবেন। সব মিলিয়ে নতুন করে প্রায় ১৯ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সমীক্ষায় বলছে, কোনো দেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ হলে নতুন করে আড়াই লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়। চলতি অর্থবছরে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। সেই হিসাবে, আগামী অর্থবছরে প্রায় ১৮ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। একই সময়ে দুই লাখ লোক কাজের জন্য বিদেশে যাবেন। সব মিলিয়ে প্রায় ২০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে।

প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষিত তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছেন। শিক্ষিত তরুণদের কর্মসংস্থান কিভাবে হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, এই অর্থবছরে এক হাজারের বেশি উন্নয়ন প্রকল্পে ৮৬ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হবে। এর বেশির ভাগ বিনিয়োগমুখী প্রকল্প। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে সরাসরি কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বিনিয়োগে আকৃষ্ট ও মানবসম্পদ উন্নয়ন করা হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী উদাহরণ দিয়ে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ‘লার্নিং এন্ড আর্নিং’ প্রকল্পের মাধ্যমে আগামী কয়েক বছরে প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ হাজার শিক্ষিত তরুণের কর্মসংস্থান হবে। বাংলাদেশের মানুষের একটি বড় অংশের কর্মসংস্থানের বাজার রয়েছে দেশের বাইরে। এই বাজারে শিক্ষিতের পাশাপাশি স্বল্প শিক্ষিত, অশিক্ষিত ব্যক্তিরা যেমন আছেন তেমনি দক্ষ-অদক্ষ সব শ্রেণির মানুষ আছেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর দেয়া তথ্য অনুসারে, ১৯৭৬ থেকে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বিদেশে ৮৯ লাখ ৫৬ হাজার ৮১০ জন বাংলাদেশি কর্মরত আছেন। ধারণা করা হয়, সব মিলে এ সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে গেছে। দেশের মধ্যে সিংহভাগের কর্মসংস্থান হয়েছে পোশাক শিল্পে। পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেছেন, সংগঠনের সদস্যভুক্ত তিন হাজার ৫৫১টি পোশাক শিল্প কারখানায় মোট ৪২ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন, যাদের বেশির ভাগই নারী। ২০১০-১১-তে এই সংখ্যা ছিল ৩৬ লাখ। আগামী বছরগুলোতে এ খাতে কর্মসংস্থান আরো বাড়বে বলে বিজিএমইএ মনে করছে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের তথ্য অনুসারে, দেশে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ১১ কোটি ৬৫ লাখ। সক্রিয় এই বিপুল পরিমাণ গ্রাহককে সেবা দেয়ার জন্য প্রতিটি মোবাইল অপারেটর নানা পর্যায়ে লোক নিয়োগ দিয়ে আসছেন। মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন এমটব জানিয়েছে, ছয়টি মুঠোফোন কোম্পানিতে স্থায়ী পদে আছেন ১৩ হাজার কর্মী। তবে এ খাতে নানা স্তরে কর্মসংস্থান হয়েছে ১৬ লাখ মানুষের। ফোনে টাকা ভরা (রিচার্জ) পাশাপাশি এখন মোবাইল ব্যাংকিং সেবাও দেয়া হচ্ছে সেখানে। এছাড়া মুঠোফোন মেরামত, বিভিন্ন উপকরণ বিক্রি করেও অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন। পাশাপাশি কম্পিউটার নির্ভর বিভিন্ন সেবার প্রচুর দোকান ও সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সারা দেশে।

বর্তমানে দেশের মোট কর্মক্ষম ব্যক্তির বেশির ভাগই তরুণ, যাদের বয়স ১৫ থেকে ২৯। আনুপাতিক হারে জনসংখ্যা যেমন বেড়েছে তেমনি কাজের ক্ষেত্রও বেড়েছে। এমনই তথ্য দিচ্ছে বাংলাদেশের সর্বশেষ শ্রম জরিপ। এখন দেশের মোট কর্মক্ষম ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে তরুণ। এই হার ৫৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ২০১২ সালের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তরসহ উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেছেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থী। পড়াশোনা শেষ করে এই তরুণ জনবল ঢুকছেন কর্মক্ষেত্রে। চাকরির পাশাপাশি তরুণদের মধ্যে নিজ উদ্যোগে কিছু করার ইতিবাচক প্রবণতাও লক্ষ করা যাচ্ছে।

দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। স্বল্প শিক্ষিতের পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষিত কর্মহীনের সংখ্যাও বাড়ছে। সেই সঙ্গে ছোট হয়ে আসছে কর্মসংস্থানের পরিধি। ইঞ্জিনিয়ারিং ও এমবিবিএসের মতো সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে অনেক উচ্চ শিক্ষিত তরুণ-তরুণী ঘুরছে বেকারত্ব নিয়ে। দেশে স্বল্প শিক্ষিত ও মধ্যম শিক্ষিতের কর্মসংস্থানে যে সংকট, প্রায় তার অনুরূপ সংকট উচ্চ শিক্ষিতের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও। কারণ একটাই অর্থাৎ তাদের সংখ্যা বাড়লেও চাকরির সুযোগ বাড়ছে না। জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাতে শিল্প-কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধি বা স¤প্রসারণ ঘটছে না। কর্মসংস্থান সৃষ্টির সমন্বিত পরিকল্পনার অভাবের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি খাতে বরাদ্দের অভাব পরিস্থিতিকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও তদারকির অভাবে শিল্প ও বাণিজ্য খাতে বিনিয়োগের হিসেবের সঙ্গে কর্মসংস্থান সৃষ্টির হিসেব সঙ্গতিপূর্ণ নয়। পক্ষান্তরে গার্মেন্টস খাতের কর্মসংস্থান প্রকৃত প্রস্তাবে অর্ধ কর্মসংস্থান বা অর্ধ বেকারত্ব। তাছাড়া জ্বালানি সংকট ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভাবে নতুন শিল্প স্থাপন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মূলত যে কারণে শিল্প খাতে নতুন নতুন শ্রমনির্ভর প্রকল্পে বিনিয়োগ বাড়ছে না। অপরদিকে সংস্কার ও আধুনিকায়নের অভাব ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভাবে অনেক পুরনো শিল্প-কারখানা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ছে, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এসব নানা কারণে স্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ স¤প্রসারিত হতে পারছে না। আজ সময় এসেছে, বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষিত হয়ে জনগোষ্ঠীকে কর্মপেশা ঠিক করার। আধুনিক সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মননকেও আধুনিক করে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য রাষ্ট্রীয় নীতিমালার প্রতি সম্মান দেখিয়ে সমাজের কল্যাণে ব্রতী হতে হবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে ভ্যাট না হয় সরকার মওকুফ করল কিন্তু ধনী মহাজনরা ভ্যাট ঠিকমতো দেবেন তো? যারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ণধার সেজে অন্য ব্যবসাগুলো চালাচ্ছেন- তারা অন্যান্য ব্যবসার ভ্যাট যদি সঠিক পরিসংখ্যানে দেন, তবেই উপকৃত হবে সরকার ও সমাজ।
--------------------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৬

মোহাম্মদ নুর উদ্দিন বলেছেন: দেশের উন্নয়নের দায়বার যাদের হাতে তারা রক্ষক না হয়ে বক্ষক হলে কি দেশের উন্নয়ন সম্ভব ?
http://www.amarprotiva.com/

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.