![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
জীবনের বিশ্বায়ন, মানুষের স্বপ্নের পৃথিবী
ফকির ইলিয়াস
=======================================
মানুষের জীবন প্রতিদিনই বিশ্বায়ন চায়। চায় নান্দনিক পরিবর্তন। এটা সমাজ পরিবর্তনের জন্য দরকারিও বটে। আছে এর পাশাপাশি সমস্যাও। পাল্লা দিয়ে এর সাথে বেড়ে যায় অপরাধও। মানুষ কিংবা সমাজের বিশ্বায়ন হলো একটি প্রক্রিয়া। যার সাহায্যে রাষ্ট্রকেন্দ্রিক সংস্থা বা এজেন্সি বিশ্বজুড়ে নিজেদের মধ্যে নানা প্রকার সম্পর্ক গড়ে তোলে। সম্পর্ক স্থাপনের পেছনে থাকে নানা ধরনের কারকের সক্রিয় অংশগ্রহণ। কারকগুলো নিজেদের মধ্যে যখন সম্পর্ক গড়ে তোলে তখন তা নিজেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মধ্যে আবদ্ধ থাকে না। বৈশ্বিক বিশ্বায়নের সঙ্গে সমগ্র বিশ্বের নানাবিধ বিষয়, যেমন-অর্থনীতি, বাণিজ্য, যোগাযোগ, রফতানি, শিল্পায়ন ইত্যাদি নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। এটা আমরা জানি। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মূলত রাজনৈতিক ধারণার সঙ্গে জড়িত। বেশিরভাগ বিশ্লেষক বিশ্বায়ন ধারণাটিকে অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত মনে করে এর অনুপুঙ্খ আলোচনায় বসেন, যা একেবারে অযৌক্তিক নয়। কারণ, সাম্প্রতিককালে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জনতা ও শিক্ষিত মহল বিশ্বায়নকে অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে দেখে থাকেন। বিশ্বায়নকে তাই উৎপাদন এবং মূলধনের আন্তঃরাষ্ট্রীকরণ বলে গণ্য করার প্রবণতা বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো এই আন্তঃরাষ্ট্রীকরণকে বৈধ করে তোলার ব্যবস্থা করে। তারা বদলে দিতে চাইছে ‘একলা চলো’ নীতি। কানেকটিভিটি মানুষকে দেখাচ্ছে অন্য পৃথিবীর দরজা।
অন্য একটি সংজ্ঞায় বিশ্বায়নকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিশ্বায়ন হলো বাজার-চালিত একটি প্রক্রিয়া, যা বহিষ্কারকে স্বাগত জানায় অথবা বাধা দেয়। কিন্তু পরিবর্তিত আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে বিশ্বায়ন বলতে বোঝায় ক্রমবর্ধমান খোলামেলা পরিবেশ, উন্নত ধরনের পারস্পরিক জীবনের বিশ্বায়ন, মানুষের স্বপ্নের পৃথিবী
নির্ভরশীলতা এবং সমন্বয়। বর্তমানে অনেকে বিশ্বায়ন বলতে অর্থনৈতিক লেনদেন এবং অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান তৎপরতা বৃদ্ধি বুঝিয়ে থাকেন। অর্থাৎ জাতি রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতার আওতায় অর্থনৈতিক লেনদেনও ব্যবসা-বাণিজ্য থাকলে তার আকর ও চরিত্র যে রূপ নেবে বিশ্বায়নের গণ্ডির মধ্যে এলে এগুলো সম্যক বৃদ্ধি পাবে।
এবার আসি বিশ্বায়নের এই সময়ে মানুষের ভাগ্য বিষয়ে। নিউইয়র্কের পাতাল রেল দিয়ে চলাচলের সময় ট্রেনের কামরায় একটি উদার আহ্বান প্রায়ই চোখে পড়ে। নিউইয়র্ক মহানগরীর নাগরিকদের প্রতি একটি অনুরোধ করছেন। তিনি বলছেন, যাদের গৃহপালিত কুকুর আছে, তারা যেন কুকুরগুলো সিটির সুনির্দিষ্ট দফতর থেকে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নেন। এজন্য একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের ফি-ও পরিশোধ করতে হয়। দিনে দিনে কুকুরের রেজিস্ট্রেশন বিষয়টির গুরুত্ব বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ধনিকেরই পালিত কুকুরের উচ্চ অঙ্কের ইন্স্যুরেন্স করা থাকে। কয়েক বছর আগের ঘটনা। নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কে মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছিলেন এক ধনকুবের। সঙ্গে ছিল তার প্রিয় কুকুর। কুকুরটি মানসিকভাবে ছিল অসুস্থ। ফলে কুকুরটি কামড়ে দিয়েছিল একজন পথচারীকে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়ে গিয়েছিল ওই পথচারীর। তিনি শিগগিরই ফোন করেছিলেন পুলিশে। পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স, হাসপাতাল- সব কটি পর্ব সেরে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন ওই পথচারী। ক্ষতিপূরণের মামলা করেছিলেন ওই ধনকুবেরের বিরুদ্ধে। আদালতের রায়ে দেড় মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন তিনি। না, দেড় মিলিয়ন ডলার ওই ধনকুবেরের নিজ পকেট থেকে পরিশোধ করেননি। পরিশোধ করেছিল কুকুরের ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। তারপরও ধনকুবের কুকুরটি নিয়ে ছিলেন মহাআনন্দিত। সংবাদটি ওই সময়ে নিউইয়র্কে সাড়া জাগিয়েছিল।
মার্কিনিরা কুকুরপ্রিয় জাতি হিসেবে বেশ সুখ্যাতি অর্জন করেছে বিশ্বব্যাপী। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নগরীতে কুকুর-বিড়ালের অভিজাত দোকানগুলো দেখলে চমকে উঠতে হয়। কুকুর-বিড়ালের খাবারের দোকান, পরিচর্যা কেন্দ্র, হাসপাতাল অত্যন্ত ব্যস্ততার সঙ্গে চলে যুক্তরাষ্ট্রে। অনেকের কাছে কুকুর-বিড়াল তাদের সন্তানতুল্য। অনেক মার্কিনি প্রকৃত পিতৃত্ব কিংবা মাতৃত্বের স্বাদ নিতে ভয় পান। ধনাঢ্য ব্যক্তিরা দত্তক হিসেবে সন্তান গ্রহণ করে সে ইচ্ছা পূরণ করে থাকেন। আর যারা তাও পারেন না, তারা প্রিয় কুকুর-বিড়ালটিকে বুকে আঁকড়ে ধরে কাটিয়ে দেন জীবনের বাকিটা সময়। অতিসম্প্রতি আবারো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের কুকুর-বিড়াল।
জাতিসংঘের একটি সমীক্ষা জরিপে দেখা গেছে, আমেরিকানরা কুকুর-বিড়াল পোষার খাতে যে অর্থ ব্যয় করে তার অর্ধেক দিয়ে বিশ্বের ছয় বিলিয়ন মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানীয় জল এবং স্যানিটেশনের সুব্যবস্থা করা সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফ পরিচালিত এ জরিপে আরো দেখা গেছে, ইউরোপিয়ানরা প্রতিবছর মদপান বাবদ যে অর্থ ব্যয় করে এর দশ ভাগের এক ভাগ দিয়ে এ সমস্যা সমাধান সম্ভব। অথবা ইউরোপিয়ানরা এক বছর আইসক্রিম খাওয়া থেকে বিরত থাকলে ওই অর্থ বিশুদ্ধ পানীয়জলের সঙ্কট মোকাবিলায় যথেষ্ট হতে পারে। জাতিসংঘের ভাষ্য অনুযায়ী, বিশুদ্ধ পানীয়জলের অভাবে প্রতিবছর বাইশ লাখ মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারায়। জাতিসংঘ আরো জানিয়েছে, এশিয়া মহাদেশের ১.৭৭ বিলিয়ন লোক বিশুদ্ধ পানীয়জলের সরবরাহ কোনোকালেই পায়নি। বিশ্বে এই মহাদেশের অবস্থা ভয়াবহ। এখানকার পঁয়ত্রিশ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে দূষিত পানি ব্যবহার করে চলেছে। মানবাধিকার এবং গণহিতৈষীপূর্ণ যত বড় বড় বুলি আওড়ানোই হোক না কেন, বিশ্বের নিতান্ত গরিব মানুষগুলোর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র কতটা উদার? একুশ শতকে এসেও এর সঠিক জবাব খুঁজে পাওয়া যায়নি এখনো। যায়নি কারণ যুক্তরাষ্ট্র কিছু কিছু ব্যাপারে এখনো তাদের অবস্থান স্পষ্ট করছে না।
একথা আমরা সবাই কমবেশি জানি খাদ্যে অতিরিক্ত স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ যুক্তরাষ্ট্র তাদের উদ্বৃত্ত খাদ্য বিশ্বের ক্ষুধার্ত মানুষের কল্যাণে বিলিয়ে দেয় না। অর্থনৈতিক বাজার সমতার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সব সময়ই বিবেচ্য হিসেবে ছিল এবং আছে। এর কোনো পরিবর্তন হয়নি। উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য জাহাজ বোঝাই করে সমুদ্রে গিয়ে ফেলা দেয়া কিংবা ফলন্ত শস্যের মাঠের মালিক কৃষককে তার ফসলের মূল্য অগ্রিম পরিশোধ করে ফসল মাঠেই জ্বালিয়ে ফেলার মাঝে কি কৃতিত্ব থাকতে পারে? না কোনো কৃতিত্ব নেই। আছে বিশ্বে ধনী এবং দরিদ্র্যের বৈষম্যকে জিইয়ে রাখার অদম্য স্পৃহা। আছে অর্থনৈতিক বাজারদর চাঙ্গা রাখার নামে একটি শ্রেণিকে নিষ্পেষণ করা। একজন মানুষের কতটুকু স্বাধীনতা থাকলে তাকে ব্যক্তিস্বাধীনতার সংজ্ঞায় ফেলা যাবে তা দিয়ে বিতর্ক চলছে বিশ্বের অনেক দেশে। যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় সংস্থা, অনাথ আশ্রম, হাসপাতালগুলো বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে ভূমিষ্ঠ হওয়া কোনো সন্তানকেই রাস্তায় ফেলে দিতে পারবে না তার মা-বাবা। প্রয়োজনে সরকারের হাতে তুলে দিতে পারে। সরকার ওই নবজাতকের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেবে। কারণ, কারো ব্যক্তিস্বাধীনতার নামে সদ্য জন্ম নেয়া একজন নাগরিকের ওপর এমন আচরণ কাম্য হতে পারে না। অপচয়কেও এক ধরনের স্বাধীনতা, প্রাচুর্যের বড়াই বলে গণ্য করা হয় আমেরিকায়। অনেকে না বুঝেই অপচয়ে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। ভাবতে কষ্ট হয়, এসব মানুষ যদি তাদের এই অপচয়কৃত অর্থটি বিশ্বের দরিদ্র মানুষের জন্য দান করে দিতো! অনেক বাংলাদেশি আমেরিকানকে জানি, যারা হৃদয় দিয়ে এ বিষয়টিকে অনুধাবন করেন। বাংলাদেশি আমেরিকানদের নিজ মাতৃভূমির জন্য অনেক কিছু করার ইচ্ছাও আছে। কিন্তু সে সুযোগ কোথায়? শুধু নিউইয়র্ক নগরীতেই প্রায় দেড় শতাধিক সামাজিক, সাংস্কৃতি, আঞ্চলিক সংগঠন রয়েছে বাঙালিদের। শীত মৌসুমে এসব সংগঠন স্বল্প ব্যবহৃত শীতের কাপড় সংগ্রহ করে বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য পাঠাতে পারেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে পাঠাবেন কিভাবে? বাংলাদেশ সরকার যদি নিজ ব্যয়ে বিনামূল্যে প্রাপ্ত এসব কাপড় বাংলাদেশে বহন করে নিয়ে গিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বণ্টনের ব্যবস্থা করতো তবে অনেক প্রবাসীই এমন মহতী কাজে এগিয়ে আসতেন।
বলছিলাম আমেরিকানদের পশুপ্রেমের কথা। পশুপ্রেম থেকে হয়তো আমেরিকানদের দমানো যাবে না। কিন্তু মানবপ্রেমের প্রতি তাদের আরো ঘনিষ্ঠ করা যাবে। যদি তাদের হৃদয়ের মানবিক সমুদ্রকে আরো জাগানো যায়। আর সে উদ্যোগ নিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত তৃতীয় বিশ্বের মানুষদেরই। যারা পিছনে ফেলে এসেছেন, প্রিয় শৈশব, প্রিয় কৈশোর, প্রিয় যৌবনের স্মৃতি। তাদের প্রিয় স্বদেশ-স্বজন, শিকড়। তাদেরকেই হতে হবে ‘দ্য রুটস’ খ্যাত একেকজন অ্যালেক্স হ্যালি।
মানুষ বিশ্বায়নকে নিতে চাইছে তার হাতের মুঠোয়। মোবাইল ফোন এখন একটি শক্তিশালী ডিভাইস। তা দিয়ে অনেক ভালো কাজের ক্যাম্পেইন করা যায়। প্রজন্মকে এ সুযোগটি কাজে লাগাতে হবে। জীবন স্বপ্নের পরিচর্যা চায়। তা হলে মানুষে মানুষে সৃষ্টির সিঁড়ি তৈরি হয় না।
--------------------------------------------
দৈনিক আজকের পত্রিকা ॥ ঢাকা ॥ ০৭ নভেম্বর, ২০১৫ শনিবার প্রকাশিত
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩৮
কমরেড ওমর ফারুক বলেছেন: গুরুত্বপূর্ণ লেখা।।।। ধন্যবাদ