নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

২০১৫ সালের বাংলাদেশে মিথ্যার অপছায়া

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:২৫





২০১৫ সালের বাংলাদেশে মিথ্যার অপছায়া
ফকির ইলিয়াস
===========================================
চলে গেল ২০১৫। রেখে গেল অনেক কথা, অনেক সন্দেহ-শঙ্কা। এই বছরটি গোটা বিশ্বের জন্য আতঙ্ক রেখে গেছে। বিশেষ করে প্যারিস-ক্যালিফোর্নিয়ার সন্ত্রাসী হামলা কাঁদিয়েছে আপামর মানুষকে। বছরটি বাংলাদেশের জন্যও রেখে গেছে এক অশুভ ছায়া। এই ছায়াটি অপরাজনীতির। এই ছায়াটি মিথ্যার বেসাতিতে ভরা। রাজনীতির নামে যারা গণমানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে- মূলত এরাই দানবের মতো কথা বলেছে বছরটিতে।

আমরা জানি, মুক্তিযুদ্ধের প্রতিপক্ষ শক্তি সব সময় ভোটের রাজনীতিকে ভয় পায়। তারা এই ভয় ১৯৭০ সালেও পেয়েছিল। পশ্চিমা হায়েনারা জানত, তারা বাঙালি জাতির সঙ্গে ভোটে জিততে পারবে না। তাই তারা সামরিক ফরমান জারি করে বাঙালি জাতিকে পঙ্গু করে দাবায়ে রাখতে চেয়েছিল। পারেনি। বাঙালি জাতি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এই বাংলায় এসেছিল একাত্তর। এই অপশক্তি এখনো পরাজিত হচ্ছে বাঙালি জাতির কাছে। বছরের শেষদিকে এসে ঢাকাস্থ পাকিস্তানি দূতাবাসের ক‚টনীতিক ফারিনা আরশাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে জঙ্গি কানেকশনের। এই ক‚টনীতিককে ফিরিয়েও নিয়েছে পাকিস্তান সরকার। জঙ্গি অর্থায়নে জড়িত সন্দেহে এর আগে গত জানুয়ারি ২০১৫তে পাকিস্তান দূতাবাসের কর্মকর্তা মাযহার খানকে বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। আবারো জঙ্গি ‘যোগসাজশের’ অভিযোগ ওঠার পর ঢাকায় পাকিস্তান হাই কমিশনের ক‚টনীতিক ফারিনা আরশাদকে তার দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। প্রশ্নটি হচ্ছে, তাহলে কী হচ্ছে? কার মুখোশ উন্মোচিত হচ্ছে? এদের নেপথ্যে রয়েছে কারা?

একই সূত্র ধরে, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন- ‘মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে!’ কী বলছেন তিনি? তিনি কি তা জেনেশুনে বলছেন? তিরিশ লাখ শহীদের সংখ্যা বাংলাদেশে একটি প্রতিষ্ঠিত বিষয়। বিশ্বের বিভিন্ন আর্কাইভও একই তথ্য দিয়েছে, দিচ্ছে। তারপরও খালেদা জিয়া, একটি প্রধান দলের প্রধান হয়েও এভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন কেন? খালেদা জিয়া এক সময় নিজেকে ‘আপসহীন’ নেত্রী দাবি করতেন। আর সেই নেত্রীই এক পর্যায়ে পর্যবসিত হন জঙ্গিদের মদদদাতা হিসেবে। বিশেষ করে আলবদরদের মন্ত্রী করার পর, তার আসল রূপ বেরিয়ে আসতে শুরু করে। তিনি পরবর্তী পর্যায়ে পরিচিত হতে থাকেন ‘জ্বালাও পোড়াও’-এর নেপথ্য কারিগর হিসেবে। খালেদা জিয়া বরাবরই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধিতা করেছেন।

মনে পড়ছে ১৯৯২ সালে নিউইয়র্কের প্লাজা হোটেলের সামনে খালেদা জিয়ার গাড়ির বহর আটকে দিয়ে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করেছিল সেদিন নিউইয়র্কের আকাশ আমার মতো শত শত তরুণ। বেগম জিয়া পেছনের দরজা দিয়ে প্লাজা হোটেল ত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন। এরপর ছিল বেগম জিয়ার প্রেসব্রিফিং। সেখানে একজন সাংবাদিক হিসেবে উপস্থিত থাকার সুযোগ আমার হয়েছিল। আমি বেগম জিয়াকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘শহীদ জননী বেগম জাহানারা ইমাম জাতীয় সমন্বয় কমিটি গঠন করেছেন। তিনি ঘাতক-দালাল রাজাকারদের বিচার দাবি করছেন। আপনার সরকার খুনিচক্রের হোতা গোলাম আযমের বিচার করছেন না কেন?’ প্রশ্নটি শোনার পর তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন খালেদা জিয়া। তিনি বলতে থাকেন, ‘জাহানারা ইমাম কে? গণআন্দোলন করার তিনি কে? তিনি কী করেছেন দেশের জন্য?’ আমি আমার প্রশ্নের উত্তর চাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তিনি তা এড়িয়ে যান। অথচ আমরা জানি এবং চিনি জাহানারা ইমামকে! শহীদ রুমীর আম্মা জাহানারা ইমাম একাত্তরে কী করেছেন, তার সাক্ষী ‘একাত্তরের দিনগুলি’।

আমার খুব মনে পড়ে, শহীদ জননীই সর্বপ্রথম বলেছিলেন, তরুণ প্রজন্ম চাইলেই এই বাংলার মাটিতে ঘাতক-দালালদের বিচার হবে। হ্যাঁ, এই তরুণ প্রজন্মই তা চেয়েছে দায় মোচনের কাজটি শুরু হয়েছে। তা অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা জেনেছি, বিচারের রায়ের দিন মাননীয় ট্রাইব্যুনাল বলেছিলেন, বাংলাদেশের বিচারিক ইতিহাস ও ট্রাইব্যুনাল-২-এর জন্য এ এক ঐতিহাসিক দিন, যেদিন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা প্রভৃতি আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার করে প্রথম রায় দেয়া হচ্ছে। নয় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের ফসল এই বাংলাদেশ। ওই নয় মাসে এ দেশে ভয়াবহ ও লোমহর্ষক অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল। ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছেন, প্রায় চার লাখ নারী ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং এক কোটিরও বেশি মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এই অপরাধ সংঘটনকারীদের বিচার হয়নি, যা এই জাতি ও এ দেশের রাজনৈতিক মনস্তত্ত্বে এক গভীর ক্ষত রেখে গেছে। শাস্তির বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, গণহত্যা ও হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ মানবতাবোধের জন্য এক প্রচণ্ড আঘাত। খালেদা জিয়া একটি গোষ্ঠীর পক্ষে কথা বলছেন। যে সব যুদ্ধাপরাধী এখনো বিচারের অপেক্ষায় আছে, তাদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা দরকার। কারণ জাতি জেনে গিয়েছে, জাতি বুঝে গিয়েছে- কারা এসব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে। আর কারা এদের মন্ত্রী বানিয়েছিল। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের রেখে যাওয়া পতাকা এই প্রজন্ম বয়ে যাবেই। কারণ তিনি একটি মৌলবাদহীন, জঙ্গিমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ এই প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে চেয়েছিলেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান সম্প্রতি বলেছেন, সুশীল সমাজ চাপে রয়েছে। বর্তমানে সরকারের কাছে সুশীল সমাজ বিতর্কিত। সুশীল সমাজের কাজ হলো সরকারের ভুল-ত্রুটিগুলো তুলে ধরা। সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের প্রচার করা নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকার নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছিল এক বছরের মধ্যে বিশুদ্ধ সুপেয় পানি নিশ্চিত করবে। কিন্তু ক্ষমতায় এসে সরকার তাদের প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়ন করেনি। স্থানীয় সরকারের প্রধান সমস্যা হলো বাল্যবিয়ে। এছাড়া শিক্ষা, দারিদ্র্য ও কর্মসংস্থানের সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান করতে হলে সরকার ও এনজিওগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। এসব সমালোচনা ভালো। তবে আমাদের শিকড়ে আঘাত, এই প্রজন্ম মানবে না। বছরটি শেষ হয়েছে খালেদা জিয়া আর গয়েশ্বর রায়দের মিথ্যার বেসাতির মাধ্যমে। খালেদা জিয়া কি তাহলে রাজনীতির নামে সেই শিকড়েই আঘাত করতে চাইছেন?
------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ রবিবার, ৩ জানুয়ারি ২০১৬

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৫৮

এরশাদ বাদশা বলেছেন: খালেদা ও গয়শ্বেরের রাষ্ট্রদোহিতার অভিযোগে জনতার আদালতে বিচার চাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.