![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার মান ও বর্তমান প্রজন্ম
ফকির ইলিয়াস
==============================================
বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার মান কোথায় যাচ্ছে। চারদিকে জিপিএ ৫-এর ছড়াছড়ি। কিন্তু গ্রামীণ জনপদ থেকে এসব জিপিএ ৫ প্রাপ্তটা যখন কলেজমুখী হচ্ছে তখনই দেখা দিচ্ছে নানা সংকট। পর্যাপ্ত পরিমাণ সিট নেই। তাই প্রতিযোগিতা। অনেকেই টিকে থাকতে পারছে না। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে একটি চমৎকার অনুষ্ঠান করেছিল বিবিসি বাংলা গেল সেপ্টেম্বর-২০১৫। সেই অনুষ্ঠানে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের শিক্ষার মান যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে বলে মত দিয়েছিলেন বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে উপস্থিত দর্শক ও প্যানেলিস্টরা। বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেছিলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যারা উচ্চশিক্ষা নিয়ে বেরুচ্ছেন তাদের মান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করলে খুব একটা এগুতে পারেনি। তবে শিক্ষার মান যথেষ্ট না হলেও অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেই অবস্থার উন্নয়ন করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতা শাহরিয়ার আলম। অনুষ্ঠানে একজন দর্শক জানতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশে শিক্ষার স্তরগুলোতে যে মান রয়েছে তা ভবিষ্যতে দেশের জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে কি যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারবে? জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতা শাহরিয়ার আলম বলেছিলেন, শিক্ষার বর্তমান মান ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য যথেষ্ট নয়। তবে সরকার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে এ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে।
শিক্ষকদের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতারও সংকট রয়েছে বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। এজন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। অনুষ্ঠানের অন্যতম প্যানালিস্ট প্রযুক্তি বিষয়ক বেসরকারি সংগঠন ‘মায়া’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা শাহানা সিদ্দিকী মনে করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য দেশের নিয়োগের প্রবণতা লক্ষ করলে বোঝা যায় যে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। এখানে কারণ হিসেবে শিক্ষকদের গবেষণার দিকে আগ্রহের ঘাটতি যেমন দায়ী তেমনি ক্লাসরুমের বাইরে কনসালটেন্সির দিকে শিক্ষকদের বেশি মনোযোগ দেয়াকেও দায়ী করেন শাহানা সিদ্দিকী। একজন দর্শক জানতে চান যে, বাংলাদেশে বর্তমানে যে ধরনের রাজনীতি চলছে তা তরুণ প্রজন্মের চিন্তাভাবনা এবং আশা-আকাক্সক্ষাকে কতটা ধারণ করতে পারছে?
জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেছিলেন, সরকার তরুণদের প্রয়োজন বা চাহিদাকে বিবেচনায় নিয়েই নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং রাজনৈতিক পরিকল্পনা বা সিদ্ধান্তগুলোতে তার প্রতিফলন ঘটছে। তিনি বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারেই তরুণদের কথা চিন্তা করে ডিজিটাল বাংলাদেশের বিষয়টি নিয়ে এসেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, এটি কি প্রমাণ করে না যে সরকার তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করেই রাজনীতি করছে?’ আরেকজন প্যানালিস্ট গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেছিলেন, দেশের রাজনীতিতে তরুণ প্রজন্মকে ব্যবহারের একটি নেতিবাচক প্রবণতা অনেকদিন ধরেই চলছে। তিনি বলেছিলেন, ইংরেজি শিখো। না হয় বিশ্বে দাঁড়াতে পারবে না। এই অবস্থা আমরা এখন দেখছি। আমার মনে আছে, ক্লাস এইটে যখন পড়ি, তখন আমাদের ইংরেজির স্পেশাল টিচার ছিলেন মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী। তিনি ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ইন্সপেক্টর অব স্কুলস। ইংরেজি না শিখলে যে বাইরের বিশ্বে দাঁড়ানো যায় না- সেই তাগিদ পেয়েছিলাম তার কাছ থেকেই। মুখের জড়তা ছাড়িয়ে অনর্গল ইংরেজি কথা হোক- এটাই ছিল তার শিক্ষার মূলমন্ত্র। একটা ঘটনা বলি। একজন তরুণ ডিভি ভিসা পেয়ে আমেরিকায় এসেছে। সে জানাল বাংলাদেশে এমবিএ পড়ে এসেছে। বললাম- চলো তাহলে ইংরেজিতে কথা বলি। তার থমকে যাওয়া আমাকে অবাকই করল না, রীতিমতো হতাশ হলাম। এ কেমন শিক্ষা তার? কি শিখে এসেছে সে? আর সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্নের কথা না হয় না-ই বললাম। বাংলাদেশে বিসিএস ক্যাডারের বই মুখস্থ করেই অনেকে পাস করে ফেলে। তারপর টাকা বানানোর ধান্ধায় থাকে। এক্ষেত্রে বাইরের দুনিয়াকে কি অনুসরণ করে বাংলাদেশ? কেন করা হচ্ছে না। ‘একজন গোয়ালা ৫ সের দুধের সঙ্গে দুই সের জল মিশিয়ে’- এই ছিল আমাদের নবম-দশম শ্রেণিতে অনুপাত সমানুপাতের অঙ্কের গণিত। শুরুতেই যদি কেউ দুধে জল মেশানোর দীক্ষা পায় তাহলে সে তো সেই চিন্তা নিয়েই বড় হবে? তাই নয় কি? আমরা ইতিহাসে, পানিপথের যুদ্ধ আর আকবর-বাবর-শাহজাহানদের আয়েশি জীবনের ধারাপাত পড়েছি। আচ্ছা, এগুলো বাস্তব জীবনে কি কোনো কাজে লাগছে আমাদের? এখনকার বাংলাদেশ এগোচ্ছে, বলাই যায়। সরকারি ভাষ্যমতে- ২০১০ সালের জানুয়ারির ১ তারিখ থেকেই প্রথম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ৪০% গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদানের পাশাপাশি পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে জাতীয়ভাবে পরীক্ষা গ্রহণের পদক্ষেপটি শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার হ্রাস করেছে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করার উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। ডিজিটাল যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফলাফল ওয়েব সাইটে ও ই-মেইলে দেয়া হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে মোবাইলফোনে এসএমএস করে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ফলাফল জানতে পারছে। যার মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রকে প্রসারিত করা সম্ভব হচ্ছে। শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে নিয়ামক শক্তি হলো শিক্ষক। শিক্ষকদের দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠাগার গড়ে তোলা হচ্ছে। এগুলো ভালো লক্ষণ। কিন্তু এই প্রয়াসের পাশাপাশি যদি সুশিক্ষিত করে মানুষকে গড়া না যায়- তাহলে জাতি কি প্রকৃত আলোর মুখ দেখবে?
ক্লাশ পাস করা মানেই শিক্ষিত হওয়া নয়। একজন আলোকিত মানুষ পুরো জীবন ভরেই পড়াশোনা করেন। বাংলাদেশের প্রজন্মকে সেই কাজটি করতে হবে। কারিগরি শিক্ষা আজকের বিশ্বের একটি বড় শক্তি। বাংলাদেশে মানসম্মত বা গুণগত শিক্ষা নিয়ে কারিগরিতে শিক্ষক সংকট, ল্যাব সংকট রয়েছে। একইসঙ্গে অবকাঠামো সংকট তো রয়েছেই। যেহেতু কারিগরি শিক্ষা ব্যবহারিক জ্ঞানভিত্তিক, তাই এই শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করতে হলে অবকাঠামো, ল্যাব নির্মাণ, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমসহ পর্যাপ্ত বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। এই শিক্ষায় যত বেশি বিনিয়োগ হবে তার সুফলও তত বেশি আসবে।
প্রতিনিয়ত করিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীর হার বৃদ্ধির কারণগুলোর অন্যতম হলো- বর্তমানে সাধারণ শিক্ষায় পড়াশোনা শেষ করে অনেক যুবকই বেকার থাকছে। কিন্তু কারিগরি শিক্ষা নিয়ে কেউ বেকার থাকে না। শুধু চাকরি নয়, তারা নিজেরা একটি ল্যাব বা ওয়ার্কশপ করেও কর্মসংস্থানের সুযোগ করতে পারে। বলা যায়, কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকায় কারিগরি শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে। মনে রাখা দরকার- ওয়েল্ডার, ইলেকট্রিশিয়ান, কার্পেন্টার, ড্রাইভার এসব চাকরিগুলোও এখন বিদেশে অনেক বেশি সমাদরের।
আরেকটি জরুরি বিষয় হলো- শিক্ষার কথা বলে একটি মহল প্রজন্মকে মৌলবাদী দীক্ষায় আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। এদের বিষয়ে সতর্ক থাকা সবার উচিত। কারণ মানবিক জীবন বিধানে প্রকৃত মানুষ হয়ে দাঁড়ানোর কোনো বিকল্প নাই।
----------------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ৪ জুন ২০১৬
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা জুন, ২০১৬ সকাল ৮:২০
মোঃ নেছার উদ্দিন বলেছেন: অসাধারণ ভাইয়া।