![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নামাযের যে সকল মাসআলায় কথিত আহলে হাদীস ভাইদের দলিল নেই [পর্ব-১]
কথিত আহলে হাদীসরা কথায় কথায় আমাদের নামাযের নামাযের উপর অভিযোগ উত্থাপিত করে থাকে, প্রচার করে বেড়ায় যে, আমাদের নামায দুর্বল হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কিংবা কোন প্রমান নেই আমাদের নামায পড়ার পদ্ধতির। দ্বীন ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ সাধারণ মুসলমানদের মনে নামায সম্পর্কে সৃষ্টি করে চলে ওয়াসওয়াসা। হাজার বছর ধরে পড়া নামায হচ্ছে না। তারা যে নামায বলছে সেটাই কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নামায। আর অন্যরা যা পড়ছে তা কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়।
বক্ষ্যমান প্রবন্ধে গায়রে মুকাল্লিদদের এ মিথ্যাচারের মুখোশ উন্মোচন করা হবে। তাদের নামায কোন পূর্ণাঙ্গ নামাযই নয় তাদের মূলনীতি অনুযায়ী। কারণ তাদের বক্তব্য অনুযায়ী কুরআন হাদীস ছাড়া অন্য কিছু দলিল হতে পারে না। সে হিসেবে নামাযের অসংখ্য মাসায়েল তারা প্রমাণ করতে পারবে না কুরআন হাদীস দ্বারা। ফলে তাদের নামায হয়ে যায় অপূর্ণাঙ্গ। এমনকি একটি পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষার বইও তারা জাতিকে উপহার দিতে পারেনি ইংরেজ প্রতিষ্ঠিত এ দলটি। শুধু কিছু বিতর্কিত মাসআলার দলিল উপস্থাপন করেই পাড় পেয়ে যাওয়ার খেলায় মেতেছে বিভ্রান্তসৃষ্টিকারী এ ভাইয়েরা।
১-
গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা আপনাদের নামাযের জন্য কি কি শর্ত? দয়া করে কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণ করুন
আলফিক্বহু আলা মাজাহিবিল আরবাআতে চার মাযহাবের পূর্ণাঙ্গ নামাযের শর্তসমূহ সাবলীল ভাষায় ধারাবাহিকভাবে একের পর এক লিপিবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে।
আমাদের নামাযের ৭ শর্তের কথা তালীমুল ইসলামের ৪৪ নং পৃষ্ঠায় স্পষ্টাক্ষরে বিদ্যমান। প্রতিটি মানুষই তা বুঝতে সক্ষম। সেই সাথে বেহেস্তী জেওরের মাঝেই স্পষ্ট ভাষায় নামাযের শর্তের কথা লিপিবদ্ধ আছে। প্রতিটি সাধারণ মানুষই যা পড়ে সহজে বুঝতে পারবেন।
আমাদের দাবি হল কথিত আহলে হাদীস বন্ধুরা তাদের নামাযের শর্ত কুরআন হাদীসের আলোকে জাতির সামনে উপস্থাপন করুন। নামায সহীহ হওয়ার জন্য কুরআন হাদীস দ্বারা কয়টি শর্ত?
২-
একথা সবাই জানে যে, চার ফিক্বহ সংকলিত হওয়ার পর সিহাহ সিত্তার কিতাব লিখা হয়েছে। তাই সিহাহ সিত্তার গ্রন্থ প্রণেতাদের উপর আবশ্যক ছিল ফিক্বহের কিতাবে উল্লেখিত নামাযের শর্তের বিরুদ্ধে হাদীস দ্বারা প্রতিবাদ করা ও সেসব শর্তকে বাতিল বলে প্রমাণ করা।
এ হিসেবে বর্তমান গায়রে মুকাল্লিদ তথা কথিত আহলে হাদীসদের উপর দায়িত্ব হল সিহাহ সিত্তার কিতাবের বরাত দিয়ে ফিক্বহের কিতাবের বর্ণিত নামাযের শর্তসমূহকে হাদীস বিরোধী বলে সাব্যস্ত করা, এবং একথা দেখানো যে, সিহাহ সিত্তার লেখকগণ নামাযের শর্ত বর্ণনাকারীদের বদ্বীন বলে আখ্যায়িত করেছেন কোন কোন স্থানে?
৩-
গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা নিজেদের নামাযে গ্রহণযোগ্য ফরজসমূহ গ্রহণযোগ্য সিলেবাসে অন্তুর্ভূক্ত কিতাব থেকে দেখান!
সকল ফুক্বাহায়ে কেরাম তাদের নামায পদ্ধতি পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা করেছেন। যা সিলেবাসভূক্ত হয় মাদরাসায় পড়ানোহয়। রুকন কয়টি? ওয়াজিব কয়টি? সুন্নাত কয়টি? মুস্তাহাব কয়টি? কোনটি ছেড়ে দিলে কি হুকুম? কোনটি ছেড়ে দিলে নামায ভেঙ্গে যায়, কোনটি ছেড়ে দিলে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়, কোনটি ছেড়ে দিলে কিছু হয় না ইত্যাদি বিস্তারিত বিবরণসহ কিতাব আছে। যা মাদরাসাসমূহের নিসাবে অন্তর্ভূক্ত। আমাদের কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা তাদের নামায পদ্ধতির, শর্ত, ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাবসহ কোনটি ছাড়লে কি হুকুম তা কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণ সমৃদ্ধ একটি কিতাব উপুস্থাপন করুন যা তাদের দরসে নিজামীর অন্তুর্ভূক্ত। শুধুমাত্র একটি কিতাব।
৪-
কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা প্রথমে স্বীয় কিতাব থেকে কুরআন হাদীস দিয়ে রুকন, ওয়াজিব, মুস—াহাব এবং এসব ছেড়ে দিলে নামাযে হুকুম কী হবে? তা বর্ণনা করার পর দয়া করে বলবেন-
ক) নামায সংক্রান্ত আমাদের সংজ্ঞা, হুকুম এবং আরকান ভুল হওয়ার বিষয়টি সহীহ, সরীহ ও বৈপরীত্বহীন হাদীস দ্বারা প্রমাণ করবেন।
খ) নিজেদের নামাযের বিভিন্ন অবস্থার সংজ্ঞা, হুকুম, আরকান হাদীস দ্বারা দেখাবেন। অথবা আরকান মান্যকারীদের মুশরিক, বেদআতি হওয়া প্রমাণ করে দেখাবেন।
৫-
ওয়াজিব কাকে বলে আমাদের সংজ্ঞা আমাদের মাদরাসার নিসাবী কিতাব তালীমুল ইসলামে স্পষ্টাক্ষরে বিদ্যমান। {তায়ালীমুল ইসলাম উর্দু-৩-১২৯-১২৮} আপনারাও ওয়াজিবের সংজ্ঞা স্বীয় নেসাবী কিতাব থেকে কুরআন হাদীসের ভিত্তিতে দেখান।
৬-
নামাযের ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাব বিষয় সব ক’টি বিষয়কে কুরআন হাদীস দ্বারা বাতিল প্রমাণ করে দেখান, অথবা চারটিকেই কুরআ হাদীস দ্বারা প্রমাণ করে দেখান। নতুবা এ চারটি মান্যকারীকে বেদ্বীন হওয়া কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণ করে দেখান।
৭-
আমরা হানাফীরা সুন্নাতে মুআক্কাদার সংজ্ঞা, প্রমাণ পদ্ধতি, তরককারীর হুকুম, এবং সুন্নাত কয়টি? এসব আমাদের দরসে নিজামীতে পঠিত কিতাব থেকে দেখাবো। যেমন- তালীমুল ইসলাম-৩/১৩০}
এবার কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা তাদের ক্লাসের সিলেবাসে অন্তর্ভূক্ত কিতাব দিয়ে সুন্নাতের সংজ্ঞা, প্রমাণ, পদ্ধতি,তরককারীর হুকুম এবং সুন্নাত কয়টি? এসব কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণ করে দেখাবেন। নতুবা আমাদের বর্ণিত সংজ্ঞা কুরআন হাদীস দ্বারা বাতিল ও শিরক বলে প্রমাণ করে দেখান।
৮-
আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত হানাফীরা নামাযের মুস্তাহাব, সংজ্ঞা, পদ্ধতি, প্রমাণ, আদায়কারী ও তরককারীর হুকুম এবং মুস্তাহাবের পরিমাণ নিজেদের ক্লাসে পঠিত সিলেবাসভূক্ত কিতাব তালিমুল ইসলাম ৩/১৩০ নং পৃষ্ঠা থেকে দেখাব।
৯-
এবার কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা আমাদের মুস্তাহাবের সংজ্ঞা, পদ্ধতি, প্রমাণ, আদায়কারী ও তরককারীর বিধান এবং সংখ্যা ইত্যাদিকে কুরআন হাদীস দ্বারা বাতিল বলে প্রমাণ করে দেখাতে হবে। আর মুস্তাহাবের সহীহ সংজ্ঞা, পদ্ধতি, প্রমাণ, সংখ্যা, আদায়কারী ও তরককারীর হুকুম কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে নিজস্ব সিলেবাসভূক্ত কিতাবে দেখাতে হবে।
১০
নামায ভঙ্গের কারণ কয়টি? কতগুলো বিষয় থেকে নামাযকে রক্ষা করা জরুরী? এসব জানা আবশ্যকীয় বিষয়। তাই হানাফীগণ নামায ভঙ্গের সংজ্ঞা, হুকুম, সংখ্যা স্বীয় নিসাবের কিতাব দিয়ে দেখাতে পারবে। {তালীমুল ইসলাম-৩/১৬৭}
১১
এবার গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা আমাদের সংজ্ঞা, হুকুম এবং সংখ্যাকে ভুল প্রমাণ করবেন কুরআন ও সহীহ হাদীস দিয়ে। সেই সাথে নামায ভঙ্গের সঠিক সংজ্ঞা, হুকুম, সংখ্যা কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণ করে তা স্বীয় নিসাবে অন্তর্ভূক্ত কিতাব দিয়ে দেখাবেন।
১২
আমরা নামাযের মাকরূহসমূহ, মাকরূহের সংজ্ঞা, প্রমাণ, হুকুম মাকরূহাতের সংখ্যা নির্ভরযোগ্য দরসী কিতাব থেকে দেখাতে পারবো। {তালীমুল ইসলাম-৩/১৬৯}
১৩
এবার কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা আমাদের এ সংজ্ঞা, প্রামাণ, হুকুম এবং সকল মাকরূহাতকে কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা ভুল প্রমাণ করে দেখান। সেই সাথে মাকরূহাতের সঠিক সংজ্ঞা, সহীহ প্রমাণ, সহীহ হুকুম, এবং সহীহ সংখ্যা নিজেদের নির্ভরযোগ্য নিসাবী কিতাব দিয়ে দেখাবেন, সেই সাথে উল্লেখ করতে হবে কুরআন ও সহীহ হাদীসের কোথায় এসব আছে?
গায়রে মুকাল্লিদদের নামায কুরআন হাদীস দিয়ে প্রমাণিত নয়
১৪
এ আলোচনায় কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা স্বীয় উসূল কুরআন ও সহীহ হাদীসই মান্য হিসেবে শুধু কুরআন ও সহীহ হাদীসই দলিল হিসেবে উপস্থাপন করতে পারবেন। এমন কোন নাম উচ্চারণ করতে পারবেন না যার নাম কুরআন ও হাদীসে নেই।
উসুলে ফিক্বহ, উসুলে হাদীস, উসূলে তাফসীর, আসমায়ে রিজাল, ও উসূলে জারাহ ও তাদীলের মধ্য থেকে কেবল সেসব কথাই উদ্ধৃত করতে পারবে, যা উক্ত বিশেষজ্ঞ কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত করেছেন। নিজের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান দিয়ে কোন কিছু আবিস্কার করে থাকলে তা দলিল হিসেবে যোগ্য হবে না। তাহলে কুরআন ও সহীহ হাদীসের উল্টো ব্যক্তির তাক্বলীদ হয়ে যাবে। যা তাদের ভাষায় শিরক।
১৫
যদি গায়রে মুকাল্লিদ বিতার্কিক নিজেদের নামাযের শর্ত, আরকান, সুনান, মুস্তাহাব্বাত, মাকরূহাত, মুফসিদাত, এবং বিধি-বিধান স্বীয় গ্রহনীয় নিসাবী কিতাব থেকে এবং কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে প্রমাণিত করে দেখাতে অপারগ হয়, তাহলে তার একথা লিখে দিতে হবে যে, সে তার নিজের নামাযের বিশদ বিবরণ নিজেদের গ্রহনীয় নিসাবী কিতাব থেকে, এবং কুরআন ও সহীহ হাদীস দিয়ে প্রমাণ করে দেখাতে অক্ষম।
আর নিজেদের দাবী তথা কুরআন হাদীসই মানে এ দাবীর ক্ষেত্রে মিথ্যুক প্রমানিত হয়েছে। এমনিভাবে হানাফীদের নামাযের শর্ত, রুকন, সুনান, মুস্তাহাব্বাত, মাকরূহাত, মুফসিদাত, তাদের সংজ্ঞা ও আহকামকে কুরআন হাদীসের বিপরীত প্রমাণ করতে অক্ষম হয়েছে। এবং তাদের এ দাবীর ক্ষেত্রে সে সম্পূর্ণ মিথ্যুক যে, হানাফীদের নামায কুরআন হাদীসের বিপরীত।
কথিত আহলে হাদীসরা যখন তাদের নামাযের বিশদ বিবরণ তাদের নিজস্ব সিলেবাসের কিতাব থেকে দিতে অক্ষম প্রমানিত। এখন তাদের নামাযের আমলী হালাতের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করি। তাদের উপর আবশ্যক হল, তাদের প্রতিটি মাসআলা সহীহ,সরীহ ও বৈপরীত্বহীন হাদীস দ্বারা প্রমানিত করবে।
কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা! কুরআন ও সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে জবাব দিন!
১-
নামাযের নিয়ত করার সময় মনে মনে “সময়” “নামায” “সুন্নাত-ফরজ” ইত্যাদির মাঝে কোন কোন বিষয়ের ইচ্ছা করতে হবে? কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে জানতে চাই।
২-
আল্লাহ তাআলার বাণী وذكر اسم ربه فصلى এর সম্পর্ক নামাযের সাথে এবং وربك فكبر আয়াতাংশের সম্পর্ক কি নামাযের সাথে? নাকি না? কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে জানতে চাই।
৩-
এ দুই আয়াত অনুযায়ী কেউ যদি আল্লাহু আকবারের বদলে আল্লাহু আজাল্লু বা আল্লাহু আজামু বলে বলে তাহলে সে কি আয়াতের বিপরীত করল না করেনি? কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে জানতে চাই।
৪-
আল্লাহু আকবার শব্দটি কি ফরজ না ওয়াজিব নাকি সুন্নাত? কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে জানতে চাই।
৫-
তাকবীরে তাহরীমা একাকী নামায আদায়কারী ব্যক্তি এবং মুক্তাদী সর্বদা আস্তে আওয়াজে বলে। এটা কুরআনের কোন আয়াত বা কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত?
৬-
তাকবীরে তাহরীমা ইমাম সাহেব সর্বদা জোরে বলে থাকে। কুরআন ও সহীহ হাদীসের কোথায় একথা বিদ্যমান?
৭-
তাকবীরে তাহরীমার সময় হাত উঠানো হাদীস দ্বারা প্রমানিত। কিন্তু এটাকে সুন্নাতে মুআক্কাদা একথা কোন সহীহ হাদীসে উল্লেখ আছে?
৮-
হাতকে কিবলামুখী রাখা সম্পর্কিত হাদীসটি উমায়ের বিন ইমরানের কারণে দুর্বল। {মাযমাউজ যাওয়ায়েদ-২/১০২} অথচ এর উপর আপনাদের আমল কোন সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে?
৯-
নামাযে আঙ্গুলি খোলা ও প্রশস্ত রাখার তিরমিযীর হাদীসটি বাতিল। {কিতাবুল ইলাল লিইবনে আবী হাতেম-১/১৬২} অথচ এর উপর আপনারা কোন সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে আমল করে থাকেন?
১০
পুরুষ কাঁধ পর্যন্ত আর মহিলারা সিনা পর্যন্ত হাত উঠাবে {তাবরানী} এর উপর আপনাদের আমল নেই কেন? শুধু কিয়াস ভিত্তিক আমল করেন কেন?
১১
ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ এর হাদীস হল,রাসূল সাঃ ডান হাতকে বাম হাতের উপর বাঁধতেন। মুসলিম, নাসায়ী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ তায়ালিসী, ইবনে হিব্বানে এ বর্ণনা এসেছে। এ সাত কিতাবে সিনার উপর হাত বাঁধার কথা নেই। শুধু ইবনে খুজাইমাতে সিনায় হাত বাঁধার কথা আছে। যার বর্ণনাকারী মুআম্মাল বিন ইসমাঈল জয়ীফ। এ মুনকারও মারদূদ বর্ণনার উপর আপনাদের আমল কেন?
১২
ফাতওয়া সানায়িয়্যাহ ১ নং খন্ডের ৫৩৪ পৃষ্ঠায় এবং ফাতাওয়া ওলামায়ে হাদীস এর ৩ নং খন্ডের ৯৫ নং পৃষ্ঠায় কুরআনে কারীমের আয়াত فصل لربك وانحر দিয়ে সিনার উপর হাত বাঁধার দলিল দেয়া হয়েছে। অথচ সহীহ হাদীস ও উম্মতের ইজমা হল যে, وانحر দ্বারা উদ্দেশ্য হল কুরবানী। সহীহ হাদীস ও ইজমায়ে উম্মতের বিপরীত কুরআনের ভুল ব্যাখ্যা করা গোনাহ নাকি সওয়াবের কাজ?
১৩
যদি বলা হয় যে, তারা দু’টি অর্থই গ্রহণ করে থাকেন। কুরবানী ও উদ্দেশ্য নেন, আবার সিনার উপর হাত বাঁধাও উদ্দেশ্য নেন। তাহলে কুরবানীতো আপনারা নামাযের পর করে থাকেন, শুধু তাই নয়, বরং ঘরে গিয়ে করে থাকেন। তাহলে সিনার উপর হাত কেন নামাযের ভিতর বাঁধেন। এটাও নামাযের পর ঘরে গিয়ে করেন!
১৪
ফাতাওয়া সানায়িয়্যাহ এর ১ নং খন্ডের ৪৪৩ পৃষ্ঠা এবং ফাতাওয়া উলামায়ে হাদীস এর ৩ নং খন্ডের ৯১ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে যে, সিনার উপর হাত বাঁধার বর্ণনা বুখারী, মুসলিম ইত্যাদিতে আছে। অথচ বুখারী মুসলিমে এমন কোন হাদীসই নেই। তাহলে এ মিথ্যাচার কেন?
১৫
মাওলানা নূর হুসাইন গুজরাটি লিখেছেন যে, হযরত ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ এর রফয়ে ইয়াদাইন এর হাদীসে মুসলিম, ইবনে মাজাহ, দারা কুতনী, দারেমী, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ, এবং মেশকাতে সিনার উপর হাত বাঁধার শব্দ আছে। [ইসবাতুর রফয়ে ইয়াদাইন-১৯]
অথচ এসব কিতাবের কোন কিতাবেই এ শব্দ নেই। তাহলে অসত্য কথা কেন বলা হল?
১৬
মৌলবী মুহাম্মদ ইউসুফ জিপুরী গায়রে মুকাল্লিদ সাহেব তার “হাকীকাতুল ফিক্বহ” নামক কিতাবে লিখেন যে, “সিনার উপর হাত বাঁধার হাদীস মুহাদ্দিসীন ইমামদের ঐক্যমত্বে সহীহ। হেদায়ার ১ নং খন্ডের ৩৫ নং পৃষ্ঠা ও শরহে বেকায়ার ৯৩ পৃষ্ঠা দেখুন। এ বক্তব্যটি কত মিথ্যা।
১৭
নাভির নিচে হাত বাঁধার হাদীস আইয়িম্মায়ে মুহাদ্দিসীনদের নিকট দুর্বল। দলিল হিসেবে উপস্থাপন করা হয় যে, হেদায়ার ১ম খন্ড পৃষ্ঠা নয় ৩৫০।
এটিও একটি মিথ্যাচার। হেদায়াতে এমন বক্তব্য নেই। থাকলে আরবী ইবারত দিন।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকারা! লক্ষ্য করুন। কিভাবে কুরআন ও হাদীসের উপর আমলকারীরা ফিক্বহের উপর মিথ্যারোপ করে থাকে।
১৮
ফাতাওয়া সানায়িয়্যাহ এর ১নং খন্ডের ৪৪৪ পৃষ্ঠায় সহীহ ইবনে খুজাইমার দুর্বল হাদীস এনে সহীহ মুসলিমের একটি সনদ জোরে দেয়া হয়েছে। কত বড় জালিয়াতি ভাবা যায়?
১৯
সকল নবীগণ নাভির নিচে হাত বেঁধেছেন মর্মে মুসনাদে জায়েদ ও মুহাল্লা বিন হাযম এ হযরত আলী রাঃ, হযরত আয়শা রাঃ, হযরত আনাস রাঃ থেকে উল্লেখ আছে। রাসূল সাঃ এর নাভির নাভির নিচে হাত বাঁধার বর্ণনা করাচি থেকে প্রকাশিত মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবার ১নং খন্ডের ৩৯০ নং পৃষ্ঠায় এসেছে। আর এটি সুন্নাত একথা এসেছে মুসনাদে আহমাদে। কিন্তু হানাফীদের প্রতি বিদ্বেষে গায়রে মুকাল্লিদরা এসব হাদীসের উপর আমল করে না।
২০
ওলামায়ে কেরাম একমত যে, নারীরা সিনার উপর হাত বাঁধবে। {আসসিয়ায়াহ-২/১৫৬} এ ইজমাকে তারা কেন অস্বিকার করে?
সানার উপর আলোচনা
২১
ইমাম হয়ে উঁচু আওয়াজে সানা পড়ার বিষয়টি রাসূল কারীম সাঃ থেকে নাসায়ী এর উর্দু অনুবাদ এ ১ম খন্ডের ৩৫৬ নং পৃষ্ঠায় এবং হযরত ওমর রাঃ থেকে ইমাম হয়ে সানা জোরে পড়ার কথা সহীহ মুসলিমের হাদীস নং ৯১৮তে বর্ণিত। গায়রে মুকল্লিদগন কিসের ভিত্তিতে এর উপর আমল ছেড়ে দিচ্ছে?
২২
নাসায়ী শরীফের উর্দু অনুবাদের ১ম খন্ডের ৩০০ পৃষ্ঠায় মুক্তাদীর সানা জোরে পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে।
গায়রে মুকাল্লিদগন এ হাদীস ছেড়ে কোন হাদীসের উপর আমল করে?
২৩
একাকী নামায আদায়কারী ব্যক্তি সানা আস্তে আস্তে পড়ার আমল গায়রে মুকাল্লিদদের। তাদের এ আমলের পক্ষে কী দলিল আছে?
২৪
রাসূল সাঃ এর পর খুলাফায়ে রাশেদীন এর মাঝে কেউ سبحانك اللهم الخ তথা সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা___। এ সানা ছাড়া অন্য কোন সানা পড়েন নি। চাই সেটি ফরজ নামায হোক বা সুন্নাত নামায হোক। ঐক্যমত্বের আমল দ্বারা বুঝা যায় যে, এটি একটি প্রতিষ্ঠিত সুন্নাত। কিন্তু গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা মানেন না কোন সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে?
২৫
যদি নামাযে সানা ইচ্ছেকৃত না পড়ে, তাহলে নামায হবে কি না? সহীহ হাদীস দিয়ে জানান।
২৬
যদি ভুলে সানার স্থলে আত্তাহিয়্যাতু পড়ে ফেলে, তাহলে সাহু সেজদা আবশ্যক হবে কি না? সহীহ সরীহ হাদীস দিয়ে প্রমাণ দিন।
২৭
وجل ثنائك ব্যতিত জানাযার নামাযের সানায় যা পড়া হয়, তা গায়রে মুকাল্লিদ ভাইগন সহীহ সরীহ হাদীস দিয়ে প্রমানিত করুন।
২৮
রাসূল সাঃ কেরাত পড়ার আগে اعوذ بالله من الشيطان الرجيم পড়তেন। {মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক-২/৮৬} রাসূল সাঃ এর পর হযরত ওমর রাঃ ও এটাই পড়তেন। {মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-১/২৩৭} এটাই প্রতিষ্ঠিত সুন্নাত।
গায়রে মুকাল্লিদগণ এটাকে সুন্নাত থেকে বাদ দেন কোন সহীহ সরীহ হাদীসের ভিত্তিতে?
২৯
আউজুবিল্লাহ একাকী নামায আদায়কারী, ইমাম ও মুক্তাদীর জন্য আস্তে পড়ার বিধান রাসূল সাঃ এর কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত? যদি প্রমাণিত না হয়, তাহলে তারা এর উপর আমল করেন কুরআনের কোন আয়াত বা কোন সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে?
৩০
আউজুবিল্লাহ পড়া সুন্নাত না ফরজ? যদি এটি কেউ না পড়ে, তাহলে তার নামায হবে কি না? সহীহ হাদীস দিয়ে প্রমাণ করুন।
বিসমিল্লাহ প্রসঙ্গে
৩১
ইমাম সাহেবের বিসমিল্লাহ আস্তে পড়ার কথা সহীহ মুসলিমের ১ম খন্ডের ১৭২ নং ও মুসনাদে আহমাদের ৩য় খন্ডের ১১৪নং পৃষ্ঠায় এসেছে। ইমাম সাহেবের জোরে বিসমিল্লাহ পড়া বেদআত, একথা এসেছে সুনানে তিরমিজীর ১ম খন্ডের ৬২পৃষ্ঠায় এসেছে।
গায়রে মুকাল্লিদগণ এ সুন্নাতের খেলাফ আমল করেন কোন হাদীসের ভিত্তিতে?
৩২
একা একা নামায আদায়কালে বিসমিল্লাহ আস্তে পড়ার কথা কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত?
৩৩
নামাযে বিসমিল্লাহ পড়ার বিধান কি? ফরজ না সুন্নাত? না পড়লে কি নামায হবে না হবে না? এসব কথা কোন সহীহ সরীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত?
ফাতিহা পড়া প্রসঙ্গে
৩৪
একাকী নামায আদায়কারী ব্যক্তি প্রতিটি নামাযেই সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা আস্তে আস্তে পড়ে থাকে, এর দলিল কোন সহীহ সরীহ হাদীস?
৩৫
পানির যেমন প্রতিটি ফোটাই পানি, তেমনি কুরআনের প্রতিটি অংশই কুরআন। তাহলে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে যে, فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآنِ তথা কাজেই কুরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ, ততটুকু আবৃত্তি কর। {সূরা মুজ্জাম্মিল-২০}
এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হল যে, কুরআন পড়া ফরজ। কোন নির্দিষ্ট অংশ পড়া আবশ্যক নয়। গায়রে মুকাল্লিদগণ এ আয়াত না মেনে সূরা ফাতিহা পড়া আবশ্যক বলে, তা না পড়লে নামায হবে না বলে কেন?
৩৬
সূরা ফাতিহা পড়া ফরজ একথা কোন সরীহ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত?
৩৭
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে, যে নামাযে ফাতিহা না পড়া হয়, সে নামায অপূর্ণাঙ্গ। {সহীহ মুসলিম-১/১৬৯}
কিন্তু গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা সূরা ফাতিহা না পড়লে নামায হবে না বলে রাসূল সাঃ এর বিরোধীতা করে কেন?
৩৮
أبو هريرة قال قال لى رسول الله -صلى الله عليه وسلم- ্র اخرج فناد فى المدينة أنه لا صلاة إلا بقرآن ولو بفاتحة الكتاب فما زاد
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ আমাকে বললেনঃ তুমি বের হয়ে মদীনায় ঘোষণা দাও যে, কুরআন তিলাওয়াত ছাড়া নামায হয় না। অন্তত সূরা ফাতিহা এবং এছাড়া অতিরিক্ত কিছু হোক মিলাতেই হবে। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৮১৯}
এ হাদীস প্রমাণ করে যে, ফাতিহা পড়া ফরজ নয়। মুতলাকভাবে কুরআন পড়া ফরজ। কিন্তু গায়রে মুকাল্লিদগন এ হাদীস মানে না কেন?
৩৯
রাসূল সাঃ নামাযে সূরা ফাতিহা পড়ার যেমন গুরুত্বারোপ করেছেন, ঠিক তেমনি ফাতিহার সাথে আরো কিছু অংশ মিলানোরও গুরুত্বারোপ করেছেন। যেমন- সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৮২০, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২১৯১, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৬, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৭৯১, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৯৫২৯, মুসনাদে ইসহাক বিন রাহুয়াহ, হাদীস নং-১২৬, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩৬৪৩।
এ কারণেই হানাফীগণ নামাযে সূরা ফাতিহা পড়াকে যেমন ওয়াজিব বলে, তেমনি এর সাথে অতিরিক্ত আরো কিরাত পড়াকেও ওয়াজিব বলেন।
কিন্তু গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা সূরা ফাতিহার সাথে অতিরিক্ত আয়াত পড়া ওয়াজিব হওয়াকে অস্বিকার করে সরাসরি হাদীসের সাথে বিদ্রোহ করছে কেন?
৪০
ইমাম আহমাদ রহঃ বলেন, আমি আহলে ইসলামের অন্তুর্ভূক্ত কাউকে একথা বলতে শুনিনি যে, যারা বলেন যে, “ইমাম যখন জোরে কিরাত পড়ে, আর মুক্তাদী তার পিছনে কিরাত না পড়ে, তার নামায ভেঙ্গে যায়”।
তিনি আরো বলেনঃ “রাসূল সাঃ এবং তার সাহাবাগণ, এবং তাবেয়ীগণ, আহলে হেজাজের ইমাম মালিক রহঃ, ইরাকের ইমাম সাওরী রহঃ, শামের অধিবাসী ইমাম আওযায়ী রহঃ, মিসরের অধিবাসী ইমাম লাইস রহঃ, তাদের কেউ একথা বলেন নি যে, যখন কোন ব্যক্তি নামায পড়ে, আর তার ইমাম কিরাত পড়ে, আর মুক্তাদী কিরাত না পড়ে, তাহলে তার নামায বাতিল। {মুগনী লিইবনে কুদামা-১/৬০২}
কিন্তু আফসোসের বিষয় হলঃ পুরো উম্মতের খিলাফ গায়রে মুকাল্লিদরা হানাফীদের নামাযকে বাতিল বলে অপপ্রচার করতে লাগল। এ ব্যাপারে চ্যালেঞ্জবাজী শুরু করে দিয়েছে। শত শত ইস্তেহার প্রকাশ করছে।
এর জবাবে পাকিস্তানের মুহাদ্দিসে আজম শাইখুল হাদীস সরফরাজ খান সফদর রহঃ যখন আহসানুল কালাম লিখলেন, তখন গায়রে মুকাল্লিদরা হাতিয়ার ফেলে আত্মসমর্পণ করলেন।
গায়রে মুকাল্লিদ আলেম হাফেজ মুহাম্মদ কান্ধলবী, মাওলানা ইরশাদুল হক আসরী সাহেব পরিস্কার ভাষায় লিখলেন যে, “ইমাম বুখারী রহঃ থেকে নিয়ে বর্তমান জমানা পর্যন্ত কোন মুহাক্কিক আহলে হাদীস আলেমদের লিখায় এ দাবি করা হয়নি যে, সূরা ফাতিহা না পড়লে নামায বাতিল তথা তার নামায হয়নি”। {তাওযীহুল কালাম-১/৯৯}
“ইমাম বুখারী রহঃ থেকে নিয়ে সমস্ত মুহাক্কিক আহলে হাদীস আলেমদের মাঝে আজ পর্যন্ত একথা কেউ বলেনি যে, ফাতিহা না পড়লে নামায হবে না”। {তাওযীহুল কালাম-১/৫১৭}
তাওযীহুল কালামের ৪৩ নাম্বার পৃষ্ঠায় যারা নামায হয় না বলে মত দেন, তাদের গায়রে যিম্মাদার বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
কিন্তু তাদের কাছে যিম্মাদার এমন অনেক আহলে হাদীস আলেমগণ আল্লাহর চেয়ে জনগণকে বেশি ভয় পেয়ে এখনো একথার প্রচার করছে যে, ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা না পড়লে নামায হবে না।
চলবে ইনশাআল্লাহ
যারা ফেসবুক থেকে দেখতে চান নিম্নের লিঙ্কে প্রবেশ করুনঃ
Click This Link
©somewhere in net ltd.