নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

ফাহমিদা বারী

আমার ব্লগ মানে গল্প। গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানাই :)

ফাহমিদা বারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আত্মজৈবনিক স্মৃতিকথন- ল্যাভেণ্ডারের সুবাস

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৩২


#পর্ব_৬
ভাইভা রুমে ঢুকতে ঢুকতে দু’চারটা বাক্য কানে ভেসে এলো।
‘ইউনিভার্সিটি অফ লীডস...অফার লেটারে কি কন্ডিশন আছে কোনো? কোথা থেকে পাস করেছে...বিসিএস কত ব্যাচ?’
ভাইভা রুমটি বেশ বড়। রুমের ডিম্বাকৃতির লম্বা টেবিল জুড়ে প্রায় জনা দশেক ভদ্রলোক একেবারে টান টান হয়ে বসে আছেন। প্রত্যেকেরই সামনে একটা করে ফাইল রাখা আছে। বুঝলাম সেগুলোতে আমাদের তথ্যগুলোই লেখা আছে। ভাইভা বোর্ডে একজন ভদ্রমহিলা। প্রথম প্রশ্নটা তিনিই করলেন।
‘আপনাদের ২৪ ব্যাচ এক্স এন হয়ে গেছেন? এত তাড়াতাড়ি? আমি তো জেলাশহরে যখন এসিল্যাণ্ড ছিলাম, তখন দেখতাম... এক্স এন মানেই বয়স্ক কেউ। আপনাদের এখন এত তাড়াতাড়ি প্রমোশন হয়ে যায় নাকি? দারুণ ব্যাপার তো!’
আমি চেয়ারের এক মাথায় বসলাম। চারপাশ থেকে সবক’টি মুখ ঘুরে গেল আমার দিকে। ঘেমে নেয়ে ওঠার পরিস্থিতি। একেবারে বিপরীত মুখে বসে থাকা হাসি হাসি মুখের বয়ষ্ক ভদ্রলোকটি বললেন, ‘কোথা থেকে পাশ করেছেন?’
‘স্যার... বুয়েট থেকে!’

এই পর্যায়ে আমি একটা আশ্চর্য বিষয় খেয়াল করলাম। আমার মনে হয়, বিষয়টা সম্পর্কে বলা দরকার।
বুয়েট থেকে পাশ করে সিংহভাগ অংশ চলে যায় দেশের বাইরে। দেশে যারা থাকে তারা কেমন যেন সবকিছুতেই হতাশ। তাদের মুখে আমি তেমন একটা আশার কথা শুনতেই পাই না। এই জিনিসটা কেন হয়, আমার জানা নেই। বুয়েটে পড়ার চাপ কি তাদের প্রত্যাশার চাপকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়? চাকরি করতে গিয়ে যখন নানারকম পরিস্থিতির অতলে প্রায়ই ডুব মারতে হয়, তখন বুয়েট থেকে পাশ করা সহকর্মী অথবা সহকর্মী নন, এমন অনেককে বলতে শুনি... ‘আরে দূর! কী হয় বুয়েট থেকে পড়াশুনা করে? আলাদা কোন মূল্য আছে নাকি? বুয়েটের ডিগ্রীও যা, অন্য যেকোন জায়গার ডিগ্রীও তা!’

তাদের উদ্দেশ্য করে বলতে চাই, এখনো এ’ধরনের বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রগুলোতে বুয়েট একটি ব্র্যাণ্ড নেম। আলাদা কিছুই হয়ত জমে না থলিতে, তবু একেবারেই প্রাপ্তির খাতা শূন্য পড়ে থাকে, সেটাও হয়ত বলা যায় না। নিয়োগ পরীক্ষাগুলোর ভাইভা বোর্ডে সচরাচর থাকেন, এমন পরিচিত একজনের মুখে শুনেছি, ‘সার্টিফিকেটগুলোকে আমরা দু’ভাগে ভাগ করে ফেলি। বুয়েটের সার্টিফিকেটগুলোকে প্রথমেই একপাশে সরিয়ে রাখি।’

আমি বুয়েট থেকে পাশ করেছি শুনে সেই ভদ্রলোক হাসি হাসি মুখে সবার দিকে তাকালেন। সেই দৃষ্টির অর্থ বুঝতে কোনো সমস্যা হয় না। তিনি আর কোনো প্রশ্ন করলেন না।
এরপরে অপেক্ষাকৃত কম বয়ষ্ক একজন অফিসার প্রশ্ন করলেন। জানতে চাইলেন, ‘আমরা কিন্তু আপনাকে শুধুমাত্র ত্রিশ লাখ দিব। এই টাকাতে লেখাপড়া শেষ করে আসতে পারবেন? থাকা খাওয়ার খরচ কিন্তু আলাদাভাবে দিব না!’
এইবারে কুতুবের ব্যাখ্যাকৃত অংশটুকু মনে পড়লো আমার। মনে মনে পাঁচ সেকেণ্ড গুছিয়ে নিয়ে বলতে শুরু করলাম, ‘স্যার, আমার হাজবেণ্ড একই ইউনিভার্সিটিতেই রিসার্চ ফেলো হিসেবে যাচ্ছে। কাজেই থাকা খাওয়ার জন্য আলাদা কোনো ফাণ্ডিং না থাকলেও আমার সমস্যা হবে না।’

আমার উত্তরে পুরো ভাইভা বোর্ডের সবাই কিছুক্ষণের জন্য থমকালেন বলেই মনে হলো আমার। ভাব দেখে মনে হলো, এমন কোনো উত্তর তারা ঠিক আশা করেননি।
এবারে অন্য একজন জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইউনিভার্সিটি অফ লীডসের র‍্যাংকিং সম্পর্কে কোনো ধারণা আছে আপনার?’
আমি সত্যি কথাই বললাম, ‘সামগ্রিকভাবে পুরো ওয়ার্ল্ডের ইউনিভার্সিটিগুলোর মধ্যে এর র‍্যাংকিং কেমন, সে সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা নেই আমার। তবে ইউকে’র মধ্যে ইউনিভার্সিটি অফ লীডসের অবস্থান ভালো। বিশেষ করে মেক্যানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ক্ষেত্রে এটি পুরো ওয়ার্ল্ডে একেবারে প্রথম সারির ইউনিভার্সিটি।’
‘কিন্তু আপনি তো যাচ্ছেন এনভায়ার্নমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ। এটা এখানকার স্কুল অফ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর আওতাভূক্ত...ঠিক বলেছি না?’
আমি এবারে একটু অবাক হলাম। প্রশ্নকর্তা হাসিহাসি মুখে বললেন, ‘আমিও ইউকে থেকেই পড়ে এসেছি। ইউনিভার্সিটি অফ লীডস আমারও সেরা পছন্দে ছিল!’

এরপরে টুকিটাকি কথাবার্তা...চাকরিতে আমার জুরিসডিকশনে কী কী পড়ে...ফিল্ডে কাজ করেছি কী না...ইত্যাদি। বুঝলাম এই টুকিটাকি আলাপগুলোও ফেলনা নয়। আমি এই স্কলারশীপটা পাওয়ার যোগ্য কী না, এই কথাবার্তাগুলোর মধ্য দিয়েই তারা বের করে আনতে চাইছেন।
বের হতেই কুতুব জিজ্ঞেস করলো, ‘স্যার, কী জিজ্ঞেস করলো?’
হাসিমুখে বললাম, ‘তোমার প্রশ্ন কমন পড়েছে!’
কুতুবকে তেমন কিছু নাকি জিজ্ঞেস করেনি। ওর মুখে কিছুটা চিন্তার রেখা। চিন্তিত মুখেই বললো, ‘আমার না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি স্যার! এজন্যই কিছু জিজ্ঞেস করেনি।’

ভাইভা তো দিলাম। এদিকে ভাইভা’র রেজাল্ট যে কবে হবে সেই ব্যাপারে কেউই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারলো না। শুধু আনুমানিক ভাবে সবাই বললো, রেজাল্ট হতে হতে হয়ত সামনের বছরের মার্চ এপ্রিল কিংবা মে-জুনও লেগে যেতে পারে। প্রতি বছর সাধারণত ঐ সময়ের দিকেই হয়ে থাকে।
আমি প্রমাদ গুনলাম। ততদিনে আনিস ইউকে গিয়ে বসে থাকবে। আর এদিকে আমি আর তাহসিন থাকব দেশে। রেজাল্টে যদি উল্টাপাল্টা কিছু হয়, তাহলে একেবারে সবকিছু ভণ্ডুল!
এভাবেই নানারকম ভাবনা আর দুর্ভাবনায় আমাদের সময়গুলো বয়ে গেল। দেখতে দেখতে আনিসের ইউকে যাওয়ার দিনও ঘনিয়ে এলো। ২০১৬ এর জানুয়ারিতে আনিস ইউকে চলে গেল। শুরু হলো আমার আর তাহসিনের একাকী দিনলিপি।

বাচ্চাদের সাইকোলজি ভারি অদ্ভুত। আমরা যে দেশের বাইরে যাচ্ছি, কাজেই তাহসিন লেখাপড়া বলতে গেলে একরকম ছেড়েই দিলো। আগে ওকে পড়াতে তেমন বেগ পেতে হতো না আমার। কিন্তু এখন পড়াতে গিয়ে টের পেলাম, ওর মাথাতে একটা কিছু পোকা ঢুকে গিয়েছে।
আমি যদি বলি, ‘মন দিয়ে না পড়লে পিএসসি কিন্তু দিতে পারবে না!’ তখন সে উদাসীনভাবে উত্তর দেয়, ‘আমরা তো ঐ সময়ে চলেই যাবো! পিএসসি তো দিতে হবে না!’
আমি যতই তাকে বোঝাই যে, পিএসসি না দিলে কিন্তু দেশে এসে স্কুলে ভর্তি হতে পারবে না...এসব তার মধ্যে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়াই তৈরি করতে পারলো না। সে আরামে দিন পার করতে লাগলো। আর এর ফলস্বরূপ তার রেজাল্ট ধপাস করে নেমে গেল।

একদিকে সুর সাজাতে গিয়ে অন্যদিকে কেটে যায় সুর লয় তাল। জীবনের অনির্বার্য যে ভয়ানক সত্য খুব কাছাকাছিই ঘাপ্টি মেরে লুকিয়ে আছে, তা অবশেষে সামনে এসে দাঁড়ালো।
একা একা সবকিছু সামলে নেওয়া যে কতটা কঠিন তা সবাই জানলেও আপনজনের মতো করে কেউ হয়ত তা উপলব্ধি করতে পারে না। আগে আম্মাকে ফোন দিলে অল্প কিছু সময় আব্বার সাথে কথা বলতাম। আব্বা অভিমান করে আম্মাকে বলতো, ‘সবাই তো শুধু তোমাকেই ফোন দেয়! আমার সাথে অল্প সময় কথা বলে।’ আম্মা আমাকে বলতো, ‘তোমার আব্বাকেও মাঝে মাঝে ফোন দিও।’

মাঝে মাঝে এই কথা মনে করেই আব্বাকেই আগে ফোন দিতাম। আমার আব্বা গুছিয়ে কথা বলতে পারতো না। অল্প কিছুক্ষণ কথা বলেই আম্মাকে ফোন দিয়ে দিত। এখন একা একা থাকছি দেখে আব্বা নিজে থেকেই দু’দিন পরে পরেই আমাকে ফোন দিতে শুরু করলো। ফোন দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই একই কথাগুলোই ঘুরেফিরে বলতো, ‘তুমি একা একা কীভাবে সবকিছু করছো মা? কষ্ট হচ্ছে না তোমার? বাজারঘাট কে করে দেয়? একা একা থাকো, ভয় করে না? তাহসিন কেমন আছে?’
সবগুলো প্রশ্ন একে একে করা হয়ে গেলে আব্বা চুপ করে থাকতো। আর কিছু বলতে পারতো না। কিন্তু তার মনের অব্যক্ত কথাগুলো একেবারে পরিষ্কার হয়ে যেত আমার কাছে। একসময় আমিও জিজ্ঞেস করতাম, ‘আব্বা, আমার সমস্যা হচ্ছে না কোনো। তুমি শুধু শুধু চিন্তা করো না!’

কিছুদিন ধরেই আম্মা বলছিল, আব্বার শরীরটা বেশি ভালো নেই। খুকখুকানি কাশিটা খুব বেড়েছে। আমার বড় দুই বোনের ছেলে মেয়েদের এসএসসি পরীক্ষা চলছিল। আম্মা একদিন ফোনে দুশ্চিন্তা করে বলছিল, ‘কী যে হবে বুঝতে পারছি না! ওদের দুইজনকে তো কিছু বলতে চাচ্ছি না। শুনলেই শুধু শুধু চিন্তা করবে। ওদের ছেলেমেয়েদের পরীক্ষাগুলো ভালোয় ভালোয় শেষ হোক! এর মধ্যে যেন আমরাও সুস্থ থাকি!’
কিন্তু কথায় বলে ভাগ্যের ফের! আমরা কী চাই আর বিধাতা কী চান...দুটির মাঝে তো অনেক সময়ই বিস্তর ফাঁক থেকে যায়।

একদিন রাতে আব্বার কাশির খুব বাড়াবাড়ি হলো। সেদিন সারারাত কাশির দমকে আব্বা একফোঁটাও ঘুমাতে পারলো না। সকালে আব্বাকে বগুড়া নিয়ে যেতে হলো। বগুড়ায় আমার দুই খালা থাকেন। দুই খালু ও এক খালা ডাক্তার। এর আগেও একবার আব্বার কাশিজনিত এই সমস্যাটা হয়েছিল। প্রচণ্ড একটানা কাশি পাঁচ মিনিটের বিরতি দিয়ে দিয়ে। আব্বার বুকে কফ জমে খুব ভয়াবহ অবস্থা হয়ে গিয়েছিল সেবার। প্রায় তিন সপ্তাহের মতো ক্লিনিকে থেকে আল্লাহ্‌র অসীম রহমতে আব্বা সুস্থ হয়ে উঠেছিল।
আব্বার মনের মধ্যে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, হয়ত এবারেও আল্লাহ্‌ চাইলে একইভাবে ফিরে আসতে পারবে জীবনের স্পন্দনে! জীবন সেই প্রিয় শব্দ যাকে আমরা কোনকিছুর বিনিময়েই হারাতে চাই না।

কিন্তু সেই আশা সত্যি হলো না। একেবারে অপ্রত্যাশিত এক দমকা ঝড় এসে সবকিছু ওলোটপালোট করে দিয়ে চলে গেল। বগুড়া পৌঁছবার পরে ক্লিনিকে ভর্তি করার দু’এক ঘণ্টার মধ্যেই একেবারে হুট করেই আব্বা আমাদের ছেড়ে চলে গেল।

আব্বার মৃত্যু আমাদের সাজানো সব ভাবনা চিন্তাকে একেবারে এলোমেলো করে দিয়ে গেল। আমি মানসিকভাবে প্রচণ্ড বিপর্যস্ত হয়ে পড়লাম। এসব বিদেশ যাত্রা, পড়াশুনার প্রস্তুতি, স্কলারশীপ...সব একেবারে অর্থহীন মনে হতে লাগলো আমার কাছে।
ছোট থেকে বেড়ে ওঠা...লেখাপড়া...লেখাপড়ায় ভালো কিছুর সম্ভাবনায় আশান্বিত হয়ে ওঠা...একসাথে বড় কিছুর স্বপ্ন দেখা... সবকিছুর সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে থাকা মানুষটি হচ্ছে আমার বাবা। বাবার অভিযোগ মিথ্যে ছিল না। মাকেই সবসময় ফোন দিতাম। কিন্তু সেই ফোনে বেশিরভাগ কথাতেই বাবা আসত ঘুরে ফিরে।

আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা বাবার প্রতিটি কথা মনের মধ্যে আকুলিবিকুলি করে ঘুরে বেড়াতে লাগল। তাকে দিতে পারা সুখগুলো একটুখানি শান্তি এনে দিলেও না দিতে পারা অপ্রাপ্তিগুলো কষ্টের সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে গেল আমাকে। সেই সাথে আরেকটি দুশ্চিন্তা এসে ঘিরে ধরলো নতুন করে। এতদিন দু’জন বৃদ্ধ মানুষ একা একা থাকলেও পরষ্পরের সঙ্গে তারা খুব বেশি খারাপ ছিল না। কিন্তু এখন যে ভয়াবহ একাকীত্ব আমার মায়ের সঙ্গী হলো, এর সাথে তাকে একা ফেলে রাখার দুর্ভাবনা কুড়ে কুড়ে শেষ করতে লাগলো আমাদের তিনবোনকে।
তবু সময় একসময় সবচেয়ে বড় কষ্টকেও ভুলিয়ে দেয়। মাকে একটু ঘন ঘন দেখে আসতে শুরু করলাম। সম্ভবত মে’র শেষ দিকে একবার মায়ের কাছে গেলাম।

অফিসের কাজের চাপ সাথে নিয়েই বাড়িতে গিয়েছি। একটা ডিপিপি একনেকে’র সভায় ওঠার কথা, সেটা নিয়েই রাত জেগে কাজ করছিলাম। রাত প্রায় সাড়ে বারোটার দিকে ফোনের আওয়াজে চমকে উঠলাম। গ্রামে এত রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। আমাদের বাড়িতেও যারা ছিল, সবাই ঘুমে অচেতন। ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম, কুতুবের ফোন।
তীব্র এক ভয়ের ঝাপ্টা লাগলো ভেতরে। বুঝতে অসুবিধা হলো না, কুতুব এত রাতে কেন ফোন করেছে। এই মাঝের সময়টুকুতে ওর সাথে মাঝে মাঝেই ফোনে কথা হতো আমার। স্কলারশীপের রেজাল্ট যেকোনো দিন দিয়ে দিবে এমন খবরটাও ওর কাছ থেকেই শুনেছিলাম। পরিস্থিতি আর জীবনের বাস্তবতায় আমি কেমন যেন উদাসীন আর ম্রিয়মান হয়ে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, আর কী হবে নতুন কোনো প্রাপ্তিযোগে?
তবু এই ফোনের আওয়াজ আমাকে যেন নতুন করে উপলব্ধি করিয়ে দিল, জীবনের প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির খাতা খোলাই থাকে আজীবন। সেই খাতাটি হয়ত সেদিনই বন্ধ হয়, যেদিন মানুষ হিসেবে আমাদের হিসাব নিকাশও বন্ধও হয়ে যায়।

ভয়ে ভয়ে ধরলাম ফোনটা। ওপাশ থেকে প্রচণ্ড উত্তেজিত আর খুশি খুশি গলায় কুতুব বললো, ‘স্যার দারুণ খবর! আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না! যদিও আপনার ব্যাপারে আমি শিওর ছিলাম...কিন্তু আমারও যে হবে... এটা তো...স্যার, আপনার আর আমার দুজনেরই স্কলারশীপ হয়েছে!’
বেশি কিছু বলতে পারলাম না আমি। শুধু ছোট করে বললাম, ‘খুব ভালো হলো কুতুব। একা আমার কিংবা একা তোমার হলে কিছুতেই এত ভালো লাগতো না!’

আনন্দের সাথে সাথে কেমন এক কষ্টের উষ্ণ স্রোত বয়ে গেল আমার ভেতর দিয়ে। আমি ভীষণ অসহায়ের মতো আবার প্রচণ্ড স্নেহময় বাবাকে খুঁজে বেড়াতে লাগলাম। ছোটবেলা থেকে রেজাল্ট নিয়ে পাওয়া প্রতিটি আনন্দ সবার আগে ভাগ করে নিয়েছি বাবার সাথে। এক ছেলেমানুষী আবেগে আমার মনে হতে লাগলো, যদি কোনভাবে এই খবরটা বাবাকে দিতে পারতাম! তীব্র কষ্ট নিয়ে আব্বার অনুপস্থিতি আমাকে নতুন করে আবেগাপ্লুত করে ফেললো। রাত্রির নির্জনতাকে সঙ্গী করে একাকী শুনশান ঘরে আমি সেই ছোট্টবেলার মতোই টেবিলে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগলাম। (ক্রমশঃ)





মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:০৮

জুল ভার্ন বলেছেন: চমতকার!!!

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:০৯

ফাহমিদা বারী বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।

২| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৩৯

চাঁদগাজী বলেছেন:




ইহা তো বেলুনের মতো ফুলছে!

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:০৯

ফাহমিদা বারী বলেছেন: জি এবারে ফানুসের মতো ফুলবে :)

৩| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:১৬

কবিতা ক্থ্য বলেছেন: জীবনে সুখ দু:খ ব্যলেন্স করে ই আসে।
আমরাই বোকা যারা তা বুঝিনা।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৪০

ফাহমিদা বারী বলেছেন: জি ঠিকই বলেছেন। আরেকটা জিনিসও বয়সের সাথে সাথে উপলব্ধি করছি। তা হলো, সৃষ্টিকর্তা সবাইকে সবকিছু দেন না। কিছু না কিছু অপূর্ণতা দিয়ে মানুষকে অপ্রাপ্তির বেদনাটা অনুভব করতে দেন। আরেকজনের কষ্টটাকে বোঝান।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৪| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:১৩

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: মানুষের একজীবনে অনেক অপূর্ণতা থাকে বা সব কিছুই পূরণ হয়না।সুখ-দুঃখের আবর্তনের মাঝেই আমাদের জীবন আবর্তিত হয়।

কাহিনী ভালই এগিয়ে চলছে।দেখা যাক কতটা সুখ-সাফল্যে জীবন রংগীণ হয়।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৪৬

ফাহমিদা বারী বলেছেন: জি ওপরের মন্তব্যের উত্তরে এই কথাই বলছিলাম।

পড়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

৫| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৫৪

শেরজা তপন বলেছেন: আপনার জন্য দারুন এক সুসংবাদ- কিন্তু এই পর্বে এসে মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেল।

মেয়ে আর বাবার রসায়ন পৃথিবীর অন্য কিছুর সাথেই তুলনীয় নয়।
লেখা পড়তে পড়তেই আমার মেয়ে ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজীতে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে' Baba I am upset baba you not msg' এর পর অনেকগুলো মন খারাপের ইমো!
সে ও হয়তো কোন্দিন আমার জন্য এভাবে ভাববে...

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:০১

ফাহমিদা বারী বলেছেন: মনটা অনেকদিন পরে আবার খারাপ করে দিলেন!
বাবার কথা মনে করিয়ে দিলেন!

বাবাকে অনেক কষ্টে ভুলে থাকি। বাবারা নিজেদের কষ্টগুলো প্রকাশ করতে পারে না। তাদের মনের চাপা কষ্টগুলোকে তারা ভুল করেও সামনে আনতে চায় না। যদি এতে সন্তানের কষ্ট হয়!
আমার বাবার বাড়িতে একটা বড় পেয়ারা গাছ ছিল। প্রচুর পেয়ারা ধরত। যারা বাসায় থাকত পেয়ারাগুলো অধিকাংশই তাদের পেটে যেত। ওদের পেয়ারা পাড়তে দেখলেই নাকি আব্বা বলত, 'এ্যাই সব পাড়িসনা রে! আমার মেয়েরা খাবে!' বাবার কথা বলছি আর ভেতরটা আদ্র হচ্ছে। কত কত স্মৃতি! এক জীবনে কী করে ভুলি!

আপনার সন্তানের জন্য অনেক অনেক দোয়া। ও নিশ্চয়ই একদিন আপনাকে এভাবেই স্মরণ করবে, দোয়া ও ভালোবাসায়।

৬| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ ভোর ৬:৫৫

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: শেরজা তপন বলেছেন: মেয়ে আর বাবার রসায়ন পৃথিবীর অন্য কিছুর সাথেই তুলনীয় নয়।
সম্পূর্ণ সহমত।
পোস্টে আপনার বাবার অংশ পড়ে মনটা ভারী হয়ে গেলো।

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:২১

ফাহমিদা বারী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

৭| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:২৬

চাঁদগাজী বলেছেন:



ব্লগে, আপনি অন্যদের লেখা পড়েন?

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৪৫

ফাহমিদা বারী বলেছেন: কম পড়ি, তবে পড়ি।
ব্লগে আমার সময়ই কাটানো হয় বেশ কম। এই লেখাটা পোস্ট করার সুবাদে ইদানিং প্রতিদিন আসছি।

আমি গল্পজাতীয় কিছু পেলে পড়ার চেষ্টা করি। ফানপোস্ট বা ছবিব্লগও ভালো লাগে। তবে ক্যাঁচালের পোস্ট ( যা ব্লগে বেশি আসে) এড়িয়ে চলি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.