| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুঝি অতীতের সাথে একটা অদ্ভুত যোগাযোগের উপায় তৈরি হয়ে যায়! ঠিক যেন তারবিহীন কোনও দূরালাপনি!
আরও পাঁচ ছয় বছর আগেও যখন মা-বাবা দুজনেই বেঁচে ছিল, তখনও কিন্তু এই দূরালাপনি তেমন সচল ছিল না। মাঝে মাঝে দুই একটা ঘটনা মনে পড়ত, আবার ফস করে তা কোথায় যেন হারিয়েও যেত। এখন কিন্তু কোথাও হারায় না। মনের মধ্যে শক্ত করে ঘাঁটি বেঁধে বসে থাকে।
এখনকার শিশুদের শৈশব আর আমাদের শৈশব কতটাই না আলাদা! ফেসবুকে মাঝে মাঝে কিছু পোস্ট দেখি। কোনো একটা ফলমূল, গাছ লতা পাতা অথবা খাবারের ছবি দেখিয়ে ক্যাপশন থাকে, 'যারা চিনতে পারবে, তাদের শৈশবটা মধুর ছিল!'
প্রতিটা ছবিই চিনতে পারি। কারণ আমাদের শৈশব তো মধুরই ছিল!
আমরা ভাঙ্গা কাঁচ কুড়িয়ে জড়ো করে রেখে দিতাম। মা জানতে পারলে খুব বকাবকি করতো। কারণ সেই কাঁচে হাত কাটবে। কিন্তু কে শুনবে কার কথা! সেই কাঁচ যারা হাঁড়িকুঁড়ি বিক্রি করত তারা মাঝে মাঝে কটকটি দিয়ে কিনে নিত। ছোটবেলায় অবাক হয়ে ভাবতাম, এই ভাঙ্গা কাঁচের বিনিময়ে কেউ এমন মজার জিনিস দিয়ে দেয়? লম্বা টানা গুড়ের সেই কটকটি খেতে কী যে অমৃতের মতো লাগত তা এখন আর কীভাবে বোঝাই!
রঙিন ফড়িং এর পেছন দিকটা খুব সুকৌশলে ধরে কেউ ফড়িং ধরেছেন? সেটা ছিল আমাদের প্রিয় একটা খেলা। আজ মনে হলে অবশ্য একটু একটু খারাপ লাগে। আহা কীভাবে কষ্ট দিয়ে ধরতাম ফড়িং গুলোকে। কিন্তু সেই বয়সে তো এটা বুঝতে পারতাম না যে ওদের কষ্ট হচ্ছে! শিশুরা কি একটু নির্দয়ও হয়?
আরেকটি খেলা আমাদের খুব প্রিয় ছিল। এই খেলাটা অবশ্য গ্রামে গিয়ে খেলতাম। দাদার বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে। রাতের বেলা তো বিদ্যুতের বালাই ছিল না। সারাদিনেও বিদ্যুৎ মাঝে মাঝে একটু উকি দিয়ে নিজেকে চিনিয়ে যেত। পল্লীবিদ্যুত ছিল না তখন।
আমরা চাচাত ফুফাত ভাইবোনেরা উঠানে গোল হয়ে বসে হ্যাজাক বাতি ধরানো দেখতাম। ওহ সে এক দেখার মতো দৃশ্যই ছিল বটে। গোল একটা কাপড়ের বেলুনের মতো জিনিসকে আগুন দিয়ে ফুলানো হতো। তারপর সেটাকে হ্যাজাকের ভেতরে ঢুকিয়ে পাম্প করা হতো। পাম্প করতে করতে যখন প্রায় মনে হতে শুরু করতো যে কিছুই হবে না, তখন একটা উজ্জ্বল আলো কোত্থেকে যেন এসে একেবারে চোখ ধাঁধিয়ে দিয়ে যেত।
আমাদের সেই খেলাটার কথা তো বলা হলো না! আমরা জোনাকি পোকা ধরতাম। ধরে ধরে একটা কাঁচের বোতলে বন্দি করে রেখে দিতাম। সেই জোনাকি জ্বলত নিভত। আমরা অন্ধকারে সেই বোতলের উজ্জ্বল আলোর ফোটার ওঠানামা মুগ্ধ হয়ে দেখতাম। ইচ্ছে করত, সেই জোনাকিগুলোকে বোতলে ঢুকিয়েই দিনরাত রেখে দিই। ওরা রাতের বেলা আমাদের খেলা দেখাবে। উজ্জ্বল আলোকবিন্দুর জ্বলা নেভার খেলা।
সেই ইচ্ছে পূরণ হতো না। বড় কেউ দেখামাত্রই জোনাকি গুলোকে বোতলের বাইরে বের করে দিতো।
আমি খুব সুন্দর খেজুর পাতার পাটি বানাতে পারতাম।বড়সড় করে বানাইনি কখনও। তবে তিন চার সারি জোড়া লাগাতে পারতাম। কার কাছে যে শিখেছিলাম এখন আর মনে নেই। একবার পাড়ার এক বড় আপা আরেকজনকে ডেকে নিয়ে এসে আমার সেই পাটি বানানো দেখিয়ে বলে, 'দ্যাখ দ্যাখ এইটুকু মেয়ে কী সুন্দর পাটি বানায়!'
এইটুকু মেয়ে! আশ্চর্য! আমার মনে হচ্ছে কেউ যেন এখনই কানের কাছে গুনগুন করে কথাটা বলে গেল! অথচ এইটুকু মেয়ে এই বড়োটি হয়ে জীবনের অর্ধাংশের ওপারে কখন যে চলে এলাম কই বুঝতে পারলাম না তো!
জোনাকি পোকাগুলো বুঝি প্রতিশোধের হাসি হাসতে পারল এতদিনে!
তাদের ধরে রাখতে পারিনি শক্ত করে। নিজের জীবনের সুন্দর সেই দিনগুলোও কবে যে মুঠো গলে বেরিয়ে গেছে... টেরই পাওয়া হলো না!
১৩ ই অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৩
ফাহমিদা বারী বলেছেন: আমরা যারা নব্বইয়ের দশকের মানুষ, তাদের শৈশব ছিল অনেক রঙিন। সেই সময়গুলোকে কখনো এক স্মৃতিকথায় তুলে আনতে পারি না। কত সুখময় সেসব দিন!
২|
১৩ ই অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩০
আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: ঠিক বলেছেন। আমি আমার মেয়ে আর ছেলেকে সেরকম দেখানোর চেষ্টা করি। সব সময় পারিনা।
বাই দ্য ওয়ে: আপনার আর আমার জন্মতারিখ এক। তবে আপনি আমার ছোট
![]()
১৩ ই অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৩
ফাহমিদা বারী বলেছেন: আজকাল আর শুনিই না, আমি কারো চেয়ে বয়সে ছোট হাহা। সামুতে এসেই শুনলাম। জয়তু সামু।
৩|
১৩ ই অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৩
আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: অবশ্যই আমি বয়সে বড়। অনেক বড়। ঠিক বয়সে বিয়া কল্লে আপনার সমান একটা মেয়ে থাকতো আমার।
১৩ ই অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৮
ফাহমিদা বারী বলেছেন: ফেসবুকের মতো বিস্মিত হওয়ার ইমো থাকলে দিতাম।
৪|
১৩ ই অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩১
অপ্সরা বলেছেন: মনে পড়ে যায় আমাদের ছোট্টবেলা!!!!
১৩ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:৫০
ফাহমিদা বারী বলেছেন: ধন্যবাদ আপু।
৫|
১৪ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ২:৪২
মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্ বলেছেন: আমি যে কি পরিমাণ বদ ছিলাম সে কথা মনে করে এখনো হাসি! কটকটি ওয়ালা এলে আস্ত গ্লাস ভেঙে সে ভাঙা গ্লাস দিয়ে কটকটি খেয়েছিলাম। প্রথম সাদাকালো টিভি যখন বাসায় এল সে কি উত্তেজনা সে কি আনন্দ! সিটজেন টিভি। কাঠের ফ্রেমে বন্দী।
১৪ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৮:২২
ফাহমিদা বারী বলেছেন: জীবন আসলেই স্মৃতিতে সুন্দর, যাপনে অসুন্দর!
৬|
০৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫১
আরোগ্য বলেছেন: স্মৃতিচারণ মনে হয় ছোঁয়াছে রোগের মতন, একজনের স্মৃতি আরেকজনকেও নস্টালজিক করে দেয়। আপনার শৈশবের খেলার সাথে কোনটাই রিলেট করতে পারলাম। নব্বইয়ের দশকে ঢাকায় আমার শৈশব, কতইনা ভিন্ন রকম জেনজি দের চেয়ে ছিলো।
০৮ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৩০
ফাহমিদা বারী বলেছেন: জেনজি দের শৈশব আমাদের শৈশব থেকে ঢের দূরের কিছু। এরা মুক্ত বাতাস চেনে না, জীবনের কোলাহল টের পায় না। মুখ গুঁজে থাকে স্মার্টফোনে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ২:১৭
আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: ছেলেবেলার কথা মনে করিয়ে দিলেন। নানুর বাড়ীতে প্রচুর জোনাকী ছিলো। এখনও আছে। ছেলে বেলায় রাতের জোনাকী ধরে ধরে শার্টের পকেটে, গায়ের ভেতরে প্রচুর জোনাকী ঢুকিয়ে গাঁয়ের পথে ঘাটে হাঁটতাম। ওটাও আমাদের আজব খেলা।