নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

ফাহমিদা বারী

আমার ব্লগ মানে গল্প। গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানাই :)

ফাহমিদা বারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প- পাথর (২য় পর্ব)

১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:০২



গুলশানের ফ্ল্যাটের বুকিং দিয়ে এসেই সুমনাকে নিয়ে সিঙ্গাপুর বেড়াতে যাওয়ার একটা প্ল্যান করে ফেললাম। সুমনা মহাখুশি। বিদেশ ট্যুর আমাদের দুজনের জন্যই ভীষণরকম নতুন একটা ঘটনা। আমাদের মা-বাবা ভাই বোন এমনকি আত্মীয় স্বজনদের মধ্যেও কেউ কখনো বিদেশে যায়নি। সেই অপ্রত্যাশিত সুযোগ আজ আমাদের জীবনে এসেছে। এর চাইতে বড় কোনও সুখের ব্যাপার আর কী হতে পারে?
আনন্দিত মনে ব্যাগ গোছাচ্ছিল সুমনা। এখনও পনের বিশদিন হাতে আছে, কিন্তু সুমনার প্রস্তুতি প্রথমদিন থেকেই শুরু হয়ে গেছে। কোথা থেকে যেন ঢাউশ সাইজের একটা ট্রলি ব্যাগ বের করে এনে সেটাকে খুব ভালোভাবে ঘষামাজা করতে লাগল সে। আমি খুশিমনে ওর ছেলেমানুষি কাণ্ডকারখানা দেখছিলাম। মনটা সেদিন সকাল থেকেই ফুরফুর করছে।
কিন্তু সেদিন রাতেই একটা ঘটনা ঘটল!
এই দুটি বছরে প্রত্যেকদিন আমি খুব সঙ্গোপনে পাথরটাকে জামাকাপড়ের ভাঁজ থেকে বের করে আনতাম। দরজা বন্ধ করে দিয়ে কিছুক্ষণ পাথরটাকে হাতে ধরে রাখতাম। কিছু সময় এপাশ ওপাশ করে সেটার সৌন্দর্য দেখতাম। গালের কাছে ধরে আদর করতাম...ঠোঁটের কাছে এনে চুমু খেতাম।
এতগুলো দিনে একবারও আমি সুমনাকে পাথরের বিষয়টা জানতে দিইনি। এমন নয় যে সুমনাকে আমি ভালোবাসি না! কিন্তু পাথরটার ব্যাপারে নিজের অজান্তেই আমি একটা গোপনীয়তা বজায় রাখতে চাইতাম। মনে হতো, প্রকাশ্যে নিয়ে এলেই এটার কার্যকারিতা কমে যাবে। মনের অজান্তেই ততদিনে আমি বিশ্বাস করতে শুরু করে দিয়েছি যে, পাথরের গুণেই বুঝি এত বাড়বাড়ন্তি আমাদের!
সেদিন রাতের বেলাতে সুমনা পাশের ঘরে বসে মনের আনন্দে ব্যাগ ঝাড়মোছ করছে। আমি দরজা বন্ধ করে পাথর হাতে নিয়ে বসে আছি। হঠাৎ দেখতে পেলাম আমার বাঁ হাতের কনুইয়ের কাছে বেশ অনেকটা জায়গার চামড়া, আশেপাশের জায়গার চেয়ে অনেকখানি ফ্যাকাসে। সেই জায়গার চামড়াটার ওপরে দুই একটা ছোট্ট ফুসকুড়ির মতো জিনিসও লক্ষ করলাম।
জায়গাটা বেশিরভাগ সময় কাপড়ের আড়ালেই চাপা পড়ে থাকে তাই হয়ত এতদিন আমার চোখে পড়েনি। আজ জামার আস্তিনটা গুটিয়ে মন দিয়ে পাথরটা দেখার সময় ধাঁই করে সেদিকে চোখ পড়ে গেল। আর চোখ পড়তেই আমার সারা শরীরে শীতল একটা স্রোত বয়ে গেল! এইরকম সাদা দাগ... ওপরে ছোট ফুসকুড়ি... কীসের দাগ এটা? এমনি এমনি তো এমন দাগ তৈরি হতে পারে না!
আমি গায়ের জামাটা খুলে আয়নার সামনে গিয়ে ভালোভাবে সারা শরীর পরীক্ষা করলাম। নাহ আর কোথাও কোনও দাগ দেখতে পেলাম না। তবু মনের মধ্যে খুঁতখুঁতানিটা পুরোপুরি গেল না। পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি জায়গাটা কেমন একটু অন্যরকম দেখাচ্ছে।
আমি গম্ভীর মুখে দরজা খুলে বেরিয়ে এলাম। পাথরটাকেও যথাস্থানে রাখতে ভুললাম না। পাশের ঘরে গিয়ে দেখি, ব্যাগ ঝাড়মোছ শেষ করে সুমনা এবারে তার ওয়ার্ড্রোব থেকে কাপড় বের করছে। পাশে মোবাইলে ইউটিউব অন করে কী একটা চটুল ধরনের হিন্দি গান শুনছে।
আমি সবকিছু নিঃস্পৃহচোখে দেখলাম। কিছু বললাম না। একটু আগের আগ্রহ আর চাপা আনন্দ কই যেন হারিয়ে গেছে।
সুমনা আমাকে দেখে বলতে লাগল, ‘এ্যাই যে কোথায় ছিলে এতক্ষণ? বাথরুমে গিয়েছিলে নাকি? দেখো আমি এই পুরনো ট্রলি ব্যাগটা মুছেটুছে একেবারে নতুনের মতো চকচকে বানিয়ে ফেলেছি। তোমার কতগুলো টাকা বাঁচিয়ে দিলাম বলো! বিদেশ যাব... খরচাপাতি তো কম হবে না! শাড়ি জামা নাইটি কাপড় গোছাতে হিমশিম খাচ্ছি! তুমি একটু... ’
সুমনা কথা শেষ না করে আমার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকাল। বলল, ‘কী ব্যাপার! তোমার কী হয়েছে? এমন থমথমে চেহারা কেন বানিয়ে রেখেছ? একটু আগেই তো ঠিক ছিলে! শরীর খারাপ লাগছে নাকি? তোমাকে সেদিন কত করে বললাম, দুর্বল লাগলে প্রেশারটা একটু চেক করো! খাওয়াদাওয়া তো করো না ঠিকমত!’
আমার কথা বলতে ভালো লাগছে না। তবু দোনোমোনো করতে করতে সুমনাকে হাতের ফ্যাকাসে দাগটা দেখলাম। সুমনা দেখে তেমন একটা উৎকণ্ঠা দেখাল না। হালকা গলায় বলল, ‘ওহ! এটা দেখেই অমন মুখ ভার করে বসে আছ! আরে এটা তো এমনি দাগ মনে হচ্ছে! হয়ত কখনও কোনোকিছুর সাথে ঘষটা খেয়েছিলে, এখন মনে নেই। ঘষা খেয়েই হয়ত চামড়া একটু ছিলে গেছে। তাই জায়গাটা অমন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে!’
‘কিন্তু ঐ ফুসকুড়িগুলো? ওগুলোও কি ঘষা খেয়ে গজিয়ে গেল?’
‘হুম ক্ষত থেকে হতেই পারে! তুমি অযথা ভয় পাচ্ছ! এত ভীতু তো জীবনে ছিলে না!’
আমার মনের ভয় পুরোপুরি গেল না। তবু একটু হাঁফ ছাড়লাম। সুমনা আমার চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধিমতী। হয়ত ওর কথাই ঠিক। শুধু শুধু ভয় পাচ্ছি!
আসলে টাকাপয়সা হওয়ার পর থেকে জীবনের প্রতি লোভ যেন দশগুণ বেড়ে গেছে আমার। চারপাশে এত কিছু পড়ে আছে উপভোগের জন্য! এসব উপভোগ না করেই যদি কিছু একটা হয়ে যায়? ভোগবিলাসের সমুদ্রে অবগাহন ফেলে শরীরের অসুস্থতা নিয়ে পড়ে থাকার কোনও মানে হয়?
সুমনা আমাকে আরেকটু চাঙ্গা করার জন্য বলল, ‘উফ! কী মুখ বানিয়ে রেখেছ! হাসো তো একটু! আমি কী কী কাপড়চোপড় নিব একটু হেল্প করো! চয়েজ করে দাও!’
সুমনা ওর শাড়িজামার দঙ্গলে আমাকে জোর করে বসিয়ে দিলো। ওর প্যাঁচাল শুনতে শুনতে ধীরে ধীরে মনের গুমোট ভাবটা কেটে যেতে লাগল।
রাতে ফুরফুরে মন নিয়ে বিছানায় যেতে যেতে ভাবলাম, সত্যিই হয়ত ইদানিং কাজের চাপে শরীর মন বিপর্যস্ত হয়ে আছে। অল্পতেই উৎকণ্ঠায় ভুগতে আরম্ভ করেছি। সব চিন্তা বাদ দিয়ে সুমনাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন ঘুম থেকে উঠলাম একটা ক্লান্তি নিয়ে। ক্লান্তির কারণ বুঝতে পারছি না। রাতে এত ভালো একটা ঘুম হলো! ক্লান্ত লাগার তো কোনও কারণ নেই। টলতে টলতে বাথরুমে ঢুকলাম। ব্লাডারের চাপ কমিয়ে বাথরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কী মনে করে জামার আস্তিনটা একটু সরিয়ে হাতের সেই জায়গাটার দিকে আবার তাকালাম। তাকিয়েই আবার গতরাতের মতো চমকে উঠলাম!
সেই জায়গার হালকা রঙটা এখন আরও বেশি প্রকট হয়ে উঠেছে এবং গতরাতের সেই ছোট ছোট ফুসকুড়িগুলো আজ যেন আরও ফুলেফেঁপে টসটস করছে। আমি ভেতরে ভেতরে কেঁপে উঠলাম। জায়গাটাতে হাত দিয়ে আরেক দফা চমকে উঠলাম। কোনো অনুভূতি পাচ্ছি না কেন? জায়গাটা কি অসার হয়ে আছে? অনুভূতিশূন্য?
কিছু সময়ের জন্য ভাবনাচিন্তাগুলো জট পাকিয়ে গেল। কিছুই সুস্থিরভাবে ভাবতে পারছিলাম না। মুখেচোখে কয়েকবার পানির ঝাপটা দিলাম। গলা ঘাড় পানি দিয়ে মুছলাম। মাথায় পানি দিব কী না বুঝতে পারছিলাম না। বাথরুম থেকে বের হয়ে পায়ে পায়ে ড্রইংরুমের দিকে এগোলাম।
সুমনা তখনও অঘোরে ঘুমোচ্ছে। আমি উঠেছি বুঝতে পেরে ঘুমজড়ানো গলায় বলল, ‘উম্মম্ম... আমি আরেকটু ঘুমাব। তুমি একা একা চা বানিয়ে নাও আজকে প্লিজ!’
আমি গিয়ে ড্রইংরুমের সোফায় বসে ভাবতে লাগলাম। আমি যা ভাবছি তা কি ঠিক?
আমি জানি কুষ্ঠরোগে কী হয়! যা যা হয় তার প্রাথমিক লক্ষণ আমার শরীরে ধরা পড়েছে। ভাবতে ভাবতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো আরেকটা ভাবনা এসে আমাকে আমূল কাঁপিয়ে দিয়ে গেল।
আমি দুইবছর আগে সেদিন ট্রেনের কামরাতে সেই লোকটার হাতেও কুষ্ঠ রোগ দেখেছিলাম। লোকটা নিজের হাত লুকিয়ে রেখেছিল। তার আচার আচরণে একটা অস্বাভাবিকতা ছিল। আর চেহারাতেও স্পষ্টতই একটা উসকোখুসকো ভাব ছিল।
পরবর্তীতে আমি অনেক ভেবেছি, যে পাথরের গুণেই আমি রাতারাতি এত অর্থশালী হয়ে উঠলাম সেই পাথরটা তো ঐ লোকটার কাছেই ছিল। সে কেন অমন দীন মলিন বেশে ট্রেনের সেকেন্ড ক্লাস কামরায় জার্নি করছিল? তার ঐ রোগটা কবে ধরা পড়েছিল? এসব কথা আমি এখন কীভাবে জানতে পারব?
ভীষণ একটা অস্থিরতা বোধ করতে লাগলাম। মাথার মধ্যে কেমন জানি চক্কর দিচ্ছে। আমার আর বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। আমার হাতের এই দাগ কুষ্ঠরোগেরই প্রথম নিশানা। হায় এত মানুষ থাকতে আমারই কী না শেষমেশ কুষ্ঠ হলো? এই রোগ তো আমাকে খেয়ে ফেলবে! এত সুন্দর পৃথিবী থেকে আমি এভাবে চলে যাব?
অসুখটা কি ঐ লোকটাই আমাকে দিলো? কিন্তু সেটা কীভাবে সম্ভব?
কতক্ষণ ধরে এভাবে বসে ছিলাম নিজেও জানি না। একসময় সুমনার গলার আওয়াজে আমার ধ্যান ভাঙল।
‘ওমা তুমি এখনো এভাবে বসে আছ! ইস! একদিন একটু নাস্তাটা বানিয়ে খেতে বলেছি তাতেই এই! ঠিক আছে বানাতে হবে না, চলো আমি বানাচ্ছি।’
তবুও আমার কোনোরকম নড়নচড়ন নাই দেখে সুমনা অবাক হয়ে বলল, ‘আরে! কী হলো তোমার? আবারও গতকালকের মতো মনমরা হয়ে বসে থাকলে? কী হয়েছে বলবে তো!’
আমি মুখে কিছু না বলে সুমনাকে আমার হাতের দাগটা দেখালাম। এবারে কিন্তু সুমনা আর এক কথাতে উড়িয়ে দিতে পারল না। বেশ অনেকক্ষণ সময় নিয়ে দাগটা দেখে সে বলল, ‘হ্যাঁ গো আজকে তো দাগটা একটু বেশিই বোঝা যাচ্ছে। সাদাটে ভাবটা এখন দেখা যাচ্ছে। আর এক রাতের মধ্যেই ফুসকুড়িগুলো অমন ফুলেফেঁপে উঠল কীভাবে?’
আমি আচমকা নিজেকেও অপ্রস্তুত করে দিয়ে হু হু করে ছেলেমানুষের মতো কেঁদে উঠলাম। কাঁদতে কাঁদতে বললাম ‘সুমনা আমি হাতের এই জায়গায় কোনও অনুভূতি পাচ্ছি না!’
সুমনা চুপ করে গেল কথাটা শুনে। বেশ অনেকক্ষণ পরে বলল, ‘আর কিছুদিন দেখো। এখনই কিছু একটা ভেবে নিয়ে মন খারাপ করে বসে থাকার দরকার নাই!’
বলল বটে, আজ কিন্তু সুমনার গলাতেও আমি জোর খুঁজে পেলাম না। সে একটু কেমন যেন ঝিম মেরে গিয়েছে।
দিনগুলো আগের চেয়ে ধীরলয়ে পার হতে লাগল। দোকানে তেমন একটা যাইই না বলতে গেলে। সারাদিন শুয়ে বসেই দিন কাটছে। সুমনা বাসাতে তার এসিস্যান্টদেরকে গাইড করছে ঠিকই, কিন্তু ওকেও আজকাল তেমন কথাটথা বলতে দেখি না।
আমাদের ভিসা এপোয়েনমেন্টের ডেট ছিল সাতদিন পরে। যাওয়ার কোনও আগ্রহই পেলাম না। সুমনাও কিছুই বলল না। ট্রলি ব্যাগের অর্ধেকটা সেই সেদিন রাতেই সুমনা কাপড়চোপড় দিয়ে ভরে ফেলেছিল। ওটা ওরকম ভাবেই পড়ে থাকল। আমরা যে বিদেশ যাত্রার একটা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম সেটা যেন দুজনেই ভুলে গেলাম।
কারণ ততদিনে আমার দুই হাত, পা, কানের কিছু জায়গায় সাদা ছোপছোপ দাগে ভরে গিয়েছে। সেই জায়গাগুলো শক্ত আর অসার। কোনও অনুভূতির অস্তিত্ব নেই তাতে। একদিন রাতে পায়ের পাতার নিচের অংশে আমি ঘা দেখতে পেলাম। প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেলাম আমি। মোজা পায়ে দিয়ে সুমনার কাছ থেকে লুকাতে চাইলাম। কিন্তু তার দরকার ছিল না। ততদিনে সুমনা অনেক কিছুই বুঝতে পেরে গেছে। ও নিজেই একদিন আমাকে বলল, ‘পায়ে কি ঘা হয়েছে?’
আমি কিছু না বলে চুপ করে গেলাম। সুমনা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তুমি ডাক্তারের কাছে যাও। এভাবে বাসায় বসে থেকে আরও অসুস্থ হওয়ার চেয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।’
আমি সেদিনই প্রথম সুমনাকে সেই পাথরের কথাটা বললাম। আমার কাপড়চোপড়ের ভাঁজে যত্ন করে লুকিয়ে রাখা পাথরটা এনে ওকে দেখালাম। সুমনা বিস্মিত হয়ে সবকিছু শুনল। পাথরটা ওর হাতে দিতে চাইতেই বলে উঠল, ‘না না দূরে রাখো ওটাকে। আমার দেখেই কেমন জানি লাগছে!’
আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘কেন তোমার কি পাথরটাকে সুন্দর লাগছে না দেখতে?’
‘সুন্দর! কী বলছ তুমি? কুৎসিত ওটা! ছিঃ! কেমন কালো বিদঘুটে দেখতে! গায়ে ছোপছোপ ফাঙ্গাসের মতো ময়লা! তুমি কীভাবে এটাকে সুন্দর বলো? আজব তো!’
আমি এবারে বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হয়ে বললাম, ‘সুমনা এটা সাদা পাথর। তুমি এটাকে কালো বলছ কেন? আর ময়লা কোথায় দেখতে পেলে?এটার গায়ে তো কিচ্ছু নেই! এই যে আমি ধরে আছি! আমার হাতে কি কিছু লেগেছে?’
‘তোমার কি চোখ নষ্ট হইছে? কালো পাথরকে তুমি সাদা বলছ কোন আক্কেলে? আর ময়লা নাই মানে? ঠিক করে বলো দেখি তুমি কি আজকাল চোখেও ভালোমত দেখতে পাচ্ছ না?’
‘সুমনা আমি এই পাথরটাকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিনই খুব সুন্দর লেগেছিল আমার কাছে। লোকটা পাথর নিয়ে খেলা দেখাচ্ছিল। আমি হাঁ করে দেখছিলাম। আমাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখেই তো লোকটা আমাকে পাথরটার গল্প শোনাল। আমাকে পাথরটা দিয়ে দিলো!’
‘নোংরা জিনিস দেখে আগ্রহ দেখিয়েছ তাই সে তোমার কাছে মাগনায় গছিয়ে দিয়ে খুশি করেছে। এতে এত অবাক হওয়ার কিছু নাই। আমার তো মনে হচ্ছে এই পাথরটাই সব নষ্টের গোড়া। দেখছ না এর গায়ে কেমন ফাঙ্গাসের মতো ময়লা জমেছে? জীবাণুর আখড়া হয়েছে এই পাথর। আর এটাকে তোমার সুন্দর লাগছে! কে জানে তোমার অসুখটাও হয়ত...’
সুমনা আর কিছু বলল না। আমিও ওকে বলতে গেলাম না, সেই লোকটার হাতেও আমি কুষ্ঠ রোগের আলামত দেখেছিলাম। লোকটার পায়ে মোজা ছিল। গলায় মাফলার। আমি অবাক হচ্ছিলাম, এত গরমেও লোকটা মাফলার জড়িয়ে আছে কেন! আজ বুঝতে পেরেছি,লোকটা হয়ত তার গলাটা ঢেকে রাখার জন্যই মাফলার পরেছিল। আমার মতো তার গলাতেও ঐ সাদা দাগ ছিল!
দুদিন পরে একদিন ঘুম থেকে জেগে দেখি, পাশে সুমনা নেই। ভাবলাম হয়ত রান্নাঘরে কাজ করছে। কিন্তু রান্নাঘরে গিয়েও সুমনার দেখা পেলাম না। ঘরদোর ওলটপালট করে খুঁজলাম। নাহ কোথাও নেই আমার বউ। যে ঘরটাতে সুমনার এসিস্ট্যান্ট মেয়েগুলো কাজ করে সেখানে আমি পারতপক্ষে ঢুকি না। এই অবস্থায় তো প্রশ্নই আসে না।
তবু সেই ঘরেও উঁকি মেরে দেখলাম, সুমনা সেখানেও নেই। মেয়েগুলোও কাজে আসেনি। দিশেহারা হয়ে ভাবছি সুমনা কোথায় গেল। ওর নাম্বারে ফোন দিলাম। নাম্বারটা এনগেইজড দেখাচ্ছে। দশ মিনিট পরে আবার ফোন দিলাম। তখনও এনগেজড। প্রতি পাঁচ মিনিট পর পর ফোন দিতে লাগলাম। একবারও নাম্বারটা ফ্রি পেলাম না। হঠাৎ মনে হলো, সুমনা কি আমার নাম্বারটা ব্লক করে দিয়েছে? সেটাই তো মনে হচ্ছে! কিন্তু কেন?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুব বেশিসময় অপেক্ষা করতে হলো না। সুমনা খুব কায়দা করে তার বিশাল ট্রলি ব্যাগের ওপরে স্কচটেপ দিয়ে একটা কাগজের টুকরো রেখে গেছে।
আমি খুলে নিয়ে পড়তে শুরু করলাম। হাত কাঁপছে। তবু সুমনার লেখাগুলো বুঝতে অসুবিধা হলো না আমার। এমনটাই আশঙ্কা করেছিলাম।
সুমনা লিখেছে, ‘হয়ত তোমার অসুস্থ শরীরের সঙ্গে আমি মানিয়ে নিতে পারতাম, কিন্তু তোমার অসুস্থ মন আমাকে পাগল করে দিচ্ছে। একটা কুৎসিত জিনিসকে তুমি সুন্দর দেখছ কেমন করে? আমি বুঝতে পারছি না! এই অসুস্থতার সঙ্গে তো আমি বাস করতে পারব না! আমি চলে যাচ্ছি। আমার খোঁজ কোরো না প্লিজ। একটা অনুরোধ করব। ভালো দেখে একজন ডাক্তার দেখাও। আশাকরি তুমি সুস্থ হয়ে যাবে। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।’
আমি চিঠিটা হাতে নিয়ে স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম।
আমার দিনগুলো আগের চেয়ে আরও অনেক বেশি দুর্বিষহ হয়ে উঠতে লাগল। খুব ধীরে ধীরে আমি আরও অসুস্থ হয়ে পড়তে লাগলাম। পায়ের ক্ষতটা খুব কষ্ট দেয় এখন। তবুও ডাক্তারের কাছে যেতে ভয় পাই আমি। ডাক্তারের কাছে গেলেই তো এক কান দুকান করে সবাই জেনে যাবে! কী হবে তখন? আমি তো শুনেছি, কুষ্ঠ রোগীকে একরকম একঘরে করে ফেলে সবাই! কেউ তার সঙ্গে মেশে না, তার সংস্পর্শকে ভয় পায়। পাছে এই রোগ অন্যদেরও হয়।
এসিস্ট্যান্ট মেয়েগুলো সুমনা যেদিন চলে যায়, সেদিন এসেছিল। আমি ওদের টাকা পয়সা বুঝিয়ে দিয়েছি। বলেছি অন্য কোথাও কাজ খুঁজে নিতে। তিনমাসের এ্যাডভ্যান্সও দিয়ে দিয়েছি। ওরা অবাক হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আপত্তি করার আর কোনও কারণ খুঁজে পায়নি।
আমি আজকাল বাইরে বেরই হই না বলতে গেলে। দোকানে যাওয়াও ছেড়ে দিয়েছি। সেলসম্যানগুলো কী করছে কে জানে! খোঁজ নিতেও আর ইচ্ছে করে না। আমিই যদি না থাকি, কী হবে এসব ধনসম্পদ দিয়ে?
দিনরাত শুয়ে বসে চিন্তা করি। কী থেকে কী হয়ে গেল! আমার স্ত্রী... যাকে আমি নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসতাম, সেও আমার এই দুঃসময়ে আমাকে ছেড়ে চলে গেল? সে আমার মনকে অসুস্থ বলছে? আমার মন অসুস্থ? সাদা পাথরকে তো সাদাই বলব! সুমনা কেন এটাকে মিছেমিছি কালো বলল? আমাকে পাগল বানানোর জন্য? এই চালাকিটা কি আমার সঙ্গে না করলে হতো না?
একদিন পাথরটা হাতে নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করলাম। সাদা কাপড়ে ঘষাঘষি করলাম। এটার গায়ে নাকি ফাঙ্গাস, ময়লা! কই কিছুই তো উঠে এলো না কাপড়ে!
তবে ঘষাঘষিতে একটা ঘটনা ঘটল। পাথরের নিচে একটা জায়গা একটু কেমন জানি ফাঁক হয়ে গেল। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। এতদিন তো এটা লক্ষ করিনি!
ফাঁক হয়ে যাওয়া জায়গাটা ধরে ভালোমতো টান দিতেই একটা ছোট্ট চেম্বারের মতো জায়গা সুড়ুত করে খুলে গেল। আমি অবাক হয়ে ভেতরে তাকালাম। পাথরের ভেতরটা ফাঁপা! এজন্যই পাথরটা হাল্কা লাগত!
আমি সেই ফাঁপা জায়গাটাতে হাত ঢোকালাম। একটা কাগজ জাতীয় কিছু আমার হাতে উঠে এলো। দেখলাম, একটা চিঠির মতো কিছু। কাগজটা ভাঁজ করে ভেতরে ঢোকানো হয়েছে। আমার তখন বিস্ময়ে হতবুদ্ধি অবস্থা। মনে হলো ভেতরে আরও কিছু আছে। আরেকবার ভেতরে হাত ঢুকিয়ে আরেক খণ্ড কাগজ পেলাম। সেটাও একটা ভাঁজ করা চিঠি। তবে এই চিঠিটাকে খুব বিবর্ণ মনে হলো। হলুদ হয়ে গেছে একেবারে। দুই এক জায়গায় ছিঁড়েও গেছে। এই চিঠির ভাষাটাকেও চিনতে পারলাম না। উল্টেপাল্টে রেখে দিয়ে প্রথম চিঠিটা হাতে নিলাম। এটা বাংলাতেই লেখা।
আমি পড়তে শুরু করলাম। এক অদ্ভুত বিস্ময়ভরা জগতের দুয়ার আমার সামনে খুলে গেল!
‘জনাব,
আমি জানি একদিন এই চিঠিটা আপনি ঠিকই খুঁজে পাবেন। সেইদিন কবে আসবে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। আমার সময় আর আপনার সময়ের হিসাব হয়ত এক নাও হতে পারে।
আমি হলাম সেই ব্যক্তি যার সঙ্গে আপনার ট্রেনের কামরায় দেখা হয়েছিল। ভাবছেন আমি এটি কখন লিখেছি! আপনার সামনে বসেই লিখেছি, কিন্তু আপনি বুঝতে পারেননি।
এতদিনে নিশ্চয়ই আপনি বুঝে গেছেন আপনার কাছে থাকা পাথরটা এবারে কাউকে দিয়ে দেওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। কারণ আপনিও আমার মতো আক্রান্ত হয়েছেন। এ রোগ বড় ভয়ানক রোগ। যাকে ধরে তাকে আর ছাড়ে না। তিলে তিলে শেষ করে দিয়ে তবেই তার আক্রোশ মেটে।
তবে আপনার মুক্তি পাওয়ার উপায় এখনও ফুরিয়ে যায়নি। ঠিক যেমনিভাবে আজ আমি মুক্তি পেলাম এই রোগ থেকে, ঠিক তেমনিভাবেই আপনিও একদিন মুক্তি পেতে পারবেন। হয়ত আমার কথাগুলো বুঝতে পারছেন না। একটু অপেক্ষা করেন, বুঝিয়ে বলছি।
পাথরটাতে আরও যে চিঠিটা আপনি দেখতে পাচ্ছেন, সেটা নেপালি ভাষায় লেখা। এই চিঠিটা আমি খুঁজে বের করেছিলাম, ঠিক যেভাবে আপনি আমার চিঠিটা আজকে খুঁজে পেলেন সেই একইভাবেই। আমি নেপালি ভাষা জানতাম। কারণ একাধিকবার আমাকে কাজের জন্য নেপালে যেতে হয়েছিল। সেখানে আমার বেশ কিছু পরিচিত জন ছিল। তাদের কাছ থেকে আমি কাজ চালানোর মতো নেপালি ভাষা শিখে নিয়েছিলাম। পরে নিজের আগ্রহে আমি ভাষাটা লিখতে পড়তেও পারতাম।
আমি যার কাছ থেকে পাথরটা পেয়েছিলাম, চিঠিটা তারই লেখা। সে একজন নির্মাণশ্রমিক ছিল। নেপালি তাজমহলের মেরামতের কাজ সে দেখাশোনা করত। একদিন এই পাথর তার চোখে পড়ে। পাথরটা তার চোখে সাদা শুভ্র আর চকমকে মনে হয়েছিল। পাথরের গুপ্ত কুঠুরিটা সেই প্রথম আবিষ্কার করে। সেই কুঠুরি খুলে সে কিছু মূল্যবান মুদ্রা পায়। শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তি ছিল, তারা নির্মাণ কাজ করার সময় কোনও জিনিসে হাত দিবে না। খোঁড়াখুঁড়ি করতে গিয়ে কোনও নতুন কিছু আবিষ্কৃত হলে সেটাকে সরকারী কোষাগারে জমা দিবে। কিন্তু এই নির্মাণশ্রমিক লোভে পড়ে যায়। পাথরটাকে সে সরিয়ে ফেলে।
পাথরটা বসানো ছিল বাহাদুর রানার স্ত্রীর সমাধির একেবারে শিয়রের কাছে। বাহাদুর রানা ভালোবেসে তার স্ত্রীকে কিছু ধনসম্পদ সহযোগে সমাধিস্থ করেছিল। কথিত ছিল যে, এই পাথরটার মধ্যে কোনও জাদুবিদ্যা প্রয়োগ করা হয়েছিল। যে কেউ এই পাথরে হাত দিবে সে কিছুদিন হয়ত অর্থের প্রাচুর্য ভোগ করবে কিন্তু একদিন সে এই পাথরে হাত দেওয়ার অপরাধে চরম শাস্তি ভোগ করবে। কুষ্ঠ হবে তার। এই রোগ তাকে তিলে তিলে শেষ করে দিবে।
তবে একটিমাত্র উপায়ে সে এই পাপ থেকে মুক্তি লাভ করতে পারবে। যার অন্তরে একইরকম লোভের বীজ থাকবে, সেরকম কাউকে যদি সে খুঁজে পায় তবে তাকে পাথরটা দিয়ে দিতে পারলেই তার মুক্তি মিলবে।
এই জাদুবিদ্যা প্রয়োগ করা পাথরটাকে সাধারণ মানুষ কালো পাথর বলেই চিনবে। কিন্তু যার মধ্যে লোভ থাকবে, অর্থের প্রচণ্ডরকম মোহ থাকবে... সে এই পাথরটার মধ্যে শুভ্রতা দেখতে পাবে। এটার প্রতি তীব্রভাবে আকৃষ্ট হবে। এমন কাউকে পাথরটা দিয়ে দিতে পারলেই এই রোগ থেকে মুক্তি মিলবে।
আজ আপনাকে পেয়ে গেলাম। আপনি প্রথম দেখাতেই এর শুভ্র আভিজাত্যে মোহিত হয়ে পড়লেন। এর আগে এমনটা কখনও হয়নি। আমাদের চারপাশে এত লোভী মানুষ, কিন্তু জানি না কেন, পাথরটা এই ছোটখাট সাধারণ লোভের কাছে শুভ্রতার মায়াজাল ছড়ায় না। হয়ত এই লোভ অনেক তীব্র। এই জীবননাশী লিপ্সা, যা আমার ছিল... আপনার আছে। হয়ত খুঁজলে আপনিও কাউকে না কাউকে ঠিকই পেয়ে যাবেন!
অনেক কিছু হারিয়ে আপনিও একদিন ঠিকই জেনে যাবেন, সম্পদ মেলে পরিশ্রমে। লোভ কিংবা গুপ্তবিদ্যা কাউকে কিছু দিতে পারে না।’
...............
চিঠিটা এই পর্যন্তই। আমি বুঝতে পারলাম লোকটা কখন এই চিঠিটা লিখেছিল। আমি যখন তাকে ডায়েরি লিখতে দেখেছিলাম, তখনই সে বসে বসে এই চিঠি লিখছিল। আর ট্রেনের বাথরুমে গিয়ে সে এই চিঠিটা পাথরের কুঠুরিতে গুঁজে দিয়েছিল।
সেই থেকে আমি এমন কারও সন্ধান করে চলেছি, যার কাছে পাথরটাকে শুভ্র সুন্দর বলে মনে হবে। তীব্র আকর্ষণে সে পাথরটাকে ছুঁয়ে দেখতে চাইবে!
গলায় মাফলার জড়িয়ে, পায়ে জুতো আর ফুলহাতা জামা গায়ে দিয়ে কত বাসে যাতায়াত করলাম, ট্রেনে চড়লাম! কেউই এই পাথরটার দিকে ফিরেও দেখে না। মাঝে মাঝে দুই একজন তাকিয়েই ঘৃণায় মুখ সরিয়ে নেয়। অবাক হয়ে আমার দিকে তাকায়। হয়ত সুমনার মতো অসুস্থ মানুষ মনে করে আমাকে।
একদিন আমার ছোটবেলার বন্ধু রাজীব এলো বাসায়। ব্যবসায় আমার বাড়বাড়ন্তি হওয়ার পর থেকেই রাজীব কতদিন বাসায় আসতে চেয়েছে! আমি ভাব নিয়ে এ কথা ও কথা বলে এড়িয়ে গিয়েছিলাম। এবারে আর এড়ালাম না। আসতে চাইছে আসুক। এসবের প্রতি আমার আর কোনো মোহ নেই। রাজীব চাইলে সবকিছু ওকে দিয়ে আমি দূরে কোথাও চলে যাব, যেখানে কেউ আমাকে চিনবে না।
রাজীবকে আসতে বলে আমিও আপাদমস্তক নিজেকে জড়িয়ে নিলাম। অসুখটার কথা এখনো কাউকে বুঝতে দেইনি। রাজীবের কাছ থেকেও লুকাতে হবে। রাজীব আমার ঘরে পা দিয়ে বলল, ‘কীরে তোকে এমন আলুথালু দেখাচ্ছে কেন? ঘরের মধ্যে মাফলার পরে আছিস! সুমনা কই?’
আমি সব প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বললাম, ‘সুমনা বাপের বাড়ি বেড়াতে গেছে। আমার ঠাণ্ডা লেগেছে। তুই বস। আমি চা করে আনি।’
‘ব্যবসায় আয় উন্নতি করে তো বন্ধুকেই ভুলে গেছিস! একবারও বাসায় আসতে বলিস না... কী…’
কথা বলতে বলতেই রাজীব থেমে গেল। আমি শুনতে পেলাম ও বলছে, ‘এই সাদা এত বড় পাথরটাকে কোথায় পেয়েছিস? কী সুন্দর দেখতে পাথরটা!’
আমার পা দুটো আপনা থেকেই থেমে গেল।
পাথরটা আমি চোখের সামনেই রেখে দিয়েছিলাম। প্রতিদিন এটা নিয়ে বের হই, তাই আর ভেতরে ঢোকাই না। তাছাড়া এখন আর কার কাছ থেকে লুকাব এটাকে?
চা বানাতে বানাতে আমি গল্পটাকে মনের মধ্যে ভালোমত কয়েকবার আওড়ে নিলাম। রাজীবকে গল্পটা বলতে হবে, রসিয়ে কসিয়ে।
ঠিক যেরকমভাবে ট্রেনের সেই লোকটা আমাকে গল্পটা শুনিয়েছিল... (সমাপ্ত)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:৪৮

মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌ বলেছেন: আপনার লেখার হাত খুব ভাল। আপনার গল্প শেষ করার এই বিশেষ গুন শেষ হইয়াও হইলনা শেষ সফল ছোট গ্লপ লেখার অনন্য কৌশল বলে শুনেছি। অবশ্য এই গল্প আপনি ছোট গল্প হিসেবে লিখেছেন কিনা জানিনা। আমার কাছে অবশ্য সফল ছোট গল্প বলেই মনে হয়েছে।

১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৮:৫৯

ফাহমিদা বারী বলেছেন: আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ভাই। গল্পটি ছোটগল্পের বইতেই প্রকাশ করেছিলাম। গল্পের আকার বড়। কিন্তু ছোটগল্পের আকারের মধ্যে পড়ে যায়। ছোট বড় মেশানো কিছু অতিপ্রাকৃত গল্প ছিল বইটিতে।

২| ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৩:২৪

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: ভালো লিখেছেন ।

১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৮:৫৯

ফাহমিদা বারী বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.