নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

ফাহমিদা বারী

আমার ব্লগ মানে গল্প। গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানাই :)

ফাহমিদা বারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুহূর্ত কথা ঃ চায়ের কাপে পরিচয় তোমার সাথে

২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১৪



(মনে হচ্ছে গল্প পড়ায় আপাতত কারো মুড নাই। বেশ তো! শুধু গল্প শোনাতে আমারও সবসময় ভালো লাগে না। আমার পেজ Fahmida's Stories এ আমি বিভিন্ন সময়ে কিছু মুক্তগদ্য লিখেছি। সেখানে একবার চা নিয়ে লিখেছিলাম। আজ আবার সেটাই শেয়ার করছি। যার ইচ্ছা পড়তে পারেন :) )

এক কাপ চায়ের মতো রোমান্টিক কিছুর দেখা কি চট করে মেলে?

সকালে চা খেতে খেতে একটা বই নিয়ে বসেছিলাম। ইচ্ছা আছে, আগামী পনেরদিন শুধু বই পড়ে কাটাব ইনশাআল্লাহ। লেখালেখি থেকে একেবারে বিরতি।

চায়ের রঙ টেকশ্চার দেখতে দেখতেই মনে হলো, এই চা বাবাজিকেই হিরো বানিয়ে কিছু লিখে ফেলি!

প্রথম কবে চায়ের প্রেমে পড়েছি বলতে বললে সেই কিশোর বয়সটার কথাই মনে পড়ে। আম্মা খুব অল্প বয়সে চা খেতে দিত না। বলত, এই বয়সে চায়ের নেশা না হওয়াই ভালো। বয়স বাড়তে বাড়তে কীভাবে এর সঙ্গে জড়িয়ে গেছি, নিজেও জানি না।
এখন কত রকম চায়ের উৎপত্তি হয়েছে। লেমন টি, গ্রিন টি, তুলসী টি, জিঞ্জার টি... আরো কত সব নাম! মানুষ ফুল থেকেও এখন চা বানিয়ে খায়। অপরাজিতার চা দেখে মনে করতাম হয়ত রঙের জন্য ডেকোরেশনাল কিছু বানিয়েছে। পরে শুনি ও আল্লাহ্‌! এই বস্তু নাকি খাওয়াও যায়!

কমলা চা বানিয়ে খেয়েছি। আমার বেশ মজা লেগেছে খেতে। এইসব চা খেতে হয় স্বচ্ছ রঙের চায়ের কাপে। চায়ের রূপ দেখতে দেখতে সুখের চুমুক! আহা!

তবে আমাদের ছোটবেলায় কিন্তু রং চা জিনিসটাই এত পপুলার ছিল না। পপুলার বলছি কেন, আমার তো মনেই পড়ে না তখন কেউ রঙ চা খেত! অবশ্য আমার জানাশোনার সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। আমি আমাদের বাসায় কখনো রঙ চা খেতে দেখিনি।
এই যে চা খাচ্ছি কথাটা লিখছি, এটা ভুল তাই তো বলবেন? জানি জানি! কিন্তু চা পান করা শুনতে কেমন জানি লাগে। তাই চা খাচ্ছি শব্দটাই মেনে নিন। আমাদের বাসায় গরুর দুধের চা বানানো হতো। সেই চায়ের টেকশ্চর হতো ট্যালট্যালে। খেতে কিন্তু খারাপ লাগত না। একটা সুগন্ধ মিশে থাকত সেই চায়ে। ওপরে ভাসত সর। তবে ছোটবেলায় এই সর কোনোভাবেই গলায় চলে গেলে আমার খুব খারাপ লাগত। প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ খেতে হতো বাধ্যতামূলকভাবে। আমাকে সেই দুধ ছেঁকে দেওয়া হতো।

বাসায় যে মেয়েটা থাকত, সে আমাদের বাসার সদস্যের মতোই ছিল। ওর নাম ছিল হাওয়া। মেয়েটা ছিল আমারই বয়সী। সেই হাওয়াকে কড়া ভাবে বলে দিতাম, দুধ অবশ্যই ছেঁকে দিবি! একদিন সে এই কাজ করতে ভুলে গেল।
আমি রাত জেগে পড়তাম। বাসার সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ত, আমি বই নিয়ে গুনগুন করে নিজের ঘরে বসে পড়তাম। পড়া শেষ করে দুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। একদিন সেই দুধ খেতে গিয়ে আরেকটুর জন্য বমি করে ভাসিয়ে দিইনি। কারণ আর কিছুই না! সেই সর! হাওয়া সেদিন দুধ ছাঁকতে ভুলে গিয়েছিল।

আমি একটা চিরকুট লিখলাম, 'আম্মা হাওয়া দুধ ছাঁকতে ভুলে গিয়েছে। এটা কেমন কথা?' চিরকুট লিখে তার ওপরে মগ ছাপা দিয়ে টেবিলে রেখে দিলাম। ঘুমিয়ে ছিলাম। রাত জেগে পড়তাম দেখে বেশি সকালে উঠতে পারতাম না। সকালে সেই চিরকুট সবার বিনোদনের কারণ হলো।

এই যাহ! চায়ের প্রসঙ্গ থেকে দূরে সরে এসেছি।

তো, আমি তো আমাদের বাসার গরুর দুধের চা খেয়ে অভ্যস্ত ছিলাম। সেই দুধ বাসায় রাখা হতো। গুঁড়া দুধ দিয়ে চা খেয়েছি শ্বশুরবাড়িতে এসে। সেটাও ভালো লেগেছিল। এখন আমি গুঁড়া দুধ দিয়েই চা বানাই। খাঁটি গরুর দুধ আর কোথায় পাব?
মনে পড়ে, জামালগঞ্জে যখন আমরা রোজার ঈদ করতে বাড়িতে যেতাম তখন ইফতারির পরে এক কাপ চা ছিল দারুণ আকাঙ্ক্ষিত। কিন্তু ইফতার করে টেঁসে পড়া কেউ আর সেই চা বানাতে রাজি হতো না! বানাতে হবে সবার জন্য। বিশাল দায়িত্ব! কিন্তু খাওয়ার জন্য সবাই হাঁ করে বসে থাকত।

আমার মেজ বোন যাকে আমি ছোটপা বলে ডাকি, সে খুব কৌশলে কাজ আদায় করে নিতে জানে। আমাকে তেল দিয়ে বলত, 'ওহ বিপুর চা বানানো খুব ভালো হয়! বিপু চা টা তুই বানা না!' আমি ঐটুকু তেলেই তেলতেলা হয়ে যেতাম। সুড়সুড় করে রান্নাঘরে ঢুকে পড়তাম চা বানাতে।
ধরা যে খাইছি সেটা বুঝতাম পরে!

সেই দিনগুলো আজ স্মৃতিতে উঠে আসে। একা একা আনমনে চায়ের কাপ হাতে স্মৃতিচারণ করি। কত সুখ দুঃখের দিন একসাথে পার করেছি!

আমেরিকায় যাওয়ার পরে খুব সমস্যা হয়ে গেল আমাদের। সেখানে আমরা গুড়ো দুধ খুঁজে পাই না। চা খাব কেমন করে? লিকুইড দুধ দিয়ে চা বানানো তখন প্রায় ভুলেই গেছি। ট্যালোট্যালে চা তখন আর ভালো লাগে না।

সেই সমস্যার সমাধান পেলাম সেখানকার এক প্রবাসী ভাবির কাছ থেকে। উনি বললেন 'লিকুইড দুধটাকে কিছুক্ষণ জ্বাল দিয়ে ঘন করে নাও। তারপর চা বানাও। গুঁড়ো দুধের চায়ের স্বাদ পাবে!'

টেকনিক কাজে লাগিয়ে দেখলাম তাই তো! একটু বুদ্ধি খাটালেই কত কী করা যায়!

তুরস্কে আমার একজন কাজিন কয়েক বছর ছিল। ওর বউ দুধ চায়ের ভক্ত ছিল। কিন্তু সেইদেশে এটা নাকি দুষ্প্রাপ্য ছিল।

চা প্রেমীদের মন এক কাপ চা পেলেই খুশি হয়ে ওঠে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমার চা খাওয়ার ধরণ বদলেছে। ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে অনেকদিন হয়ে গেল। এখন দিনে এক কাপের বেশি চা খাই না। তবে সেটা দুধ চা হলেই ভালো!
ঢঙ দেখিয়ে রঙ চা খেতে আমার বয়েই গেল!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:৩২

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: আপনার চায়ের গল্প আর আমি নিজেও এক কাপ অ্যারাবিক গাওয়া সাবার করে দিলাম। তবে চা বলত যে কোন চা আমার চাই যদিও এখন দুধ ও চিনি একেবারেই ছেড়ে দিয়েছি।

২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:৫৬

ফাহমিদা বারী বলেছেন: চা মানেই এখনো দুধ চা। রঙ চা খাওয়ার চেষ্টা করি, হয়ে ওঠে না!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.