নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

ফাহমিদা বারী

আমার ব্লগ মানে গল্প। গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানাই :)

ফাহমিদা বারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বই পড়ার আনন্দ

১৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:২৭




আমাদের সেই সময়টাতে বই ছিল সোনার হরিণ হাতে পাওয়ার মতো একটা বিষয়। ঘরে ঘরে ভাইবোনেরা মিলে পাঠাগার তৈরি করা হতো। সেসব বই পড়ে পড়ে তুলোধুনা করে ফেলা হতো। কিছু কিছু লেখকের বই বার বার পড়া হতো। কারণ তাদের বইগুলো ছিল জনপ্রিয়। আর জনপ্রিয় লেখকের বই সংগ্রহ করার বাতিকটাও বেশি থাকে।

আমাদের বাসায় একটা সময় আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, বিমল মিত্র, নিমাই ভট্টাচার্য, নীহারঞ্জন গুপ্ত...এসব লেখকদের বই প্রচুর ছিল।
ইনাদের বইগুলোর বেশিরভাগই ছিল নিউজপ্রিন্ট বাঁধাইয়ের। হাত বদল হয়ে হয়ে যখন এগুলো আমি পড়েছি, ততদিনে এগুলোর হাল হয়ে গিয়েছিল বড় বেহাল। কিছু জায়গায় পাতা খসে যাওয়া, ছিঁড়ে যাওয়া, নড়বড়ে গড়ন। তবু ভেতরের রস আস্বাদন করতে সমস্যা হতো না। আমি গোগ্রাসে বইগুলো পড়তাম। আপাত অসুন্দর চেহারার এই বইগুলোর ভেতরে জমজমাট একটা গল্প থাকতো। তেমন প্যাঁচযুক্ত জটিল কোনো গল্প না, বরং সহজ সরল জীবনের হাসি আনন্দ বেদনা আর প্রেম বিরহের নিটোল সব গল্প। এত ভালো লাগতো পড়তে! এই বইগুলোর ক্রেতা ছিল আমার মা। প্রচুর গল্প উপন্যাস পড়তো আমার মা।

আমরাই যখন অতি সুলভে বই পেতাম না, তখন বলাইবাহুল্য আমার মায়েদের আমলে সেই না পাওয়ার গল্পটা আরো তীব্র ছিল। আম্মা সেলাই করতে পছন্দ করতো। আমাদের দেশের বাড়িতে আমার মা ছিল সেই সময় সেলাইয়ের মাস্টার। এই মাস্টারি করে নাকি আম্মা দু'পয়সা আয় রোজগারও করে ফেলেছিল। এটা ছিল তার বিয়ের আগের ঘটনা। নানার কাছে বইকেনার টাকা চেয়ে একদিন নিরাশ হতে হয়েছিল আম্মাকে। তখন ঠিক করেছিল, আর টাকা চাইবে না। নিজেই কিছু করবে। এই সেলাইয়ের উপার্জন থেকেই আম্মা বই কিনতো। দারুণ গল্প তাই না?

কিন্তু আমার দুঃখটা কোথায় জানেন? নিজের মেয়ের লেখা একটা আস্ত বই আমার মা পড়ে যেতে পারেনি। আমার 'নির্লজ্জ' যখন প্রকাশিত হয়েছিল, তখনো আম্মা কথা বলতে পারতো। আমার বোনকে বলেছিল, গল্পটা পড়ে শোনানোর জন্য। সেই অসহায় রুগ্নতার মাঝেও আমার মা নিজের মেয়ের লেখা বই পড়তে চেয়েছিল, এই কষ্ট আমি কখনো ভুলতে পারবো না।

যাক সেসব কষ্টের কথা। পরবর্তীতে এসব লেখকদের লেখা গল্পগুলোর সিনেমা দেখেছি টিভিতে। মনে মনে ভেবে অবাক হতাম, সেই সময়ে কত সুন্দর সুন্দর গল্প দিয়ে সিনেমা বানানো হতো। সম্ভবত সেজন্যই সিনেমাগুলো সবার মনে গভীরভাবে দাগ ফেলতো।
নীহারঞ্জন গুপ্তের কিরিটি রায়ের বই অবশ্য আমার মায়ের সংগ্রহে ছিল না। সম্ভবত ঘরোয়া সুখ দুঃখের প্যাঁচালের গল্পগুলোই তার বেশি ভালো লাগতো। কিরিটি রায়ের গোয়েন্দা গল্প তাকে সেভাবে আকৃষ্ট করতে পারেনি। সেসব গল্প পড়েছি বেশ পরে।
তবে তার আগে যে বইটার কথা বলতে চাই তার নাম 'কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী'।

এই বইটা আমি পড়েছি এস এস সি পরীক্ষা দেওয়ার পরে, তিনমাসের ছুটিতে। আহা! সেই প্রথম ওমন গভীর গোপন রোমাঞ্চভরা এক প্রেমকাহিনি পড়া আমার। সেবা রোমান্টিকের সাথে স্কুল জীবনেই পরিচয় হয়েছিল। সেগুলোও কম রোমাঞ্চ জাগায়নি মনে। তবে এই বইয়ের রোমাঞ্চকর অনুভূতি ঠিক ভাষায় ব্যক্ত করতে পারবো না।
হয়ত অল্প বয়সের গভীর আবেগই এজন্য বেশি দায়ী ছিল। এখন পড়লে হয়ত জলো জলো নেকু নেকু কিছু একটা মনে হবে। কিন্তু সেই বয়সে ওমন বই পড়ার আনন্দ ছিল সত্যিই অপরিসীম। এই গল্পের কাহিনি ভাসাভাসা মনে আছে এখন। শুধু এটুকু মনে আছে, জমিদারের রক্ষিতার মেয়ে এই কঙ্কাবতী। জমিদার তাকে লুকিয়ে রাখে নিজের সুরম্য গোপন এক দূর্গের মতো বাড়িতে। মাঝে মাঝে গিয়ে তার খোঁজ খবর নিয়ে আসে। জমিদারের কোনো বদ মতলব থাকে না। সে মেয়ের মতোই স্নেহ করে তাকে। কিন্তু তার পরিচয় বাইরে প্রকাশিত হোক সেটা জমিদারের ইচ্ছে নয়।

একসময় ঘটনাচক্রে এই কঙ্কাবতীর সাথে দেখা হয়ে যায় জমিদারপুত্রের। দুজনে গোপনে দেখা করতে শুরু করে। কংকাবতীকে এই কাজ করতে অনেক সাহসিকতার পরিচয় দেখাতে হয়। কারণ জমিদার জেনে গেলে কপালে কঠিন দুর্ভোগ। সবকিছুর অগোচরেই গড়ে ওঠে দুজনের প্রেম।

পরবর্তীতে এই 'কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী' সিনেমা দেখেছি। জমিদারের ভূমিকায় উত্তমকুমার, জমিদার পুত্র মিঠুন চক্রবর্তী আর কঙ্কাবতীর ভূমিকায় শর্মিলী ঠাকুর। জানি না কেন, সিনেমাটি আমার মনে সেইরকম দাগ ফেলতে পারেনি যতটা বইটা ফেলেছিল। বইটি পড়ে আমি কল্পনায় যেভাবে সবকিছু দেখতে পেয়েছিলাম, সিনেমার সাথে তার মিল খুঁজে পাইনি।

অল্প বয়সের গোপনপ্রেম, আবেগ আর লুকোচুরি সিনেমাতে ঠিক যেন সেভাবে ফুটে ওঠেনি। শর্মিলীকে চরিত্রের তুলনায় বয়ষ্ক মনে হয়েছে।
এস এস সি পরীক্ষার ছুটিতে আরো পড়ে শেষ করেছিলাম শরৎচন্দ্র রচনাবলী, রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ। শরৎ রচনাবলীও আমার মায়েরই সংগ্রহে ছিল। আহা! কী একেকটা গল্প! পড়তে পড়তে চোখের পানি আর নাকের পানিতে হাবুডুবু খেতাম। তবু ছাড়তে পারতাম না। বেশিরভাগ গল্পেরই মিলনাত্মক সমাপ্তিতে তৃপ্তমনে পড়া শেষ করতাম।

একবার কার কাছে যেন শুনেছিলাম, শরৎচন্দ্র আসলে নারীই ছিলেন। ছদ্মনামে লিখতেন। মনে মনে ভেবেছিলাম ঘটনা হয়ত সত্যি। নারী না হলে নারীমনের এমন আবেগ কেউ ফুটিয়ে তুলতে পারে কেমন করে? যাহোক, পরে নিশ্চিত হয়েছি...ঘটনা আসলে তা নয়। তিনি একজন পুরুষ লেখকই ছিলেন যিনি একদা রবীন্দ্রনাথের কলম চুরি করে তার ছাতার মধ্যে লুকিয়ে এনেছিলেন।
পরে রবীন্দ্রনাথ জানতে পেরে তাকে পাকড়াও করে বসেন যে এমন কর্মের কারণ কী? তখন শরৎচন্দ্র অকপটে বলেন, রবীগুরুর মতো লেখাই তার উদ্দেশ্য সেটা কলম চুরি করে হলেও।

এসব শুনলে আজ কত অবাক লাগে তাই না? একজন অনুজ লেখকের অগ্রজ আরেকজন লেখকের প্রতি কী ভীষণ ভক্তি আর শ্রদ্ধা! অথচ দুজনেই প্রায় সমসাময়িক। তবু আরেকজনকে তার প্রাপ্য মর্যাদাটুকু দিতে এতটুকুও কার্পণ্য ছিল না!

আজ এই পর্যন্তই। মনে হচ্ছে এই লেখাটি বেশ লম্বা হয়ে গেল!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৯

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: নতুন প্রজন্ম এই সব বই পড়েনা ।

২| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:০১

আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: পড়লাম। আপনার লেখাটি আমার জীবনের সাথে অনেক খানি মিলে যায়। সুন্দর লিখেছেন, খুব ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন। আরো লিখুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.