নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Fahunk

Fahunk › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবন এতো বড়ো কেনে

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৮:২৩

আমার বয়স ২৫ এর আশপাশে, ঢাকায় মেসে থাকি, পড়ছি মধ্যম সারির একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে। পাশকরে বের হতে হতে আরো বছর দেড়েক লেগে যাওয়ার কথা। যারা ভাবছেন এত দেরী কেন! তাদের বলছি, আমি ডিপ্লোমা ইন ইন্জিনিয়ারিং এ চার বছর নষ্ট করেছি! কেরিয়ার নিয়ে কখনোই সেই অর্থে সিরিয়াস ছিলাম না। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসলেও বাড়ীর ছোট হওয়ায় কখনোই খুব বেশী আর্থিক অনটনে পরতে হয় নি। সবসময় একটা গা ছাড়া ভাব নিয়ে চলেছি।তবে হ্যা একটা সময় প্রচুর বই পড়তাম আর মুভি দেখতাম। পাশাপাশি দাবা খেলায় পেশাদারী মনোভাব নিয়ে বেশকিছু টুর্নামেন্টও খেলেছি। বলতে গেলে এর বাইরে আমার বিশেষত্ব তেমন কিছু নেই। বাইরে থেকে দেখলে আর পাঁচজন ৫.৯" আর ৬০-৬৫ কেজি ওজনের স্বাভাবিক মানুষ বলেই মনে হওয়ার কথা।

যাই হোক,ধান ভানতে শিবের গীত না গেয়ে বরং আসল কথা বলি। দুই বছর আগে যখন করোনা মহামারী শুরু হলো তখন আমিও দেশের বাড়ীতে চলে গেলাম। অনলাইনে ক্লাস করার ওজুহাতে দামী একটা স্মার্টফোনও পেয়ে গেলাম। যা হোক, ক্লাস হতো নামে মাত্র আর আমার মত ফাঁকিবাজ মানুষ এই সুযোগে আরেকটু ফাঁকিবাজির মাত্রা বাড়িয়ে তুললাম। খাওয়া-ঘুম, ফেসবুক ইউটিউব আর মুভি দেখা এসবই যখন নিত্য দিনের রুটিনে পরিনত হয়েছে তখন হুট করেই একটা মেয়ের সাথে আলাপ হলো।মেয়েটা আমার সমবয়সী।বলে রাখা ভালো,আমি জীবনে কখোনই মেয়ে ঘেষা ছিলাম না। উঠতি বয়সে দুয়েকটা প্রেমের চেষ্টা যে করি নাই তা-না, তবে সেটা ওই চেষ্টা পর্যন্তই। যা হোক, জীবনে প্রথমবার কোনো মেয়ের কাছে পাত্তা পেয়ে ভালোই লাগলো। বলে রাখি, ওর সাথে আমার পরিচয়ও একটা বইয়ের গ্রুপেই। দুজনেরই একটা কমন ইন্টারেস্ট থাকায় আলাপ জমে উঠতে সময় লাগলো না। ধীরে ধীরে আমরা 'তুমি' তে নেমে এলাম। একে অন্যের খোঁজ খবর নিতাম নিয়মিত। এভাবে প্রায় মাস ছয়েক চলার পর আমরা দুজনেই বুঝতে পারলাম আমরা প্রেমে পরেছি! আহা! একটা মেয়েকে নিজের করে পাওয়ার সে প্রথম অনূভুতি!! সে তার অতীত বলেছিল আমাকে, আমি মেনে নিয়ে ছিলাম। সে বলেছিলো, "আমার যেকোনো মুহূর্তে বিয়ে হয়ে যেতে পারে!" আমি তারপরও তাকে চেয়েছিলাম। মাথার উপর ঝুলতে থাকা খড়গের মতো একটা কঠিন বাস্তবতা থাকা সত্যেও আমরা দিনের পর দিন, রাতের পর রাত একজন আরেকজনকে সঙ্গ দিয়েছিলাম। স্বপ্ন বুনেছিলাম। ও আমাকে সরাসরি কখনো বলতো না, বাট বুঝতাম ও চাইতো আমি কিছু একটা করি। মানে চাকরী বাকরী আর কি! কিন্তু ওই যে আমি আর জীবন নিয়ে আমার উদাসীনতা! আমি কখনো মুদ্রার অন্য পিঠটার কথা ভাবি নি।

দেখতে দেখতে শীত চলে এলো। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তার মেসেজ না পেয়ে অবাকই হয়েছিলাম! ফোনেও পাচ্ছিলাম না। উল্লেখ্য, আমি নিম্নমাধ্যমিকের পর থেকে ক্রনিক এংজাইটিতে ভূগেছিলাম চার বছর! তারপর ধীরে ধীরে সেটা কমে গিয়েছিল। অনেক দিনপর সেই শীতের সকালে আমার ভয়াবহ রকমের প্যানিক এটাক হলো! উফ্ কি অসহ্য মানষিক যন্ত্রণা! মানুষ এত সহজেই এত অসহায় হয়ে পরে কিভাবে,সেদিন বুঝেছিলাম।

তারপর, যেনো অনন্তকাল পরে সে আমাকে রিপ্লে দিলো! তাকে দেখতে ছেলে পক্ষ এসেছিল! সেবার বিয়েটা হয় নি ওর। হয়তো হলেই ভালো হত। যাইহোক, আস্তে আস্তে ধাক্কা কাটিয়ে আমরা আবার আগের রুটিনে বাঁধা জীবনে ফিরে গেলাম। সারাদিন চ্যাটিং, রাতে কথা হতো। ইতিমধ্যে ওর বাবা মারা গেলেন। মা আগে থেকেই ছিলো না। মেয়েটা বেঁচে থাকতে লাগলো ওর বড় ভাইয়ের কাছে। ও ওর কথা আমাকে কম বলতো, তারপরও বুঝতাম ভাইয়ের সংসারে সে এখন গলগ্রহ। এর মাঝে করোনার প্রকোপ কমে এলো, আমি ঢাকায় এলাম। ওর সাথে দেখা করতে চাইলাম, রাজী হলো না! এর মাঝে আরো দুয়েকবার ওর বিয়ের সমন্ধ এলো। কোনো দৈব বলে সেগুলোও বেশীদূর এগোলো না। এদিকে আমি এখনো স্বপ্নেই আছি। ওকে ভালোবাসতাম আমি কিন্তু ওকে পেতে হলে যে এফোর্ট দিতে হতো আমি কখনোই তা দেই নি।
এরপর.... এরপর এলো আমার জীবনের সবথেকে বাজে দিনটা! গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই লোয়ার ব্যাকে পেইন হচ্ছিল।ডায়াগনোসিস করালাম। এমআরআই রিপোর্ট দেখে ডাক্তার টিবি সন্দেহ করলেন। তখন রাত আটটার মতো বাজে। ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে মেসে ফিরে আসতে আসতে দশটা বেজে গেলো। সারাদিন সেইভাবে ওর সাথে কথা হয় নি,,,,ফোন বের করে দেখি অনেকগুলো অভিমানী টেক্সট। ওকে জিগ্যেস করলাম.... বলতে চাইলো না।আর একটু জোড়াজুড়ি করতে ও যা বললো তার সারমর্ম হলো, সন্ধার দিকে ওকে দেখে গেছে এক ছেলেপক্ষ! এবং পছন্দও করেছে। মনের কোথায় যেনো একটা ঘন্টা বাজলো, এবার আর শেষ রক্ষা হবে না! ও বলেছিলো ও বিয়েতে রাজী না কারন ছেলেটা ওর থেকে বয়সে ছোটো। কিন্তু সেটা পুরো ব্যাপারটাকে ঠেকিয়ে রাখতে যথেষ্ট ছিলো না।। এবার সত্যিই হারিয়ে ফেললাম তাকে।

একদিকে শারিরীকভাবে মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকা আমি এবার মানসিকভাবে জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেলাম।

এই পোষ্টটা যখন লিখছি তখন আমার বেঁচে থাকার ইচ্ছেটা ম্রিয়মাণ। আমি জানি না এখন কি করবো! হুট করেই এভাবে বুকটা ফাঁকা হয়ে যাবে কে জানতো! এভাবে কতক্ষণ সার্ভাইভ করা সম্ভব তাও বুঝছি না।

নিজের কাছে আর কখনো মাথা তুলে দাঁড়াবার অধিকার হারিয়েছি আমি, হারিয়েছি অন্য কাউকে ভালোবাসার অধিকার! এক আকাশ সমান পরিত্যাক্ত অনূভুতি বুকে নিয়ে এখন আমি কোথায় যাব?

পোষ্টে অনেক বিষয় উহ্য থাকতে পারে,,, হয়তো আমি বুঝাতেই পারি নি সে ঠিক আমার কতটা জুড়ে ছিলো,,হয়তো আমি এখনও সেটা জানি না। তবে পরিস্কার করে কিছু বলা বা লেখার মত অবস্থা এখন আর নেই! নিজেকে হাল্কা করার জন্য পোষ্ট করা,নাথিং এলস




মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.