নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এসো শান্তির পথে একত্রিত হই

আমি সবার, সবকিছুর জন্য লিখি

প্রফেসর ফারহান

I don't want to be rich by money, I want to be rich by mind only

প্রফেসর ফারহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

এটা কি ভালোবাসা?

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৯:৪৮

যাঁতাকলে পিষ্ট নিম্নবিত্ত শ্রেণীর এক সত্তর পেরোনো বৃদ্ধ।সকালে ফজরের নামাজের পর বের হন তিন চাকার যান নিয়ে, সাথে নিজের থবথবে চামড়া ও সামনে ঝোঁকানো ঘাড়ের গিয়েছেপ্রায় জান তো আছেই যা সবসময় নিঃশ্বাস ফেলে কখন মৃত্যু আসবে। ঘরে ষাট এর বুড়ি, ২ জন যুবতী মেয়ে (১৫, ১৮) তো আছেই, ছেলে পরিবারকে রেখে চলে গেছে ২ বছর আগেই।ভোর হল, কিচিরমিচির ডাক।খ্যাপ পেতে ৬.৩০ পর্যন্ত স্টেশন এ অপেক্ষা, তাও আবার কথা আছে,মুরুব্বির কলকব্জা রিক্সায় কোন জন উঠবে ব্যাটারিচালিত যান ছেড়ে।ট্রেন থেমেছে, যাত্রী বের হচ্ছে স্টেশন থেকে। মৃদু কণ্ঠস্বরে মুরুব্বির ডাক, ''বাবা কই যাবেন? যেখানে যাইবেন লইয়া যামু।'' ''আমার পঙ্খিরাজে আইয়েন'', নাহ, এভাবে করে আর যাত্রী পাওয়া হয়না, সবাই ক্লান্ত, তাড়াতাড়ি বাসায় যাবার জন্য তাই জোয়ানের যানে চলে যাবে। এভাবে খ্যাপ মিস করলে দিনে তার আয় কত আসে জানেন? ২০০-৩০০ টাকা। চোখের গরল অশ্রু ঝরে পড়ে, মেয়ে ২ টা এখনো পাত্রস্থ করতে পারেননি। আপনি পারবেন কিছু করতে? বাকিটুকু শুনেন। দিনশেষে ২০০ টাকা দিয়ে কি হয়, চাল নাকি চুলো? মেয়েদের চুলের ফিতা, জামাকাপড় আর ঘরের বউটারে? নাহ তারে না দিয়ে কি থাকা যায়? দুইটা চুলের ক্লিপ/চুল বাঁধার ব্যান্ড। নিজের লুঙ্গি আর স্যান্ডেলটা যে কত তালি মারা তার কোন হদিস আছে? বাকিটা দিয়ে সারাদিন অনাহারে থাকা বউ মেয়েদের নিয়ে পান্তা ভাত আর ডিম/ডালে চালিয়ে দেয়।রাতে শোবার আগে বৃদ্ধের আবার সেই গরল অশ্রু আর মনিবের কাছে দোয়া।ছেলে নেশা করত, তার ওপর লুকিয়ে আরেক নেশাখোরকে বিয়ে।২ বছর আগে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।সকাল থেকে স্কুল খ্যাপ, অফিস খ্যাপ, প্রেমিক-প্রেমিকার খ্যাপ, তরুণের খ্যাপ, স্টেশন যাত্রী, অত্যাধুনিক ও উঠতিপড়া ছেলে মেয়ে এরকম যাত্রী প্রত্যহ তিনি বহন করেন তার মুড়ির টিনে(জন কথিত) আর ভাগ্য যেদিন ভাল থাকে সেদিন হয়ত ২-১ জন দয়ালু লোকের কাছ থেকে বাড়তি কিছু টাকা আর মহানুভবতার ছোঁওয়া পান। তারপরও কি আবেগে হাত পেতে দেন বাড়তি কিছু নেওার জন্য? নাহ, সততার চূড়া থেকে নামেন না, বরং যা আছে পকেটে তাতেই সন্তুষ্ট। কিন্তু সেই সন্তুষ্টটা ম্লান হয়ে যায় যখন তাকে শুনতে হয় ''ঐ শালার পুত শালা, জোরে টানস না কেন?'' ''সকালে রিক্সায় তেল দিয়ে বের হস নাই, চলেনা কেন?'' ''এত আস্তে হলে তো মেয়ের স্কুলের দেরি হয়ে যাবে, উফফ বিরক্তিকর'',''ঐ নামতো এই রিক্সা থেকে, চালাইতে পারেনা, হুদাই সময় নষ্ট'' , শুধু কি এগুলাই? অর্ধপথ পর্যন্ত গিয়ে কথা শুনিয়ে ভাড়া না দিয়ে চলে যাওয়া, গালিগালাজ, চড়-থাপ্পর তো ফ্রি, সেগুলা উহ্য রাখলাম।বৃদ্ধের চোখের বান বুঝি আমার অন্তরকে ভাসিয়ে দিল, আবেগে কেঁদে ফেললাম।আর কতদিন বাঁচবেন এই বৃদ্ধ?কালো চামড়ার তুলতুলে শরীর নিয়ে আর কতদিন?এখনো তো সংসারের ঘানি টেনে যাচ্ছেন।ইচ্ছে করেনা এই বয়স্ককে কোন আশ্রমে ঠাই দেই অথবা ২ বেলা ২ মুঠো পেট ভরে খাওয়াই? কিন্তু না, বৃদ্ধের কাছে জীবনের সময় আর ছনপাতার ঘরটাই পরম আশ্রয়।শেষের দৃশ্যটা অন্যরকমঃ তার অশ্রু মোছার জন্য যখন পকেট থেকে টিস্যু বের করি, সে তখন তার বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে আগে আমার অশ্রুসিক্ত নয়নদ্বয়কে মুছে দেয় আর আমি দেই টিস্যু।বৃদ্ধ মুচকি হাসি দেয় আর আমি হাঁটা ধরি অন্য কোন এডভেঞ্চার এর খোঁজে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.