![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I don't want to be rich by money, I want to be rich by mind only
১।
Cats Eye তে গেলাম শার্ট প্যানট কিনতে। একটা ব্লু চেক কালারের শার্ট পছন্দ হল। ট্রায়াল রুম থেকে পরে বের হলাম বন্ধুকে দেখানোর জন্য প্লাস আয়নায়ও একটু দেখে নিব আত্মতৃপ্তির জন্য। অমনি করে আসমানি বেশ ভূষায় কাজলকালো এক মেয়ে আমার দিকে তেড়ে আসল। "ভাইয়া শার্টটা তো আপনাকে ভাল মানিয়েছে", আমার বন্ধু আমার দিকে আসতে গিয়ে এই কথা শুনে একটু আড়ালে চলে গেল। ফাজিল বন্ধু সাথে থাকলে যা হয় আর কি! "শার্টটা কিন্তু আমারও পছন্দ হয়েছে ভাইয়া" হটাত একটু ভড়কে গেলাম। অপরিচিত, তার মধ্যে আবার গরজিয়াস লুক, হাসিহাসি চেহারা, ধপাস করে আমার পছন্দের জিনিস পছন্দ করে ফেলল। ঐ ডিজাইনের শার্টও ছিল এক পিস। তাই মেয়েটার কথাকে একটু ইগ্নর করে দোকানদারকে বললাম প্যাক করে দিতে। "স্যার প্যাক এবং বিল সব কমপ্লিট"
"মানে?"
"আমি বিল পে করেছি, আচ্ছা আপনি ফেসবুকে পোস্ট দেবার জন্য এত প্রেম কই পান, এত বুদ্ধি কই পান?"
"আপনার কথা কিছু বুঝলাম না"
"এই যে দুপুরে একটা পোস্ট দিলেন- তুমি আমার ঐশ্বরিয়া তুমিই বিস্ফোরণ, তুমি আমার প্রেমাধার তুমিই আবরণ"
"আপনি কি আমার সব পোস্ট পড়েন?"
"হুম, আমি আপনার লিস্টে না থাকলেও আপনার পোস্টগুলো ফলো করি এবং পড়ি। খুব ভাল লাগে যখন পড়ি কিন্তু লাইক দেই না, কমেন্ট করি না, শেয়ারও করি না। সেভ করে রাখি কম্পিউটারে"
আশ্চর্য না হয়ে পারলাম না, শুরু থেকেই আশ্চর্যের মধ্যে। ফাজিলটা যে কই লুকাল। নিশ্চয়ই মজা নিচ্ছে আড়াল থেকে।
ভাবতে ভাবতে মেয়েটি "ভাইয়া আমি কি আপনার ফ্রেন্ড হতে পারি?"
পিছন থেকে "তোর শার্ট পছন্দ হয়েছে দোস্ত?"
"হ্যাঁ"
মেয়েটি বলল, "ধন্যবাদ, রাতে মেসেজে নক দিব"
"মানে?"
"সবকিছুর মানে সাথে সাথেই বুঝতে হয় না, লেখার সময় তো ভাব ঠিকই রাখতে পারেন, আর সরাসরি ভড়কে যান!"
এই বলে মেয়েটি চলে গেল আর ফাজিল বন্ধু আমারে বলে "কিরে টুইস্ট কেমন ছিল?”
২।
ইফতারের পর অবসন্ন দেহে ফেসবুক ব্রাউজ করি। রাত ৮টা- ৯ টা- ১০ টা- ১১ টা -১২ টা পার হয়ে যায়, সেহরির সময়ও হয়ে যায় কিন্তু মেয়ের মেসেজ পাওয়া যায় না। মেয়ের নামটাও জানা হল না, প্রোফাইল নেইম তো দূরে থাক। সেহরির টাইমও শেষ, ইনবক্স চেক করি বার বার। নতুন কারো মেসেজ নেই। ধ্যাত তেরি!!! এত সহজে আসলে কারো কাছে বলির পাঠা হতে হয় না। আর মেয়েদের মন, পাল্টায় যখন তখন, আবহাওয়ার চেয়েও অনেক দ্রুত। এই ভেবে ঘুমাতে গেলাম। এক লম্বা ঘুমে সকাল ১১ টা। অনেকদিন পরে শুক্রবার সকালটায় একটু আয়েশ করে ঘুমাতে পারলাম। ফেসবুকে লগ ইন করে ইনবক্সে যাই। একটা অপরিচিত আইডি থেকে নতুন মেসেজ “হ্যালো ভদ্রলোক মহাশয়, ফোন ধরেন না কেন?” আইডি চেক করে পোস্ট আপডেট, ছবি সব ভালভাবে চেক করি। সেই মেয়েটি যার সাথে cats eye তে দেখা হয়েছিল।মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি একটা বাংলালিংক নাম্বার থেকে ২ টা মিসড কল সকাল ৮ টায়। এত সকালে! মেয়েটাকে মেসেজে রিপ্লাই দেই যে এত সকালে কল দিয়েছেন কেন? মেয়েটা বলে, “আপনে এত এক্সট্রভারট কেন? সবকিছু পুষ্ট দিয়া জানাইতে হবে?” আমিও পাল্টা প্রশ্ন করলাম, “আপনি আমার কে? আর কেনইবা গতকাল আমার শার্টের বিল দিলেন?”
“আপনি কি আমার ইন্টার্ভিউ নিচ্ছেন?”
“না, মানে আপনি আমার লেখালেখি পছন্দ করেন ভাল কথা কিন্তু আমি যে গতকাল ঐ দোকানেই ঐ সময়েই থাকব সেটা জানতেন আগে থেকে!”
“জানতাম না, তবে মনে মনে চাইতাম আপনার সাথে আমার একদিন দেখা হোক, সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করতাম যেন তিনি আপনার সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে দেন”
“আপনি গতকাল বললেন ভাইয়া, এখন বলছেন আপনি আপনি... উদ্দেশ্য কি?”
“বসুন্ধরা সিটির ৮ নং লেভেল এর ফুড কোর্ট এ ৬.৩০ এর মধ্যে চলে আসবেন, একসাথে ইফতার করতে করতে সব বলব”
জীবনে কোনদিন এই শপিং মলে যাই নি একমাত্র ফুফাতো ভাইয়ের ভয়ে, বাসায় এসে শুধু বলে যে, বান্ধবী নিয়ে ঘুরতে গেলে দেখা আমার সাথে হবেই। আর আমার বন্ধুবান্ধব, পরিচিত কারো সাথে তো হটাত দেখা হয়ে যেতে পারে এই ভয়ে। মনে আশংকা যে এই মেয়ে কেন আমার প্রতি! সাপলুডু খেলছে না তো! চিন্তিত আমি আর বন্ধুদের হরেক রকম কথা মাথায় আসছে। এই যেমন মেয়েদের সহজে বিশ্বাস করবি না, মেয়ের মন লতার মতন, প্রেম করবি তো ছ্যাকা খাবি, কারো কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিবি না। ভাবতে ভাবতে ৫ মিনিট আর মেয়ের মেসেজ “কি হল! কিছু বলছেন না যে! আমি পার্লারে যাব। আপনার জন্য আমি অপেক্ষায় থাকব কিন্তু! সাথে আমার একজন বান্ধবীও থাকবে। সময়মত চলে আসবেন কিন্তু!”
ব্যাপারটা পুরো হালিমের মত লাগছে। ডাল, মাংস, মশলা, চুলা, আগুন, পানি, লেবু, পেঁয়াজ ভাজা, আদা সব মিক্সার! ধুর, রিপ্লাই দিব না মেয়েকে, ভাব ধরে বসে থাকব, দেখি কি হয়! কিছুক্ষণ নিজের পোস্ট আর গ্রুপে মাতামাতি করে নামাজের জন্য প্রস্তুত হলাম। মোবাইলে সময় চেক করতে গিয়ে দেখি একটা মেসেজ “Dear Farhan vaiya, I will be glad if you cordially accept my invitation for Iftar today and give me some of your valuable times. Will wait at ground level for you “
কোন রিপ্লাই দেইনি, আগে বিকাল হোক। রোগী দেখে বাসায় আসি, তারপর ভাবব।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়, রোগী দেখে বাসায় আসি। ঈদে ঢাকার রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা হচ্ছে, দমকা হাওয়ায় শ্বাস নিতে পারছি কিছুটা। মোবাইলের ইনবক্স চেক করি, ফেসবুকের ইনবক্সও। ফেসবুকে বিকেল ৫.৩০ এ মেয়ের মেসেজ “অপেক্ষায় থাকব...”
এত আগ্রহ মেয়েটার! মতলবটা কি! গতকাল তো বলেছিল যে আমার সব পোস্ট পড়ে ফেসবুকে। এই ভার্চুয়াল জগতের কোন বিশ্বাস নাই। বিশ্বাস না করেও উপায় কি!ফলপ্রসূ ইভেন্ট, আলোচনা, সমালোচনা সব আবার এখানেই হয়। মেয়েটা যেহেতু এতবার বলেছে একবার দেখা করেই আসি। গতকাল হয়ত আমার ফাজিল বন্ধু থাকাতে ভালভাবে কথা বলতে পারেনি। যা হবার হবে। চলে গেলাম পান্থপথের বসুন্ধরা সিটিতে। গ্রাউনড ফ্লোর তো বিশাল বড়, বাইরে থাকব নাকি ভিতরে! যখন পৌঁছি তখন ৬.২২, ৮ মিনিট অপেক্ষা করি। ঠিক ৬.৩০ এ কল আসে মেয়ের নাম্বার থেকে “ফুড কোর্টে চলে আসেন, আমি আর আমার বান্ধবী এক সাইডে বসে আছি”
আমার সম্মতিসূচক উত্তর “অকে আসছি”
উপরে গিয়ে দেখলাম পিংক কালারের একটা সুন্দর থ্রি পিস পরে মেয়েটা তার বান্ধবীর সাথে এক সাইডে বসে আছে ইফতার নিয়ে।মাথায় সুন্দর করে ওড়না দেয়াতে ইরানী মেয়েদের মত লাগছে। আমার জন্যও একটা সিট আছে দেখি সেখানে। তারপর কিছুক্ষণ কথা, পরিচয়, জানা শুনা, পড়াশুনা। রহস্যের ফাঁদ বুঝতে সরাসরি একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম “এত কিছু কেন করছেন?”
একটু নীরবতা, তারপর “গতকাল স্বল্প সময়ের জন্য দেখা হবার পরও আপনি এত দূর পর্যন্ত যে কারণে এসেছেন” বলে মুচকি হাসি দিল মেয়েটি। উত্তরটা পছন্দ হল না, মেয়েরা সরাসরি অনেক কিছু বলতে চায় না। ঐ যে কথায় আছে না বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না। তৎক্ষণাৎ তার বান্ধবী বলল, “ভাইয়া ইফতারের পর ৭.৩০ এ কিন্তু মুভি শো ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে আছে, আমরা দুজন দেখব। আপনিও কিন্তু আমাদের সাথে দেখবেন”
আহ্লাদের গুগলিটা ডিফেন্স করতে পারলাম না, রাজি হয়ে গেলাম। মুভি দেখাটা বেশ উপভোগ্য ছিল, রাত ৯.১৫ তে বের হলাম হল থেকে। মেয়েটার বাসা কোথায়, একবারও তো জিজ্ঞেস করলাম না।
“তোমরা যাবে কোথায়?”
“ধানমণ্ডি শংকর”
রিক্সায় তুলে দিলাম দুজনকে। মেয়েটি শেষে বলল, “আজকের ঘটনাও কি পুষ্ট দিয়ে সবাইকে জানাবেন?”
“ইয়ে না মানে ”
“পোস্ট দিয়েন, সমস্যা নেই। নাম আর ছবিগুলো দিয়েন না, কিছু সাস্পেন্স না হয় মুহূর্তই বলে দিবে, ভাল থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ” শেষমেশ তার মুচকি হাসি যেটা রহস্যময় এবং এই মুহূর্ত পর্যন্ত উজ্জ্বল।
৩।
প্রায় ২৪ ঘণ্টা হয়ে যাচ্ছে, ইনবক্সে ওকে মেসেজ দিলাম সকালে। দুপুরে কল দিলাম, মোবাইল বন্ধ। মেসেজ এখন পর্যন্ত seen করে নাই। ফেসবুকে তার প্রোফাইলে আপডেট কোন পোস্ট নাই। মেয়েটার বান্ধবীর নামে কোন আইডি পাই নাই। তার কোন খোঁজ নাই। হতাশ! হতাশ! চরম অপেক্ষার প্রহর যাচ্ছে। চারিদিকে কি যেন নাই নাই মনে হচ্ছে। জীবনে অনেক কিছু পাই নাই, অনেক কিছু হারিয়েছি, তারপরেও এরকম অনুভূতি আসে নাই। গুলশানের জঙ্গি হামলায় সে ওপারে চলে গেল না তো! কিন্তু তাকে তো শংকরের রিক্সায় উঠিয়ে দিয়েছিলাম। আচ্ছা ওদিকে গত রাতে কিংবা আজ সারাদিন কোন দুর্ঘটনা ঘটে নি তো! মেয়েটার বাসাও তো চিনি না, তার বান্ধবীকেও পাচ্ছি না। তাহার খোঁজ পাব কোথায়?
হে মোর প্রিয়া
যদি বেঁচে থাক তবে কাছে আসো,
হৃদয় নিংড়ে ভালোবাসো।
অপেক্ষায় আছি......
৪।
অপরিচিত নাম্বার থেকে কল
-“হ্যালো”
-“হ্যালো কে বলছেন?”
-“কে আবার? যার জন্য অপেক্ষায় আছেন”
-“আপনি এমন কেন বলেনতো? সেদিন যে বাসায় গেলেন কিছু জানালেন না”
-“তুমি করে বলতে পারেন এখন, আপনি আমার সিনিয়র সুতরাং আপনি আগে জানবেন যে আমি পৌঁছেছি কিনা? যাবার সময় তো আমাকে বলতেও পারতেন যে আমি যেন বাসায় গিয়ে আপনাকে কল দেই”
-“ইয়ে মানে, থাক সেসব কথা। কেমন আছো? ফোন বন্ধ ছিল কেন?”
-“আমার সিমে ৩জন রেজিস্ট্রেশন করেছে, গ্রামীণ এর অফিসে গিয়ে অভিযোগ করলাম, ডিবি আঙ্কেলকে নিয়ে গেলাম। ঐ সিম বন্ধ এখন, ঠিক হতে সময় লাগবে”
-“ডিবি আঙ্কেলটা কে?”
-“আমার আপন মেঝো চাচা”
-“ও আচ্ছা, তো ফেসবুকেও তো জানাতে পারতে ব্যাপারটা”
-“গত কদিন ফেসবুকে যা হয়েছে তারপর আর ফেসবুকে আসতে ইচ্ছে করেনি”
-“তা ঈদের দিনের প্ল্যান কি?”
-“আম্মুকে রান্নাঘরে হেল্প করা, বাসায় মেহমানদের আপ্যায়ন করা, টিভি দেখা, ঘুমানো”
-“ঘুরাঘুরির কোন প্ল্যান?”
-“আপাতত নেই, ফ্রেন্ডরা কেও ফোন দিলে বিকেলের দিকে বের হতে পারি”
-“বিকেলে রাইফেলস স্কয়ার এ আসো, আমি আসব বিকেলে ৫ টায়”
-“আমি সন্ধ্যার পর থাকব না, সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরব”
-“ওকে, রিকশায় পৌঁছে দিব”
-“রিকশা কিনেছেন কবে?”
-“কিনি নাই, প্রয়োজনে ভাড়া করে ঠিক করে রাখব”
-“ওরে বাবা, নগরের বাকের ভাই দেখি”
_ “বাকের ভাইয়ের চেয়েও বেশি কিছু”
-“তাই? কাল দেখবনি”
_ “আচ্ছা”
-“ ঠিক আছে, রাখি তাহলে, ঈদ মোবারক, ভাল থাকবেন, হিপ হপ মুডে থাকবেন”
-“ ওকে, ঈদ মোবারক তোমাকেও, ভাল থেকো”
টুট টুট। ফোনটি রেখে দিল আর আমি তো খাটের উপর হিপ হিপ হুররে ড্যান্স দেই, কে আটকায় আমারে। লুঙ্গীর কাছা তুলে ড্যান্স! ভিতর থেকে আম্মা “কিরে তোর কি হইছে? রোজার দিন কি করস? আমার সংসার জীবনের প্রথম খাট তো ভেঙ্গে যাবে রে!”
“আম্মা আমি আনন্দে নাচি, তুমি তোমার কাজ কর। কাল ঈদের দিন বলব ঘটনা”
জানি না কাল কি হবে? পিলিং চরম উত্তেজনায়......
১০ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ৯:৫৭
প্রফেসর ফারহান বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:২৮
বিজন রয় বলেছেন: সাংঘাতিক!!!!