![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I don't want to be rich by money, I want to be rich by mind only
মেরুদণ্ড বা মেরুরজ্জুতে আঘাতকে জীবনের একটি বিপর্যয়মূলক ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় যার ফলে একজন মানুষের জীবনের গতিবিধি পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং মানুষটি মারাত্মকভাবে অনুভূতি, শারীরিক মুভমেনট এবং অন্যান্য স্নায়ুজনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন। যারা টেটরাপ্লেজিয়া (৪ হাত-পা আক্রান্ত) এবং প্যারাপ্লেজিয়া (দুই পা আক্রান্ত) তে আক্রান্ত তাদের শারীরিক সক্ষমতা কমে যায় এবং সারা জীবন ব্যথা, অসাড়তা, বিষণ্ণতা এবং দুশ্চিন্তায় ভুগেন যা তাদের স্বাস্থ্য এবং পরিপূর্ণ জীবনকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে।
অকুপেশনাল থেরাপিসটগণ মেরুদণ্ড বা মেরুরজ্জুতে আঘাতপ্রাপ্ত রোগীকে উৎপাদনমুখী এবং উদ্দেশ্যমূলক জীবনের দিকে ফিরিয়ে নিতে সক্ষম করেন। অকুপেশনাল থেরাপিসটগণ বিশ্বাস করেন প্রত্যেক মানুষের জীবনে অর্থবহ কাজসমূহে অংশগ্রহণের ব্যাপারে ইচ্ছে এবং অধিকার আছে। অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসকদের এই ব্যাপারে যথেষ্ট জ্ঞ্যান এবং দক্ষতা আছে যা একজন রোগীর কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রভাবিত করতে সমন্বিতভাবে লক্ষ্য নির্ধারণ-অর্জন করতে সহায়তা করে। মূলত অকুপেশনাল থেরাপিসটগণ রোগীর দৈনিক প্রতিটি কাজের ধাপে ধাপে বিশ্লেষণ এবং সেই কাজসমূহে রোগীকে খাপ খাওয়ানোর ব্যাপারে দক্ষতা আছে। এই বিষয়টি রোগীর দক্ষতা বিনির্মাণে ও লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করে। স্বাস্থ্যসেবা দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে অকুপেশনাল থেরাপিসটগণ স্পাইনাল কর্ড ইঞ্জুরিতে আক্রান্ত রোগীকে বাড়ি ও সমাজে ফিরিয়ে নিতে এবং অর্থবহ কাজে সফলভাবে নিয়োজিত করতে সাহায্য করেন।
অর্থবহ কাজসমূহে অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে অকুপেশনাল থেরাপির ভূমিকাঃ
• রোগীর জন্য অর্থবহ এবং অনবদ্য হয় এমন প্রতিটি অর্থবহ কাজ নিয়ে গবেষণা করা এবং সেই কাজের সাথে চাহিদা মোতাবেক পরিবেশ নির্ধারণ ও রুপান্তর করা
• মেরুদণ্ডে আঘাতপ্রাপ্ত রোগীকে তার নিত্য নৈমিত্তিক কাজ যেমন খাওয়া দাওয়া এবং জামা কাপড় পরিধান সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া, প্রয়োজন অনুযায়ী এই দুটি কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট উপযোগী সহায়ক সামগ্রী( grab bars, reachers) প্রদান।
• হাতের সামর্থ্যকে গতিশীল রাখা এবং ডিফরমিটি প্রতিরোধ করা (যেমন- কি বোর্ড ব্যবহারের জন্যে অর্থোসিস প্রস্তুত করা, দুর্বল মাংশপেশিকে সহায়তা দেবার জন্যে গতিশীল আর্ম সাপোর্ট ফিট করা)
• সমাজে বিভিন্ন স্থানে সামাজিক যোগাযোগ, চলাফেরা করা এবং বিভিন্ন কাজকে গতিশীল করার জন্যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হুইলচেয়ার এর নকশা সুপারিশ ও নির্ধারণ।
• নিম্ন-উচ্চ মানের সহায়ক প্রযুক্তি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান (হাতের সীমাবদ্ধতায় হুইলচেয়ারে ব্যবহার উপযোগী স্মার্টফোন সেট করে দেয়া)
• বাড়ি এবং সমাজে শারীরিক ও পরিবেশগত বাঁধা দূর করে পরিবর্তন কিংবা রূপান্তর এনে জীবনযাপনের উপযোগী করা (গোসল এবং টয়লেট সম্পাদনের জন্যে বিশেষ সামগ্রী)
• রোগীর জন্য উপযুক্ত অবসরমূলক কাজসমুহ চিহ্নিত করা এবং বিকাশ ঘটান (যেমন- স্থানীয় এলাকায় সেন্টারে ফটোগ্রাফি কোর্সে অংশগ্রহণ করানো, হুইলচেয়ার বাস্কেটবল টিমে যুক্ত করা)
• অর্জনক্ষম কাজসমূহে অথবা সম্ভাব্য উপযুক্ত কাজে রোগীকে নিয়োজিত করার ব্যাপারে সহায়তা করা। সেই সাথে রোগী এবং রোগীর সহকর্মীদের জন্যে একটি নিরাপদ ও প্রবেশগম্য কর্মস্থল নিশ্চিত করা।
• রোগীর অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা বাড়ানোর জন্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর সাথে যোগাযোগ করে শিক্ষার পরিবেশ রুপান্তর করা (যেমন- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, শিক্ষা কার্যক্রমে রোগীর অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা, ফ্যাকাল্টি এবং অন্য ছাত্রছাত্রীদের এই বিষয়ে অবহিতকরণ)
• স্পাইনাল কর্ড ইঞ্জুরিতে আক্রান্ত রোগীর মানসিক স্বাস্থ্য, মনসামাজিক বিষয়াদি ও অন্যান্য সমস্যা দূরীকরণে গ্রুপ থেরাপি ও সহায়ক কাউন্সেলিং প্রদান
• ব্যথা নিরাময় এবং শক্তি সঞ্চয়ের কৌশলসমূহ শিখিয়ে দেয়া
• রোগীকে বিভিন্ন বিষয়ে উপস্থাপনা, নিজের ব্যাপারে একনিষ্ঠভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বিনির্মাণ, প্রতিবন্ধীদের নেতৃত্ব দেয়ার ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন অকুপেশনাল থেরাপিসট
• সুস্বাস্থ্য, সুন্দর আচরণ ত্বরান্বিত করা এবং বিভিন্ন ধরনের জটিলতা প্রতিরোধে আত্ম ব্যবস্থাপনা বিষয়ক দক্ষতা প্রশিক্ষণ।
মেরুদণ্ডে আঘাতজনিত প্যারালাইসিস জীবনের কোন অভিশাপ নয়। বরং একটি সুন্দর রুটিন এবং জীবনব্যাপী অর্থবহ কাজসমূহে অংশগ্রহণই এ ধরনের রোগীকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসকগণ এই ব্যপারে একজন ব্যক্তির জীবনকে পরিপূর্ণ করতে সর্বাধিক চেষ্টা করেন, স্বপ্ন দেখান জীবনে কোন কিছুই অসম্ভব নয় বরং সম্ভব।
লেখকঃ
শম ফারহান বিন হোসেন
ক্লিনিক্যাল অকুপেশনাল থেরাপিসট,
সিআরপি-মিরপুর, ঢাকা।
মোবাইলঃ ০১৬৮৫৬৫৬১৯৯
©somewhere in net ltd.