![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I don't want to be rich by money, I want to be rich by mind only
চেতনাগত বা বোধগত সমস্যা (Cognitive impairment) সাধারণত দীর্ঘ সময় ধরে অসুখ যেমন ব্রেইন টিউমার অথবা মাথায় হটাত আঘাত পাওয়ার ফলে তৈরি হয়। কিছু ক্ষেত্রে রোগী শারীরিক সক্ষমতা ফিরে পাবার পরও অদৃশ্য এই চেতনাগত সমস্যাগুলি উপলব্ধি করা যায়। রোগীর ব্রেইনে কোন প্রয়োজনীয় তথ্য প্রক্রিয়া, পরিকল্পিত কাজ গুছানো, মনোযোগ এ সমস্যা দেখা যায়। যার ফলে রোগীর স্বাভাবিক দৈনিক কাজ এ অংশগ্রহণ, সামাজিক ভূমিকা বা কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাবার ক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকা প্রভাব পরে। এক্ষেত্রে অকুপেশনাল থেরাপিসটগণ গবেষণাভিত্তিক চিকিৎসা প্রদান করেন ফলে রোগীর কর্মদক্ষতা এবং কাজে অংশগ্রহণ অর্থবহভাবে বৃদ্ধি পায়।
যারা বোধগত সমস্যায় ভুগেন তাদের প্রতিনিয়ত সমাজে এবং প্রাত্যহিক রুটিনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। যদিও তারা আগের ন্যায় সুন্দরভাবে কাজ সম্পাদনের প্রত্যাশা করে তারপরেও সামগ্রিকভাবে কাজ সম্পাদনে দেরি হয় এবং গুছানো হয়না। এধরনের সমস্যাগ্রস্ত মানুষকে প্রায় সময়ই সমস্যা শুরুর দিকে ডাক্তার বা সহকর্মীগণ স্বাভাবিক ও সুস্থ হিসেবে দেখেন। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে যখন কর্মচাহিদা বা প্রত্যাশা বৃদ্ধি পায়, তাদের গুছানো রুটিনে তখন পরিবর্তন আসে এবং সংগ্রাম শুরু হয়। স্বাভাবিকভাবেই তখন ধীরে ধীরে অদৃশ্য সমস্যাগুলি প্রকাশ পায়। সমস্যাগুলি দৃষ্টিগোচর হয় বলে অনেকেই চিহ্নিত করতে পারেন না। ফলে সমস্যাগ্রস্ত মানুষকে কর্মক্ষেত্রে ভালভাবে নিয়োজিত করার ব্যাপারটি কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। গবেষণায় বলা হয়, কর্ম পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় কর্মীর ইঞ্জুরি সম্পর্কিত সমস্যা, সামাজিকভাবে যথার্থ আচরণ, ক্যারিয়ারের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য, কর্ম পরিবেশের ধরণ ও বৈশিষ্ট্য (ক্ষতিপূরণসমূহ, আগের চাকুরীতে উপযোগী পরিবর্তন) বিষয়গুলি বিবেচনা করলে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে পুনরায় কাজে ফিরিয়ে আনা সম্ভব এবং এতে কর্মীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়।
বোধগত সমস্যা কাজ সম্পাদনে যেসব প্রভাব ফেলে-
• কর্মস্থলে কর্মী বা শ্রমিকের ভূমিকা পালন করতে সমস্যা যেমন সুপারভাইজর এবং সহকর্মীর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে অসুবিধা, সামাজিক অবক্ষয়ের দিকে ছুটে যাওয়া, পিছু হটা এবং কাজকে মূল্যায়ন না করা।
• গঠন পরিকল্পনা এবং সমন্বয় করতে অক্ষমতা, প্রাথমিক সহায়তা এবং নির্দেশিকায় দুর্বলতা প্রকাশ
• স্বল্প মেয়াদী স্মৃতিভংশ এর ফলে জরুরি ফোন কল অথবা তথ্য লিখে রাখতে না পারা, উপযুক্ত পরিস্থিতিতে কার সাথে কথা বলতে হবে তা ভুলে যাওয়া।
• শ্রবণেন্দ্রিয় সমস্যা থাকার ফলে নির্দেশনা শুনতেও ভুল হয় যার ফলে নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন সুষ্ঠুভাবে হয়না
• দৃষ্টিগত সমস্যার কারণে লিখিত নির্দেশিকা বুঝতে কষ্ট হয়, কাজে মনোযোগ দেয়া কঠিন হয়ে পরে।
• অন্তর্নিহিত শক্তি, মনোযোগ, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, ক্রমানুসার কমে যায় যার ফলে তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হারিয়ে ফেলে, কাজে নজর দিতে পারেনা, কর্মস্থলে ঝামেলা তৈরি হয়, একটা কাজ শেষ করার জন্যে কি কি দরকার সেই বিসয়ে বোধগম্যতা কমে যায়, একসময়ে একাধিক কাজে নজর দেয়ার অক্ষমতা তৈরি হয়।
• নিজের যত্নমূলক কাজের দক্ষতা কমে যায়
• সঠিকভাবে বিশ্রাম নিতে পারেনা। যদিও উপযুক্ত পন্থায় সম্পাদনের চেষ্টা করে তারপরেও নিদ্রাহীনতায় ক্লান্তি, বিরক্তি ভাব চলে আসে ও ভুল হয়।
• কাজের জন্যে দুশ্চিন্তা বা বিষণ্ণতা, মনে করে যে এই বুঝি চাকুরী চলে যাবে যা আরও সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। তারা আরও মনে করে যে, ইঞ্জুরির পূর্বে যেরকম কর্মদক্ষতা ছিল, তা আর এখন ফিরে পাওয়া সম্ভব না-এরকম বিষণ্ণতায় ভুগে। দুশ্চিন্তা এবং বিষণ্ণতা এসময় আর্থিক টানাপড়েন এবং সম্পর্কে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে।
• মন এর চালিকা শক্তি কমিয়ে দেয় যা কখন,কিভাবে চাকুরী পাবে-এই বিষয়কে প্রভাবিত করে।
অকুপেশনাল থেরাপির ভূমিকাঃ
• কর্মস্থলে রোগী বা সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির ভূমিকা ও দায়িত্বসমূহ বিশ্লেষণ করা, রোগী এবং চাকুরীজীবীদের এসব বিষয়ে সফল হবার পন্থা বিষয়ে সুপারিশ প্রদান। চিকিৎসা প্রথমে হাসপাতাল বা পুনর্বাসন কেন্দ্রে শুরু হতে পারে এবং কর্মস্থলে ফিরে যাবার আগে সফলভাবে কর্মদক্ষ করে তোলা।
• মেমরি বুক বা ডায়েরি অথবা অন্য কোন সহায়ক সামগ্রী নির্ধারণ করা যাতে রোগী একটি বিশেষ কাজ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধাপে ধাপে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে পারে।
• রোগীর শ্রবণেন্দ্রিয় সমস্যার জন্যে compensatory strategies শেখানো।
• দৃষ্টি সহায়ক সামগ্রী প্রদান এবং ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে সহায়তা ।
• অন্তর্নিহিত শক্তি, মনোযোগ এর সময়, কাজের চাপ নিয়ন্ত্রণ, সমস্যা সমাধান ও ক্রমানুসারের দক্ষতার উন্নয়নের জন্যে লক্ষ্য ঠিক করে অর্থবহ কাজে অংশগ্রহণ।
• রোগীর বিশ্রাম এবং পরিমেয় ঘুমের জন্যে রিলাক্সেশন এবং কাজের চাপ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দেয়া
• রোগীর মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেয়া যাতে সফলভাবে কাজ সম্পাদনে সহায়ক হয়। উৎপাদনমুখী জীবনযাপনে, আত্ম মর্যাদা রক্ষণাবেক্ষণ করতে, পরিবারকে সহায়তা করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ।
• কাজের সামর্থ্যকে মূল্যায়ন করা এবং নিরাপদে কর্মস্থলে ফিরে যাবার জন্যে পুনরায় কর্মদক্ষতা নিরীক্ষণ করা যাতে পরবর্তীতে রোগী নিরাপদে এবং সমাজে চলাফেরায় সহায়তা নিয়ে কর্মজীবন অতিবাহিত করতে পারে।
একজন অকুপেশনাল থেরাপিসট শ্রমিক কিংবা কর্মীর শারীরিক, মানসিক, আর্থ-সামাজিক, পরিবেশগত, কর্মদক্ষতা প্রভৃতি বিষয়াদি বিবেচনা করে তাকে কর্মস্থলে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা করেন। কারণ কর্মক্ষম মানুষ প্রতিষ্ঠানের অনুপস্থিতি কমিয়ে উৎপাদনক্ষমতা এবং সেবার গুণগত মান বাড়িয়ে দেবার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আসুন একসাথে আওয়াজ তুলি-
“কর্মস্থলে সুস্থ ও নিরাপদ পরিবেশ,
বাঁচবে শ্রমিক, এগুবে দেশ”।
লেখকঃ
শম ফারহান বিন হোসেন
ক্লিনিক্যাল অকুপেশনাল থেরাপিসট,
অকুপেশনাল থেরাপি বিভাগ,
সিআরপি-মিরপুর, ঢাকা।
মোবাইলঃ ০১৬৮৫৬৫৬১৯৯
E-mail: [email protected]
©somewhere in net ltd.