![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সারা জীবন শুধু পথের সন্ধানে ছুটে চলেছি আমি, সত্যের সন্ধান আর মেলেনা। পথ অনেক দূরের। মানুষের দেয়া কষ্টগুলো জমিয়ে এখন ভীষণ একলা চলি আমি। অন্যের কাছে আশা করি না। শুধু বিশ্বাস করি নিজের বাবা-মাকে। পৃথিবীর মানুষগুলো শুধু কষ্ট দেয় আমায়। তাই এখন আর অন্যের ওপর ভরসা না করে নিজের যোগ্যতায় এগিয়ে চলা। আসলেই কি যোগ্য আমি। কোথাও কোন বন্ধু নেই। সহযোগীর চেয়ে শত্রু বেশী। যেখানে যাই শত্রু কুড়াই। কর্মক্ষেত্রে, নিজ জীবনে সব জায়গায়। মানুষের মুখ দেখে মানুষ সত্যি চেনা দায়। মানুষ ক্ষণে ক্ষণে গিরগিটির মতো রং বদলায়। আমি মানুষকে সত্যি বিশ্বাস করতে চাই। কিন্তু বিশ্বাস করা বড়ো দায় হয়ে দাড়ায়। পিছন থেকে ছুরি মারা সদা প্রস্তুত মানুষগুলো বড়ো ভাবায়। একটু আগের সবচেয়ে বড় বন্ধু ক্ষণিকের মাঝে অচেনা হয়ে যায়। সবাই যার যার মতো আখের গোছায়। আর আমি চেয়ে থাকি। নাকি ওরাই ঠিক। আর আমি সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে জানি না। চোখের পলকে নিজের চেহারা পাল্টাতে পারি না। আমি আসলে বোকার দলে। সময় থেকে পিছিয়ে পড়েছি। আমার মধ্যে আজকাল অবিশ্বাস গুলো আনাগোনা করে। অথচ মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ।তারপরও মনে হয় আলোর সন্ধান আমি পাবোই।ফারজানা
এক যুগ আগের কথা,
আমরা কয়েকজন ভালো বন্ধু ছিলাম। জীবনের বাস্তবতা আমাদের সবাইকে একের অপরের কাছ থেকে অনেক দূরে ঠেলে দিয়েছে। আজ পুরানো দিনের স্মৃতিচারণ করছি।
আমার একটা বন্ধু ছিলো। নাম!! ( আসল নাম গোপন রাখলাম) তার নাম ছিলো অর্ক।
অর্ক খুব প্রাণবন্ত একজন মানুষ ছিলো। অর্ক সমাজ বিজ্ঞানের ছাত্র, চোখে অনেক স্বপ্ন। কিন্তু বাস্তবতার কারনে অর্ককে খু্ব তাড়াতাড়ি একটা চাকুরী নিতে হলো। সেই সঙ্গে অর্কের বাবা খুব তাড়াতাড়ি পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ায় অর্ককে পুরো সংসারের দায়িত্ব নিতে হলো। অর্ক বড় ছেলে তাই বাংলাদেশের নিয়ম অনুযায়ী এই দায়িত্ব তারই।
যাই হোক, এখন আসি মূল গল্পে। আমার বন্ধু অর্ক এক ভীষন লাবন্যময়ী কন্যার প্রেমে পড়লো। প্রায়ই দেখতাম অর্ককে মেয়েটির সঙ্গে রিকশায় করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মেয়েটি শুধু আকর্ষণীয় ছিল না, ছিল ভীষন মিষ্টি এবং শিক্ষিত ও রুচিশীল।
চুপিচুপি অর্ককে প্রশ্ন করলাম: কে রে?
অর্ক মুখ নীচু করে কান লাল করে বললো: কলিগ।
আমি বললাম: আর কিছু না !!
অর্ক বললো :না। সেই মেয়েটির সঙ্গে অর্ককে বানিজ্য মেলা থেকে শুরু করে বই মেলা, চটপটি- ফুচকা খেতে, টি.এস.সিতে আড্ডা দিতে, নাটক দেখতে যাওয়া সব জায়গায় দেখতাম।
একদিন ধরলাম অর্ককে। বললাম, এই তোরে তো দেখলেই বোঝা যায় তুই মেয়েটির প্রেমে পড়েছিস।
অর্ক স্বীকার করলো সে মেয়েটির প্রেমে পড়েছে।
জিগ্যেস করলাম, মেয়েটি জানে।
ও মন খারাপ করে বললো: না।
আমি বললাম, বলিস না কেন?
অর্ক বললো: মেয়েটা কোন এক হিন্দু ছেলেকে ভালোবাসে।
তারপর আর আমার কিছু বলার ছিল না।
দুই তিন মাস পর অর্ক আমাকে অনেক রাতে ফোন দিলো। বললাম, এত রাতে?
ফোনে গলা শুনে বুঝতে পারলাম, অর্কের কোন একটা সমস্যা হয়েছে।
আমি জিগ্যেস করলাম: কি হয়েছে?
বললো: মেয়েটির সঙ্গে সেই হিন্দু ছেলের সম্পর্ক আসলে অনেক আগেই সমাপ্তি ঘটেছে।
আমি বললাম: তাহলে?
অর্ক বললো :আসলে সমস্যা অন্য জায়গায়।
আমি বললাম: ভালবাসলে সমস্যা আবার কি? জিগ্যেস করলাম, বলতো মেয়েটাকে নিয়ে তোর মনের মাঝে কি কোন দ্বিধা আছে বা অন্য কোন মোহ আছে? আসলে কি ওকে ভালবাসিস না?
অর্ক বললো: কিসের মোহ, কিসের দ্বিধা? ওকে আমি ভালবাসি। ওকে যে কতটা ভালবাসি তা মুখে বলে বোঝানো যাবে না। যখন ও শাড়ী পরে সামনে আসে তখন মনে হয়, ঐ শাড়ীটা শুধু ওর জন্য তৈরী করা হয়েছে। আমার ডিউটি না থাকলেও শুধু এই মেয়েটিকে দেখার জন্য একবার অফিসে যাই আমি। ও যখন আমার পাশে বসে, তখন মনে জীবনটা সত্যি অনেক সুন্দর। ও যখন হাসে, মনে হয় পুরো পৃথিবী ঝলমল করে উঠে। ও যখন মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকায় আমি চট করে ওর চুলের গন্ধ নেই। চশমার আড়াল থেকে গোপনে ওর দিকেই তাকিয়ে থাকি।
আমি বললাম: এত ভালবাসিস, তাহলে বলতে সমস্যাটা কোথায়? অর্ক বললো : মেয়েটি বৌদ্ধ। মাকে জানাবো কিভাবে?
অর্ক মুসলিম আর মুসলিম পরিবারের সঙ্গে একজন বৌদ্ধ মেয়ে কিভাবে মানিয়ে নিবে? আর ইসলাম ধর্মে নাকি আছে, বিধর্মীকে বিয়ে করা যাবে না।
আমি ভীষন অবাক হয়েছিলাম আর বলেছিলাম, ভালবাসা কি আর ধর্ম মানে?
অর্ক বললো: বু্ঝতে পারছিনা কি করবো?
আমি বললাম: সরি তোর এই সমস্যার সমাধান আমার পক্ষে দেয়া সম্ভব না। তোর কাছে প্রেমের চেয়ে ধর্ম বড়। পৃথিবীর খুব কম মানুষই সত্যিকারের ভালবাসা খুঁজে পায়।
অর্ক কোনদিনও সেই মেয়েটিকে তার ভালবাসার কথা জানাতে পারেনি। তখন আমি নিজেও আসলে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে সেভাবে জানতাম না। নয়তো তাকে জানাতে পারতাম:
-মুসলিম নারীরা বিধর্মী পুরুষদের বিয়ে করতে পারে না। মুসলিম মেয়েরা বিধর্মী পুরুষকে তখনই বিয়ে করতে পারে, যখন বিধর্মী পুরুষটি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবে। কিন্তু মুসলিম পুরুষদের জন্য ঠিকই বিধান আছে একজন বিধর্মী নারীকে বিয়ে করার। নিচের আয়াত টি মুসলিম পুরুষদের বিধর্মী নারীকে বিয়ের অনুমতি স্পষ্ট করে তোলে:
''আজ তোমাদের জন্য বৈধ করা হলো সব ভালো বস্তু এবং যাদেরকে কিতাব প্রদান করা হয়েছে, তাদের খাবার তোমাদের জন্য বৈধ এবং তোমার খাবার তাদের জন্য বৈধ। আর মুমিন সচ্চরিত্রা নারী এবং তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে, তাদের সচ্চরিত্রা নারীদের সাথে তোমাদের বিবাহ বৈধ। যখন তোমরা তাদেরকে মোহর দেবে, বিবাহকারী হিসেবে, প্রকাশ্য ব্যভিচারকারী বা গোপনপত্নী গ্রহণকারী হিসেবে নয়’। {সূরা আল-মায়িদা, আয়াত : ৫} এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সতী-সাধ্বী খ্রিস্টান ও ইহুদীদের বিয়ের অনুমতি দিয়েছেন''
আজ অনেক দিন পরের কথা। অর্ক এখন তিন সন্তানের বাবা। খুব তাড়াতাড়ি মায়ের পছন্দের মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করেছে। মাঝে মাঝে ছেলের সঙ্গে ফুটবল খেলার ভিডিও ফেসবুকে পোষ্ট করে।
আমার খুব প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে, অর্ক, এই মেয়েটিকে (ওর স্ত্রী) দেখলেও কি তোর মনে হয় : শাড়ীটা শুধু ওর জন্যই তৈরী করা হয়েছে? মনে হয় পৃথিবীটা সত্যি ভীষণ সুন্দর!! জিজ্ঞ্যেস করা হয় না। শুধু দীর্ঘশ্বাস পড়ে।
ফারজানা কবীর খান (স্নিগ্ধা)
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:১৩
শুধুই অর্ক বলেছেন: আমি কিন্তু অন্য অর্ক ....