![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সারা জীবন শুধু পথের সন্ধানে ছুটে চলেছি আমি, সত্যের সন্ধান আর মেলেনা। পথ অনেক দূরের। মানুষের দেয়া কষ্টগুলো জমিয়ে এখন ভীষণ একলা চলি আমি। অন্যের কাছে আশা করি না। শুধু বিশ্বাস করি নিজের বাবা-মাকে। পৃথিবীর মানুষগুলো শুধু কষ্ট দেয় আমায়। তাই এখন আর অন্যের ওপর ভরসা না করে নিজের যোগ্যতায় এগিয়ে চলা। আসলেই কি যোগ্য আমি। কোথাও কোন বন্ধু নেই। সহযোগীর চেয়ে শত্রু বেশী। যেখানে যাই শত্রু কুড়াই। কর্মক্ষেত্রে, নিজ জীবনে সব জায়গায়। মানুষের মুখ দেখে মানুষ সত্যি চেনা দায়। মানুষ ক্ষণে ক্ষণে গিরগিটির মতো রং বদলায়। আমি মানুষকে সত্যি বিশ্বাস করতে চাই। কিন্তু বিশ্বাস করা বড়ো দায় হয়ে দাড়ায়। পিছন থেকে ছুরি মারা সদা প্রস্তুত মানুষগুলো বড়ো ভাবায়। একটু আগের সবচেয়ে বড় বন্ধু ক্ষণিকের মাঝে অচেনা হয়ে যায়। সবাই যার যার মতো আখের গোছায়। আর আমি চেয়ে থাকি। নাকি ওরাই ঠিক। আর আমি সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে জানি না। চোখের পলকে নিজের চেহারা পাল্টাতে পারি না। আমি আসলে বোকার দলে। সময় থেকে পিছিয়ে পড়েছি। আমার মধ্যে আজকাল অবিশ্বাস গুলো আনাগোনা করে। অথচ মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ।তারপরও মনে হয় আলোর সন্ধান আমি পাবোই।ফারজানা
বন্ধু রেশমার চিঠির শেষ অংশ আজ প্রকাশ করলাম। আর সেই সঙ্গে এই মানুষটিকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, যিনি আমাকে প্রতিনিয়ত তার এই না বলা কথা গুলো নিয়ে লিখতে উৎসাহিত করে গেছেন। ভবিষ্যতে আরো মানুষের লেখা চিঠি এবং তাদের ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে হাজির হবো সবার সামনে। অন্ধকারের আর্তঃ চিৎকার নিয়ে সমাজের সেই ভয়ংকর রুপ গুলো প্রকাশের প্রয়াস চলতে থাকবে। কেউ পড়ুক আর না পড়ুক, একজন মানুষ এবং নারী হিসেবে নিজের কাছে নিজের দায়বদ্ধতার কারনে প্রতিবাদ স্বরূপ লিখে যাবো।
আমার জন্ম খুলনায়। স্বাধীন দেশে জন্মেও জন্মের পর থেকে আমি মুক্ত ভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ আমি পাই নাই। এর কারন হলো আমি মেয়ে মানুষ। বাইরের জগত মানেই পশুর বিচরন ক্ষেত্র। এই সব পশুর আচড় যাতে গায়ে পড়তে না পারে এই ভয় কানের ভিতর গেঁথে গিয়েছিল সেই ছোট কাল থেকে। যার ফলে মুক্ত বাতাস গ্রহণের সুযোগ হয়নি। আমার মত আরো অনেকেই আছে যারা কিছু বুনো জন্তুর ভয়ে মুক্ত বাতাস থেকে বঞ্চিত। বাংলাদেশ থেকে বের হয়েই আমি যথার্থ মুক্তি পেয়েছিলাম। তাই দূরে থেকে দ্বিধাহীন কণ্ঠে আমি বাংলা সমাজের সংস্কারের দাবী জানাই, দাবী জানাই ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের নিরাপত্তা ও মুক্ত পরিবেশ পাওয়ার অধিকার।
দীর্ঘ চল্লিশ বছর আমরা পার করেছি স্বাধীনতার খেতাব নিয়ে, আজ আমি একে খেতাবই বলবো কারন আমি স্বাধীন দেশে জন্ম নিয়েও স্বাধীনতা ভোগ করতে পারিনি। আমার জন্মস্থানেই ছিল সুন্দরবন, ষাট গম্বুজ মজজিদ, যা আজও দেখা হয়নি। বাসা আর স্কুল এই পর্যন্ত ছিল আমার যাতায়াত। এর বাইরে যাতায়াত আমার মত মেয়ে মানুষের জন্য নিরাপদ নয়। হ্যা, আমি যে মেয়ের বাইরে একজন মানুষও ছিলাম তাই কোন দিন জানতে পারিনি।
এভাবেই খুব নিরাপদে চলাফেরা করেও বিদ্যালয়ের শেষ পাসটি দিয়েছিলাম। এর পর বিবাহ সুত্রে কানাডায় পাড়ি জমাই। কিন্তু আমার সেই জন্মভুমি প্রিয় দেশটিকে আজও দেখা হয়নি। দূরে থেকে ভাবি দেশে গিয়ে সব জায়গায় বেড়াব। কিন্তু সেই বাংলার পথঘাট আজও নাকি নিরাপদ নয়। তাহলে এই দেশটি কিসের জন্য স্বাধীন হয়েছে? কেন আজও দেশ শত্রু মুক্ত হতে পারেনি? এই শুত্রুগুলো বাইরের কেউ না, দেশীয় সমাজ কাঠামোর দ্বারা দুষনযুক্ত শুত্রু। আমাদের দেশে যে সামাজিক পরিস্থিতি, যেখানে ধর্ষকরাই জাহানারা ইমামের ফাসী চাই' বলে চিৎকার ওঠে, সেই সমাজের মানুষ তো আমার ও ফাসি দাবী করতে পারে, আমি তা জানি। তবুও কাউকে না কাউকে তো মুখ খুলতে হবে। প্রতিবাদ করতে হবে। আমি ১৫ বছর ধরে কানাডায় আছি। আমি স্বপ্ন দেখি আমাদের দেশের ছেলে মেয়েরাও এই দেশের মানুষদের মতো আত্ম মর্যাদাশীল হোক। আমি আমার দেশে ঠিক এমন স্বাধীনতাটি চাই,
যেটি আমার মেয়ে আজ ভোগ করছে।
মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেললে যেমন সমস্যার সমাধান হয় না। ঠিক তেমনি সমাজের যে জায়গায় ক্ষত হয়েছে সেই জায়গা টুকুর চিকিৎসা না করে ঢেকে রাখার চেষ্টা চলছে। যার ফলে সমস্যা আরো ঘনিভুত হয়েছে। মেয়ে মানুষকে আড়াল করে যদি কোন পুরুষ জিতেন্দ্রীয় ঘোষনা করে, তাহলে সে জয়ী হতে পারে না। কারন সে তো পরীক্ষিত সত্যের মুখো মুখি হয়নি। বৈপরীত্বের মধ্যে পরীক্ষিত সত্য রয়েছে। যে সমাজে বৈচিত্র বা বৈপারীত্বের কোন স্থান নেই সেই সমাজতো কোন মানুষের জন্য নিরাপদ নয়। একটি খেলার মাঠে শুধুই পুরুষের উপস্থিতি হবে কোন নারীর অবস্থান থাকবে না, এটি তো অসভ্য সমাজের অপ্রকৃতিস্থ্য আচরন প্রকাশ পায়। নারী ও পুরুষের সমান অবস্থান আমাদের সমাজে কোথাও তেমন দেখা যায় না। বাংলাদেশী একটা ছেলে বা মেয়ে যখন উন্নত দেশে পড়াশুনা করতে আসছে তখন তারা বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে কাজ করতে বেশ অস্বস্তি অনুভব করে। এর কারন হলো দেশীয় সমাজ কাঠামোর মধ্যে নারী ও পুরুষ পৃথক ব্যবস্থায় অভ্যস্থ। ছেলেদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি আরও বেশী প্রকট ভাবে দেখা দেয়।
কানাডা, আমেরিকা, ইউরোপে স্কুল কলেজে ছেলে মেয়েদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা নেই। তাই এখানকার ছেলে মেয়েরা ছোটকাল থেকে এক ধরনের পরীক্ষিত সত্যের মুখোমুখি হয়। সেই সত্যটি হলো নারী ও পুরুষের সহাবস্থান। যৌনতা নারী ও পুরুষের উভয়ের আছে। আমাদের সমাজে যৌনতাকে অচ্ছুত, নোংরা দৃষ্টিতে দেখা হয়। যার ফলে গোপনে যৌন নির্যাতন এক ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। যে যৌনতার মাধ্যমে মানুষের জন্ম হয়, সেই যৌনতাকে কেন ঘৃনা করতে হবে? এর মধ্যেই সৃষ্টি লুকায়িত আছে। এটি যে একটি বিজ্ঞান, ও পাঠ্যপুস্তকের বিষয় হতে পারে তা আমাদের দেশের লোকে মানতে নারাজ। কারন এতে জাত-পাত নষ্ট হয়ে যাবে এই ভয় দেখিয়ে গোপনে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। যৌন তাড়না মিটানোর জন্য উন্নত দেশ গুলোয় নানা রকমের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। যেমন: পিপশো, ট্যাভার্ণ, ল্যান্ডকাস্টার, এডাল্ট ক্লাব ইত্যাদি। কারো দরকার হলে এই সব প্রতিষ্ঠানে যাবে। এতে কারো কোন ক্ষতি হচ্ছে না। যদি যৌনতার বানিজ্যিক ব্যবহার অনৈতিক হয়, তবে কেন সেই নৈতিকতার দায়টা সেবা গ্রহীতার উপর ছেড়ে দেয়া হবে না! আসলে তাই হচ্ছে পশ্চিমের দেশগুলোতে। নিজের সাথে জেহাদটা মানুষকেই করতে দেয়া হোক। পশ্চিম থেকে কিছু নেয়া যাবে না, এমনটা না করে এই ধরনের ওহাবী মনোভাব যত শীঘ্রই ত্যাগ করা যায় ততই মঙ্গল। তাহলে পরিক্ষীত সততা প্রতিষ্ঠা পায়। তাতে যেমন সরকার আয়কর পাচ্ছে, সমাজ থাকছে সুস্থ ও সুন্দর।
যৌনতা কোন অপরাধ না। যখনি এটি জোর করে একজন মানুষের উপর প্রয়োগ করা হয় ঠিক তখনই এটি অপরাধ। ঢাকা শহরে যে যৌনপল্লী গুলো ছিল সেই যৌনপল্লী গুলো উচ্ছেদ করে সমগ্র ঢাকা শহরে যৌনপল্লীকে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এতে সাধারন মানুষের নিরাপত্তা কমে গিয়েছে। ঢাকা শহর পুরাটাই যৌনপল্লীতে রুপান্তর হচ্ছে, এটি অনেকে মানুষই স্বীকার করতে নারাজ হলেও এর কিছু প্রমাণ আমার কাছে আছে। বিশেষ করে ঢাকাতে যাদের বাড়ি রয়েছে, ভাড়া দিতে হয় শুধুই তারাই এই সমস্যার ভুক্তভোগি। বেশ কয়েক বছর আগে আমাদের ঢাকার বাসায় স্বামী -স্ত্রী সেজে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়। ভাড়া নিয়ে তারা সেই ফ্লাটেই পতিতা বৃত্তি চালিয়ে যেতে থাকে। দু মাসের মাথায় এটি ধরা পড়ে। বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়েও কোন কাজ না হলে, তখন পুলিশ ডেকে এনে এই পতিতাবৃত্তি উচ্ছেদ করতে হয়েছিল। এই ঘটনা একবার নয় বহুবার হয়েছে। যেহেতু তাদের যৌণ পল্লীগুলো উচ্ছেদ করা হচ্ছে তাই তারা যে কোন জায়গায় নতুন ঘাটি বাঁধছে।
ধর্মীয় ছত্রছায়ায় যৌন পীড়ন বেড়েছে বহুগুন। মাদ্রাসার যে শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে ছেলেরা বেড়ে উঠছে তাদের মধ্যে যৌন পীড়নের মাত্রা বেশী। তাদের শারীরিক জৈবিক চাহিদাকে অস্বীকার করে একটি ধর্মীয় কড়া শাসনে মধ্যে বড় হতে হচ্ছে। তাদের মধ্যে কোন সাংস্কৃতিক বিনোদন নেই। নাচ গানকে হারাম করে বন্ধ করা হয়েছে। এভাবেই পরিবেশের মধ্যেই যৌন বিকৃতির বিকাশ ঘটে। এই জন্যই বার বার শফি হুজুরদের মুখ থেকে যৌনতার এক চাপা আগ্রহ আর নারীদের ছোট করে দেখা ও নির্যাতনের কথাটি বের হয়ে আসে। এই কথা নিয়ে মিডিয়ায় বেশ হৈচৈ হয়েছে কিন্তু কেউ অনুসন্ধান করেননি যে শফী সাহেবের মত মানুষদের দ্বারাই সমাজে গোপনে বিকৃত যৌনাচার চলছে। এর প্রমাণ আমরা বিভিন্ন সময় পত্র পত্রিকায় দেখে আসছি। আর তা ঠিক ঐ পর্যন্তই থেকে যায়। কোন ধরনের প্রতিকারের ব্যাবস্থা আমাদের সমাজে নেই। সমাজকে সুন্দর ও বসবাস যোগ্য করতে হলে এই সব বিষয় নিয়ে গবেষনা ও হস্তক্ষেপ গ্রহণ করা অতি জরুরী।
সভ্যতার স্থায়ীত্ব রক্ষার জন্য সমাজে বৈচিত্রের স্থিতি ভীষন প্রয়োজন। এটা শুধু নারী পুরুষের সহাবস্থানই নয়, সব ক্ষেত্রে বৈচিত্রের ছাপ থাকতে হবে। তখন সততা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পরীক্ষিত হয়ে স্থায়িত্ব লাভ করবে। ছেলে মেয়েদের কাছে যৌণতাকে লুকিয়ে না রেখে তাদেরকে তা সমন্ধে জানাতে হবে। এর জন্য সেক্স এডুকেশনের কোন বিকল্প নেই। অথচ আমাদের দেশে যখন ছেলে মেয়েরা সায়েন্স নিয়ে পড়ালেখা করতে যায়, তখন তাদের এবং সেই পাঠ্য পুস্তক সমন্ধে তাদের যিনি জ্ঞান দিবেন সবাই স্বযত্নে ব্যাপার গুলো এড়িয়ে যায়। যেন এড়িয়ে যাওয়াটাই নিরাপদ। যেন সময় হলে জেনে যাবে যা জানার। এতে করে ছেলে মেয়েদের মনের আগ্রহটা তাকে অপরাধমূলক কর্মকান্ডে উৎসাহিত করে। যেমন, পত্র পত্রিকায় আমরা দেখি, গৃহ পরিচারিকা যৌণ নির্যাতনের শিকার। কিন্তু এভাবে আর কতদিন?
কবির ভাষায় বলি,-
অন্ধকারের উৎস হতে উৎসরিত আলো
সে তোমারই আলো
সকল দ্বন্দ্ব বিরোধ মাঝে জাগ্রত যে ভাল
সে তোমারই ভাল।
এটাই আজ আমার শেষ কথা।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:০৫
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: ভ্যতার স্থায়ীত্ব রক্ষার জন্য সমাজে বৈচিত্রের স্থিতি ভীষন প্রয়োজন।
ভাল লাগল।