নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শুনেছ কি বলে গেল সীতানাথ বন্দ্যো?আকাশের গায়ে নাকি টকটক গন্ধ?টকটক থাকে নাকো হলে পরে বৃষ্টি,তখনি চেখে দেখেছি একেবারে মিষ্টি। –সুকুমার রায়

প্রেক্ষা

প্রেক্ষা › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদ্রির দিদিমা

১২ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:৩৯

অদ্রি আজ অনেকদিন পর দাদার বাড়ি বেড়াতে এসেছে। অদ্রির চাচা-ফুফুরা সবাই শহরে থাকেন বলে এই সবুজে ঘেরা বাংলো মতো বাড়িটা সবসময়ই ফাকা পরে থাকে। বাড়িটা পুরোনো আমলের জমিদারি কায়দায় বানিয়েছিলেন অদ্রির দাদাভাই। বাড়ির গেটেই রয়েছে শ্বেত পাথরের মূর্তি,বড় হল ঘর পেরিয়েই ভেতরে যেতেই চোখে পড়ে দোতলায় যাবার ঘোরানো সিড়ি। এতবড় বাড়ি দেখাশোনার জন্য একজন কেয়ারটেকার আছেন,নাম লিয়াকত আলী। ষাটোর্ধ লিয়াকত চাচা অবশ্য অদ্রির দাদুভাই বেঁচে থাকতেই এ বাড়িতে চাকরি নিয়ে ঢুকেছিলেন। শেষ বয়সে আর ঝক্কি ঝামেলা ভালো লাগে না বলে এখানেই জীবনের বাকিটা সময় পার করবেন বলে ঠিক করেছেন। অদ্রির দুই বছর বয়সে তার দিদিমা মারা যাওয়ার পর থেকেই ওদের এই বাংলো বাড়িটা নিয়ে লোকমুখে নানা কথা শোনা যায়। ওর দিদিমাকে নাকি প্রায়ই দেখা যায় পুকুর ঘাটে পা ডুবিয়ে বসে আছেন। লিয়াকত চাচা অবশ্য এ কথা মানতে নারাজ। তার মতে,গ্রামের মানুষ অযথাই ভুয়া কথাবার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে। অদ্রির অবশ্য এইসব ভৌতিক ব্যাপারে কোনো মাথাব্যথা নেই। সে আরাম করে প্রকৃতির সান্নিধ্যে কয়েকটা দিন ছুটি কাটানোর পরিকল্পনাতেই ব্যস্ত।

অদ্রি বাড়ির গেটে ঢুকতেই লিয়াকত চাচা হাক ডাক  করে বেড়িয়ে এলেন
- অদ্রি মা, মেলাদিন পর আইলা আম্মাজান। আহো আহো আম্মাজান তারাতাড়ি হাত-মুখটা ধুইয়া খাইতে বহো। জার্নি কইররা শইলডার উপর কত্ত ধকল গ্যাছে। আমি তো জানি তুমি মা একদমই ক্ষুধার জ্বালা ধরতে পারো না। এক নিশ্বাসে কথাগুলো বললেন লিয়াকত চাচা।
- চাচা,আমি তো পথেই দুপুরের খাবার সেড়ে ফেলেছি। আপনি বরং শিউলি খালাকে বলেন আমাকে এক কাপ লাল চা করে দিতে।
-আইচ্ছা,তুমি হাত-মুখ ধুইয়া আহো ততক্ষণে তুমার চা রেডি হইয়া যাইবো বলেই রান্নাঘরের দিকে ছুটলেন লিয়াকত চাচা।
হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখে লিয়াকত চাচা বেডসাইড টেবিলটায় চা আর সাথে মেরী বিস্কিট রেখে গেছেন। চায়ে বিস্কিট ভিজিয়ে খেতে খেতেই অদ্রির মনে হলো কোথা থেকে যেন মোলায়েম একটা বাঁশির সুর ভেসে আসছে। চায়ের কাপটা নিয়ে বাঁশির সুরের সন্ধান করতেই খোলা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায় অদ্রি। বারান্দায় দাঁড়াতেই আস্তে আস্তে বাঁশির সুরটা মিলিয়ে গেলো। এরমধ্যেই লিয়াকত চাচা আবার এলেন কিছু লাগবে কিনা তা জিজ্ঞেস করতে।
-আম্মাজান তুমার কিছু লাগলে কিন্তু আমারে ডাক দিয়ো আর আইজকা রাতে খাওনের লাইগ্যা পুকুর দিয়া মাছ উঠাইছি। আম্মাজানরে কিন্তু অবশ্যি খাইয়া ঘুমাইতে হইবো।
-ঠিক আছে চাচা,আমি খেয়েই ঘুমাবো। আচ্ছা চাচা, খুব সুন্দর বাঁশির সুর বাজছিল। কে বাজাচ্ছিলো বাঁশি? জিজ্ঞেস করলো অদ্রি
বাঁশির কথা শুনেই চাচা কেমন যেনো হকচকিয়ে গেলেন,আমতা আমতা করে বলে উঠলেন
- এহেনে বাঁশির সুর আইবো ক্যামনে? ও তুমি ভুল হুনসো। আমি এহন যাই বলেই তারাতাড়ি করে দোতলা থেকে নেমে গেলেন লিয়াকত চাচা।

রাতে পুকুরের মাছ আর ভর্তা-ভাজি দিয়ে জম্পেশ একটা খাওয়াদাওয়া করে আবার দোতলার খোলা বারান্দাটায় গিয়ে বসলো অদ্রি। বারান্দার শীতল বাতাসে রকিং চেয়ারে দুলতে দুলতে ঝিমুনি চলে আসায় চোখটা খানিক্ষনের জন্য বন্ধ করলো।চোখ বন্ধ করতেই শুনতে পেলো একটা মহিলা কন্ঠ খুব নরম স্বরে ওকে বলছে, " অদ্রি দিদিভাই,এতদিন পর তোর আসার কথা মনে হলো? আমি তো তোদের অপেক্ষায় থাকিরে।" হঠাৎ চোখ খুলে সোজা হয়ে বসলো অদ্রি। মনে মনে ভাবলো কিসব অর্থহীন স্বপ্ন দেখছে সে। আবারো রকিং চেয়ারে পিঠটা ঠেকাতেই কেমন যেন শুনতে পেলো, "আয় দিদিভাই,কতদিন তোকে দেখি না।" ডাকটা কেমন যেন নেশা ধরানো। মন্ত্রমুগ্ধের মতো সেই মহিলা কন্ঠস্বরের পিছু পিছু গিয়ে তিনতলার চিলেকোঠায় পৌঁছায় অদ্রি। চিলেকোঠার দরজাটা খুলতেই দেখতে পায় ওর দিদিমার ব্যবহার করা জিনিসপত্র।  আবার কানের কাছে সেই স্বর শুনতে পায়," এগুলো কতদিন অবহেলায় পড়ে আছে।তুই এসে ভালোই হলো, জিনিসগুলো একটু গোছগাছ করে দিতে পারবি।" অনেক সময় নিয়েই অদ্রি তার দিদিমার পান-সুপোড়ির কৌটো, কাঁসার থালা-বাটি,শাড়ি এইসব জিনিস গোছালো। হঠাৎ একটা লাল বেনারশীর দিকে চোখ পড়তেই আবারো সেই কন্ঠ শুনতে পেলো," ওটা আমার বিয়ের বেনারশী, তোর জন্যই রাখা ওটা। বেনারশীটা একটু পড়তো মা।" অদ্রি মন্ত্রমুগ্ধের মতো সেই মহিলা কন্ঠের সব কথাই মেনে নিচ্ছিলো। তাই খুব সুন্দর করেই বেনারশীটা পড়ে ফেললো। "তোকে বড্ড মিষ্টি লাগছে" শুনতে পেলো অদ্রি। সাথেই সাথেই জ্ঞান হারিয়ে লুটে পড়লো মাটিতে।পরেরদিন সকালে অনেক খোজাখুজির পর অদ্রিকে চিলেকোঠায় জ্ঞান হারানো অবস্থায় পাওয়া গেলো। জ্ঞান ফিরতেই তাকিয়ে দেখে চিলেকোঠার সব জিনিসপত্র এলোমেলো, ধুলোয় ভরা। কিন্তু ও যে গত রাতে সব পরিষ্কার করলো, গোছগাছও তো করে রেখেছিলো। গায়ের দিকে তাকাতেই দেখলো ওর কামিজটাই পড়া আছে। তবে বেনারশী শাড়িটার কি হলো এই ভাবনা মনে আসতেই চিলেকোঠার ঘরের মধ্যে গিয়ে দেখে পুরনো ভাঙ্গা আলনাটার উপর খুব সুন্দর করে একটা লাল বেনারশী ভাঁজ করে রাখা। আজও অদ্রি ভেবে কূল পায় না সেই রাত্রে কি সত্যিই দিদিমা ওর সাথে ছিলো নাকি সবকিছুই ওর কল্পনা।

বি.দ্র- কোনো ভূতমশাই যদি গল্পটা পড়ে থাকেন আশাকরি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আর আমাকে আপনার দর্শন না দিলে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ৯:৪২

রে-ইসম্যান বলেছেন: ভালো লেখনি, শুভ কামনা রইলো

২| ১৩ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৮:৪৬

ইসিয়াক বলেছেন: আপু লিখতে থাকুন। ভালো লাগলো আপনার লেখা। পাশে আছি সবসময়। আমিও নতুন কয়েকটা গল্প লিখেছি। ব্যস্ততার জন্য পোস্ট করা হচ্ছে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.