নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

..........অগ্রথিত অণির্বান আমার বংশানুক্রমিক ।।‌

কানিজ ফাতেমা

সময় আর ভৌগলিকত্ব ভেদে সকল তৃষিত যাযাবরই বৃষ্টি নির্ভর বর্ষার কাছে এক ফোঁটা জল চায় । .......................অগ্রথিত এ অণির্বান আমার বংশানুক্রমিক ।।‌

কানিজ ফাতেমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডোর বেল

০৯ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:২২

অপু দরজাটা হাট করে খুলে দ্রুত সিঁড়ি ভা্ঙ্গতে লাগলো । এত দ্রুত সে নামছে কোন দিকে তার খেয়াল নেই । যেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ কোন গন্তব্যে সে ছুটে যাচ্ছে । খুব অস্থির লাগছিল, অস্থিরতা কাটাতে যে অবস্থায় ঘুম থেকে উঠেছে সে অবস্থাতেই নেমে পড়লো । কোঁচকানে ট্রাউজার, ইষৎ ময়লা হালকা রংগা ফতুয়া, উসকো-খুসকো কাঁচাপাকা চুল, নিদ্রাহীন লাল টকটকে চোখ, সে চোখে রাজ্যের রুদ্রতা, আর আছে লুকানো কান্নার প্রত্যক্ষ চিহ্ন । হাতপায়ের নখগুলো যথেষ্ট অযত্নের স্বাক্ষী হয়ে বেড়ে উঠেছে। দুই ফিতার বার্মিজ স্যান্ডেলটা যে কোন মুহূর্তে বিদ্রোহ করে বসবে হয়তবা । সে সিঁড়ি ভাঙ্গছে তো ভাঙ্গছেই। আপাতত: সমস্ত পৃথিবীতে এই একটিই কাজ । কেঁচি গেটটা পার হয়ে সে একটু থামলো, কোনদিকে যাবে ? কি ভেবে বাসার পেছনের রাস্তা ধরে সোজা পূর্বদিকে হাঁটা শুরু করলো ।

যেন আজকে সে দিনের উৎস খুঁজে বের করবে । ঘড়িতে তখন ঠিক ৫.১০ মিনিট । সূর্বটা আড়মোড়া ভেঙ্গে অলসতা ছাড়তে শুরু করেছে মাত্র । পূর্ব আকাশটা লাল টকটকে হয়ে উঠেছে । দু-একটা পাখি অনেক ঝঞ্ঝা বিক্ষুদ্ধতা কাটিয়ে ঠিক ঠিক গান গেয়ে উঠছে ইট পাখরে জঞ্জালপূর্ণ এ নগরে । সকালটা বড় শান্ত, চুপচাপ, নাগরিক কোলাহল নেই । কে বলবে কিছুক্ষন পরই জেগে উঠবে এ জনপদ । ঠান্ডা বাতাস বইছে, একটু যেন শীত শীত করছে । শীত নামি নামি করছে । মাঝে মাঝে দু’একজন নামাজী পথচারী আছে, তাদের কেউ কেউ ভ্রু কুঁচকে তার দিকে সন্দেহের বান ছুড়ে দিচ্ছে । সেদিকে অপুর কোন খেয়াল নেই, আজ সে সিংহল সমুদ্র পারি দিচ্ছে ।

1. ভোর ৫.৩০ । অপুর মা ঘুম থেকে উঠে দরজাটি এমনভাবে খোলা দেখে আঁতকে উঠলেন। গতরাতে কি দরজা লক করা হয়নি? নাকি চোর টোর এসেছে ? তিনি অতিদ্রুত ঘরের সবকিছু চেক করতে লাগলেন এবং আবিস্কার করলেন অপু বিছানায় নেই। নেই তো নেই। বরান্দা, বাথরুম, ছাদ কোথাও নেই । ফোন করতেই দেখা গেল মোবাইলটা বিছানায় পড়ে আছে । কি করবেন তিনি ? অপুর বাবাকে ডেকে তুলবেন। না সেটা ঠিক হবেনা । ব্যাপারটা আগে নিজে ভালভাবে বুঝে নিতে হবে । কি হতে পারে? তাছাড়া অপুর বাবা হার্টের পেশেন্ট । আরেকটা ঝামেলা বাড়বে ।

সকল ধকল মেনে নেয়া যেন তার নিত্যনৈমত্তিক বিষয়।ধকলকে বুকের পাজরে বন্দি করে তিনি নামাজে দাঁড়ালেন, কিন্তু অস্থিরতায় কিছুতেই মনোনিবেশ করতে পারেছন না । সুদীর্ঘ মোনাজাত ধরলেন, যে অজানা আশংকায় তার বুক কাঁপছে তা থেকে পরিত্রাণের অনুনয় আকুতি ভরা কথোপকথনে নিজেকে সমর্পন করা ছাড়া আর কিই বা তিনি করতে পারেন! নামাজ শেষে আবার ঘড়িতে তাকালেন । সকাল ৬.০০ টা । আবার ছুটে বারান্দায় গেলেন । লোকজনের চলাচল শুরু হয়েছে । ছাদে গেলেন । না আর পারছে না । কাকে ডাকবেন, আজকাল খবরের কাগজ খুললেই নানারকম বাজে খবর চোখে পড়ে । এদিকে দিন দিন অপুর ব্যবহার রুক্ষ থেকে রুক্ষতম হয়ে উঠেছে । সামান্য কারনেই রেগে যায়, আজেবাজে আচরন করতে থাকে । কারো কোন ধারই সে ধারে না । এ ব্যাপারটা তিনি কারো সাথে শেয়ার করতে পারছেন না । এমনিতেই আত্মীয়-বন্ধুদের অপুকে নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই ।

চাকুরীতে এ্যপ্লাই করার নূনতম বয়সটাও শেষ হয়ে গিয়েছে । ব্যবসা করতে গিয়েছিল বাবার রিটায়ারমেন্ট বেনিফিটের টাকা দিয়ে, সেখানে মার খেয়েছে। চারদিকে ধারদেনার শেষ নেই। প্রতিদিন নতুন নতুন পাওনাদারের দেখা পাওয়া যায় । নানা অযুহাতে এক একটা দিন পার হয় । দিনদিন সে একটা অথর্ব মানবে পরিণত হচ্ছে । যা কিছু সে করতে চাইছে তাতেই চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে, শুধু ব্যর্থ হচ্ছেই না সাথে আরো নতুন ঝামেলা তৈরী হচ্ছে । দিনগুলো আতংকে, বিষাদে, অনটনে পর্যুদস্ত । অপুর মায়ের শরীরটাও ইদানিং খুব খারাপ যাচ্ছে । ডাক্তারের গৎবাধা কথা টেনশন করবেন না । টেনশনের জন্য আপনার শরীরে রোগ-বালাই বাসা বাধছে ।

আজকাল অপুর মায়ের বই পড়তে ভাল লাগেনা, নামাজে মন বসেনা, টিভি দেখতে অস্থির লাগে, এমনকি বাড়িতে কোন লোকজন আসলেও তাদের এটেন্ড করতে বিরক্ত লাগে । অপুর মায়ের গর্ভযন্ত্রণা শেষ হয়নি । এখনও বহন করে চলছে একাকী নিভৃতে । অপুকে যেমন সে ভালবাসে, অপুর আচরণে যেমন সে বিরক্ত, তেমনি তার ভবিষ্যৎ চিন্তায় আচ্ছন্ন । তার এই ৯০০ স্কয়ার ফুটের দুনিয়ায় কেবলই অপু আর অপু । অপুর কারনে তাকে নানারকম বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য শুনতে হয় পরিজনের কাছে । সে কেন তার পুত্রের দক্ষ কারিগর হতে পারেনি। স্নেহ, আশংকা, বিরক্তিতে দিকচিহ্নহীন অনিশ্চয়তার সমীকরণে অনভিপ্রেত ক্লান্তিময় এ জীবনে আজকের সকালটি যেন বিভীষিকাময় । অজস্র মেঘের জমানো অন্ধকারে মুঠোবন্দি হতে থাকে এক ঘোর আতংক ।

জৌলুসময় জীবনের হাতছানিতে এক অদ্ভুদ চোরাবালি লাগামহীনভাবে টেনে নিয়ে যায় । নিতান্ত রোবটিকভাবে রান্নাঘরের কাজকর্মে মন দেন । আবার ঘড়িতে দেখেন সকাল ৭.০০। মনে হয় যেন শত সহস্র বছর জুড়ে অপেক্ষা আর অপেক্ষা । এত সকালে সে কোথায় যেতে পারে । ইদানিং খুবই আজেবাজে কথা বলছে । বুকের ধুকপুকানিটা বেড়েই চলেছে ।

2. টানা প্রায় দু’ঘন্টা হাঁটার পর অপু পার্কটাতে প্রবেশ করলো, এই পার্কে সে এর আগে ঢোকেনি । কাছাকাছি একটা বেঞ্চ দেখে শুয়ে পড়লো । সিমেন্টের বেঞ্চে শরীর পড়তেই কনকনে একটা ঠান্ডা অনুভুতি । বা হাতের কব্জির একটু উপরে ব্যথায় টনটন করছে । গত সপ্তাহে সে নিজের হাত নিজে কেটে ফেলেছিল কোন এক উত্তেজিত মুহুর্তে । আজ তার একজন বিশেষ পাওনাদারকে টাকা দেবার কথা, আসলে কথা বলতে কোন উপায় না দেখে আন্দাজে একটা ডেট বলে দিয়েছিল । দেখতে দেখতে সে তারিখটাও চলে এসেছে। আজ সে কি বলবে । কি অজুহাত দেবে? ভাবতে ভাবতে চোখ বুজে আসে গতরাত্রির সব পলাতক ঘুমেরা ।

3. অপুর বাবা ঘুম থেকে উঠলে যন্ত্রণা আরো বাড়ে । তাকে আপাতত জানানো যাবে না। তাছাড়া তিনি এত হৈচৈ করবেন যে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে যাবে । তিনি ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করছেন । কাকগুলো আজ এত তারস্বরে চিৎকার করছে কেন? বিড়ার টা কাঁদছে নাকি? তার গা ছমছম করে ওঠে । টেনশনে বুক কাঁপা বাড়তে থাকে, সেই সাথে শ্বাসকষ্ট । ইনহেলারের পাফে ওঠেনা । একটু বাতাস দরকার । তীব্র শ্বাসকষ্টে বুকের ভিতর শাঁ শাঁ আওয়াজ হচ্ছে । জানালা খুলে দিলেন। মাথায় খানিক তেলপানি দিলেন । শরীর তিরতির করে ঘামছে ।দমটা যেন বের হয়ে যাবে এক্ষুনি । তিনি বিরবির করে দোয়া-কালাম পড়তে থাকেন। ঘড়িতে তখন সকাল ৮.০০ টা ।

4. লোকজনের চলাচলে অপু ঘুম ভেঙ্গে তাকাতেই দেখে একজোড়া বয়স্ক দম্পতি হাঁটছেন। মনে পড়ে যায় বহ্নিলতার কথা। সেও একসময় অপুর বাহু আকড়ে ধরে এভাবে হেঁটে বেড়াত। কারনে অকারনে কত কিছুই না হত! লাগামহীন কর্পোরেটি দৌরাত্মের কোন এক রেসারকে সে অবলীলায় গ্রহন করে নিয়েছে অপুর সকল দীনতাকে উপেক্ষা অথবা অবজ্ঞা অথবা নিশ্চিত নিরাপত্তার জন্যে । হেলাল হাফিজের পৃথক পাহাড় কবিতাটি মনে মনে সে আওরায় -
আমি আর কতটুকু পারি ?
কতটুকু দিলে মনে হবে দিয়েছি তোমায়
আপাতত তাই নাও যতটুকু তোমোকে মানায় ।

ওইটুকু নিয়ে তুমি বড়
বড় হতে হতে কিছু নত হও
নহ হতে হতে হবে পৃথক পাহাড়,
মাটি ও মানুষ পাবে, পেয়ে যাবে পৃথক পাহাড় ।

আমি আর কতটুকু পারি ?
এর বেশী পারেনি মানুষ ।

5. সকাল ৯.০০ টা । এখনো অপু ফিরছে না । এ মাসের বাড়িভাড়াটা এখনও দেয়া হয়নি। পেপারটা গত মাসে বাদ দিয়ে দিয়েছে। কাজের বুয়াকেও আসতে নিষেধ করে দিয়েছে। ব্যথাটা সারা বুকে ছড়িয়ে পড়েছে। অপুর বাবাকে সে প্রাণপনে ডাকার চেষ্টা করছে কিন্তু গলা দিয়ে স্বর বেরুচ্ছে না ।

6. এইসব না পাওয়ার হিসেব করতে করতে বড্ড ক্লান্ত লাগে অপুর । পালাবার মত কোন গুহা কি এ পৃথিবীর কোথাও অবশিস্ট আছে ? ভীষন বিষন্ন মনে নির্বিকার ভঙ্গিমায় তাকিয়ে থাকে শুধু । তাকাতে তাকাতেই দেখা হয়ে ওঠে নতুন কিছু । প্রজাপতির মত শিশুগুলো কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ছুটে চলেছে ভবিষ্যতের পানে, স্কুল পড়ুয়া তিন বন্ধু কাঁধে হাতে দিয়ে কিছু একটা নিয়ে হাসছে । যেন স্বর্গীয় সে হাসি । এলামেলো ভঙ্গিমায় ঘাষফড়িং উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে জীবনের জয়গান গাইছে যেন, নরম কচি ঘাসে পা পড়তেই পেলব ভালবাসায় মনের সব নৈরাশ্য উবে গেল । সকালের এই মৃদুমন্দ স্নিগ্ধ হাওয়া, ফুল, পাখি, রঙ, শিশুদের হাসি বেচে থাকার উৎস হিসেবে যথেষ্ট । কয়েকজন বয়স্ক বন্ধুদের ধোয়া ওঠা গরম চা খেতে দেখে মায়ের কথা মনে পড়ল । নিশ্চয়ই সে উতলা হয়ে উঠেছে । তাকে নিয়ে মাকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয় এটা সে বোঝে । তার এই নি:স্ব রিক্ত জীবনে বহুবার প্রতিজ্ঞা করেছে মাকে সে কোন কষ্ট দেবেনা, তবুও দিয়ে ফেলে । সে উঠে পড়ে আবার পা বাড়ায় ৯০০ স্কয়ার ফুটের দিকে । দেখা যাক তবে ................ আবার..................

7. সকাল ১১.০০ টা । অপুর বাবা অপুকে খুঁজছে তার মায়ের শরীর প্রচন্ড খারাপ করেছে। আর ঠিক তখনই ডোর বেলটা বেজে উঠল ।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:৩১

আপনার আপন বলেছেন: we have many family like your story

০৯ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৫:২০

কানিজ ফাতেমা বলেছেন: ঠিক তাই, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।

২| ১০ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:৫২

হাসান মাহবুব বলেছেন: শক্তিশালী লেখা। চারিদিকে এত পরাজয়, ভালো লাগে না দেখতে। অধ্যায়গুলোর নাম ওয়ান, টু না দিয়ে এক, দুই দিলে ভালো হতো।

৩| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:১১

কানিজ ফাতেমা বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ । এক, দুই দিয়েছিলাম তবে পোষ্ট করার সময় বার বার ওয়ান, টু হয়ে যাচ্ছিল ।

৪| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:৫৭

সোহাগ সকাল বলেছেন: গল্প অনেক ভালো লেগেছে। মাঝেমাঝেই আপনার ব্লগে আসবো, নতুন গল্প যেন ঠিকঠাক ভাবে নিয়মিত পোস্ট করা হয়। শুভ কামনা।

১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:২৭

কানিজ ফাতেমা বলেছেন: উৎসাহিত হলাম । ভাল থাকবেন ।

৫| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ৩:৩৩

শাহরিয়ার কবীর বলেছেন: গল্প পড়ে ভালো লেগেছে ।

কবিতা লিখুন
আপনার কবিতা পড়ি না, অনেক দিন।

১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:২৮

কানিজ ফাতেমা বলেছেন: শিঘ্রই পাবেন । ধন্যবাদ এবং শুভ কামনা ।

৬| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ ভোর ৬:৪৬

মেহেদী রবিন বলেছেন: সুন্দর গল্প

১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:২৯

কানিজ ফাতেমা বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ । ভাল থাকুন ।

৭| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:১৫

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: গল্প খুব ভাল লাগলো , ইয়ে প্রথম এলাম একটু চা কফি------ :P

৮| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:৩৯

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: হে দারিদ্র তুমি মোরে করেছো মহান!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.