![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময় আর ভৌগলিকত্ব ভেদে সকল তৃষিত যাযাবরই বৃষ্টি নির্ভর বর্ষার কাছে এক ফোঁটা জল চায় । .......................অগ্রথিত এ অণির্বান আমার বংশানুক্রমিক ।।
কি ভীষন জ্যাম ! অসহ্য জ্যামে বসে নীহারিকা তার কলিগ হুমায়রার সাথে নতুন একটি আইডিয়া নিয়ে কথা বলছিল । যদি এমন করা যেত জ্যামের জন্য প্রতিটি যাত্রী জ্যাম ভাতা পাবে আর আসা এবং যাওয়ার সময়টুকু অফিস টাইম হিসেবে কাউন্ট হবে । আফটার অল আমরা অফিসের উদ্দেশ্যেই সময় ক্ষেপন করছি । রাত্রে বাসায় ফিরতে দেরী হলে সাধারনত যতটুকু সময় ব্যায় হবার কথা তা বাদ দিয়ে অতিরিক্ত সময়টুকু অধিকাল ভাতা প্রাপ্য হবে । এটাকে ভাতা না বলে সরকারের ব্যর্থতার জন্য জরিমানা বলা যেতে পারে । চীন বা ভারতের মত জনবহুল দেশে যদি এরকম বিপর্যয় না থাকে তাহলে আমাদের মত এত ছোট একটা দেশে কেন এই জঘন্য অবস্থা? এতে করে জ্যামটাকে আর অতটা অসহ্য মনে হবেনা । আয়ের এরকম বিকল্প একটি উৎস পেলে মন্দ হয়না ।
হুমায়রার মতে এতে অবশ্য দুটি পরিণতি হতে পারে । প্রথমত: এই জ্যাম আর কোনদিন শেষ হবেনা । অধিকাল ভাতার জন্য কোন গাড়ীই তার জায়গা থেকে নড়বে না । অথবা সরকার একটি বিরাট অংকের জরিমানা থেকে বাচঁতে যেভাবে হোক জ্যামের আধিক্য রোধ করবে ।
এইসব সময় কাটানো যাবর মূলক কথাবার্তা বলতে বলতে হঠাৎ নাকে এসে লাগে একটি অতি পরিচিত গন্ধ । নীহারিকা ওড়নার আচঁল নাকে চাপা দিল কিন্তু এ গন্ধ যাবার নয়। সে তার নি:স্বাস বন্ধ করে রাখল । শ্বাসকষ্টের সমস্যার দরুন দম বন্ধ রাখায় দ্রুতই ক্লান্তি অনুভব করলে বুকের ভিতর ড্রামের বিটিং শুরু হয় ধূপ ধূপ ধূপ......... । গন্ধটা আকাশ পাতাল এক করা সুতীব্র ব্যাথা নিয়ে আসে । প্রথমে বুকে সেখান থেকে মাথায় অবেশেষে চোখে গিয়ে শেষ হয় । সামনের সবকিছু ঝাপসা হয়ে উঠতে থাকে । মাঝেই মাঝেই সে এ গন্ধটা টের পায় । সে নিশ্চিত এ গন্ধ কেবল সেই টের পায় অন্য কেউ নয় । তাই এটা নিয়ে সে কখনো কারো সাথে শেয়ার করে না। গন্ধমূলক ঝড়ো হাওয়ার অস্থির ধূলায় শূণ্যতায় পেয়ে বসে তাকে।
সেদিন নিউমার্কেটে হঠাৎ করে এরকম নাকে এসে লাগে দু:খের তীব্র, নোনতা, ঝাঝালো গন্ধ । তার আগেও বহুবার সে এ গন্ধ পেয়েছে। আগোরায় যখন সে এটা পেল; এমাথা ওমাথা তন্ন তন্ন করে ফেলল, উৎসের দেখা নেই । কেন এটা তাকে এভাবে তাড়িয়ে বেড়ায়? কিন্তু প্রথম যখন সে এটার সাথে পরিচিত হয়েছিল, তখন খুব পছন্দ ছিল । এক অদ্ভুদ বিবশ মাদকতায় ডুবে থাকতো অবিরত ।
সেই একই গন্ধ তার কাছে নরকের যন্ত্রনা নিয়ে এসেছে। জ্যামটা ছাড়তেই গাড়ীটা আসাদ গেট হয়ে সোজা বের হয়ে যেতে গন্ধের তীব্রতাটা কমে আসে সেই সাথে ব্যাথাটা ছড়াতে থাকে সমস্ত চেতনায় । কোনভাবেই চোখটাকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না । তার গা ঘেষে বসে আছে হুমায়রা । তাকে কিছুই বুঝতে দেয়া যাবেনা । অন্যেরা যদি সবকিছু বোঝেও তাতেও বা কি আসে যায়! আবার কেউ যদি কিছু না বোঝে তাতেও বা কি আসে যায়! যা কিছু আসে যায় সবটাই নিজের একান্ত । ব্যাথার মত একান্ত বোধ করি আর কিছুই হয়না কোনকালে ।
আজ প্রায় পাঁচ বছর ধরে এই যন্ত্রণাদায়ক গন্ধটা বয়ে বেড়াচ্ছে । সে এখন জীবনে কিছুটা স্থির হয়েছে । দৃশ্যত যতটুকু দেখা যায় । ভীতরের অস্থিরতা, রাত্রির উৎপাত, ভেজা বালিশের নালিশ সে এখন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রন করতে শিখেছে । নিজেকে বিজয়ী ঘোষনা করার দুর্দান্ত প্রয়াসে এক মহাযুদ্ধ । রাত নেই, দিন নেই নিজেকে নিজে প্রমান করছে, সে পারে, তাকে পারতে হবে।
একটি মানুষ, একটি মানুষের লাম্পট্যকে সে ও তো প্রশ্রয় দিয়েছিল । সেই দায়ভার তো তাকে নিজেকেই নিতে হবে । কাউকে ভালবাসা যেমন অন্যায় নয়, তেমনি তাকে চোখ বুঁজে বিশ্বাস করাটাও বুদ্ধিমত্তা নয় । হয়তো সম্পর্কের মাঝে এমন অনেক বিষয় ছিল যেগুলো সে নোটিশ করেনি, এটাতো সচেতনটার পরিচয় নয় । সে যদি তার মনের ফটোকপিটা তাকে দিত তবে হয়তো মানুষটার শরীরের গন্ধটা তাকে অশরীরীর মত তাড়িয়ে বেড়াত না । মানুষটা ভাল বা খারাপ থাকুক তাতে আজ আর নীহারিকার কিছু্ই আসে যায় না । মনের ভুলেও ফিরবার সাধ জাগেনা । আত্মগ্লানিতে ভুগতে ভুগতে নীহারিকা শিখেছে, মানুষ সবথেকে ভালবাসে নিজেকে । নিজেকে অপমানিত, প্রতারিত হতে দেখলে সে নিতে পারেনা যেমনটা সেও পারেনি । জোরাজুরি করে আর যাই হোক ভালবাসা বা ভালবাসার মানুষকে বশ করা যায়না । সিমপ্লিসিটি আর ভালমানুষী দিয়ে কেবল ভাল মানুষই হওয়া যায় কোন কিছু এচিভ করা যায়না ।
গন্ধটা স্মুতিবহুল ব্যাথায় রুপান্তরিত হয়ে ছ্ড়াতে থাকে। মেডিটেশনরে বিদ্যা প্রয়োগ করে সে আনন্দের কোন স্মৃতি হাতড়াতে থাকে । এই মুহুর্তে তার মনোযোগটা অন্যদিকে ডাইভার্ড করা দরকার । সব স্মুতি চাপা পড়ে যায় । মনে পড়ে না কোন আনন্দের ঘটনা । সবকিছু ফিকে হয়ে আসে । সুনামীটা প্রতিরোধ হচ্ছেনা । চেষ্টার তোলপাড় চলতে থাকে অন্ত:পুর জুড়ে ।
কৈশরে তার একটি প্রিয় জায়গা ছিল । নিতান্তই মফ:স্বলিক । কয়েকবার গভীর শ্বাস নিয়ে নিহারিকা চোখ বুজে চলে যায় সেই বেলাভূমিতে । ধান ক্ষেতে কচি শীষ, একটা দু’টা পাখি উড়ে যায় শেষ বিকেলের আকাশে আকাশে, মাঝে মাঝে জলাশয় । জলাশয়ে ভাসছে কচুরীপানা । কচুরীপানার ফাঁক গলে স্বচ্ছজলে ফুর্তিবাজ মাছেরা ছুটে বেড়া্চ্ছে এদিক সেদিক। কতক কচুরীফুল ঝিরঝির হাওয়ায় দোল খাচ্ছে । সাদা আর নীলের মিশেলে কচুরীফুলের পাপড়িগুলো যেন অলেৌকিক কারো চোখ । সে চোখে মিশে থাকে আদর, আশ্বাস, অমীয় ধারা। অস্তগামী গাঢ় কমলা রঙ এর সূর্য্যটা তার শেষ আভায় ডুবে যেতে থাকে ।
ডুবন্ত নক্ষত্রের চিহ্ন ধরে নীহারিকা বেমালুম ভূলে যেতে থাকে বিশ্বাসের বাতিঘর অথবা অবিশ্বাসে অতলান্ত সূতা কাটা ঘুড়ির কথা........................।
০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:৩১
কানিজ ফাতেমা বলেছেন: পাঠ এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ । শুভ কামনা ।
২| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:১৫
হাসান মাহবুব বলেছেন: বেশ ভালো লাগলো রহস্য ফ্লেভারটা।
০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:৫৭
কানিজ ফাতেমা বলেছেন: রহস্য লেখার একটু চেষ্টা করলাম । মন্তব্যের জন্য ভাললাগা রইল ।
৩| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:৫০
কানিজ রিনা বলেছেন: আসলে নিজের তৈরি করা গন্ধ নিজেই সয্য
করতে হয়। খুব ভাল লাগল।
০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:৫৪
কানিজ ফাতেমা বলেছেন: একদম ঠিকই ধরেছেন । পাঠ এবং মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা । ভাল থাকুন সতত ।
৪| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:০৫
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বাহ!
বেশতো ...লেখায় টেনে ধরে রাখার মাদকতা আছে! আছে দেখার অনুভবরে আর প্রকাশের নান্দনিকতা
ভাল লাগল....
গভীর শ্বাস নিয়ে নিহারিকা চোখ বুজে চলে যায় সেই বেলাভূমিতে । ধান ক্ষেতে কচি শীষ, একটা দু’টা পাখি উড়ে যায় শেষ বিকেলের আকাশে আকাশে, মাঝে মাঝে জলাশয় । জলাশয়ে ভাসছে কচুরীপানা । কচুরীপানার ফাঁক গলে স্বচ্ছজলে ফুর্তিবাজ মাছেরা ছুটে বেড়া্চ্ছে এদিক সেদিক। কতক কচুরীফুল ঝিরঝির হাওয়ায় দোল খাচ্ছে । সাদা আর নীলের মিশেলে কচুরীফুলের পাপড়িগুলো যেন অলেৌকিক কারো চোখ । সে চোখে মিশে থাকে আদর, আশ্বাস, অমীয় ধারা। অস্তগামী গাঢ় কমলা রঙ এর সূর্য্যটা তার শেষ আভায় ডুবে যেতে থাকে ।
১৭ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:১৩
কানিজ ফাতেমা বলেছেন: এমন মন ভাল করা মন্তব্যের জন্য একরাশ ভাললাগা আর শুভ কামনা রইল ।
৫| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৫:৩৫
Shahin Alam Riyad বলেছেন: নিশ্চিতভাবে সরকার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। জনগনও পালন করে নি দুইটা দায়িত্ব। ১. চাপ দিয়ে সরকারকে দায়িত্ব পালনে বাধ্য করা। ২. ট্রাফিক আইন মেনে জ্যাম কমতে সাহায্য করা।
০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৫২
কানিজ ফাতেমা বলেছেন: মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ । তবে আমার মনে হয় ট্রাফিকদের হাইলি ট্রেইনড আপ করা উচিত । এদের অদক্ষতার জন্যেও জ্যামের আধিক্য সৃষ্টি হয় ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:৪২
রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
অদ্ভুত খুবই।
তবে জ্যামের আইডিয়াটা জোস ছিল।