নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শেষ বিকেলের টুকরো স্মৃতি

ফাতমা তুজজোহরা

ফাতমা তুজজোহরা › বিস্তারিত পোস্টঃ

মায়াবতী

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:৪০

আচ্ছা! অপ্সরী কি এত সুন্দর হয়?? ইমমম না মনে হয়। অপ্সরীরা ও মনে হয় এত সুন্দর হয় না।
আমি কি মেয়য়েটার প্রেমে পড়ে গেলাম নাকি!! নানা এসব কি বলছি আমি?? তার ওপর যে আমার কোন অধিকার নেই।মেয়েটাকে আর দেখবো না,বেশি দেখলে মায়া জড়িয়ে যাবে,তখন সে মায়া ছাড়ানো অনেক কষ্টকর হবে।।তাইবলে এখন কি কষ্ট কম হচ্ছে???

রাত ২টা।সবাই ঘুমাচ্ছে, অধরা ও ঘুমোচ্ছে। সে খুব খুশি। সব কিছু তার প্লান মোতাবেকই হচ্ছে। কাল সকাল হলে সে তার বন্ধুদের সাথে কক্সবাজার যাবে।জীবনের হয়তো শ্রেষ্ঠ কিছু মুহুর্ত কাটাবে সেখানে।তাকে অনেক দুর যেতে হবে তাই তার ঘুমটা অনেক জরুরি।সে প্রশান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে।

সে ফুলশয্যার খাটে শুয়ে আছে।বিয়ের সাজ টা পরেই ঘুমাচ্ছে। অসম্ভব মায়াবতী লাগছে তাকে।

আমি ইজি চেয়ারে বসে আছি।চাইলে এখানে বসেই ঘুমাতে পারি।জীবনের বহুরাত এতে ঘুমিয়েই কাটিয়েছি। সারাদিনে অনেক ধকল গেছে,তার ওপর আমি বড্ড ঘুম কাতুরে ছেলে।তাও কেন জানি ঘুম আসছে না।শুধু অধরাকে দেখতে ইচ্ছে করছে। আজকের রাতটাই তো শুধু।এর পর হয়তো তার সাথে আর কখন দেখাই হবে না।দু'চোখ ভরে শুধু তাকে দেখতে ইচ্ছা করছে।শুধু একটা রাতের স্মৃতি নিয়েই যেন কাটিয়ে দিতে পারি সারা জীবন।

তাকে দেখতে দেখতে মনে পড়ে গেল এংগেজমেন্টের দিনের কথা। অধরা আমার বসের একমাত্র সুন্দরী ললনা। বসের ধারনা তার মেয়ের জন্য আমি একমাত্র পার্ফেক্ট জামাই।কি জানি আমার মত সাধাসিধে ছেলের ভেতর কি দেখেছিল!!
যেহেতু অধরা ও দেখতে শুনতে ঠিকঠাক। ঠিকঠাক কি অসম্ভ সুন্দরী তাই আমার পরিবারের ও কোন অাপত্তি ছিল না। আমি ছিলাম বেজায় খুশি। আমার মত একটা সাধারন ছেলের জীবনে এমন এক অসাধারন রাজকন্যার অাগমনে।
আংটি বদলের পর অধরা তার বাবাকে জানায় সে একাকি আমার সাথে কথা বলতে চায়।আমি ও ঠিক এমন একটি সুযোগ খুজছিলাম, তাকে আরো একটু কাছ থেকে জানার সুযোগ।

আমাদের কে একটা বেলকনিতে বসতে দেয়া হল। ছোট ছোট লতা বাহারি গাছ আর নানা ফুলে সাজানো বেলকনি,বসলেই রোম্যান্টিক মুড অন হয়ে যাবে।
ঠিক কি বলে কথা শুরু করবো বুঝতে পারছিলাম না,খুব আনইজি লাগছিল।আমার সমস্ত চিন্তা,সংশয় দুরে ঠেলে অধরাই কথা শুরু করলো।কিন্তু সে যা বল্লো তা অামি স্বপ্নে ও ভাবিনি ।

তার কথার সারাংশ এই যে,সে এখন মোটেও বিয়ে করতে রাজি নয়, সে তার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করতে চায়। তাছাড়া যেদিন বিয়ের ডেট ফিক্সড করা হয়েছে,তার পরের দিন তার কক্সবাজারে ১মাসের একটা ট্রিপ আছে।সেটা সে মিস করতে চায় না।
কথা গুলো শুনে মনটা ভেংগে টুকরো টুকরো হয়ে গেছিল।তখন ও ভাবিনি এখানেই কষ্টের শেষ না।
তার ইচ্ছার কথা, তার অমতের কথা তার বাবাকে জানাতে বললে সে জানালোঃ সে দু'দুদিন না খেয়ে ছিল বিয়ে না করার জন্য, আর তার বাবা ৪ দিন না খেয়ে ছিল তাকে রাজি করানোর জন্য। সুতরাং বাধ্য হয়েই অধরাকে বিয়ে টা করতে হচ্ছে।

তখনো নিজেকে সান্তনা দিয়েছি,থাক! হয়তো সময়ের সাথে সাথে অধরার মন জয় করেনিতে পারবো।
কিন্তু অধরার পরের অাবদারটা শুনে বুকের ভেতর হু হু করে কেদে উঠলো।পুরুষ মানুষ বলে হয়তো কাদতে পারিনি, আবার অধরার প্রথম অাবদার তাই ফেলতে ও পারিনি।
সে চায়,বিয়ে টা সে করবে,কিন্তু বিয়ের পরের দিনই সে চলে যাবে কক্সবাজার। ১মাস পর ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেবে। ততদিনে এখান কার পরিবেশ ও ঠান্ডা হয়ে যাবে, তখন সে তার বাবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবে। তার অারো একটা ইচ্ছা,সে যাবার অাগে প্লানটা যেন আমি কাউকে না বলি।
সেদিনের পর থেকে প্রতিটা মুহুর্ত কিভাবে কেটেছে তা শুধু আমিই জানি।

এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখটা বুজে গেছে টের পাইনি।হঠাৎ অধরার কথায় ঘুম ভাংলো।কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছিল,হয়তো কোন বন্ধু।ফোন রাখার পর দেখলাম ওর মুখটা মলিন হয়ে গেছে।ওর মলিন চেহারাটা দেখে আমার মনটা ও খারাপ হয়ে গেল।জিজ্ঞেস করলাম any problem? জানালোঃ ট্রিপটা একদিন পেছানো হয়েছে।
প্রথমবার স্বার্থপরের মত অধরার কষ্ট হচ্ছে দেখে ও মনটা অানন্দে ভরে উঠলো।আরো একটা দিন ওর সাথে কাটানো যাবে। সারা দিনে একটা মুহুর্ত ও ওর কাছ থেকে নড়বো না।লোকে বউ পাগল বললে বলুক।আমি ওর সাথে প্রতিটা মুহুর্ত উপোভোগ করতে চাই।

সারাদিনে অাবিষ্কার করলাম মেয়েটা শুধু রুপোবতী না,মায়াবতী, হাসি খুশি, আন্তরিক মিশুক একটা মেয়ে। অামার ভাই বোন দুইটা তো অধরার ডাই হার্ট ফ্যান হয়ে গেছে।
আমি শুধু নিরব দর্শকের মত ওদের কান্ড কারখানা দেখছি। মেয়েটার ওপর বড় রাগ জমছে। কাল তো সে চলেই যাবে।তাহলে সবার মায়া কেন বাড়াচ্ছে সে?

আমি তার দিকে যে চোরের মত চেয়ে থাকি ব্যাপারটা সে খেয়াল করেছে।আমার দিকে তাকালে আমি চোখটা সরিয়ে নেই। আমার চোখের এ লুকোচুরি দেখে ও কেমন জানি একটা দুষ্টু হাসি দেয়।আর সে হাসিটা যেন সারা মুখে ছড়িয়ে যায়,তখন মেয়েটাকে আরো মায়াবি লাগে।মেয়েটা কি যাবার আগে আমাকে অন্ধ করে রেখে যাবে নাকি? এত মায়া দেখলে যে আমি অন্ধ হয়ে যাব।

মায়াবতী কে দেখতে দেখতে দিনটাযে কিভাবে কেটে গেল টেরই পেলাম না।নিজের ভাগ্যের উপর বড় মায়া লাগছে, নয়তির উপর অভিমান করতে ইচ্ছে করছে।অধরা যখন ভাগ্যে ছিলই না তবে দু'দিনের জন্য কেন এলো!! এসব ভাবতে ভাবতে অধরার আগমন
- কি ব্যাপার? দেবদাসের মত লাইট অফ করে বসে আছেন যে??
বলে আবার সেই দুষ্টু হাসি দিল। আচ্ছা! মেয়েটাকি সত্যিই বুঝছেনা আমার কষ্ট হচ্ছে? নাকি বুঝেও বুঝছে না।না বোঝাই ভাল। আমি চাইনা ও কোন গিলটি ফিল নিয়ে যাক।

আমাকে আজ ও চেয়ারে শুতে দেখে বললোঃ একি !আপনি আজ ও চেয়ারে ঘুমোবেন নাকি? আজ আপনি খাটে ঘুমান। আমিঃ না ঠিক আছে,তোমার রেস্টের দরকার আছে।
- আসলে কালকের এক্সাইটমেন্টে আমার না ঘুম ই হবে না।চলেন দু জনে গল্প করি।
বারান্দাতে বসে দুজনে চাদনি রাতের আবছায়া আলোতে গল্প করলাম। আমার তেমন কিছু বলা লাগেনি ও ই সব বলেছে, আমি শুধু মুগ্ধ নয়নে ওকে দেখেছি। এমন ভাবে গল্প করছিল,যেন আমি ওর কত আপন। ওর ভাললাগা, পছন্দ,অপছন্দ,ফার্স্ট ক্রাশ........কত গল্প !।
গল্প করতে করতে কখন ঘুমিয়ে গেছি জানি না।। চোখ মেলে দেখি মায়াতি তার সমস্ত মায়াভরা মুখ নিয়ে আমার কাধে ঘুমাচ্ছে।সময়টাকে ওখানেই আটকে রাখতে মন চাইছিল।তারপর ভাবলাম ও যদি নিজেকে এ অবস্থায় দেখে খুব আনিজি ফিল করবে।ওকে তুলে বিছানায় রেখে এলাম।
এখনো খুব ভোর, কেউ জাগেনি।বেরিয়ে পড়লাম ।কোথাও কোন কাজ নেই তবু ও বেরিয়ে পড়লাম।অধরার চলে যাওয়া যে চোখের সামনে দেখতে পারবো না, এ পর্যন্ত নিজেকে বহু ভাবে সামলেছি,শেষ মুহুর্তে যদি সামলাতে না পারি!

সারাদিন ফোন অফ ছিল।মন চাইছে একবার ফোন করে খবর নেই,কতদুর পৌছেছে।না থাক!! সে হয়তো তার বন্ধুদের সাথে এখন মজা করছে,দু'দিনের অভিজ্ঞাতা শেয়ার করছে।আচ্ছা ও কি কখনো বুঝবে আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম।
এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়েছে টেরর পাইনি।বাসায় যাওয়া দরকার,ওখানের কি অবস্থা দেখা দরকার।অধরা নিশ্চয় যাবার আগে বলে গেছে আমি আগে থেকেই ওর প্লানটা জানতাম। মায়ের কি অবস্থা কে জানি!!

রাত ১১টা।নিরব সারা বাড়ি,এমন ঘটনার পর নিরাবতা অস্বাভাবিক কিছু না, মা দেখেও কিছু বললেন না,বুঝলাম প্রচুর রেগে আছে।কোনদিকে না দেখে সোজা ঘরে চলে গেলাম।একটা ঘুম দিতে হবে,জানি ঘুম আসবে না তবুও ঘুমাতে হবে।

ঘরে ঢুকতেই একটা অাবছায়া অবয়ব আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদা শুরু করলো।অধরা?? না। তা কি করে হয়, ওতো এখান থেকে অনেক দুরে।এযে সত্যিই অধরা। তবে কি ও যায়নি! যায় নি কেন? মা ওকে যেতে দেয়নি।ইশ!! আমি কেন চলে গেলাম? আমি থাকলে তো ওকে কেউ বাধা দিতে পারতো না,মাঝে মাঝে এত স্বার্থপর হয়ে যাই কেন আমি?

নিজেকে একা একা প্রশ্ন করে যাচ্ছিলাম।হঠাৎ অধরার কান্নার শব্দে ঘোর কাটলো। জিজ্ঞেস করলাম তুমি যাওনি কেন?
প্রশ্ন করতেই বুকে কিলঘুসি মারা শুরু করলো।মায়াবী চোখ দুটো ফুলে গেছে,বোঝা যাচ্ছে সারাদিন কেদেছে।
- কি হয়েছে? কাদছো কেন? আর এখনো যাওনিইবা কেন?
- কি হয়েছে মানে?? নিজে কাদিয়ে আবার জিগেস করছে?
-(অবাক হয়ে জিগেস করলাম) আমি কি করেছি?
- আমি কি করেছি!! তোমার জন্য শুধু তোমার জন্য ট্রিপটা আমার মিস হল।সেই কখন থেকে গুছিয়ে বসে আছি।
- তো!! যাও নি কেন? কেউ বাধা দিয়েছিল।?
- হুম
- কে?
- তুমি।।। তোমাকে একবার বাই না বলে যেতাম কি করে? তোমাকে কতবার ফোন দিয়েছি।
ভেবেছি এই বুঝি তুমি এলে, এই বুঝি তুমি আমায় ফোন দিবে। কিন্তু তোমার তো কোন খোজই নেই।

বুঝতে আর বাকি রইলো না মায়াবতি নিজেও মায়ার জালে আটকা পড়ে গেছে।সে ও এ জাল ছিড়ে বেরিয়ে যেতে পারেনি।প্রশ্ন করলাম
- শুধু আমাকে বাই বলার জন্যই রয়ে গেলে?
- হু
-শুধুই বাই!
-অতো প্রশ্ন করো নাতো, বলেই আমাকে জড়িয়ে আবার কাদতে শুরু করলো।ভালবাসার কান্না।

তখন নিজেকে পৃথিবির শ্রেষ্ঠ সুখি মানুষ মনে হচ্ছিল,আর অনুভব করছিলাম ভালোবাসা প্রথম পরশ।।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.