নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফয়েজ আহমেদ সৈকত এর বাংলা ব্লগ :)

ফয়েজ আহমেদ সৈকত

জীবন মানেই সুখ আর বেদনা, যাতে সবাই খুজে বেড়ায় বেঁচে থাকার প্রেরণা :)

ফয়েজ আহমেদ সৈকত › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প : "জোনাক পোকা ও নীল জানালা"

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১৭

আরিয়ান, স্বপ্নবিলাসী এক ছেলে। এই ব্যস্ত শহরের শান্ত এক এলাকার ছোট গলির একেবারে শেষ প্রান্তে তার বাস। আড্ডা, বন্ধু আর টুকটাক পড়ালেখায় চলে তার জীবন। স্বপ্নের দৌড়ে এখনো সে ক্লান্ত সময় কাটায়। প্রায় প্রতিদিনই বিকালে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বাসা থেকে বের হয় সে। ফিরে সন্ধার পরপরই।



তার গলির এক কোনে নতুন একটি একতলা বাড়ি নির্মান হয়েছে। বাড়ির পেছন দিকটি তার গলির দিকে । জানালাগুলো সম্পুর্ণ নীল কাছে ঘেরা। সুন্দর এই বাড়িটি তাকে খুব আকর্ষন করে , অদ্ভুত আকর্ষণ। প্রতিদিন বিকেলে যখন সে গলির পথে বের হয়ে যায় সে ঐ নীল কাচের জানাগুলোর দিকে তাকায়। বিশেষ কোন কারনে নয়। জানালার কাচের মাঝে তার প্রতিফলিত চেহারা দেখার জন্যই তাকানো। মাঝে মাঝে এক দুই মিনিট সময় নিয়ে ঐ জানালার দিকে তাকিয়ে সে তার লম্বা চুলগুলোও ঠিক করে নেয় !!!! এই বাড়িটি নির্মাণ হওয়ার পর শেষ কবে সে তার বাসার আয়নার চেহারা দেখেছিলো মনে নেই!!! কারন প্রায় প্রতিদিনই এক মুহুর্তেই সে তার প্রতিফলিত চেহারা ঐ নীল কাচে দেখতে পারতো।



প্রায় সন্ধ্যায়ই আরিয়ান বন্ধুদের নিয়ে এই ব্যস্ত শহরের কোন এক রাস্তা ধরে হারিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না! কারন পাখিদের মতো তারও যে নীড়ে ফেরার বাধ্যবাধকতা রয়েছে । একদিন সন্ধ্যায়, বন্ধুদের সাথে রাস্তার ফুটপাত ধরে হাঠতে হাঠতে একটি দু তিন তলা বাড়ীর কাছে এলো। পাশেই অন্ধকারে তারা যা দেখলো তাতে তারা এক স্বপ্নের রাজ্যে প্রবেশ করলো। হাজার হাজার জোনাকি পোকা !!! এতো এতো জোনাকি পোকা এর আগে তারা কখনো দেখিনি!!! এতো সুন্দর দৃশ্য তাদের দু চোখে বিস্বাস করতে কস্ট হচ্ছিলো। কিন্তু হাতে নেয়ার পর তাদের বিস্বাস হলো। আরিয়ান একটি ভাংগা কাচের পাত্র জোগাড় করলো। বাসায় নেয়ার জন্যে তার ভেতর দুটি জোনাক ভরলো। বন্ধুদের বিদায় জানিয়ে সে দুটি জোনাক নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলো। আরিয়ান একা একা বাসার দিকে হাঠছে আর পাত্রের ভিতরের জ্বলন্ত জোনােকর দিকে তাকাচ্ছে........



বাসার কাছেই চলে আসলো আরিয়ান। ঐ সুন্দর বাড়িটির পাশ দিয়ে তার গলির দিকে ঢুকতেই একটা মিস্টি কন্ঠ তাকে পেছন থেকে ডাক দিলো .........



-এই যে শুনুন ?

(পেছন ফিরে আরিয়ানের অবাক হওয়া ছাড়া আর কিছুই রইলো না। কারন ঐ নীল জানালার ওপাশে যে এতো সুন্দরী একটি মেয়ে থাকতে পারে সে কখনো কল্পনাই করে নি। এতো সুন্দর মেয়ে সে এর আগে কখনো দেখে নি। মনে হচ্ছে আকাশের চাদ মাটিতে নেমে এসেছে। আরিয়ান নিশ্চিত হওয়ার জন্যে আকাশের দিকে তাকালো, না, ঐদিন আকাশে চাদ উঠে নি। সে মনে মনে নিশ্চিত হলো, হয়তো আকাশের চাঁদই নেমে এসেছে তার সামনের নীল কাচের জানালা ধরে !!!!!!)



আরিয়ানের নিস্তব্ধতা দেখে মেয়েটিও অবাক হলো.....মেয়েটি আবার জিজ্ঞেস করলো,



-কেমন আছেন?

-হুম...ভালো....আপনি কেমন আছেন?

-এইতো আছি একরকম।

-আপনি কি আমাকে চেনেন?

-হু চিনি। আপনাকে প্রায় ই আমার জানালার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখি। আপনি হয়তো আমাকে দেখেন না। কারন থাই কাচের বাহির থেকে কিছুই দেখা যায় না কিন্তু ভিতর থেকে বাইরের সবি দেখা যায়। তাছাড়া প্রায়ই আপনার চাহনি আমার চোখের উপর পরে।

-আমি দু:খিত। আমি আসলে জানতাম না যে এই নীল কাচের আড়ালে আপনার মতো কেউ থাকেন।

-না। ইট্স ওকে...! বাই দা ওয়ে, আমি ইশিকা। আপনি?

-আমি আরিয়ান ...আরিয়ান মাহমুদ :)

-আপনার নাম দুইটা নাকি? আরিয়ান, আরিয়ান মাহমুদ?

-না...একটু জেমস বন্ড স্টাইলে বললাম আর কি :)

-হাতে কি?

-জোনাকি পোকা।

-কোথায় পেলেন?

-পাশের একটা এলাকা থেকে ধরে আনলাম।

- ও আচ্ছা। আমার জোনািক অনেক পছন্দ।

-তাই নাকি?

-হুম।

( মেয়েটির মিস্টি কথা শুনে কাচের মধ্যে জোনাকি দুটি একটু বেশি লাফাচ্ছিলো......হয়তো জোনাকিরাও তার মিস্টি কথায় মুগ্ধ হচ্ছিলো)



মেয়েটি আবারো বললো...



-আচ্ছা কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?

-হ্যা বলেন।

-জোনাকি দুটি কি আমাকে দিতে পারবেন? পরে আপনি সময় করে ধরতে পারবেন কিন্ত আমি তো আর পারবো না।

-অবশ্যই ....আপনি নিতে পারেন। এই যে নেন। একটু সাবধানে রাখবেন কিন্ত। কাচের ঝারটি যদি ফেরত দিতে পারেন তবে ভালো হয়, কারন যদি আবার জোনাকি ধরতে যাই তবে কিসে জোনাকি ভরে রাখবো :)

-ওকে....সমস্যা নেই....আপনি যদি চান তবে এর চেয়ে আরো সুন্দর সুন্দর কাচের ঝার দিতে পারি।

-না ঠিক আছে .....আমার এই ভাংগাটা ফেরত দিলেই আমি খুশি হবো।

-ঠিক আছে। আমি যাই ...আম্মু ডাকছে। কাল এমন সময়ে যদি আপনি আসেন ভালো হয়....ঝাড়টি ফেরত নিতে।

-ওকে আসবো।

-জোনাকিগুলোর জন্য অনেক ধন্যবাদ।

-ওয়েলকাম।



( ইশিকা নীল কাচের জানালাটা বন্ধ করে ভিতরে চলে গেলো। ইশিকা চলে যাওয়ার পর আরো অনেক্ষন ঐ জানালার পাশে আরিয়ান দাড়িয়ে ছিলো ......অনেক্ষণ .....)



বাসায় ফিরতেই আরিয়ানের প্রচন্ড জ্বরে ধরলো। টানা তিন দিন সে জ্বরের কারনে বাসা থেকে বের হতে পারলো না। এদিকে ইশিকা তার জানালার পাশে আরিয়ানের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। কিন্তু কিছুতেই তার মন স্থির থাকতে পারলো না। ইশিকা বুঝতে পারলোএকটা অনুভুতি আরিয়ানকে দেখার জন্যে তাকে অস্থির করে তুলছে। কিন্তু সে বুঝতে পারলো না এই অনূভুতিটা আসলে কি। তৃতীয় দিনে তার জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে ইশিকা কেদেই ফেললো।



চতুর্থ দিনে আরিয়ানের জ্বর কিছুটা কমলো। সে সন্ধ্যার দিকে একটু বের হলো। তার গলা কিছুটা ধরা। মাথায় হালকা বেথাও আছে। রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে এক কাপ কফিওয়ালা চা খেলে হয়তো মাথা ধারাটাও কিছুটা কমবে। অসুস্থতার মাঝেও ইশিকার কথা আরিয়ান ভেবেছে, প্রায় সময়ই তার সুন্দর চেহারাটা আরিয়ানের চোখে ভেসেছে।



ইশিকার জানালার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সে লক্ষ্য করলো ইশিকার জানালা খুলা। পর্দা টানানো। তাই ভিতর দেখা যাচ্ছে না। বুঝা যাচ্ছে ভিতরে একটি লাইট জ্বলছে। আরিয়ান হালকা কাশি দিলো। ইচ্ছে করে নয়। জ্বরের সাথে কাশিও ধরেছে তাই। জানালার পাশে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর ইশিকা আসলো। আজ তাকে অন্যরকম দেখাচ্ছে.....



-আরিয়ান, কেমন আছো?



( ইশিকার মুখ দেখে মনে হলো অনেক দিন সে ঘুমায় নি..... ইশিকার 'আপনি' থেকে 'তুমি' তে সম্মোধন করাটাও আরিয়ান লক্ষ্য করলো না। কারন সে আনমনে হয়ে ইশিকাকে দেখছে। আজ তাকে আরো সুন্দর দেখাচ্ছে। বাসার উল্টো দিকের একটি দু তলা বাসা থেকে আলো এসে ইশিকার চেহারায় পরছে। এতে তার সৌন্দর্য আরো দ্বিগুণ বেড়ে যাচ্ছে। )



ইশিকা আবারো জিজ্ঞেস করলো......



-কেমন আছো ?

-আছি ভালোই....আপনি?

-বেশী ভালো নেই....গত কয়েকদিন কোথায় ছিলে?

-জ্বর ছিলো।

-কি বলো? এখন কেমন? জ্বর কমেছে??

-হ্যা ..এখন জ্বর নেই। গত তিন দিন বিছানা থেকেই উঠতে পারি নি। তাই আপনার সাথে দেখা করতে পারি নি। আই এম সরি।

-সরি কেনো বলছো? তুমি তো অসুস্থ ছিলে। তাছাড়া আমি কিছু মনে করি নি। তবে গত কয়েকদিন তোমার অপেক্ষায় থেকে আমার খুব কস্টে গেছে।

-জোনাকিগুলো কেমন আছে?

-ভালো। ওরা ভালোই আছে। অন্তত আমার থেকে ভালো।

-আমি জোনাকি ধরতে যাবো। কাচের ঝারটি দিতে পারবেন?

-হুম...অবশ্যই। তবে তোমার ভাঙ্গা ঝারটি দিতে পারবো না। ঐটা আমার ভালো লেগে গেছে। দুটি জোনাকি আমি ঐটাতেই রেখেছি। ঐটা রাখলে কি তুমি কিছু মনে করবে?

-না...না...কিছু মনে করার প্রশ্নই আসে আসে। তবে জোনাকি আনার জন্য আমাকে আরেকটি ঝার জোগাড় করা লাগবে।

- তা আর করা লাগবে না। আমি তোমার জন্য নীল রঙ্গের একটি কাচের ঝার মেনেজ করেছি। তুমি একটু দাড়াও। আমি নিয়ে আসছি।





( ইশিকা ঝার আনার জন্য ভিতরে চলে গেলো। আরিয়ান সুবোধ বালকের মতো দাড়িয়ে রইলো।)



প্রায় পনেরো মিনিট চলে গেলো...ইশিকা আসছে না। আরিয়ানও দাড়িয়ে রইলো। এই প্রথম ইশিকার জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে মশার কামড়ও যেন তার কাছে ভালো লাগছে। সময় কাটানোর জন্য আরিয়ান ফেসবুকে ঢ়ূ মারলো। প্রথমেই হোম পেইজে দেখতে পেলো এক মেয়ে রিলেশনশিপ স্টাট্যাস চেইঞ্জ করেছে.....'অমুক' is in a relationship with 'তমুক'। সাথে সাথে সে ফেসবুক এক্সিট করে মোবাইল পকেটে ঢুকিয়ে ফেললো। আর ভাবলো 'এতো মানুষের রিলেশন হয় কিন্তু আমার হয় না কেনো? কেনো??



ঠিক পচিঁশ মিনিট পর ইশিকা আসলো। সে আরিয়ানকে এতক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো।



-আমি দুিখঃত আরিয়ান। দেরী হয়ে গেছে। কিছু মনে করবে না। আসলে এটা খুজতে গিয়ে দেরী হয়ে গেলো। এই নাও।



ইশিকা নীল রঙ্গের কাচের ঝারটা আরিয়ানের হাতে দেয়ার সময় আরিয়ানের হাতে ইশিকার হাত স্পর্শিত হলো। ইশিকা তার হাতের স্পর্শে কিছুটা উষ্ণতা অনুভব করলো এবং বুঝতে পারলো যে আরিয়ানের জ্বর এখনো রয়ে গেছে। কিন্তু আরিয়ানের কপাল স্পর্শ করে জ্বরের প্রকৃতি বুঝার সাহস ইশিকার হলো না।



ইশিকা আরিয়ানকে বললো,



-তুমি কি এখনি যাচ্ছো জোনাকি ধরতে?

- হ্যা ।

-বেশী দেরী করে বাইরে থেকো না। তুমার জ্বর এখনো অনেক রয়ে গেছে।



আরিয়ান ইশিকার কথার সারমর্ম বুঝলো না। শুধু মুচকি হেসে বললো 'আচ্ছা'।



নীল কাচের ঝারটি পকেটে ঢুকিয়ে আরিয়ান ফুটপাত ধরে হাটা শুরু করলো। আজকে জোনাকি ধরতে তার কোন বন্ধু যাচ্ছে না, সে একাই যাচ্ছে। সে হাঠছে আর ইশিকার কথা ভাবছে। ইশিকার তার প্রতি দূর্বল হওয়া নিয়ে সে ভাবছে। একটি স্বল্প চেনা মেয়ে কেনো তার প্রতি দূর্বল হলো, সে কি পেয়েছে তার মধ্যে, মেয়েটি কি তাঁর প্রেমে পড়তে যাচ্ছে ....এর বেশী কিছু আরিয়ান ভাবতে পারে না।



ভাবতে ভাবতে সে জোনাকিদের কাছে চলে আসলো। আজ জোনাকির আনাগোনা একটু বেশী । সে হাজার হাজার জোনাকি থেকে চারটি জোনাকি নীল ঝারে ভরলো। সে ধীরে ধীরে বাসার উদেশ্যে রওনা দিলো। কিন্তু এর মধ্যেই অদ্ভুত একটি ব্যপার ঘটলো। জোনাকিগুলোর আলো নীল কাচের ঝারটি আলোকিত করছে, সে লক্ষ্য করলো এই আলোকিত ঝারে একটি কাগজের টুকরো! সে রাস্তার পাশে মৃদু আলো দেয়া একটি ভাঙ্গা ল্যাম্পপোষ্টের নিচে বসে বসলো। ঝারটি থেকে কাগজের টুকরোটি বের করলো সে। কাগজটি বের করতে গিয়ে জোনাকিগুলো উড়ে চলে গেলো। সে তাদের উড়ে যাওয়া লক্ষ্য করলো না। তার সম্পূর্ণ দৃষ্টি কাগজটির প্রতি। তাতে লিখা..........



আরিয়ান,



'আমি তোমাকে ভালোবাসি'। তোমার মতামত আগামী দুই দিনের ভিতরে আমাকে জানাও। আমার হাতে সময় খুব কম।



ইতি



ইশিকা।



চিঠিটা পড়ার পর আরিয়ান কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছিল না। এই প্রথম সে বুঝতে পারলো কারো ভালোবাসার উত্তর দেয়া আসলেই কঠিন অনেক কঠিন । সে বুঝতে পারলো তার হাত পা কাপছে, গলা ধরে আসছে , জ্বর বাড়ছে। তখনো সে বসে আছে ভাঙ্গা ল্যাম্পপোস্টটির নিচে। কিন্তু একটি চিন্তা আরিয়ানকে খুব খুব চিন্তিত করে তুলছিল। ইশিকার হাতে সময় খুব কম কেনো? তার কি বিয়ে হয়ে যাচ্ছে? সে কি মারা যাচ্ছে? তাহলে কেন, কেন তার হাতে সময় খুব কম?? এসব ভাবনা আরিয়ানকে পাগল করে তুলছিল। অনেক্ষণ পর আরিয়ান তার বাসায় ফিরলো।



পরদিন আরিয়ান ইশিকার সাথে দেখা করার জন্য তার জানালার পাশে অনেক্ষণ দাড়িয়ে রইলো কিন্ত ইশিকার দেখা সে পেল না। সারা দিনই সে চেস্টা করলো কিন্ত তা আর ফলপ্রসু হলো না। তার চিন্তা বাড়তে থাকলো। ইশিকার কিছু হয়নি তো??



আরিয়ানের সারা দিন অপেক্ষা করার পর আর অপেক্ষা করার ধৈর্য্য হলো না।



সন্ধ্যার সময়, আরিয়ান সাহস করে ইশিকার বাসায় গেলো। কলিং বেল টিপতেই এক মধ্য বয়সী লোক দরজা খুললেন.......



-আসসালামু আলাইকুম আংকেল। কেমন আছেন?

-ওয়াআলাইকুম আসসালাম। আছি ভালো। আসো,ভিতরে আসো।



( ইশিকার বাবা , আরিয়ানের প্রায় সময়ই তার সাথে নামাজে দেখা হতো ....তাছাড়া পাড়ার মুরব্বী হিসেবে উনাকে সে সম্মান করতো। তাই ভদ্র ছেলে হিসেবে তার সাথে আরিয়ানের একটি অদৃশ্য সুসম্পর্ক ছিলো। কিন্তু আরিয়ান জানতো না তিনিই ইশিকার বাবা)



-তা বাবা কোন দরকার?

-না আংকেল এমনিতেই আসলাম। গত কয়েক দিন আপনাকে নামাজে দেখি নি। ভাবলাম আপনি অসুস্থ নাকি। তাই খোঁজ নিতে এলাম।

-না। আমি ঠিক আছি। আমরা মানে আমি, তোমার আন্টি আর আমার দুই মেয়ে কাল আমেরিকা চলে যাচ্ছি। সকালে ফ্লাইট। তাই গত দুই দিন খুব ব্যস্ত ছিলাম। তুমি বসো আমি চা পাঠিয়ে দিচ্ছি। আর কোন দিন তোমাদের সাথে দেখা হবে আল্লাহ ই জানেন।



এই বলে ইশিকার বাবা ভিতরে চলে গেলেন।



(আরিয়ান বসে আছে সোফায়। সে এখন বুঝতে পারলো কেন ইশিকা চিঠিতে বলেছিল যে তার কাছে সময় খুব কম। ইশিকা দূরে চলে যাচ্ছে ভেবে আরিয়ানের বুকের ভিতরটা হু হু করে কেদে উঠলো। পাচ ছয় মিনিটের মধ্যেই ইশিকা চা নিয়ে এলো। ইশিকার চোখ দুটি লাল হয়ে গেছে। হয়তো খুব কেঁদেছে। কিন্তু এই কান্না আরিয়ানের জন্য কি না তা সে আন্দাজ করতে পারলো না। )



-কেমন আছো?

-ভালো। আপনি।

-আমাকে আপনি করে বলবে না প্লিজ। তুমি করে বলো। আর আমি বেশি ভালো নেই। কাল চলে যাচ্ছি।

-আচ্ছা। তুমি করে বলবো। কত দিনের জন্য যাচ্ছ?

-সারাজীবনের জন্য।

-আর একবারও আসবে না?

-কার জন্য আসবো। পরিবারের সবাই তো চলে যাচ্ছি। চা নাও। ঠান্ডা হয়ে যাবে।

-চা তুমি বানিয়েছ?

-হুম। কন্ট শুনেই বুঝেছি তুমি এসেছ। তাই নিজ হাতেই তুমার জন্য চা বানালাম। চা কেমন হলো?

-খুব ভালো হয়েছে। আজ সারাদিন জানালার পাশে তোমাকে খুজেঁছি। কোথায় ছিলে?

-শপিং এ ছিলাম।



দু জনের কথা থেমে গেলো। বলার মতো কিছুই ছিলো না। ইশিকার চোখ দুটি ছল ছল করছিল। যেন এই মাত্রই অস্রু বর্ষীত হবে। ইশিকা চাচ্ছিল তার ভালোবাসার উত্তর যেনো আরিয়ানের দিক থেকে আসে। কিন্ত আরিয়ান ও ছিল নিস্তব্ধ। মেয়েদের হয়তো বৈশিষ্ট্য ই তাই। কাউকে একবার মনের কথা মুখ ফুটে বলে ফেললেও দ্বিতীয়বার তা উচ্চারণ করে না। তারা চায় বিপরীত দিক থেকেও সম্মতি আসুক। প্রকাশ ঘটুক ভালোবাসার। আরিয়ানের নীরবতা দেখে ইশিকা কাদতে চাইলো। কিন্তু পারলো না।



আরিয়ান উঠে দাড়ালো। আংকেল, আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার সময় ইশিকার কানে মৃদু স্বরে বললো 'একটু ছাদে আসতে পারবে? কিছু কথা আছে।' ইশিকা মৃদু হাসি দিয়ে সম্মতি জানালো।



আরিয়ান ছাদে দাড়িয়ে আছে। আজ হালকা বাতাস বইছে। সুন্দর চাদটা মেঘে ঢাকা পড়েছে। ছাদের উত্তর কোনে হলুদ রঙ্গের বাতিটি নিভু নিভু করছে।



প্রায় পাচ মিনিট পর ইশিকা এলো।



আরিয়ান অন্য দিকে তাকিয়ে ইশিকার সাথে কথা বলছে .....



-আরিয়ান, গতকাল জোনাকি ধরেছ?

-না।

-কেনো?

-ঝারের ভিতরে তোমার ভালোবাসা ধরতে গিয়ে জোনাকিরা পালিয়ে গেছে। তুমি কি সত্যি আমাকে ভালবাসো, ইশিকা?

-ইশিকা বললো হ্যা, তুমি???



আরিয়ান ইশিকার হাত ধরলো ......তার কানের কাছে মৃদু স্বরে বললো " আই লাভ ইউ ইশিকা "



আরিয়ানের উত্তর শুনে ইশিকা আনন্দে কেদে দিলো।



-কিন্তু আমার চিন্তা হচ্ছে, আমেরিকা গিয়ে আমাকে ভুলে যাবে না তো??

-আমার প্রান থাকতে তোমাকে আমি ভুলব না। আর তোমার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ থাকবেই। প্রতি বছর একবার তোমার জন্য আমি দেশে আসবো। কিন্ত তুমি আমার হাতে হাত রেখে কথা দাও আমাকে ভুলবে না?



আরিয়ান উত্তর দিলো.....

-না কখনোই না।



-আমি তোমাকে অনেক মিস করবো আরিয়ান।



এই বলে ইশিকা আরিয়ানের হাতে তার আমেরিকার মোবাইল নাম্বার আর ফেসবুক আইডি লিখিত একটি কাগজ ধরিয়ে দিলো এবং বললো...



-আজই এই আইডি তে আমাকে এড করে নিবে। এখন থেকে ফেসবুকে প্রেম চলবে তোমার সাথে।



ইশিকা 'বাই' বলে চলে গেলো.......।



রাত বেশী হয় নি...আরিয়ান তার বন্ধুদের কল দিলো...."তোরা কই? তাড়াতাড়ি বের হ...আজ পার্টি হবে পার্টি...সবাইরে খবর দে....যা ইচ্ছা খাবি...সব বিল আমি দিমু ....কজ আই এম ইন লাভ...."





এখন ফেসবুকের কল্যাণে আরিয়ান আর ইশিকার প্রেম পুরোদমেই চলছে। ইশিকা বছরে একবার এক মাসের জন্য দেশে আসে....তারা দুজন পুরো এক মাস ঘুরাঘুরি করে এবং মাস শেষে ইশিকা আবার চলে যায়। এভাবেই তাদের 'নীল জানালা ও জোনাক পোকার প্রেম চলছে......চলবে....।



আজকাল আরিয়ান একটি গান খুব বেশি শুনে.......



''That you are not alone

I am here with you

Though you're far away

I am here to stay

But you are not alone

I am here with you

Though we're far apart

You're always in my heart''



(MJ)







মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৪৪

নাজমুল হাসান মজুমদার বলেছেন: প্রেমময় জীবন লেখায় । শুভেচ্ছা

২| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৫৮

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: এভাবেই তাদের 'নীল জানালা ও জোনাক পোকার প্রেম চলছে......চলবে....। +++++++

আপনার পোস্টও কি চলবে ? :)

ভালো থাকবেন :)

৩| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৫৭

ফয়েজ আহমেদ সৈকত বলেছেন: ধন্যবাদ :) @নাজমুল হাসান মজুমদার

৪| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:০০

ফয়েজ আহমেদ সৈকত বলেছেন: হ্যা.. আরো পোস্ট আসছে! পড়বেন আশা করি... :) অপূর্ণ রায়হান

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.