নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বোধের গহীন জলে।

প্রকাশিত কাব্য গ্রন্থ: ১। আমার সন্তান যেন থাকে দুধ ভাতে (২০১২)। ২। চারিদিকে জীবনে সমুদ্র সফেন (২০১২)। ৩। ভালোবাসার পদাবলী (২০১২)। ৪। বোধের গহীন জলে (২০১২)।

গেন্দু মিয়া

প্রকাশিত কাব্য গ্রন্থ: ১। আমার সন্তান যেন থাকে দুধ ভাতে (২০১২)। ২। চারিদিকে জীবনে সমুদ্র সফেন (২০১২)। ৩। ভালোবাসার পদাবলী (২০১২)। ৪। বোধের গহীন জলে (২০১২)। ৫। রাজনৈতিক কবিতা (২০১২)। ৬। জেসিকা (২০১২)। ৭। জেসিকার ভালোবাসা ও মধ্যবিত্তের ম্বরূপ (২০১২)।

গেন্দু মিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রজাপতি দিন

০৬ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:২২

হেমন্তের বিকেল। সোনালী ফসলে ভরে গেছে মাঠ । ঈষৎ শীতের স্পন্দন জাগে দেহ মনে। অজানায় হারিয়ে যেতে চায় মন। হৃদয়ে অনাগত আন্দোলিত ভবিষ্যতের উদ্ভাস। জীবনের পথটা কোনদিকে মোড় নেবে তার নেই কোন ঠিক ঠিকানা। কি-ইবা হব আমি? সবাই তো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। আমার সেসব ভাবনা নেই। ছন্নছাড়া জীবনে কি-ইবা লক্ষ্য থাকবে! কোন দিকে যাবো? নিজেই নিজের উত্তর খুঁজে পাইনা। হঠাৎ বিসিএস পরীক্ষার কার্ড পেলাম।

অবশেষে বঙ্গোপসাগরের দিকে মুখ করে পথ শুরু হল আমার। গ্রামের মেঠো পথ পেরিয়ে ডিস্ট্রিক বোর্ডের রাস্তায় উঠলাম। কাঁধে কালো ব্যাগ। পড়নে নেভি ব্লু প্যান্ট। সাদা শার্ট, পাওয়ার কেডস। পায়ে হেঁটে চলছি। হৃদয়ে শেষ কিশোরের উজ্জ্বল শুভ্রতা। ততক্ষণে পৃথিবীর পশ্চিমকাশে গোধূলীর আয়োজন। রিকশায় সোজা এসে পৌঁছলাম স্টেশনে।

রাত ৯টায় একতা এক্সপ্রেস। বেশ সময়। এতক্ষণে কি করা যায় ভাবছি। ছাতার মতোন দীর্ঘ স্টেশনটি পায়চারী করলাম বেশ ক’বার। অজস্র লোকের আনাগোনা। বিচিত্র গন্তব্যের ঠিকানায় ছুটছে মানুষ। কারো দিকে কারো তাকানোর সময় নেই এতটুকু। ক্লান্ত অবসন্নতায় বিশ্রামাগারে বসলাম। দূর দিগন্তে তাকাতেই মনে পড়ে গেল রসায়ন স্যারের বাসা। পড়ার টেবিল। তার বৃদ্ধ কণ্ঠস্বর। মনে পড়ে গেল তার বিশেষ যতন করে পড়া উর্মির কথা। সেই যে উর্মি। আহা উর্মি! ঠিক যেন মাধবীলতা। যার সাথে কোনদিন কথা হয়নি। মনে মনে ওকে এমন ভালো লেগেছিলো- সে শুধু অনুভব। ওকে দেখলেই অজস্র পুলকে ভরে যেত মন। কোনদিন কথা বলার সাহস হয়নি- সুযোগও হয়নি।

আহা উর্মি, আহা মাধবীলতা, আহা মানসী আমার! জীবনানন্দের বনলতা সেনের চুল হার মেনেছে তোমার কাছে। এমন এলোমেলো ভাবনায় কখন যে রাত ৮টা বেজেছে- খেয়াল নেই। তাড়াহুড়ো করে নিজেকে একটু গুছিয়ে নিয়ে রাতের খাবারটা হোটেলে সারলাম। ট্রেণ আসতে আর বেশি দেরি নেই। কিছুক্ষণ আগে ট্রেণ আসার সংকেত দিয়েছে স্টেশনের ঘন্টাটা। স্টেশনে দাঁড়িয়ে চারপাশ দেখছি। পাশেই বুক স্টল। সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। একটা ম্যাগাজিন কিনবো বলে পরখ করছি বুক স্টলটি।

হঠাৎ হর্ণের চিৎকার। সারা স্টেশনে ছুটাছুটি শুরু হল। অজগরের মত দীর্ঘ ট্রেণটি স্টেশনে দাঁড়ালো। আমার নির্ধারিত আসন ‘ক’ বগির ৩৫ নাম্বার সিটে গিয়ে বসলাম। ট্রেণের মাইকে একজন প্রিয়ভাষিণী বলছে, ‘আমাদের যাত্রা এখুনি শুরু হবে। ট্রেণে যাত্রা করার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে আপনাদের ধন্যবাদ।’

ট্রেণ ছেড়ে দিলো। শাঁই শাঁই শব্দে ট্রেণ চলছে। রাত্রির অন্ধকার চিরে ট্রেণ চলছে ঝিকি ঝিকি। মনে হয় যেন অজানা কোন রহস্যপুরীতে চলছে। মনের ভিতর অজস্র ভাবনা এসে ভর করলো। ভিতরে ভয় ভয় অনুভব। আমার ভাবনাহীন গন্তব্যহীন জীবনের কথা আমাকে বড় আলোড়িত করে। জানালার ফাঁক দিয়ে বাহিরে তাকাই- অথই অন্ধকার। শেষ হেমন্তের ঠান্ডা বাতাস হৃদয়কে ছন্নছাড়া না করে ছাড়ে না। ভিতরে অজস্র শূন্যতা, তবু, কেন যেন বেশ ভালোলাগার ফুরফুরে মেজাজ। মনের গহীন অতলান্তে যেন পুলকের অজস্র পুষ্পরেণু। ঘ্রাণে মাতোয়ারা করছে হৃদয়। মিষ্টি আবেশে হারিয়ে যাই। কিন্তু কোথায় যাচ্ছি আমি? কোনদিকে যাচ্ছি? আমার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যই বা কি? জীবনে তো কাউকে ভালোবাসিনি। কেউ তো আসেনি- তবে যাবে আর কে?

রাত ৯টার দিকে ট্রেণটি ফুলছড়ি ঘাটে এসে পৌঁছল। ট্রেণ থেকে নামলাম। এরপর যেতে হয় স্টিমারে। যমুনা নদীর ঘাট। নদীর তীর ঘেঁষে লম্বা সারি সারি আলো। দূর থেকে আকাশের তারার মতো মনে হয়। একটু ঠান্ডা বাতাস। হৃদয় ঘিরে শীর শীর অনুভব। লন্ঠন আর বিদ্যূৎ’র সারি সারি আলোগুলো কখনো জোনাকীর মতো মনে হয়। মিট মিট প্রজ্জ্বলতায় দূর অতীতের কথা মনে পড়ে।

হাঁটতে হাঁটতে এগুতে থাকলাম। পথের দু’পাশে হোটেল বয়রা ‘স্যার স্যার’ সম্ভাষণে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।

এতক্ষণে হই হুল্লোড় পড়ে গেছে। ট্রেণের মতো স্টিমারে নির্দিষ্ট কোন সিট নেই। যে যেখানে বসতে পারে। অগত্যা আমিও একটু ছুটলাম। যেতেই উর্মির কণ্ঠস্বর কানে বেজে উঠলো। কল্পনার কান না কি? বুঝলাম না।

স্টিমারের ২য় তলায় জানালার ধারে সিটে গিয়ে বসলাম। মিনিট বিশেক পড় স্টিমার ছেড়ে দিলো। নদীর বুক চিরে চিরে স্টিমার চলছে। ছল ছল বেগে চলছে। মনটা কেন যেন উন্মনা হয়ে গেলো। ছাদে গেলাম। দেখলাম আকাশে গোল চাঁদ। আর কিছু তারা। চাঁদের ছবি উঠেছে নদীর ওপারের প্রান্তে। চারপাশে পানি আর পানি। মাঝখানে এক টুকরো দ্বীপের মতো আমরা ভাসিয়ে চলছি। মনে পড়ে টাইটানিকের কথা। মনটা ভয়ে দুর দুর করে ওঠে।

আজ কেন যেন উর্মির কথা খুব করে মনে পড়ছে। আর থাকতে পারলাম না। চলে গেলাম ছাদে। আকাশের দিকে তাকালাম। গোল চাঁদ উঠেছে আকাশে। চাঁদের আলোয় সারা পৃথিবীর আকাশে উদ্ভাসিত। নিজেকে বড় নিঃসঙ্গ মনে হলো। উর্মির ভাবনা আমাকে বড় উন্মনা করে তুলেছে। ওর সাথে কোনদিন কথা হয়নি। যখন রসায়ন স্যারের বাসায় পড়তে আসত- আমি পড়তে যেতাম। কিন্তু একই সাথে আমরা পড়তাম না। আমরা পড়তাম আলাদা আলাদা ব্যাচে। দুর থেকে ওকে দেখতাম। কী অপরূপ পরীর মতো মনে হতো ওকে। চুলের বিন্যাস যেন শ্রাবণ মেঘের মতো সারা আকাশ ছেয়ে যেত মেঘমালায়। সাদা চোখ দু’টিতে কী যে অপূর্ব শুভ্রতা! সে কেবল আমার অনুভব। কথা খুবই কম বলতো ও। ওর বাবা বদলী হয়েছে। তাই ওরা স্বপরিবারে ঢাকা চলে গেছে। এসব ভাবতে ভাবতে চোখে ঘুম ঘুম ভাব। একটা মিষ্টি অলস তন্দ্রা। আমার গাইতে ইচ্ছে হলো “মোর ঘুম ঘোরে এলে মনোহর।”

রাত্রি শেষে স্টিমারটি বাহাদুরাবাদ ঘাটে নোংগর ফেললো। একটা থমথমে স্তব্ধতা। নদীর তীরের ভারী ঠান্ডা বাতাসে শরীরে শিহরণ জাগে। স্টিমার থেকে নেমে চলছি ধীরে। শুধু আমি না, সবাই চলছে। কারণ এবার আর সিটের সমস্যা নেই। প্রত্যেক যাত্রীকে তার নির্দিষ্ট আসনে বসতে হবে। দেখলাম প্রকান্ড একটা ট্রেণ দীর্ঘ রেললাইনের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে। সিটে গিয়ে বসলাম। ট্রেণের মাইকে বেজে উঠছে, ‘প্রিয় যাত্রী সকল, ঢাকার উদ্দেশ্যে আমাদেও যাত্রা এখুনি শুরু হবে। আপনাদের কোন অভিযোগ থাকলে ট্রেণের গার্ড কে জানাবেন। ট্রেণে ভ্রমণ করার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে আপনাদের ধন্যবাদ।’

আমাদেও যাত্রা শুরু হয়ে গেলো। ট্রেণ চলতে থাকলো শোঁ শোঁ শব্দে। কবিতার ছন্দের মতো চলার ছন্দ যেন। দু’পাশে বন। মাঝ দিয়ে বিড় বিড় করে দ্রুত ট্রেণ চলছে। আমার মনে হলো অজানা কোন রহস্য পুরীতে চলছি যেন। কিশোর মনে কি যে উচ্ছ্বল ভালোলাগা।

সকাল ৮টায় কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছলাম। সেখানে থেকে টেক্সি যোগে সোজা ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়। ফজলুল হক হলে গিয়ে উঠলাম। সেখানে আমার এক বড় ভাই থাকে। অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র। সেই দিন তার কাছেই থাকলাম।

পরের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিসিএস পরীক্ষা। যথারীতি পরীক্ষা দিতে গেছি। আমার সিট পড়েছে কার্জন হলে। পরীক্ষা শেষ হলো। হল থেকে বেরুতে অনেক ছেলে মেয়ের ভীড়ে অনাবিল অনাবিল চিৎকার। চোখ ফেরাতেই দেখি উর্মি।

-কেমন আছো অনাবিল। তোমার পরীক্ষা কেমন হলো?

-ভালো। তুমি কেমন আছো উর্মি। তোমার বাবা কেমন আছেন?

-ভালো আছেন। তবে শরীরটা বেশি ভালো যাচ্ছেনা। কথা আর বেশিদূর এগুলো না। পরীক্ষার ভালোমন্দ আলোচনা করতেই উর্মিকে নিতে একজন যুবক এগিয়ে এলা। পরিচয় করিয়ে দিয়ে উর্মি বললো: ও আমার কাজিন, পরশ। আমি যথারীতি আমার নাম ‘অনাবিল’ বলে বললাম, ‘ভালো আছেন’?

সেদিন কথা আর হলো না। উর্মি তার কাজিনের সাথে চলে গেলো। যাবার সময় বলে গেলো, তারা গোপীবাগে থাকে। আমি যেন একবার আসি।

এই শহরে আমি এর আগে শুধু একবার এসেছিলাম বাবার সাথে। তখন আমি পঞ্চম শ্রেণী পাশ করে হাইস্কুলের পথে যাত্রা করেছি। বাবা হরিহর রায়ের মত তার অপুকে বলত- দেশের এইটা সংসদ ভবন, এইটা সোনার গাঁ হোটেল, এখানে বিদেশী অতিথিরা থোকেন। বাসে চলতে চলতে রাস্তার দু’পাশে যা কিছু বাবা আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর কতদিন কেটে গেছে। সেই ছোট্ট বেলায় দেখা শহরের কি-ইবা মনে থাকতে পারে।

উর্মির বাসার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম। হৃদয়ে একটা উচ্ছ্বল ভালোলাগা। যে উর্মির সাথে কথা বলার জন্য অধীর প্রতীক্ষায় প্রহর গুণতাম। মনে হতো ওর সাথে কথা বলা কতই কষ্টকার। ভালোবাসি শব্দটা বলা যেন চাঁদের দেশ আর মতো। সেই উর্মির নিমন্ত্রণ। উর্মি আমাকে ভালো না বাসুক আজকের নিমন্ত্রণটা তো মিথ্যে নয়। সে আমায় ভালো নাই বাসুক, আমি যে ওকে পছন্দ করি সেটা তো ও অবশ্যই বোঝে। মেয়েরা নাকি চট করে একটা পুরুষকে বুঝতে পারে। আমাকে ভালোবাসা দূরে থাক ‘ও’ আমাকে বুঝুক সেই আমার প্রাপ্তি।

হলে ফিরে এলাম। বিকেল বেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ঘুরে ঘুরে দেখলাম। কি এক অব্যক্ত অনুভব হৃদয়ে। কেমন যেন ভালোলাগা। সারি সারি বৃক্ষরাজির শ্যামলতা সজিব হৃদয়কে দোল না দিয়ে ছাড়েনা। মনের শূন্য মণিকোঠায় কার জন্য যেন সবটা সময়ে উতলা হয়ে থাকে। এসব মনোরম পরিবেশে এলে পর সে শূন্যতা বেড়ে যায় অধিক।

রাতের বেলা চোখে ঘুম হলোনা ভালো মত। মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে পর বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। আকাশে চাঁদ-তারা কিছু নেই। শহরের বিজলিবাতি গুলো কখনো কখনো রাতের তারা বলে মনে হয়। উর্মিকে প্রগাঢ় করে মনে হলো। মনে হলো ও যেন আমার সমগ্র সত্ত্বায় অস্তিত্বে জড়িয়ে আছে।

ভাবতে ভাবতে ভোর হলো। সারা শহরময় একই সাথে অজস্র আজানের ধ্বনি শুনতে পেলাম। মসজিদের শহর ঢাকা। অজস্র আজানের ধ্বনি শোনা যাবে না কেন?

উর্মির নিমন্ত্রণকে আমার নিরর্থক বলে মনে হয়। মনে হলো ও যদি আমাকে পছন্দ করত বা ভালোবাসতো তাহলে মোস্তাফিজুর স্যারের কাছে দীর্ঘ সময় পড়ার ফাঁকে একটু সময় হলেও আমাকে বোঝাত। মেয়েদের নাকি বোঝা যায়না। ওরা নাকি রহস্যময়ী, দুর্বোধ্য। মনে হয়, হোক রহস্যময়ী কিংবা দুর্বোধ্য। তাতে আমার যায় আসে কি? আমার ব্যক্তিত্ব খোয়া যাবে কেন? ওকে আমি বলিনি যে তোমাকে ভালোবাসি। মনে মনে পছন্দ করি। কতজন তো কতজনকেই পছন্দ করে। তাতে আবার দোষ কি? সিদ্ধান্ত নিলাম উর্মির সাথে দেখা করবোনা। বিকেলের তিস্তা এক্সপ্রেসে বাড়ি চলে যাবো।

বেলা ৩টায় আমার যাওয়ার আয়োজন শেষ। বাড়ি চলে যাবো। আচমকা উর্মি এসে হাজির। আমি ফজলুল হক হলে ৩০২ উঠেছি সেটা ও কেমন করে জানে তা বুঝতে পারলাম না। বললাম, আমার ঠিকানা তুমি জানলে কি করে?

উর্মি: কাজিন পরশ বললো। পরে শুনলাম পরশও নাকি এই হলে থাকে।

উর্মি আমাকে রেগে গিয়ে বললো, তোমাকে না আমাদের বাসায় আসতে বলেছিলাম। বললাম, যেতে বলেছিলে, ধন্যবাদ। দুঃখ বাড়িয়ে লাভ কি?

-তোমার আবার কি হলো?

-আমাকে কেউ বুঝলোনা।

-বুঝে আর কাজ নেই। আমার সাথে চলো।

-কোথায় যাবো?

-রমনা পার্কে।

-সেখানে গিয়ে কি হবে?

-প্রজাপতিদের ফুলে ফুলে উড়াউড়ি দেখবো। কথা আর বাড়লোনা। যাত্রা বাতিল করে অগত্য উর্মিও সহযাত্রী হলাম। রিকসায় ওর ডান পাশে বসলাম।এই প্রথম কোন মেয়ের সাথে ঘুরতে যাওয়া। ওর থেকে মন পাগল করা এক অব্যক্ত ঘ্রাণ ভেসে আসছে আমার হৃদয়ের মণিকোঠায়। আমি বুঝতে পারছি এ যেন প্রাকৃতিক ফ্রিজের ভিতর থেকে উঠে আসা এক অনাঘ্রাত অমরাবতী। হঠাৎ করে উর্মি বলে উঠলো: আপনি এত ভীরু কেন? কাপুরুষেরা ভীরু হয়, ভীতু হয়। মনের কথা কাউকে খুলে বলতে পারবেন না? আমি বললাম, তা বটে। মনের সব কথা সবাইকে বলা যায় না।

তর্ক না এগুতেই রমনা পার্কে এসে পড়লাম। দু’জন গিয়ে বসলাম প্রায় নির্জন জায়গায়। বিকেলটা পুরো পার হয়নি। তাই লোকের আনাগোনা একটু কম। সামনে একটা ঝিল। কালচে রংয়ের থমথমে জলেরা বাতাসে একটু নড়েচেড়ে উঠছে। আমার ভিতরে কি যে এক অব্যক্ত অনুভব। মনে হলো চিৎকার করে বলি, উর্মি আমি তোমাকে ভালোবাসি। পরক্ষণে মনে হলে, ও যদি আমাকে ভালো না বাসে।

উর্মিকে বললাম, প্রজাপতিরা কোথায়?

-দেখতে পারছোনা, আমার চোখের দিকে দেখো।

-ওর চোখে চোখ রাখলাম। বললাম, প্রজাপতি তো দেখতে পাচ্ছিনা।

ততক্ষণে ও আমার চোখে রেখেছে চোখ। কি বিশাল নীল দু’ চোখ। সাগরের বিশালতাকে হার মানিয়েছে। কখন ও আমার হাতে হাত রেখেছে টের পাইনি। ও আরো গভীর হয়ে বললো, প্রজাপতিরা কোথায়? অজস্র প্রজাপতি উড়ছে তো উড়ছেই। তোমার চোখের গভীরে, আমার হৃদয়ের গভীরে।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। ওকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে চলে আসলাম। মনে হলো বেশ তো যাচ্ছে প্রজাপতি দিন। এই শহর থেকে আমি আর কোনদিন ফিরে যাবোনা।

১৫.০৬.২০১০

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.