নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবাই যখন নীরব, আমি একা চীৎকার করি \n--আমি অন্ধের দেশে চশমা বিক্রি করি।\n

গিয়াস উদ্দিন লিটন

এত বুড়ো কোনোকালে হব নাকো আমি হাসি-তামাশারে যবে কব ছ্যাব্‌লামি। - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

গিয়াস উদ্দিন লিটন › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্য- সংজ্ঞীত বিড়ম্বনা

১২ ই অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:০৫





লকডাউনে লোকজনের হাতে অফুরান সময় থাকার ফলে কেউ ধুলো ঝেড়ে গিটার বের করেছে, কেউ মাউথ-অর্গান আবার কেউ রঙ-তুলি। আমার বউ বের করল হারমোনিয়াম।

সাংগীতিক পরিবেশ শুধু আমরা মনুষ্যজাতিই ভালবাসি না, আরশোলারাও ভালবাসে সেটা বুঝলাম যখন হারমোনিয়ামের বাক্স খোলা হল। শতাধিক আরশোলা বেরিয়ে উড়তে শুরু করে দিল। সে এক ডামাডোলিয়াস অবস্থা! বউ লাফাতে লাফাতে বলল, "দাঁড়িয়ে দেখছ কী? যাও গিয়ে লাল হিটটা নিয়ে এসো।"
অতঃপর হিট প্রয়োগ করে আরশোলাদের সংহার করা হল।
অনতিবিলম্বেই বউয়ের সংগীতচর্চা শুরু হল।

সন্ধ্যের পর আমায় চা দিয়ে বউ হারমোনিয়াম নিয়ে বসল। পড়ে থাকার জন্যই কিনা কে জানে হারমোনিয়াম দিয়ে বেখাপ্পা আওয়াজ বেরোতে লাগল। তারপরে বউ যখন গান ধরল তখন দীর্ঘকাল পড়ে থাকা দুটি বস্তু, হারমোনিয়াম ও গলা, এই দুইয়ের মহামিলনে যা বেরোলো তা মোটেই শ্রুতিমধুর ছিলনা।

কিছুক্ষণ পরেই আমার ফোন বেজে উঠল। নান্টু কাকার ফোন। আমাদের সবচেয়ে নিকটবর্তী প্রতিবেশী হলেন নান্টুকাকা। তাঁর আবার এখন কী দরকার পড়ল!
আমি ফোন ধরতে নান্টু কাকা বললেন, "ভর সন্ধ্যা বেলা বউ পেটাচ্ছিস কেনরে হারামজাদা!"
বার কয়েক বউকে মারতে গিয়েছিলাম বটে!নিজে খেয়েছি চতুর্গুণ!তাই বছর দশেকের ভিতর আর মার খেতে চাইনি।
আমি অবাক হয়ে বললাম, "কই না তো?"
নান্টু কাকা বললেন, "না বললেই হবে? বউমা আর তোর পিচ্ছির কান্নায় ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে কান।"

এবার আমি বুঝতে পারলাম, আমার বউয়ের সংগীতচর্চা নিয়ে বলছে নান্টুকাকা।
আমি বললাম, "কোথায় বউ পেটালাম? আমার বউ গান গাইছে।
বউয়ের ইজ্জত রক্ষার্থে আরো বল্লাম- হারমোনিয়ামটা খারাপ হয়ে গেছে তাই অমন শুনতে লাগছে।"
নান্টুকাকা অবাক হওয়ার ভান করল। যদিও আমি ভালই বুঝতে পারছি বিদ্রুপ করছে নান্টুকাকা।

নান্টুকাকা বললেন, "বলিস কী! তোর বউ মানে বউমা গান করছে! আমি তো ভাবলাম... সে যাইহোক বাদ দে। তোর বউকে একটু ভলিউমটা কমাতে বল।"
এর পরেই আমি রেগে গেলাম এবং তার ফল সাংঘাতিক হয়েছিল!
বললাম, "হিংসে হচ্ছে কাকা? কেন হচ্ছে জানি তো! নিজেরতো বউ নেই,আমার বউ গাইছে বলে হিংসে হচ্ছে আপনার।"
নান্টুকাকা রেগে ফোন কেটে দিল। আসলে নান্টুকাকা দু'বার বিয়ে করেছে কিন্তু কোনও বিয়ে টেকেনি। দুটো বউই বিয়ের কিছুদিন পরেই নান্টুকাকাকে ছেড়ে চলে গেছে। কারণটা পাড়ার সবার কাছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের মতো মিস্ট্রিই রয়ে গেছে। তারপর থেকে পৃথিবীর সমস্ত স্ত্রীজাতির প্রতি নান্টুকাকার অসম্ভব রাগ।

এসব কালকের কথা।
আজ সকাল দশটা নাগাদ আমাদের পাড়ায়, আমাদের বাড়ির উল্টোদিকেই, থানা থেকে সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। ওঁরা নাগরিকদের করোনা কালিন মনোবল বাড়ানোর জন্য পাড়ায় পাড়ায় এমন অনুষ্ঠান করছেন।

কিবোর্ড ও গিটার সহযোগে প্রথমে এক মহিলা পুলিশ কর্মী গাইলেন তারপর দুজন পুরুষ । পাড়ার বেশিরভাগ লোক বাড়িতে বসেই মাইকে শুনছে। দু-একজন বেরিয়েছে শুধু।

হঠাৎ চমকে গিয়ে শুনলাম পরবর্তী শিল্পী হিসেবে মাইকে আমার বউয়ের নাম অ্যানাউন্স হচ্ছে।
আমার মাথা ঘুরে গেল! বউয়েরও! গানের সঙ্গে তেমন সম্পর্কই নেই ওর। বিয়ের আগে টুকটাক গান শিখেছে। সব বাঙালি মেয়েরা যেমন শেখে।

বউ কেঁদে ফেলল। বলল, "বলতে গেলে গানের গ জানি না! একটা গানও পুরো গাইতে পারব না। আমি মাইকে গাইব? আমার দ্বারা কিছুতেই হবে না ব্যাস।"
আমি অতি সহজেই বুঝে গেলাম এসব নান্টুকাকার ষড়যন্ত্র। কালকের বদলা নিচ্ছে। পুলিশদের কাছে আমার বউয়ের নামটা ওই দিয়েছে।
বউকে বললাম, "দেখো যেতে হবেই। পুলিশ বহুত খতরনাক জিনিস,নইলে খুব খারাপ হবে। আর পাড়ায় মুখ দেখানো যাবে না।"
বউ কাঁদতে কাঁদতে বলল, "আর আমি গাইলে পাড়ায় মুখ দেখানো যাবে ভেবেছ? আমি পারব না।"

এমন সময় দরজায় ধাক্কা। দরজা খুলতে গিয়ে দেখি থানার ওসি সাহেব নিজে এসেছেন ডাকতে। পেছনে দুজন কনস্টেবল আর কুদ্দুস ভাই।
ওসি সাহেব বললেন, "ম্যাডাম কই? উনি খুব ভাল সিঙ্গার শুনলাম। এই সুযোগে আমরাও ওনার গান শুনতে পাব। উনি নাকি রেডিওতে নিয়মিত প্রোগ্রাম করেন। খুব ভাল।

পেছনে দাড়ানো গিন্নীর গলা শুকিয়ে কাঠ! কোন মতে ছিঁ ছিঁ করে বলল- স্যার আমি গানের কিছুই জানিনা...
ঠা ঠা করে হেসে উঠেন ওসি সাহেব - বিণয় বটে! শামসাদ বেগমও এমত বলতেন! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আমাকে বললেন- সময় কম,ম্যাডামকে নিয়ে আপনিও চলে আসুন। এখন যিনি গাইছেন তার পরেই ম্যাডাম গাইবেন। আর হ্যাঁ মাস্ক পরে আসবেন প্লিজ।"


রেডিও! প্রোগ্রাম!ভাল শিল্পী এসব কি বললেন ওসি সাহেব!
আমার বুকে ড্রাম-মাদল সব একসঙ্গে বাজতে শুরু করল। রুমে গিয়ে দেখি বউ দৌড়ে এসে বিছানায় মুখ গুঁজে শুয়ে আছে।
আমি যেতেই বলল, "তুমি কিছু বলতে পারলে না? আমি রেডিওতে প্রোগ্রাম করি?"
আমি বললাম, "আর কিচ্ছু করার নেই। তুমি রেডি হয়ে নাও। বলে দিও গলা খারাপ। দু লাইন গেয়ে নেমে যাবে।"
বউ বলল, "মাইক হাতে নিলে আমার নির্ঘাত হার্টফেল করে যাবে!"

অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে বউকে রাজি করিয়ে দুজনে বেরোলাম। দুই ফাঁসির আসামি যেন কম্পিত চরণে বধ্যভূমির দিকে এগোচ্ছে।
কিন্তু কাছে যেতেই অবাক হয়ে দেখলাম ওসি সাহেব জিপে উঠে আমাদের সামনে দিয়ে ধাঁ করে চলে গেলেন। বাকি পুলিশ কর্মীরা মাইক, বাদ্যযন্ত্র গোছাচ্ছেন তড়িঘড়ি করে। একটা পুলিশের গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ওঁদের নিয়ে যাবে বলে।
আনন্দে আমার বউ বালিকার মতো লাফিয়ে উঠল, "কীয়ানন্দ! কীয়ানন্দ!"

ঘরে ফিরতেই কুদ্দুস ভাইয়ের ফোন। বলল, "হোটেল রেস্তোরাঁ খুললেই আমাকে ভরপেট কাচ্ছি খাইয়ে দিস।"
আমি বললাম, "কুদ্দুস ভাই তুমি? এসব তোমার কীর্তি? কী হল কিছুই বুঝলাম না!"
কুদ্দুস ভাই বলল, "হ্যাঁ আমিই। তোর বউকে প্রফেশনাল গাইয়ে বানিয়ে বেইজ্জত করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু পাড়ার প্রেস্টিজ তো পাংচার হতে দিতে পারি না। কী করলাম বুঝলি, থানায় বেনামে একটা ফোন করে দিলাম। ফোন করে বললাম, হাজার হাজার পাব্লিক মিছিল করে থানার দিকেই আসছে। মেয়েদের দাবি, বিউটি পার্লার খুলতে হবে আর ছেলেদের দাবি, সেলুন খুলতে হবে।
আমার ফোন পেয়েই ওরা ওসি সাহেবকে সঙ্গে সঙ্গে জানিয়েছে। গান গাওয়া মাথায় উঠেছে তখন। সবাই মিলে দৌড় দিয়েছে থানায়।"
আমি আনন্দে লাফিয়ে উঠে বললাম, "নিশ্চই খাওয়াব কুদ্দুস ভাই,থ্যানক ইউ থ্যানক ইউ।"

দেদার আনন্দ হচ্ছে, ফোনটা কেটে দিতে গিয়েও থমকে গেলাম, উদ্বিগ্ন হয়ে বললাম, "কিন্তু কুদ্দুস ভাই ওসি সাহেব গিয়ে যখন দেখবে সব মিথ্যে কথা তখন তো তোমাকেই ওরা ফোন কল দেখে ধরে নিয়ে যাবে থানায়!"
কুদ্দুস ভাই হেসে বলল, "ও নিয়ে তুই ভাবিস না। আমি নান্টু কাকার ফোনটা চেয়েছিলাম, একটা দরকারি ফোন করতে হবে বলে। ও শালা তখন তোদের মুখে চুনকালি পড়বে সেই আনন্দেই মশগুল ছিল। কিছু না ভেবেই ফোনটা দিয়ে দিল। আর আমারও কাজ হয়ে গেল! ধরলে ওই শালাকেই ধরবে। টেন্সন নিস না..."

(বাসু_মুখোপাধ্যায় এর লেখা থেকে,সংকলিত ও সংক্ষেপিত।)

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৮:০১

মনিরা সুলতানা বলেছেন: ব্লগে রম্য সব ওপাড় বাংলা ধাঁচের হয় ক্যান যে :-*

মজা পাইছি :P

২| ১২ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৮:৩৭

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: ঠিক ধরেছেন মনিরাবু।মুল লেখক ওপার বাংলার।

৩| ১২ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৯:৫৮

সোহানী বলেছেন: সংকলিত চাই না, আপনার নিজের লিখা চাই।

০১ লা নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:৫৭

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: সোহানীবু ধন্যবাদ নিন, অবশ্যই লিখব।

৪| ১২ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১০:৪৫

আহমেদ জী এস বলেছেন: গিয়াস উদ্দিন লিটন ,




তা এর সাথে যদি আপনার নিজের বাজখাই গলায় একটা কাওয়ালী গাওয়ার হারমোনিয়ম বাজতো ভালো হতোনা ? :P
সংকলন না হয়ে অরিজিনাল হতো......

০১ লা নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:৫৯

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: পড়ে ভাল লাগ্লো ,তাই নিজের মত করে আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।
ধন্যবাদ জানবেন জনাব আহমেদ ভিপি ওহ সরি জী এস :P

৫| ১২ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:৪৩

চাঁদগাজী বলেছেন:




আমদানী কেন? বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাবে তো!

০১ লা নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:০০

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: পড়ে ভাল লাগ্লো ,তাই নিজের মত করে আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।

৬| ১৩ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: রম্যতে আজকাল আমার হাসি পায় না কেন বলেন তো?

০১ লা নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:০০

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: কান্না যে পাচ্ছেনা এটাই বা কম কিসে?

৭| ১৩ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:৪৪

জুল ভার্ন বলেছেন: রম্য পড়ে সত্যিকারের রম্যতা খুঁজে পেলাম না।

০১ লা নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:০১

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: ধন্যবাদ জানবেন জুল ভার্ন।

৮| ১৩ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১:৩৯

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: সুন্দর কালেকশন। মজা পেলাম পড়ে। প্রথমে ভেবেছিলাম আপনিই বুঝি লিখেছেন।

০১ লা নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:০২

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: ধন্যবাদ জানবেন মোঃ মাইদুল সরকার

৯| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:৫৮

রাহাত আরা স্বর্ণা বলেছেন: শুভেচ্ছা! :)

০১ লা নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:০২

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.