নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখি, ছবি তুলি আর সিনেমা বানাই ।

জিপসি রুদ্র

লিখি, ছবি তুলি আর সিনেমা বানাই ।

জিপসি রুদ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপূর্ণতায় ভালোবাসা...

১২ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:৫৫

মেয়েটি বেশ গোছালো, পরিপাটি। সাজগোজ তেমন একটা করেনা। তবে মাঝে মাঝে শাড়ি পড়ে চোখের নিচে গাড় করে কাজল দেয় । তখন তাকে বেশ লাগে! এটি অবশ্য সে সব সময় করেনা যখন কবিতা আবৃতি করতে যায় তখন করে।

মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বড় হয়ে নিজেকে তৈরি করেছে উচ্চ মানসিক ধারনক্ষমতা সম্পন্ন এক মেয়ে হিসাবে । এই মেয়ের মধ্যে অন্য দশটি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ের মত কোন অন্ধ ধর্মীয় গোঁড়ামি নেই। নেই রাষ্ট্রের সংকটাবস্থায় নিশ্চুপ অবস্থান।কারণ সে জানে কোন বিষয়ে নিশ্চুপ থাকা অথবা উভয় পক্ষ সমর্থন করা দুই’ই ভণ্ডামি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বিষয় হচ্ছে রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয়ে তার নিজস্ব মতামত প্রদান, যেটি অন্য দশটি মেয়ে থেকে তাকে আলাদা করেছে। অত্যন্ত রাজনৈতিক সচেতন এই মেয়েটি শিল্পকলায় তার সমসাময়িক অন্য সবার থেকে অনেক বেশি স্বচ্ছ চিন্তার ও স্বচ্ছ মানসিকতার।

এই মেয়েটির সাথে আমার সম্পর্ক বেশ ভালো। তাকে আমি ভালোবাসি নাকি সে আমাকে ভালোবাসে ব্যাপারটা আমার কাছে এখনও পরিস্কার না।তবে আমরা বেশ ভালো ভাবেই দিনাতিপাত করছি। ছবির মত দেখতে সুন্দর বলে তার নাম রাখা হয়েছিল ছবি। পড়ছে বাঙলায়। অনার্স ৩য় বর্ষ। ভালো কবিতা লিখতে না পারলেও ভালো কবিতা আবৃতি করে সে।বছর দুয়েক আগে একটি কবিতা আবৃতি অনুষ্ঠানে তার সাথে আমার পরিচয় । তারপর সখ্যতা। তারপর থেকে একসাথে পার করে দিলাম অনেকটা সময়।

ছবির মা নেই । যখন সে ক্লাস নাইনে তখন তার মা আত্মহত্যা করেছিলো। কেন করেছিল সেটি আমি কখনও জানতে চায়নি। অবশ্য সেও আমাকে বলেনি। আর বাবা থাকে দুবাই। প্রায় সাত বছর তার বাবা দেশে আসছে না। ছবি তার খালার বাসায় থেকে পড়ালেখা করছে। অতি প্রয়োজন না হলে সে বাবার সাথে কথা বলে না। আমার ধারনা সে তার বাবাকে তেমন একটা পছন্দ করে না।

লাভট্যুরে গতবার শীতে গিয়েছিলাম আমরা কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন। আমাদের এক সাপ্তাহের ট্যুর ছিল। অসাধারণ সময় কাটিয়েছি। সে শুঁটকি পছন্দ করে না শুঁটকির ভোদকা গন্ধে নাকি তার বমি আসে। কিন্তু সেন্টমার্টিন এ সে দিব্যি শুঁটকি ভর্তা খেয়েছে অনেক তৃপ্তি নিয়ে। কক্সবাজারে খোলা আকাশের নিচে তার কোলে মাথা রেখে কবিতা শুনেছি গোটা রাত্রি।সে গুনের “যাত্রা ভঙ্গ” কবিতাটি অসম্ভব ভালো আবৃতি করতে পারে! সমুদ্র’র বিশালতাকে সামনে নিয়ে দুজনই অসম্ভব রোমাঞ্চিত হয়েছি।

তার পছন্দের বিষয় হল আমায় নিয়ে ঝুম বৃষ্টিতে ভেজা। আমি বৃষ্টি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলি কারণ বৃষ্টিতে ভিজলেই আমার হয় সর্দি না হয় জ্বর । কিন্তু তার কারণে পারিনা।ভেজা শরীরে ধুমায়িত চা তার নাকি অসাধারণ লাগে। বৃষ্টিতে ভেজার পর আমার যদি সর্দি অথবা জ্বর হয় তখন তার কোলে আমার মাথাটা নিয়ে “পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে” গান শুনায়। এই গানটি তার গলায় আমার অসম্ভব প্রিয়।

কয়েক মাস আগে আমি হাসপাতালে ছিলাম বেশ কয়েকদিন। অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে হার্টের সমস্যা হয়েছিল। প্রত্যেকটা দিন আমার জন্য খাবার এনেছে হাতে তুলে খাইয়েছে। আমার সেবা করেছে। আমি তাকে জিজ্জাস করেছিলাম এত করছ কেন ? সে উত্তরে শুধু বলেছিল “ভালোবাসি যে” আমি সিক্ত হয়েছিলাম ! চোখের কোনে অজান্তেই পানি এসেছিল!

বেশ কিছুদিন ধরে আমার ছবি হাসপাতালে । তার এইচ আই ভি পজেটিভ। এই ভাইরাস টা সে পেয়েছে তার মা থেকে।আর তার মা পেয়ছে তার স্বামী থেকে। মানে ছবির বাবা থেকে। ছবির বাবার নৈতিক চরিত্র তেমন একটা ভালো ছিলনা। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মেয়ের সাথে অনিয়ন্ত্রিত যৌনতায় মিলতো। ছবির জন্ম হওয়ার পর ছবির মা বিষয়টি জানতে পারে। ছবি যখন ক্লাস নাইনে তখন তার মা জানতে পারে সে এবং ছবি দুজনেই এইচ আই ভি ভাইরাস বহন করছে। সন্তানের কাছে অপরাধি হয়ে থাকার চাইতে আত্মহননকেই সে উত্তম মনে করে।

ছবির সাথে আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয়েছে হাসপাতালে।আমি থাকে জিজ্জাস করেছিলাম, ভবিস্যত পরিকল্পনা কি? সে উত্তরে বলেছে, এমনিতেই আমরা সবাই মারা যাবো । মানুষের জীবন’তো একটাই একটু অন্যরকম হলে ক্ষতি কি! তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ভবিষ্যতে আমারা দুজন একসাথে থাকবো । যেহেতু আমার সন্তান জন্ম দেওয়া সম্ভব নয় তাই আমরা একটা বাবু দত্তক নিবো এবং ওকে আমরা আমাদের সন্তান হিসাবে বড় করবো যাতে প্রজন্ম ঘাটতি না হয়। এখন তুমি বল তুমি রাজি আছো কি না ? আমি বললাম, আমি একটু ভেবে জানাই? সে বলল অবশ্যই!

হাসপাতাল থেকে বের হয়ে একটা সিগারেট জ্বালিয়েছি। ঘড়ি দেখলাম রাত এক’টার কিছু বেশি। মাথা ভনভন করে ঘুরছে। কি জানাবো থাকে আমি রাজি নাকি রাজি না। যদি রাজি না থাকি তাহলে সে কি করবে? আত্মহত্যা করবে তার মার মত? নাকি আমার উপর ঘৃণা নিয়ে বেঁচে থাকবে? আর যদি রাজি হই তাহলে সমাজ কি বলবে?সমাজ কি আমার এমন ভালোবাসা মেনে নিবে? সমাজ কি আসলেই এতটুকু পরিশীলিত হয়েছে?

রাস্তায় সুনশান নিরবতা মাঝে মধ্যে দু’একটা গাড়ি চলাচল করছে। ল্যাম্পপোস্টের সোডিয়াম আলোর নিচে আমি হাঁটছি। মাথার মধ্যে তার সাথে কাটানো অতীত স্মৃতি এলোমেলো ভাবে ঘুরছে। বুঝতে পারছিনা থাকে কি বলবো!



নিসর্গ

২৭ কে.বি প্লাজা

চকবাজার, চট্টগ্রাম

[email protected]







মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.