![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখি, ছবি তুলি আর সিনেমা বানাই ।
বাঙলাদেশের জন্ম কোন সামরিক অভ্যুত্থান কিংবা ঔপনিবেশিক চুক্তির ফসল নয়; এই দেশ জন্মেছে একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে, যেখানে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও গণতান্ত্রিক সংবিধান। অথচ আজ "জুলাই সনদ" নামে একটি তথাকথিত রাষ্ট্র পুনর্গঠনের নীলনকশা প্রকাশ করতে যাচ্ছে অবৈধ সরকার , যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধান উভয়ের বিরোধী। এই লেখায় আলোচনা করব কেন জুলাই সনদ অযৌক্তিক, অসাংবিধানিক, এবং একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার মেটিক্যুলাস ষড়যন্ত্র, যা বিদেশি ডিপ স্টেট এবং ইউএসএআইডির সহায়তায় পরিচালিত।
মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্র ও সংবিধানের ভিত্তি:
১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল "স্বাধীনতার ঘোষণা" (Proclamation of Independence) পত্রে বলা হয়:
“We, the elected representatives of the people of Bangladesh, do hereby affirm and proclaim the independence of Bangladesh and declare that... the will of the people is the basis of all authority.”
- এই ঘোষণাপত্রে পরিষ্কারভাবে জনগণের ভোট এবং প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার কথা বলা হয়। ১৯৭২ সালের সংবিধান তারই পরিণতি। সংবিধানের ৭(১) ধারা অনুযায়ী, "প্রজাতন্ত্রের সর্বময় ক্ষমতা জনগণের, এবং জনগণের দ্বারা ও জনগণের পক্ষে এই সংবিধান অনুযায়ী প্রয়োগযোগ্য।"
- অর্থাৎ, জনগণের ম্যান্ডেটের বাইরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল চরম অপরাধ।
জুলাই সনদ: এক কুৎসিত অভ্যুত্থানের নীলনকশা:
২০২৫ সালের তথাকথিত "জুলাই সনদ" মূলত একটি তথাকথিত 'অন্তর্বর্তী সরকার' গঠনের প্রস্তাব, যেখানে একটি নির্বাচিত সরকারকে অবৈধভাবে অপসারণ করে একটি তথাকথিত 'জাতীয় সরকার' গঠনের কথা বলা হয়েছে।
-এই প্রস্তাব বাস্তবায়নের মাধ্যমে যা করা হবে, তা হলো
১. জনগণের ভোটাধিকার অস্বীকার।
২. সংবিধানের লঙ্ঘন।
৩. রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা বিনষ্ট।
৪. বিদেশি শক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়ন।
বাঙলাদেশের সংবিধানের ৭(২) ধারা বলছে:
“This Constitution is the solemn expression of the will of the people, and the supreme law of the Republic...”
এবং ৭(৩) ধারা অনুসারে:
“Any attempt to subvert the Constitution shall be a punishable offence.”
এছাড়া সংবিধানের ৪৮, ৫৫, ৫৬, ৫৭ অনুচ্ছেদে সরকারের গঠন, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ও শপথের ব্যাখ্যা রয়েছে। সেগুলোকে পাশ কাটিয়ে কোনো তথাকথিত ‘অন্তর্বর্তী সরকার’ প্রতিষ্ঠা করলে তা সরাসরি রাষ্ট্রদ্রোহিতা।
- আর দণ্ডবিধির ১২১ ধারা অনুসারে, সরকার পতনের ষড়যন্ত্র করলে শাস্তি:
“মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড”।
বাঙলাদেশের ইতিহাসে ষড়যন্ত্রের পুনরাবৃত্তি:
এই "জুলাই সনদ" নতুন কিছু নয়। ইতিহাসে বারবার দেখা গেছে রাষ্ট্রবিরোধী অপশক্তি গণতান্ত্রিক পথ এড়িয়ে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করেছে।
- ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে সামরিক শাসন কায়েম হয়েছিল।
- ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ছায়ায় "ওয়ান-ইলেভেন" অভ্যুত্থানে রাজনীতিকে হাইজ্যাক করার চেষ্টা হয়েছিল।
এই একই ধরণের ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে জুলাই সনদে। এটি শুধুমাত্র শেখ হাসিনার সরকারকে অপসারণের চক্রান্ত নয়, বরং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা জনগণের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে আমলাতান্ত্রিক ও বিদেশি মদদপুষ্ট গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়ার প্রচেষ্টা।
ইউনুসের ভূমিকা ও বৈশ্বিক নেপথ্য খেলোয়াড়:
ড. ইউনুস, যিনি নিজের নামে নয়, বরং তথাকথিত ‘সভ্যতা রক্ষা’ ও ‘পুনর্গঠন’ ইত্যাদি ছদ্মবেশে কার্যত একটি বিদ্রোহের চিত্র এঁকেছেন। এই বিদ্রোহে রয়েছে:
-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের USAID অর্থায়ন।
-কিছু বিদেশি থিঙ্কট্যাঙ্ক ও ডিপ স্টেটের নীরব সমর্থন।
-এনজিওর ছদ্মাবরণে রাষ্ট্রবিরোধী অপারেশন।
ক্ষমতায় যাওয়ার একমাত্র পথ নির্বাচন; ষড়যন্ত্র নয়:
বাঙলাদেশের সংবিধান স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে ক্ষমতায় যাওয়ার একমাত্র বৈধ পথ হলো নির্বাচন, কোনো তথাকথিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিংবা বিকল্প শক্তির মাধ্যমে নয়। এই রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল যুদ্ধ করে, মুজিবের নেতৃত্বে, গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষায় not by the will of foreign agencies or unelected technocrats.
"জুলাই সনদ" ইতিহাসের ডাস্টবিনে নিক্ষিপ্ত হবে যেমন হয়েছিল পটেন্ডেট জিয়া, এরশাদ, ওয়ান-ইলেভেনের মাস্টারমাইন্ডদের স্বপ্ন। এই দেশ জনগণের, সংবিধানের, এবং সেই আদর্শিক চেতনার যা লেখা হয়েছিল রক্ত দিয়ে।
জয় বাঙলা। জয় সংবিধান। জয় গণতন্ত্র।
[ফুটনোট ও রেফারেন্স]
১. সংবিধান: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, ১৯৭২ (সংশোধিত)
২. Proclamation of Independence, ১০ এপ্রিল ১৯৭১
৩. দণ্ডবিধি ১৮৬০, ধারা ১২১
৪. জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি
৫. Human Rights Watch, Amnesty Reports on 2007 Military-backed Government
৬. WikiLeaks: USAID’s role in regime changes, 2010
৭. Dr. Yunus & Clinton Foundation ties: NYT, 2013
©somewhere in net ltd.