নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলে যাব- তবু যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল।

হাবিব

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র।

হাবিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প:- টুম্পার জন্মদিন।

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৮



টুম্পা গত দশ মিনিট ধরে একটানা ফোন করে যাচ্ছে। আমি রিসিভ করছি না। রিসিভ করেই বা কি হবে! কি জবাব দেব আমি? কেন আমার আসতে লেট হচ্ছে তা কি করে বুঝাবো ওকে? বুঝালেও কি বুঝ মানবে? অত বয়স কি হয়েছে ওর! ওর চাই শুধু আমাকে। কিছুক্ষণ আগেও কথা বলেছি। শান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু টুম্পার আদর মাখা কথার সামনে আমার কোন কথায় টিকাতে পারিনি।

টুম্পা আমার একমাত্র মেয়ে। পাঁচ বছর বয়স ওর। ক্লাস ওয়ানে পড়ে। স্কুলে যাবার আগে কখনোই জন্মদিন নিয়ে এতো বেশি আগ্রহ ছিল না মেয়েটার। স্কুলে ওর সমবয়সীদের কাছে গল্প শুনে শুনে ফোন করে বলতো: "বাবা, আমার জন্মদিন কবে? আমার জন্মদিনে কি গিফট দিবা? তুমি কেন আমাদের সাথে থাকো না?...." এমন সব হাজারো প্রশ্ন! কখনো বা ফুল তোলা সাদা ফুলানো ফুলানো জামা কিনে দেয়ার বায়না। আমি যখন দুই মাসেও বাড়িতে যেতাম না তখন ফোন করে বলতো: "বাবা, আমার জামা লাগবে না। তবুও তুমিই আসো। আমি তোমার কোলে উঠবো। তোমার সাথে ঘুরবো। তোমার গলা ধরে ঘুমাবো....." আরো যে কত কত আবদার! ওর কথা শুনে অশ্রু বাঁধ মানতো না। নিজের অজান্তেই গড়িয়ে পড়তো গাল বেয়ে।

প্রায় দুই মাস আগে বাড়িতে গিয়েছিলাম এক দিনের জন্য। টুম্পাকে ঠিক মতো আদরও করতে পারিনি। ফিরে আসার সময় সেকি কান্না......! ওর এমন ছেলে মানুষি দেখে বউটাও চোখের জল আঁচলে লুকিয়েছিল। শুধু বলেছিল, "সাবধানে চলাফেরা কইরো। সৎ থাইকো।"

আজকে টুম্পার জন্মদিন। আমি ওকে কথা দিয়েছিলাম জন্মদিনে নতুন জামা কিনে দিবো, কেক কাটবো, ফুল দিয়ে সুন্দর করে ঘর সাজাবো। সেই ভোর থেকে মেয়েটা ওঠে আমাকে ফোন করেছে খুশিতে। আমিও ওকে উইশ করেছি। "হ্যাপি বার্থ ডে টুম্পামনি।" মেয়েটা অনেক খুশি হয়। আর বলে, বাবা, নতুন জামা নিয়ে তাড়াতাড়ি এসো কিন্তু। আমার বান্ধবীদের আসতে বলেছি ওরা চলে আসবে আবার। ওরা আসার আগেই তো ঘর সাজাতে হবে। আমি বলি, আচ্ছা মামনি। তাড়াতাড়ি আসবো, বলে ফোনটা রেখে দিয়ে ভাবনার সাগরে ডুব দেই। যেতে কি পারবো ঠিক সময়ে বাড়িতে?

২০১৬ সাল থেকে ট্রাক চালাচ্ছি। এর আগে হেলপারি করতাম একটা পিকআপে। দুই বছরের মাথায় আমার সেই ওস্তাদের কাছ থেকেই চালক হওয়া শিখেছি। দেশের প্রায় সব হেলপার এভাবেই চালক হয়। আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। অনেক দূরের রাস্তা ড্রাইভার একা চালাতে পারেনা। সে জন্যই হেলপারদের হাতে স্টেয়ারিং তুলে দেয়। আর তাতেই বড় বড় দূর্ঘটনা ঘটে। আমি কখনো আমার হেলপারের হাতে স্টেয়ারিং দেই না। বেশি খারাপ লাগলে ট্রাক থামিয়ে রেস্ট নেই, তবুও দেই না। আর সেজন্যই কোন হেলপার আমার গাড়িতে বেশি দিন থাকতে চায় না।

ট্রাকে পণ্য নিয়ে ছুটতে হয় এক শহর থেকে আরেক শহরে। দিনের বেলা অনেক রাস্তায় ট্রাক চালানো নিষেধ বলে রাতের ঘুম বাদ দিয়ে চালাতে হয়। রাত জাগতে হয় প্রায়ই। এই নিয়ে কত জনে কত কিছু যে আমার বউকে বলে যায়! সেদিন পাশের বাসার মেরিনার মা নাকি বলছে, এই যে তোমার স্বামী এতদিন পর পর বাড়িতে আসে দেখ গিয়ে আবার বিয়ে করল নাকি আরেকটা। আবার কেউ বা বলে ট্রাক চালকরা মানুষ ভালো না। ওরা নেশা পানি খায়। এইসব আমার কাছে বলে আর বউটা অঝোরে কান্না করে। আমি সান্ত্বনা দিয়ে বলি, "দেইখো আমাদেরও একদিন সুদিন আসবে।"

তিনদিন হলো ট্রাকমালিক সমিতি থেকে ট্রাক চালানো বন্ধ রাখতে বলেছে। সরকারের নতুন সড়ক আইন বাতিল না করা পর্যন্ত নাকি ধর্মঘট চলবে। ট্রাক না চাললে আমাদেরও মাইনে বন্ধ। গাড়ির চাকা ঘুরলে টাকা আছে, নইলে নাই। মালিকেরা কি আমাদের কথা চিন্তা করে? আমাদের ঘরে চুলায় আগুন না জ্বললেও ওদের ঘরে ঠিকই বিরানি রান্না হয়। আমাদেরও যে পেট আছে, সংসার আছে তা কে বুঝাবে মালিক পক্ষকে?

আমি যার গাড়ি চালাই সে আমাকে প্রতি সপ্তাহে মাইনে দেই। অনেক ড্রাইভার আবার এক্সট্রা আয় করে, ধান্ধাবাজি করে। আমি সেটা করতে পারিনা। এক লিটার তেল ভরে দুই লিটার বলতে বিবেক সায় দেই না। মালিককে এই সপ্তাহে টাকার কথা বলতেই যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। "দেখছ না ধর্মঘট। চাকা না ঘুরলে টাকা কত্থেকে দেব? এই সপ্তাহে তো মাত্র তিনদিন চালাইছো। সামনের সপ্তাহে একবারে নিও। এই কয়টা টাকা না হলে মরবা না মিয়া। যাও তো এখন।" কথাটা বলেই ফোনে কথা বলতে বলতে প্রাইভেট কারে কই যেন চলে গেল।

মালিকের সাথে কথা বলতে বলতেই টুম্পার কল বাজছিলো। কথা শেষ করে টুম্পাকে ফোন দিলাম। ধরলো ওর মা। বললো, মেয়ে নাকি আমি না যাওয়া অবধি ফোন ধরবে না, কথাও বলবে না। ওপাশ থেকে টুম্পার কন্ঠ ভেসে আসছে, "তোমার সাথে আড়ি, তুমি একটা পঁচা বাবা।" আমি শুধু হাসলাম ওর কতা শুনে।

সেদিন বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত দশটা বেজে গেল। বাড়িতে গিয়ে দেখি বউটা উঠানে বসে আছে মন খারাপ করে। আমাকে দেখেই ঘরে চলে গেল। এর আগে অবশ্য আমাকে দেখলে মা-মেয়ে দুজনেই এগিয়ে আসতো। আজ কেউ এল না। ঘরে গিয়ে দেখলাম মামনিটা আমার ঘুমুচ্ছে। চোখের পানিও মুছে দেইনি ওর মা। শুকনো পানির রেখা আমাকে অভিমান করে বলছে, "আমি আর কখনো তোমাকে আসতে বলবো না বাবা, আমি আর কোনদিন জন্মদিন করবো না।

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


সংস্কৃতি নিজের রূপ বদলাচ্ছে

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৩

হাবিব বলেছেন: না বদলে উপায় আছে? ধনীরা ধনী হচ্ছে গরীব ফকির

২| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৫

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: দেশে যাই ঘটুক না কেন জীবন থেমে যায় টুম্পার বাবাদের।
অথচ এক শ্রেণির লোক এর সুবিধা ঠিক ভোগ করে।

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৮

হাবিব বলেছেন: আর স্বপ্ন ভঙ্গ হয় টুম্পাদের। ঘুমিয়ে পড়ে স্বপ্ন ভাঙা কান্না নিয়ে।

৩| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:২৪

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:




এতো কিছু করতে হবে না, টুম্পাকে এক কাঠি হা্ওয়াই মিঠাই কিনে দিন সে পৃথিবী হাতে পেয়ে যাবে।
শুভ জন্মদিন টুম্পা মা।

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:২৭

হাবিব বলেছেন: জন্মদিনে টুম্পা যদি তার বাবাকে না পায় তবে রাজ্য দিয়েও তার মন জয় করা যাবে না........

৪| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫৯

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: টুম্পার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা। ঠিকই তো এতটুকু বয়সে ও বাবার সমস্যা বুঝবে কি করে। শত কষ্টের মাঝেও বেঁচে থাকুক পরিবারের অবিচ্ছেদ্য বন্ধন । পোস্টে লাইক।

শুভকামনা প্রিয় হাবিব ভাইয়ের গোটা পরিবার বর্গকে।

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৮

হাবিব বলেছেন: শুভ কামনা পদাতিক দাদা........ ভালো থাকুন আপনারা........ ভালো থাকুক মেঘ

৫| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: এযুগের বাবা মা'রা মেয়েদের নাম টুম্পা রাখে না।
যাই হোক, টুম্পার জন্য শুভ কামনা।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:২৪

হাবিব বলেছেন: টুম্পা রাখে না তবে আদর করে টুম্পা বলে ডাকে

৬| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:২০

ঊণকৌটী বলেছেন: টুম্পার জন্য কষ্ট হয় কিন্তু করার নেই ।বাবা,মা রা যে আস্তে আস্তে রোবট হয়ে যাচ্ছি ।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:২৪

হাবিব বলেছেন: ক্ষমতাবানরা রোবট বেচে খাচ্ছে.........

৭| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:১৪

আরোগ্য বলেছেন: পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার সুন্দর উদাহরণ একেঁছেন।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:২৬

হাবিব বলেছেন: পুঁজিবাদের কবলে ছোট বড় সব পন্য। দেখছেন না বাজারে পেঁয়াজের কি অবস্থা। গত সপ্তাহে ১৬০ টাকায় পুরো এক কেজি পেঁয়াজ কিনে দিয়ে এসেছি। বলে যেটা পঁচে যাবে সেটা আগে খেতে। আইডিয়াটা দারুন না?

৮| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:২৫

নুরহোসেন নুর বলেছেন: টুম্পার জন্য শুভ কামনা রইলো।
চমৎকার লিখেছেন, ভাল লাগলো হাবীব ভাই।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:২৭

হাবিব বলেছেন: এমন হাজারো গল্প প্রতিনিয়ত তৈরী হচ্ছে আমাদের আশে পাশে। দেখার কেউ নেই নুরহোসেন

৯| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৬

নজসু বলেছেন:




টুম্পার জন্য আমারো মনটা খারাপ হয়ে গেলো।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:২১

হাবিব বলেছেন: এতো দিন পর কোথা থেকে উদয় হলেন?

১০| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:৫২

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: জীবন এমনই :)

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:০৫

হাবিব বলেছেন: সবার জীবনো আর এমন নই।

১১| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:০৩

শিখা রহমান বলেছেন: লেখাটা পরে মনটা কেমন করছে। বাবাকে মনে করিয়ে দিলেন।
টুম্পার জন্য কঠিন বাস্তবতা অপেক্ষা করে আছে। বাবা তার হাত ধরে থাকুক আজীবন।

শুভকামনা প্রিয় ব্লগার।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:০৯

হাবিব বলেছেন: বাবাদের আদর পাবার জন্য টুম্পাদের মন যে আকুলি -বিকুলি করে। মেয়েরা বুঝে বাবার কষ্ট। ভালো থাকুক সব বাবারা। আপনার বাবাও ভালো থাকুক। ধন্যবাদ প্রিয় আপু, সাথে থাকার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.