নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"নিভৃত চাষি, এক খন্ড জমির খোঁজে--www.facebook.com/al.hadi.5099

ইমরান আল হাদী

নিভৃত চাষি, এক খন্ড জমির খোঁজে...

ইমরান আল হাদী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: শিবুপালের পা

২৯ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:২৮


পরপর কয়েটি প্রচন্ড শব্দে শিবুপালের পায়ের তলের মাটি কেঁপে ওঠে। তার কানে তালা লেগে যায়।রাস্তার পাশের দোকান গুলি আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।রাত একটু বেশি হলে রাস্তাটি ফাঁকা হয়ে যায় তবু দুইটা রিকসা একটা সিএজি একটা মোটর সাইকেল রাস্তার মাঝে পরে থাকে।আরোহী বা চালোক চোখের নিমিশে হাওয়া হয়ে যায়।

শিবুপাল হতচকিত হয়ে প্রথমে একটু দৌড়ায় আর কোন দিক তার জন্য নিরাপদ সে সিদ্ধান্তহীনতায় রাস্তার মাঝে দাড়িয়ে পড়ে।শিবুপাল সর্বশেষ শব্দটি যখন শুনতে পায় তখন তার মনে হয় তার বাম পা বুঝি তীব্র শব্দে ফেটে গেছে আর সে তীব্রতায় তাকে ছিটকে ফেলে দেয় রাস্তায়।

শিবুপাল সোডিমাম লাইটের আলোয় দেখতে পায় ইশৎ উষ্ণ কালো তরল তার পা বেয়ে ঝরে পড়ছে। আর তখনি তার মনে হয় সেই কালো তরলের চেয়েও গভীর অন্ধকার নেমে আসে তার চোখে।মনে হয় গভীর জলে ডুবে যাচ্ছে সে আর তখনি তীব্র আলোর ঝলকানি তাকে এ আকস্মিক ঘটনা থেকে ছিটকে দেয় দূরে,এমন কি তার নিজ থেকেও দূরে।

শিবুপাল চোখ মেলে তাকালে তার চোখে যে আলো এসে পরে সে আলো কোমল আর সহনীয় মনে হয় তার।আর সে আলোর ভিতর থেকে মায়ের মুখ ভেসে উঠলে সে দেখে স্যালাইনের ব্যাগ থেকে টুপ-টুপ করে ঝরে পড়া ফোটার চেয়ে দ্বিগুণ হারে তার মায়ের চোখ থেকে জল ঝরছে। তার মনে হয় জল পরার হার দ্বিগুণ তিনগুণ পাঁচগুণ করে বাড়তে বাড়তে সহস্র ফোঁটায় ঝরে পরছে এবং শিবু পালের মনে হতে থাকে মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে সে শুয়ে আছে।বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে তার প্রচন্ড শীত অনুভুত হয়।


শিবুপাল তার পারিপার্শ্ব দেখে বুঝে নেয় সে হাসপাতলের বেডে শুয়ে আছে।তখনি তার মা তাকে আলগোছে ডাক দিলে সে দেখতে পায় বাস্তবিক তার মা তার পাশে বসে আছে।শিবুপাল বুঝতে পারেনা তার মা কি ভাবে এত দূর এলো আর তখনি তার মনে পরে সেও একটি হাসপাতালে অতিসম্প্রতি চাকরি পেয়েছে। আর সে হাসপাতলের নামটি সে মনে করতে পারেনা বা সে কখনই সে হাসপাতলের নাম মনে রাখতে পারেনি।

এমন কি তার মাকেও বলতে পারেনি। তার মা যখন তাকে জিজ্ঞাস করে কি চাকরি পেয়েছে তখন সে কেবল বলছিল একটি সরকারী হাসপাতালে।যেহেতু সে অল্প শিক্ষিত আর তার চাকরিটাও স্বভাবতই নিচু পদের তাই এ নাম জানা বা না জানার মধ্যে কোন লাভক্ষতি সে খুঁজে পায় না।আর কোন প্রতিষ্ঠানের নাম বিভিন্নজনের নামের সাথে মিলিয়ে কেন যে রাখা হয় তাও সে বুঝতে পারে না।

শিবুপালের চেতন অচেতনের মধ্যবর্তী অবস্থা থেকে পূর্ণ বোধ শক্তি ফিরে পেলে রাতের ঘটনাটির একটি সরল কার্যকারণ খুজতে থাকলে সে আরো ধোঁয়াশায় পরে যায়।
সে দারুন শংকায় পরে যায় যেহেতু তার নতুন চাকরি আর চাকরিতে ঢোকার মাস কয়েকের মধ্যে এ সংকট;আর সে চাকরির সুযোগ সুবিধা ছুটিছাটা সম্পর্কে কিছুই জানেনা, এও জানেনা সে ভর্তি আছে কোন হাসপাতালে।

আর এই প্রশ্নের উত্তর সে পেয়ে যায় যখন একজন নার্স তার বেডের কাছে আসে এবং শিবুপালের হাতের ক্যানেলা খুলে তাতে ইঞ্জেকশন দিতে দিতে বলে সে এই হাসপাতালে চাকরি করে তাই সিঙ্গেল ক্যাবিন পেয়েছে।সে আরও বলে সার্জারি বিভাগের প্রধান তার অপারেশ করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। তখন শিবুপালের কিছুটা নির্ভার লাগে।

যখন আরো পরে তার মা ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে থাকে এক পা নিয়াও তো কত মানষে বাইচ্চা আছে জীবন চালায় কাজকাম করে। তখন শিবুপাল হতচকিয়ে যায় সে দুই হাতে ভর দিয়ে বসে পড়ে তাতে তার মাথা ঝিমঝিম করে ওঠে আর সে দেখতে পায় বাম পায়ের হাঁটুতে সাদা ব্যান্ডেজের পোটলা ; এবং হাঁটুর নিচ থেকে পা নেই। আর এ না থাকায় তার মধ্যে কোন উদ্বেগ বা হাহাকার সে টের পায় না।শিবুপাল ধীরে শুয়ে পরে আর তার খুব ক্লান্ত লাগলে সে ঘুমিয়ে পড়ে।

শিবুপালের ঘুম ভাঙে প্রচন্ড অস্বস্তি নিয়ে। তার বাম পায়ে চুলকায় আর এ চুকানি এত অসহনীয় যে,সে তার মাকে বাম পা চুলকাতে বললে সে জানতে চায় পায়ের কোথায় চুলকায় ;তাতে সে তার মাকে বলে পায়ের গোড়ালিতে। শিবুপালের মা প্রচন্ড দ্বিধায় পড়ে যায়।অন্যদিকে শিবুপাল বারবার তাগাদা দিলে তার মা বাম পায়ের গোড়ালি কিভাবে চুলকাবে এই সমস্যার কোন সমাধান পায় না। যেহেতু শিবুপালের বাম পায়ে গুলি লাগার কারনে হাঁটুর নিচ থেকে কেটে বাদ দেয়া হয়েছে।

শিবুপালের বাম পায়ের চুলকানি বিষয়ক সমস্যা ও জটিলতা চলাকালীন কেবিনের ভিতরে দুই জন লোক আসে। তাদের সাথে আসে বড় ডাক্তার স্যার যিনি শিবুপালের অপারেশন করেছিলেন।ঐ লোক দুই জনকে শিবুপাল চিনতে পারে যেহেতু তারা বিশেষ পোষাক পড়া ছিল।তবে তাদের আসার কারন সে বুঝতে পারেনা।

তারা শিবুপাল কে নানান প্রশ্ন করতে থাকে। কেন অত রাতে শিবুপাল রাস্তায় ছিল কোথায় থাকে এর আগে কোথায় কাজ করতো এই সব নানান বিষয়ে প্রশ্ন করতে থাকে।সবশেষে একটি নাম বলে আর জানতে চায় তার সাথে কোন পরিচয় বা যোগাযোগ ছিলো কিনা। অতঃপর তারা চলে গেলে শিবুপাল বাম পায়ের চুলাকানি বিষয়ক সমস্যা ও জটিলতা আর অনুভব করেনা।

এর মধ্যে শিবুপাল বিভিন্নজন যেমন তার সহকর্মী, নার্স ও ডাক্তার স্যারদের কাছ থেকে টুকরোটুকরো কথা এবং সবিশেষ তার মায়ের মুখের জবানে সে জানতে পারে,সে যখন ঐ রাতে তার বাসা থেকে হেঁটে নাইট ডিউটিতে হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিল তখন সেই রাস্তায় আইনের লোক ও এক খারাপ লোকের সাথে কোন ধরনের সমস্যা হয় আর সে সমস্যার মধ্যে পড়ে যায় শিবুপাল।শিবুপালের মায়ের বয়ানে সেই ফায়ার ক্রস বা ক্রস ফায়ার জাতীয় কোন কিছুর মধ্যে পড়ে যায় সে।শিবুপালের মায়ের ধারনা,এতে সব দোষ তার সে যদি এর মধ্যে ঢুকে না যেত তবে সম্মানিত লোকদের কাজে বিঘ্ন ঘটতো না সেও তার পা হারাতো না।

শিবুপালের মা যখন এ সব কথা বলছিলো আর শিবুপাল একটি ঠান্ডা সেদ্ধ ডিম খাচ্ছিল তখন জন তিনেক লোক তার ক্যাবিনে ঢোকে এবং তারা শিবুপালের কিছু ফটো তুলতে ও কথা বলতে অনুমোদিত চায়।শিবুপাল বা তার মা কিছু বলার আগেই তারা শিবুপালের কিছু ছবি তুলে ফেলে।আর তারাও ঐ বিশেষ পোষাক পড়া লোকদের মত কিছু প্রশ্ন করে।

লোক গুলো চলে গেলে শিবুপাল তার মাকে বলতে থাকে যে তার বাম পায়ের পাতায় একটি নীল ডুমো মাছি বারবার পড়ছে আর বোবো শব্দ করছে। সে তার মাকে মাছিটি তাড়াতে বললে, শিবুপালের মা আবারো দ্বিধায় পরে যায় সে কি করবে তা বুঝে উঠতে না পেরে ঠায় বসে থাকে। শিবুপাল মাছির যন্ত্রণায় অস্থির হলেও তার মা কোনো মাছি বা পায়ের অস্তিত্ব খুঁজে পায় না।

শিবুপালের চুলকানি ও নীল ডুমো মাছি পড়া বিষয়ক জটিলতা হাসপাতলে ভর্তি থাকালিন আরো কয়েক বার ঘটতে থাকে এবং শিবুপালের কাছে আরো কয়েক বার বিশেষ পোষাকের লোক ও ছবি তোলা লোকেরা আসে।তাতে শিবুপাল একটি বিষয় লক্ষ করে যে এ সকল লোকেরা তার কাছে আসলে তার চুলকানি ও নীল ডুমো মাছি পায়ে পড়া বিষয়ক জটিলতা দেখা দেয়।
সে আরো নির্দিষ্ট ভাবে লক্ষ করে বিশেষ পোষাক পড়া লোকেরা আসলে তার বাম পায়ে চুলকায় এবং ছবি তোলা লোকেরা আসলে তার বাম পায়ে নীল মাছি বসে।

শিবুপাল এ সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পায়। তার কাছে আর বিশেষ পোষাক পড়া লোকেরা আসে না আর তার বাম পা চুলকায় না।তার কাছে ছবি তোলা লোকেরা আসে না আর নীল ডুমো মাছি তার বাম পায়ে বসে না।শিবুপালের পায়ের ক্ষত শুকিয়ে যায় এবং সে একটি পা না থাকা পরিস্থিতির সাথে ধীরে মানিয়ে নিতে থাকে।

শিবুপাল তার পা হারানোর সাথে চাকরি হারানোর যে আশংকার ছিল সে আশংকা কেটে যায়।যখন তাকে কর্তৃপক্ষ কাজে যোগ দিতে বলে এবং সহযোগীতার আশ্বাস পায়।

শিবুপাল যেদিন তার পা হারানোর পর, প্রথম কাজে যাবে সেদিন বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তার মনটা একটু খারাপ হয়ে যায়। সে যখন তার ডান পায়ের জুতাটি পড়লো তখন তার মনে হলো তার বাকি জীবনে এক পাটি জুতা অব্যবহৃত থেকে যাবে।তখন তার মনে পড়ে যায় এ জুতা জোড়াও প্রায় নতুন।সেই রাতেও এই জুতা জোড়া তার পায়ে ছিল। আর তার সাথে জুতা জোড়াও হাসপাতালে চলে গিয়েছিল।বাম পাটি জুতায় রক্ত লেগেছিল পরে তার মা তা পরিস্কার করে রেখে দেয়।এখনো জুতা জোড়া প্রায় নতুনের মতই আছে আর শিবুপাল ভাবে বাম পায়ের জুতাটি নতুন থেকে যাবে সব সময়।

শিবুপাল কাজে যোগ দিলে তার সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয়ে যায় দুটি ক্রাচ।সে ক্রাচে ভর দিয়ে ধীরে হেঁটে যায় এক ইউনিট থেকে আরেক ইউনিটে। মৃদু ঠুকঠুক শব্দ চলে যায় তার সাথে সাথে।শিবুপাল হাসপাতালের লম্বা করিডোর দিয়ে হেঁটে গেলে তার পরিচিত যারা তারা একটি অদ্ভুত বিষয় লক্ষ করে,তারা দেখে শিবুপাল যখন ধীরে হাঁটে তখন তার কাটা বামপায়ের নিচে একপাটি জুতা যেন হেঁটে যায়। তবে অনেকে ভেবে নেয় আলো আঁধারীর বিভ্রমে এ রকম দেখা যেতে পারে। যদিও মানুষ বিভ্রম বলে মনে করে তার পরেও তারা বারবার একই দৃশ্য দেখে যেতে থাকে। শিবুপালের কাটা বাম পায়ের নিচে এক পাটি জুতা হেঁটে চলে আর শিবুপাল লক্ষ করে তার জুতা জোড়া সমান ভাবে পুরোনো হয়ে যাচ্ছে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১:২০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বিভ্রম! না রহস্য!

গল্পে ভাল লাগা রইলো

+++

২| ২৯ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১:৩৪

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ছবিটা ভয়ের । লেখা ভালো

৩| ২৯ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:১০

জহিরুল ইসলাম সেতু বলেছেন: সুন্দর গল্প। ভাল লেগেছে। অভিনন্দন ইমরান আল হাদী ভাই।

৪| ২৯ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: শিবু পাল অন্যরকম মানুষ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.