নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কদম ফুল

এস্ এম্ হাসান

আমি প্রচুর হাসতে পারি; বোকার মত!

এস্ এম্ হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভূত

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩৬

"একদা এক মালো ভূত ছিল, তার ইয়া বড় বড় কান, মুলোর মত দাত" - এটুকু শোনার পর বুঝে নিতাম গল্পটা ভূতের। নড়েচড়ে বসতাম যেন ভূতকে মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। এরপর বড় হয়েছি, মত বদলেছে। এখন আমরা বলি ভূত বলে কিছু নেই। আবার অনেকে ভূত আছে বলে লড়াই বাধিয়ে দেই। যাহোক ভূত আছে বা নেই যেটাই সত্যি হোক (একটাতো অবশ্যই সত্যি), ভূতের গল্পটা চালু থাকা আবশ্যক বলা চলে। যারা তর্ক করেন, ভূত নেই তারাও ভূতের গল্প বলে তাদের সন্তানদের ঘুমপাড়ান, ভূতের ভয় দেখিয়ে তাদের কান্না থামান। আবার ভূতের গল্প বাদ দিলে দাদুরা বিপদে পরবেন নাতি নাতনীদের গল্প বলতে গিয়ে।

ভূত থাকুক বা না থাকুক 'ভূত' শব্দটার একটা সম্মোহনী শক্তি আছে। যারা ভূত নেই বলে তর্ক করেন আমার ধারণা তারা ভূত দেখেননি বলেই এমনটা করেন। একবার যে ভূতের পল্লায় পড়েছে সে নিশ্চিত জানে যে ভূত আছে এবং মানুষকে ভয় দেখানো ছাড়া এর আর কোন কাজ নেই এবং বোধ হয় ক্ষমতাও নেই। কারন এখন পর্যন্ত যারই ভূতের সাথে সাক্ষাতের সৌভাগ্য হয়েছে তাদের কেউই তার সাথে মারামারি করেননি। আমিও করিনি। আমাদের দেখা হয়, ভূত এবং আমি, আমরা দুজনেই নিস্ক্রিয় ছিলাম। তবে ভয়টা পুরোপুরি সক্রিয় ছিল। সেদিনের ঘটনাটাই বলি।

বিকাল থেকেই অকারনে মনটা ভাল নেই। মাঝে মাঝেই এমনটা হয়। বাড়ি আসলে সাধারণত যাদের সাথে চলাফেরা করি এদের কেউই আজ বাড়ি নেই। বিকালে সকলের বাড়িতে খোঁজ নিয়েছি। তবে আজ দুজনের বাড়ি আসার কথা রয়েছে। বলে এসেছি আসলে যেন আমাকে ফোন দেয়।
ঘরে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি। ভাল লাগছে না বলা বাহুল্যতা। রাত দশটার মত বাজে। এত সকালে সাধারনত শুই না। কিন্তু আড্ডা করার কেউ নেই। কিছুক্ষণ পড়ার চেষ্টা করেছি, লাভ হয়নি। এশার নামাজের সময় মসজিদে খোঁজ করেছি তখনও বন্ধুরা কেউ আসেনি।
একটু তন্দ্রা এসেছিল। ফোনটা বেজে ওঠল। হাতে নিয়ে দেখি আব্দুল আলিম। রিসিভ করতে বলল, "হাসান, কই তুই? আমি ঈদগাহর এখানে আছি, আয়।" আমি কিছু বলার আগেই রেখে দিল। আমিও হাফছেড়ে বাঁচলাম। আলিমের সাথে আড্ডা মেরে মনটা হয়তো একটু হালকা হবে। টি শার্টটা কাঁধে নিয়ে বের হলাম। তড়িঘড়ি করে দরজা খুলতে গিয়ে একটু শব্দ হল। আম্মা বললেন, "কিরে, কই যাইতাছস?" এই একটা বিষয় আমি বুঝি না। আম্মা কি কখনো ঘুমায় না!? যখনই কোথাও বের হই বা ফিরে আসি তখনই জিজ্ঞেস করেন, কোথায় যাই, কোথা থেকে আসলাম। রাত যতটাই বাজুক আর যত চুপিচুপিই আসি। আম্মা ঠিক টের পেয়ে যান। "কোথাও যাচ্ছি না। ভাল লাগছে না। বাইরে একটু হাটতে বেরিয়েছি" বলে হাটা দিলাম। আম্মা বললেন, "তারাতারি ফিরা আইছ।" আশ্চর্য, আমি মিথ্যা বলেছি সেটাও তার কাছে গোপন নেই। ঠিক ধরে নিয়েছেন আমি কোথাও বের হচ্ছি। মাঝে মাঝে মনে হয় আমার আম্মা অতিপ্রাকৃত কিছু। আবার মনে হয় সবার আম্মাই এমন অতিপ্রাকৃত।

আজ বিকাল থেকে আকাশটা মেঘলা। কবি হলে বলত, আমার সাথে আকাশেরও বুঝি মন খারাপ। কিন্তু আমি কবি নই। আর আকাশেরও মন খারাপ নয়, মেঘলা। আকাশে চাঁদ নেই তবে ঘুটঘুটে অন্ধকারও নয়। কিছুটা দূর পর্যন্ত দেখা যায়। দক্ষিণা বাতাস বইছে। আমি যথেষ্ট দ্রুত হাটি। আলিম দাড়িয়ে আছে তাই আরো দ্রুত হাটছিলাম। হঠাৎ নজরে পড়ল আমার থেকে কিছুটা দূরত্বে সাদা একটা জিনিস হেটে যাচ্ছে। থমকে দাড়ালাম। গলা খাকারি দিয়ে বললাম, কে? কোন জবাব নেই। আরো কয়েক গজ সামনে গিয়ে দাড়িয়ে পড়ল। আমার মনে হল দক্ষিণা বাতাসটা একটু কমে এসেছে। ভাবলাম কোন নিশাচর প্রাণী হবে হয়তো। তাই হাকলাম, ধুর হ্, যাঃ ধুর! সেটা শুনল বলে মনে হল না। ঠায় দাড়িয়ে আছে। দক্ষিণা বাতাসটা আবার বইছে। বাতাসটা আগের চেয়ে ঠান্ডা। বোধ হয় বৃষ্টি হবে। আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভাবছিলাম, বাড়িতে ফিরে যাব কিনা। তখন লক্ষ করলাম সামনের সাদা সে বস্তুটা আবার হাটা শুরু করেছে। আমিও ধীরে ধীরে হাটতে শুরু করলাম। একটু সামনে গিয়ে রাস্তাটা বায়ে মোড় নিয়েছে। সাদা সে জিনিসটা (সেটা যে ভূত সেটা এখন আমি নিসন্দেহ) রাস্তার মোড় পর্যন্ত গিয়ে সোজা উত্তর দিকে জমিতে নেমে গেল। আমি আর কোন দিকে না তাকিয়ে এক প্রকার দৌড়ে পাড় হলাম। ইতিমধ্যে শরীরের ভেতর থেকে চিকন একটা ঘাম বের হয়েছে।

এরপর রাত প্রায় বারটা কি একটা পর্যন্ত গল্পগুজব করে আবার বাড়ির উদ্দেশ্যে হাটা দিলাম। আলিম বলল, "যেতে পারবিতো?" আলিম এটা প্রতিদিনই বলে। আমিও প্রতিদিনই বলি, পারব। আজও স্বভাবত উত্তর দিয়ে হাটতে থকলাম। একবার ভাবলাম বলি, আমাকে একটু বাড়ি পর্যন্ত দিয়ে আয়। আবার মনে হল, আলিম আমাকে ভীতু ভাববে। সবাই জানে আমি রাত বিরাতে একলা চলতে ভয় পাই না এবং আমি এতে গর্ব অনুভব করি। তাই সাহস করে হাটতে থাকলাম। মনে ভরসা ছিল ভূতটা কি আর এখনো বসে আছে? নিশ্চয়ই না।
হাটতে হাটতে রাস্তার মোড়টার নিকটে আসলাম। ইন্দ্রিয় গুলো সচেতন হয়ে ওঠল। সাদা সে ভূতটা উপস্থিত থাকুক সেটা মনে প্রাণে না চাইলেও চোঁখ দুইটা সেটাকেই খুঁজছিল। কিছুটা দূরে থাকতেই ভূতটার উপস্থিতি টের পেলাম। হৃৎকম্পন শুরু হয়ে গিয়ছে ইতিমধ্যে। আমি যাবার সময় যেখানে দেখেছিলাম সেখানেই দাড়িয় আছে। বুঝতে বাকি রইল না যে, যাবার সময় ঘাড় মটকানোর সুযোগ পায়নি বলে সুযোগের অপেক্ষায় এখনো দাড়িয়ে আছে। আমি আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে মোড়টা পার হয়েই দৌড় দিলাম। বাড়ি পর্যন্ত পৌছে জোরে আম্মাকে ডাক দিলাম। আম্মা বলল, 'কিরে কিতা অইছে?' আম্মার গলাার স্বর শুনে ভয়টা অর্ধেক কেটে গেল। বললাম, ঘুমাইছ? আম্মা বলল, না। এতক্ষণ কই আছিলি? আমি কিছু না বলে ঘরে গিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়লাম।
রাতে ভাল ঘুম হল না। মাঝে মাঝে একটু তন্দ্রা আসলেও বাজে বাজে স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে গেল। টিনের চালে গাছের মরা ঢাল ভেঙ্গে পড়লে মনে হল ভূতে পাথর ছুড়েছে। শেষ রাতে মনে হল জ্বর আসবে। যারাই ভূতের সামনে পড়ে তাদেরই জ্বর হয়। আমারও হবে এটাই স্বাভাবিক। একটু ঘোরের মত হয়ছিল। আম্মার ডাকে লাফিয়ে উঠলাম। ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। নামাজের জন্য ডাকছে।
নামাজের জন্য বের হলাম। একটু বৃষ্টি হয়েছিল। শীত শীত করছে। হাত দুইটা বুকের কাছে ভাজ করে হাটছি। মোড়ের নিকটে এসে আর সামনে যাওয়ার সাহস হল না। একটু দাড়িয়ে ভাল ভবে চার দিকটা দেখে নিলাম। ভূতটা সেখানেই দাড়িয়ে আছে দেখে পেছন ফিরে সোজা এক ছুট। বাড়ি গিয়ে নামাজ পড়ে সূর্য উঠার পর আবার বের হলাম। বুকটা এখনো ধুকধুক করছে। মোড়ের ওখানে গিয়ে ভূতটার সাথে আবার দেখা। এবার প্রাণ খুলে কতক্ষণ হেসে নিলাম। রাতের আঁধারে আমরা কতটা বোকা হয়ে যাই।
( সাদা সে ভূতটা ছিল একটা সাদা রংয়ের বড় খালি বস্তা/পলি। দক্ষিণা বাতাস সেটাকে আমার আগে আগে ঠেলে এনেছে। রাস্তা থেকে নেমে জমিতে বসানো বাঁশের কঞ্চির সাথে আটকে যায়। আর রাতের আঁধারে আমি সেটাকে ভূত ভেবে কি ভয়টাই না পেয়েছি!)

এরপরও যারা বলে ভূত বলে কিছু নেই তাদের উদ্দেশ্যে আমার বলার কিছু নেই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.