নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কদম ফুল

এস্ এম্ হাসান

আমি প্রচুর হাসতে পারি; বোকার মত!

এস্ এম্ হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

অসহায়ত্ব

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:২৯

বড় আপা আমাকে বলেছে "তুই সাবধানে হাটা-চলা করবি"।
বড় আপা আমাকে নিয়ে খুব ভাবেন এবং নানা সময় কল্যাণার্থে নানা উপদেশ দিয়ে থাকেন। এটাও এমনি একটা উপদেশ।
বড় আপা জানেন আমি খুব উদাসীন ভাবে হাটি। অনেক সময় পরিচিত জনরা অভিযোগ করে যে রাস্তায় দেখা হলে নাকি আমি তাদের চিনি না। ডাকলেও শুনি না। অথবা দেখেও না দেখার ভান করি। শেষের অভিযোগটা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছি না।
বড় আপার কথা মেনে সাবধানে হাটা-চলা করতে চেষ্টা করলেও পারি না। রাস্তায় বের হলেই কেমন উদাসীন হয়ে পরি। তাছাড়া হাটিও খুব দ্রুত। তাই দূর্ঘটনা এড়াতে রাস্তার একেবারে প্রান্ত ঘেষে চলি। ঢাকার ফুটপাথের অধিকাংশই অস্থায়ী দোকান দখল করে নিয়েছে। বাকি যে টুকু খালি থাকে সেটা দিয়েই ভীর ঠেলে হাটি আর ফুটপাথের দোকানগুলোর বেঁচা-বিক্রি দেখি। ফুটপাথের কিছু কিছু জিনিস আমার খুব ভাল লাগে। কিন্তু কেনা হয় না। হয়তো পকেটে টাকা থাকে না, নয়তো প্রয়োজন হয় না।
আজ বাসায় ফিরতে রাত সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে। ক্যাম্পাস থেকে বাসার দিকে হাটছি। রাস্তা ফাকা, দু-একটা রিকসা অবশ্য চলছে। ফুটপাথের দোকানগুলো নেই। শুধু কয়েকটা খাবারের দোকান- খাবারের দোকান বললে বুঝা যাবে না; ভাতের দোকান। দোকানগুলোর মালিক সাধারনত মহিলারা। বাসা থেকে হাড়িতে করে রান্না করে নিয়ে এসে ফুটপাথে বিক্রি করে। যারা অল্প দামের খরিদ্দার তারা এখানে খায়। সাধারনত রিকসা চালকেরা খায়- যারা কিছু টাকা বাঁচানোর জন্য বস্তিতে না থেকে রাতে রিকসার মধ্যে অথবা ক্যাম্পাসের মলচত্ত্বরো তেরপাল বিছিয়ে ঘুমায়।
আমি দুপুরে বা রাতে আসার সময় এ দোকানগুলো দেখি। যারা খায় তাদের প্লেটের দিকে আঁড়চোখে তাকাই। একটা লোক খাচ্ছে আর কেউ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সেটা ভাল দেখায় না; তাই গোপনে আঁড়চোখে দেখি তারা কি দিয়ে খাচ্ছে। আমার খুব ইচ্ছা হয় তাদের সাথে বসে গল্প করতে করতে খাই আর কচ করে কাঁচা মরিচে কামড় বসাই। কিন্তু সেটা হয়ে ওঠে না।
আজ আসার সময় আঁড়চোখে দেখছি আর মনের গোপন বাসনা চেপে দ্রুত পা ফেলছি। হঠাৎ অশুভ প্রেতের মত হাজির হলো কয়েকটা পুলিশ। ভাতের পাতিল ছুড়ে ফেলে- তরকারির পাতিল উল্টে- ডালের পাতিলে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে অকথ্য গালাগালি করেতে করতে চলে গেল। মহিলাগুলো খুব কাঁদো কাঁদো হয়ে বলছিল "স্যার, আমি চলে যাচ্ছি, চলে যাচ্ছি"। কিন্তু পুলিশেরা শুনল না।
আমি দাড়ালাম না। হাটতে হাটতেই বারকয়েক পেছনে ফিরে তাকলাম। দেখলা মহিলার অসহায়ের মত কোমরে হাত দিয়ে রাস্তায় ছড়ানো-ছিটানো ভাত-তরকারির দিকে চেয়ে আছে।
আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। কেন যে মনে হল আমার মাখানো ভাতের গ্রাস জোর করে কেড়ে নেয়া হয়েছে।
মহিলার অসহায়ত্বগুলো আমার বুকে ভরে নিয়ে বাসার দিকে দ্রুত পা ফেলি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.