নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিক্রিয়ায় বিক্রিত মনুষ্য।

হাইড্রোক্লোরাইড এসিড

বিক্রিয়ায় বিক্রিত একটি মনুষ্য আমি। মনুষ্য হয়ে জন্মেছি মনুষ্যকে ভালবেসে বরণ করে বেঁচে আছি।সৃষ্টিকর্তার লীলায় ঘেরা এই পৃথিবীতে,রোজ সকালে যখন প্রাকৃতিক নেশাগ্রস্থ অবস্থায় চোখ মিট মিট করে  সৃষ্টির দিকে তাকিয়ে দেখি, তখন বুঝতে পারি স্বপ্ন দেখার মনটি এখনো নুয়ে পরে নি। সৃষ্টিকর্তা আমাকে আরোও একবার সৃষ্টির স্বাধ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন।অলস দুপুরে ঘামের পানি গুলো টপ টপ করে তখন  একটু ছায়ার আশায় নিবৃত্ত থাকি , বটতলায় দাড়িয়ে থাকা শিশু গাছটি তার ঢাল পাতা দিয়ে আমায় সূর্যি মামার রাগান্বিত রুপ থেকে রক্ষা করে।দিনশেষে আমরা সবাই একা, সূর্যি মামাও তার কোমল রুপে আমাদের ত্যাগ করে । জীবন জাগ্রত থেকে জাগ্রত হই স্বপ্ন দেখার।হইতো বা দুনিয়ার পাঠশালার সাথে সামলে নিতে না পেরে এই এসিড একদিন উবে যাবে।হইতো বা দুনিয়ার এই এসিডের বিক্রিয়া সকল বিক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে। সবই আমরা সৃষ্টির লীলা খেলায় বেঁচে থাকার তীব্র চেষ্টায় উজ্জীবিত থাকি এক সত্যেকে আঁকড়ে ধরে

হাইড্রোক্লোরাইড এসিড › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেহেরজান একজন বীরাঙ্গনা

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:১৩

-হ সাব এইডাই মেহেরজানগো বাড়ি, বহুত খুব সুরুত লাড়কি।
বাসার ভিতরে মেহেরজানের খুব ভয় হলো, তাদের বাসার দরজায় লাথির আওয়াজ, হঠাৎ দরজা খুলে কয়েকজন লুঙ্গি পরা মানুষ! ক্ষীণ দেহে মেহেরজান চেষ্টা করলো বাধা দিতে না সে পারলো না, খাকি কাপড় পরিধান করা কিছু দানব আকৃতির মানুষ তাকে চুলের মুঠি ধরে নিয়ে যাচ্ছে,।
মেহেরজানের সামনে ব্রাশফায়ার করা হলো তার মাকে । আর্তনাধ করতেই মেহেরজানকে বলা হলো 'চোপ খানকি '।
হঠাৎ এই কথায় মেহেরজান নিজের মনের ধাক্কায় বললো, "আমি তো ভদ্রঘরের মেয়ে, অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। ঐ সম্বোধন করলো কি করে?

এক হাত থেকে অন্য হাত এবং অন্যে জায়গা মাংশপিন্ড হয়ে ঘুরতে থাকে নরপশু পাকিদের ক্যান্টনমেন্টে। মেহেরজান মনে ভাবতো, কে তার বাবা, কে তার ভাই কিংবা সেই বা কে! মানুষিক ভাবে ভেঙ্গে পরা এক বাচ্চা মেয়ে এক সময় নিজেকে অশরীরি কঙ্কাল মনে করা শুরু করলো।
কিন্তু এই দেহের অব্যহতি নেই, খেলার পুতুল ছাড়া সে আর কিছু না সে। নিজ প্রয়োজনে পাকিরা ২-৩ মাস পর গোসল করার জন্য তাকে হুকুম দিতো। কিন্তু না শাড়ি কিংবা সেলোয়ার কামিজ তাদের দিতো না । গোসল করতে হবে দরজা খোলে। শাড়ি পরতে দেওয়া যাবে না, কারণ ইতিমধ্যে অনেক রাণি জীবনের মুক্তি পেয়ে শাড়ির আড় প্যাঁচের মাধ্যমে।।।

হে আল্লাহ! এই তোমার দুনিয়া ! মাঝে মাঝে মেহেরজান ভাবতো দেশটা হইতো স্বাধীন হবে ,সে ফিরে যাবে তার পরিবারের কাছে। কিন্তু সময় আর যাই না তার...।
প্রত্যেক রাত্রি যেতো পশুদের হত্যাচারে, শেষ রাত্রি যেতো কষ্ট ও দেহের যন্ত্রনার মধ্যে দিয়ে।
তার সাথে অন্যান্য বন্দীদের বয়স ছিলো ১৪- ৪০ কিংবা তার চেয়ে যৌবনোত্তীর্ণ মহিলা!!
পাকিস্তানীরা বলেছিলো ইসলাম রক্ষার জন্য তারা লড়াই করছে, এই হলো তাদের লড়াই!!
সভ্যতার আলোকিত পুষ্প সেদিন এই ভয়াল দশা দেখে হইতো নুয়ে পরেছিলো।

ভাত তারা দেখে নি গত কয়েকটা মাস , রুটির মতো দেখতে পোড়া এক ধরণের খাবার দেওয়া হতো, খাবার দেওয়ার সময় জমাদারনি বলতো কার কি জাত ,ধর্ম! তাই মাংশ দেওয়া হতো না।
হাইরে পাকি, তোরা আবার ধর্মের ব্যাখ্যা বুঝতি! ভেবে কূল পাই না।
আজকাল, মেহেরজানদের ক্যাম্পের বাইরে গোলাগুলি শোনা যায়, জমাদারনি বললো, জায়গাটা ময়মনসিংহ ।পাশে কমলগঞ্জে মুক্তিদের সাথে পাকিদের যুদ্ধ হচ্ছে। মেহেরজান ভাবলো, হ্যাঁ এবার শুরু হয়েছে তাহলে যুদ্ধ আমাদের বাঁচার যুদ্ধ স্বাধীনবাংলার যুদ্ধ।

একদিন জিপে করে মেহেরজানদের নিয়ে যাওয়া হলো, এক অদ্ভুত এক জায়গায় যেখানে তাঁবু আছে, কাঁচাপাকা টয়লেট কিন্তু এবার বেড়ার ফাঁক দিয়ে আলো দেখা যায়, অদ্ভুত অনুভূতি যে আলো তারা দেখে নি অনেক মাস যাবত। মাসের হিসেব নেই তবে ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে।

পশুদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে ভাব গভীর, ভয় ভয় এক ব্যাপার। গোলাগুলি বন্ধ। তাইলে কি কিছু হয়েছে? না, ভারতীয়রা বিমান হামলা করছে। এক বুড়ো পাঠান সেনাকে, মেহেরজান জিজ্ঞাস করলো কি হয়েছে, বুড়ো পাঠান বললো যুদ্ধ শেষ হয়ে যাচ্ছে।বুড়ো পাঠান বললো পিয়ারি তোমার দেশ স্বাধীন হবে আর তুমি এক লাড়কা দেখা বিয়া করবে। মুক্তিলোক আমাগোকে ছাড়বে না।
জিদ করে, মেহেরজান বললো না আমি তোমারে বিয়ে করবো, আমার সমাজ আমাকে মেনে নিবে না।

অবাক হচ্ছেন তাই না! পশুদের সাথে মেহেরজানের সংলাপ শুনে, হ্যা আমিও অবাক হয়েছি, সেদিন আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম ঠিকই কিন্তু নিজেদের মানুষিকতার বিরুদ্ধে আমরা কি সেদিন যুদ্ধ করেছিলাম!
অধ্যাপক নীলিমা ইব্রাহিম তাঁর বই "আমি একজন বীরাঙ্গনা বলছি" খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। কে আমাদের বীরাঙ্গনা, তারা চেয়েছিলো কি?
কারণ আমি জানি এরা আমাদের নারী মুক্তিযোদ্ধা ।
বঙ্গবন্ধু এই নির্যাতিত নারীদের ' বীরাঙ্গনা ' নাম দিয়েছেন । আমাদের সমাজে যখন এই মেয়েদেরকে নিয়ে বাজে মন্তব্য ছড়াচ্ছিলো তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বীরাঙ্গনাদের পিতার নামের পাশে আমার নাম লিখে দাও। মুজিব তো মরে গেছে!
আর আমরা তারপর কি করলাম! সবই ভুলে গেলাম। নিজেদের মানুষিকতা পশু থেকে আরো পশু বানিয়েছি। খবরে আজকে দেখলাম চট্টগ্রামে ক্লাস ' ফোরের' এক বাচ্চা মেয়ে স্কুলে নির্মানাধিন ভবনের শ্রমিক দ্বারা অশোভন আচরণে শিকার হয়েছে।
নতুন কিছু ভাবছি না, তবে একটা হতাশা বারবার কাজ করছে 'মুক্তিযুদ্ধের বাংলা ' বলি কিন্তু আসল মুক্তির শিক্ষা কেউই পেলাম না।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:২০

ভ্রমরের ডানা বলেছেন: নতুন কিছু ভাবছি না, তবে একটা হতাশা বারবার কাজ করছে 'মুক্তিযুদ্ধের বাংলা ' বলি কিন্তু আসল মুক্তির শিক্ষা কেউই পেলাম না।

এই জন্য কবি বলেছেন, আবার তোরা মানুষ হ।

১১ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:০০

হাইড্রোক্লোরাইড এসিড বলেছেন: মুক্ত হবে মুক্তির পথে, আশা রাখি

২| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৪৩

তাশমিন নূর বলেছেন: "মুক্তির মন্দির সোপানতলে
কত প্রাণ হল বলিদান,
লেখা আছে অশ্রুজলে।"

এভাবেই মানবতা মুছে যায়, যাচ্ছে। স্বাধীন হয়েও আমরা পরাধীনই আছি। এবং তাতে যেন আমাদের কোন মাথাব্যথাও নেই। খাচ্ছি, দাচ্ছি, ঘুমোচ্ছি। নির্লিপ্ত জীবন-যাপন করছি।

১১ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:০২

হাইড্রোক্লোরাইড এসিড বলেছেন: নতুনের স্বপ্ন দেখবো, নতুন পথ স্বপ্ন দেখুন সময় শেষ হই নি

৩| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:৫৬

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
সময়ের আবর্তে ওরাই হয়ে গেছে ঘৃন্য।

হায় রে দেশ, হায়রে জাতি।

দেশের জন্য যারা সব বিলিয়ে দিল আজ তাদেরই আমরা কলঙ্ক দিচ্ছি ?

১১ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:০৩

হাইড্রোক্লোরাইড এসিড বলেছেন: কোথায় গিয়ে কষ্ট আর উপলব্ধি করতে পারি নি। যেন চক্রের মতো চলছে নষ্টের তন্ত্র

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.