নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেউ চিরদিন বেঁচে থাকে না তবু কেউ কেউ বেঁচে থাকে।

হাবিব শুভ

হাবিব শুভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ- নদী ও নারী

১০ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৩২

রমজান মাস চলছে। নন্দিনীর বিয়ে হয়ে গেছে চলতি বছরের ঠিক আগের বছরের এমন দিনে । এখনো প্রায় সদ্য নব বধূ। বিয়ের এক বছর পূর্তি হয়েছে এই রোজা মাসেই। শ্বশুর বাড়িতে প্রথম রোজা মাস। প্রতিদিন ই ভাল কিছু রান্না হচ্ছে। নতুন বউ কে রান্নার দায়িত্ব দেয়া হলেও এখনো পুরোপুরিভাবে রান্নার দায়িত্ব দেয়া হয় নি। ফ্যামিলির বড় বউ। প্রথম ও বড় বউ হিশেবে আদর একটি বেশি ই। আপাতত ইফতার বেলায় সবার প্লেটে ইফতারি সাজানোর দায়িত্ব নন্দিনী কে দেয়া হয়েছে। খুব সহজ কাজ আবার কঠিন ও। সবাইকে সমানভাবে ইফতারি সাজিয়ে দেয়াও কঠিন একটা কাজ। আর ইফতারি সাধারণত দিনের শেষবেলাতে অর্থাৎ আজান হওয়ার কয়েক মুহূর্তে আগে করা হয়ে থাকে। সারাদিন না খেয়ে এই শেষ বেলাতে এই সহজ কাজটাও অনেক জঞ্জালের মনে হয়। নন্দিনী কাজটাকে মোটেও জঞ্জাল মনে করছে না। খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ টা করছে।
মাথায় কাপর দেয়া। সুতিকাপড় কুচি দিয়ে পরা। হাতে সোনার হলুদ চুড়ি ঝকঝক করছে। নন্দিনী কে খুব সুন্দর লাগছে।
কত সুন্দর লাগছে সে কথা স্বামীর বোন ননদী বলে যাচ্ছে। সুন্দরের প্রশংশা শুনতে সবার ই ভাল লাগে। নন্দিনীর ও ভাল লাগছে। প্রশংশা শুনে নন্দিনী মুচকি একটু হাসলো। তারপর আবার প্লেটে প্লেটে বিরিয়ানি সহ অন্যান্য ইফতারির খাবার তুলে সাজিয়ে দিচ্ছে। গ্লাসে গ্লাসে পানি, শরবত ঢেলে দিচ্ছে। এসব করতে বারবার হাত নাড়াতে হচ্ছে। হাত নাড়ার সাথে ঝকঝকে চুড়ি ঝনঝন করে আওয়াজ করছে।
শাড়ি পরে কাজ করাটা একটু ঝামেলার। মাথা থেকে কাপর পরে যায়। বারবার শাড়ির আচল সরে যায়। শাড়ির আচল সরে গিয়ে পেট দেখা যায়। ঘরে তে পুরুষ মানুষ নন্দিনীর স্বামী ছাড়াও শ্বশুর সহ দেবর-ভাশুর রাও রয়েছেন। ওরা দেখলে লজ্জার শেষ থাকবে না। একে ত আবার রমজান মাস। পবিত্র মাস। তারউপরে নতুন বউ। সবাই খুঁটনি ধরবে। তিলকে তাল করবে। হাটে হাড়ি ভাঙ্গা হবে। নতুন বউদের অবশ্যই খুব সাবধানে চলাফেরা করতে হয়। ঘরের মেয়ের, শ্বাশুরির চলাফেরাতে অসাবধানতা থাকতে পারে, পেট-পিটের কিছুটা অংশ খোলামেলা থাকতেই পারে কিন্তু ঘরের বউদের বেলায় তা নয়।
যদিও শাড়ির পরা মেয়েদের জন্য জঞ্জাল তবুও বাঙ্গালী সমাজব্যবস্থা মেয়েদের বিয়ের পর ঘরের বউ কে শাড়ি পরা অবস্থা দেখতেই পছন্দ করেন। বিশেষ করে স্বামী-শাশুড়ি। শাড়িতে নারীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। শাড়ির মধ্যে একটা নারী নারী ভাব থাকে। মেয়েরা শাড়ি পরা অবস্থায় আয়নায় যেদিন নিজেকে প্রথম দেখে সেদিন নিজেই নিজের প্রেমে পরে যায়। সেদিন ই এদের প্রথম কারো প্রেমে পরতে ইচ্ছা করে। প্রেমের মানুষ না থাকলে এরা আয়নার সামনে গিয়ে নিজেই নিজের প্রেমে পরে। সেদিন ই নারীত্বের প্রথম লজ্জা পায়।
নন্দিনী চেষ্টা করছে কাপর যাতে ঠিকঠাক থাকে। ইচ্ছে করছে কাপড়ের আচল কোমরে গুঁজে দিতে। কিন্তু করছে না। শ্বশুরালয়ে নতুন অবস্থায় এটা ভদ্রতা না।
শাশুড়ি মায়ের মতই ভাল। নিজেই সব সামলাচ্ছেন। বউ কে কিছু করতে দেন না। কখনো নন্দিনী বলে ডাকেন না, বৌমা বলেও ডাকেন না, তিনি শুধু "মা" বলেই ডাকেন।
সবসময় আদর করে বলেন, আমার এক মা মারা গেছেন আর আরেক মা পেয়েছি। যখন বেশি খুশি হন তখন বুকে টেনে নিয়ে আদর করেন। এটা দেখে ননদী ঈর্ষায় জ্বলে যায়।
নন্দিনীর এক ছোট্ট দেবর আছে। স্কুলে পড়ে। সেও সারাদিন নন্দিনী কে ভাবি ভাবি করে ব্যস্ত। মায়ের চাইতে যেন বেশি লায় ভাবীর কাছেই পায়।
আজান হয়েছে। সবাই ইফতারি খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। নন্দিনী ও ইফতারের দোয়া পড়ে পানি খেয়ে রোজা ভাঙ্গলো।
আস্তে আস্তে এশার আজান হলো। সবার এশার আর তারাবির নামাজ পড়াও শেষ।
রোজা মাস লিমিটেশনের মাস। সব কিছু লিমিটেড। রোজা থাকা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রী ঘনিষ্ঠ হতে পারবে না। এশার নামাজ পরে আর একটু রাত হওয়ার পর নাহিদ আর নন্দিনী কাছাকাছি এসেছে। নাহিদ ও খুব সেনসিটিভ পারসন। বউকে সারাদিন কোন ডিস্টার্ব করে না। অযথা জ্বালায় ও না। রোজা মাস অফিস বন্ধ তবুও বউ কে অযথা ঘরের কাজ করতে ডিস্টার্ব দেয় না। নন্দিনী, নাহিদ কে পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবতী ই মনে করছে। রোজা মাসে মাঝরাতে কিছুটা সময় ই নন্দিনীর খুব কাছে আসে।নর-নারীর আদিম কিছু আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠে। নন্দিনী, নাহিদের আকাঙ্ক্ষা পূরণে যথেষ্ট চেষ্টা করে।
রাত বাড়ছে। গভীর রাত হয়েছে। প্রয়োজনীয় কোন কারণ ছাড়া কেউ জেগে নেই। নাহিদ ও ঘুমিয়ে পড়েছে। একই বিছানার একই চাদরের ভিতর পাশাপাশি নাহিদ আর নন্দিনী। নাহিদের হাত নন্দিনীর গায়ের উপরে। একটু আগে দুজনে ছিল খুব ঘনিষ্ঠ। শরীরের ঘনিষ্ঠতায় মশা ঢুকবার ও ফাঁক ছিল না। নন্দিনীর মুখে ছিল হাসি। কিন্ত এই মুহুর্তে পার্থক্য হলো নাহিদ ঘুমিয়ে আছে। আর নন্দিনী জেগে আছে। চোখের কোণ দিয়ে গাল ঘেঁষে গড়িয়ে পড়ছে অবিরাম চোখের জল। ওর দুচোখে ভর করছে এখন পুরনো কিছু ভারী স্মৃতি। এমন অনেক রাত আগে সে কাটিয়েছে সিয়ামের সাথে মুঠোফনে কথা বলে বলে। স্বপ্ন দেখেছে ওর পাশে শুয়ে আছে সিয়াম। নাহিদের সাথে আজ যেমন টা সে রাত কাটাচ্ছে এমন এক রাত সিয়ামের সাথে কাটানোর জন্য মুঠোফনে চলছিল কত প্ল্যান। বিয়ের কত স্বপ্ন।
আজ রাতে নন্দিনীর সিয়াম কে খুব মনে পড়ছে। নন্দিনীর ইচ্ছা হচ্ছে চিৎকার করে কাঁদতে। কারণ গত বছরের এমন দিনে নন্দিনীর বিয়ের কয়েকদিন পর সিয়াম আত্মহত্যা করেছিল। আজ সিয়ামের মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হয়েছে। আজ রাতেই সিয়াম আকাশের তারা হয়ে গিয়েছিল।
নন্দিনী আস্তে আস্তে নাহিদের হাত ওর গা থেকে সরিয়ে বিছানা থেকে উঠে গিয়ে রুমের ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। বাইরের আকাশ টা খুব পরিচ্ছন্ন। আকাশে অনেক তারা উঠেছে। চারপাশ দিনের মত আলোকিত। তবুও নন্দিনীর চোখে ঘোর অন্ধকার লাগছে। নিজেকে খুব একা লাগছে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ একা। সে অন্ধকার কাটানোর জন্য ম্যাচ কাঠি থেকে আগুন নিয়ে মোমবাতি জ্বালালো। সিয়াম একদিন বলেছিল যখন তোমার একা লাগবে তখন একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে। মনে করবে আমি সেই মোমবাতির আলো। আমি জ্বলে উঠে তোমাকে আলোকিত করে দিব।
বাইরের পরিবেশ খুব শান্ত। হিমেল হাওয়া। গা শিরশির করা বাতাস। মাঝেমাঝে ধমকা হাওয়াও হচ্ছে। ধমকা হাওয়ায় নন্দিনীর চুল খোলে গিয়ে চুল গুলো বাতাসে ঘুড়ির মত উড়ছে। এমন বাতাসে চুল খোলা অবস্থায় দেখার জন্য সিয়াম স্বপ্ন দেখত। নন্দিনী সিয়ামের কথা থামিয়ে দিয়ে বলতো, এখন সব ইচ্ছা বাক্সবন্দী করে রাখো। বিয়ে হোক সব স্বপ্ন পূরণ হবে।
সিয়ামের সাথে নন্দিনীর বিয়ে হয় নি। নন্দিনীর চুল বাতাসে উড়ছে সেটা সিয়াম দেখতে পারছে না। আবার হয়তো তারা হয়ে সব দেখছে।
নন্দিনী মোমবাতির দিকে তাকিয়ে দেখলো মোমবাতি বাতাসে অনেক আগেই নিভে গেছে। নন্দিনী সিয়ামকেও আটকে রাখতে পারে নি। নন্দিনী এই মোমবাতির আগুন কেও আটকে রাখতে পারে নি। পৃথিবীর সময় স্বাভাবিক নিয়মেই চলে, কখনো দিক পরিবর্তন করে না। কিন্তু ভালবাসার সময় দিক পরিবর্তন করে। কখনো সরলরেখার মতো সোজা হয়ে চলে না। ভালবাসার সময় পালটে যায়, পালটে যায় ভালবাসার মানুষগুলো ও।
ঘড়ির ঘণ্টার কাটা রাত তিন টায় এসে পৌঁছেছে। সেহরির সময় হয়ে গিয়েছে। নন্দিনী রুমে গিয়ে নাহিদ কে জাগানোর চেষ্টা করছে। নাহিদ কে ঘুম থেকে তুলে দিয়ে ডাইনিং টেবিলে সবার সেহরির জন্য খাবার পরিবেশন করতে শুরু করলো।
শাশুড়ি নন্দিনীর ব্যবহারে খুব সন্তুষ্ট। সন্তুষ্ট স্বামী সহ ঘরের অন্য সদস্যরাও।
একটু আগে ব্যালকনিতে একা দাঁড়িয়ে যে নন্দিনীর চোখ বেয়ে ঝরেছিল স্মৃতির কালোমেঘ সে আবার এক মুহূর্তে হয়ে উঠল পরিবারের প্রিয় বৌমা। স্বামীর প্রিয় বউ।
লোকচক্ষুর আড়ালে কয়েক মুহূর্ত আগে নন্দিনী যার জন্য কেঁদেছিল সে এখন আর কেউ নয়। তার ভুলে গেলে চলবে না, সে এখন একজনের স্ত্রী, কারো বৌমা, কারো ভাবি, আগামী দিনে কারোর মা। আর ভুলে গেলে গেলে চলবে না সে একজন নারী। নারী, নদীর মতই দিক পালটে জায়গা পরিবর্তন করে বিভিন্ন দিকে বয়ে চলতে হবে বিভিন্ন নামে নামে।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১:৩০

ওমেরা বলেছেন: বাস্তবতাকে মেনে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ । গল্প ভাল লেগেছে ধন্যবাদ ।

১০ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:৩৫

হাবিব শুভ বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ১০ ই মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৭

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: আত্মহত্যা যে করে তারজন্য আমার কোন করুণাই হয় না। গল্পটা একটু বেশি নাটকিয়।

১১ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:১০

হাবিব শুভ বলেছেন: এখানে আত্মহত্যার বিষয় টাকে আমি মুখ্য হিসেবে দেখাতে চাই নি। আমি বাস্তবতা মেনে নেয়া কে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছিলাম। ধন্যবাদ

৩| ১১ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৩৭

নাদিম আহসান তুহিন বলেছেন: বাস্তবতা বলুন আর গল্প বলুন।মেয়েরা পারে। খুব কঠিন ভাবে পারে এটা।

১১ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:৫৪

হাবিব শুভ বলেছেন: হুম ঠিক বলেছেন ভাই

৪| ১১ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:৩২

অরুনি মায়া অনু বলেছেন: নন্দিনীর উচিত সিয়ামকে ভুলে যাওয়া।জীবন মানেই বর্তমান। শুধুই বর্তমান।

১২ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১:১৮

হাবিব শুভ বলেছেন: হুম সেটাই

৫| ১২ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৬

হাবিব শুভ বলেছেন: হুম সেটাই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.